পারভেজ সেলিম ।।
(১ম পর্ব )
মানুষ ঠিক কোথা হতে এলো? কবে এলো? এই নিয়ে মানুষের যুক্তি তর্ক আর বিশ্বাসের শেষ নাই। ধর্মীয় বিশ্বাসীদের কাছে এর উত্তর খুব সহজ। তবে যারা বিজ্ঞান মানতে চায়, মানবজাতীর এই বিশাল ব্যাপারটিকে নিয়ে তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এখনও সঠিক কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে নাই, তবু মানুষের অন্বেষণ চলমান। আর কে না জানে, বিজ্ঞান মাত্রই পরিবর্তনশীল।
বিগ ব্যাং : তারপর অ্যামিবা ও ডায়নোসর
বিজ্ঞানীদের মতে, বিগ ব্যাং এর সূচনা হয়েছিল ১৩৭০ কোটি বছর আগে। সেখান থেকেই গ্রহ, নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়। পৃথিবী নামক গ্রহটির জন্ম হয় ৪৫০ কোটি বছর আগে।
সৃষ্টির সাথে সাথে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হয়নি। জন্মের ৭০ কোটি বছর পর, মানে আজ থেকে প্রায় ৩৮০ কোটি বছর আগে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল এই পৃথিবীতে। সেই প্রাণ ছিল এককোষি একটি প্রাণী। নাম অ্যামিবা।
সেই এক কোষি প্রাণী থেকে বহু কোষি প্রাণীর উদ্ভব। কয়েক শো কোটি বছরের বিবর্তণে এক অ্যামিবা থেকে হাজার হাজার বহুকোষি, ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর জন্ম হয়। তারাই ছিল মানুষের প্রথম পূর্বপুরুষ, যাদের রাজত্ব ছিল পানিতে। এই সময়কালকে ‘প্যালিওজোইক যুগ’ নামে ডাকে বিজ্ঞানীরা।
জলজ প্রাণীরা এরপর ওঠে ডাঙ্গায়। পৃথিবীতে শুরু হয় উভয়চর প্রাণীর রাজত্ব। ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে এবার রাজার আসনে চলে আসে স্থলচর প্রাণীরা। মানে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীতে ভরে ওঠে পৃথিবী। ছোট অ্যামিবা কয়েকশ কোটি বছরে রুপান্তরিত হয়ে পরিনত হয় বড় বড় ডায়নোসরে। ২৩ কোটি বছর আগে বিবর্তিত হওয়া ডায়নোসরেরা পৃথিবী দাঁপিয়ে বেড়িয়েছে প্রায় ১৫ কোটি বছর ধরে। পৃথিবী তখন ছিল সবুজে ভরা, তৃণভোজি প্রাণীদের স্বর্গরাজ্য।
এরপর বিশাল এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় হানা দেয় পৃথিবীতে। কেউ বলে উল্কার আঘাত, কেউ কেউ বলে আগ্নেয়গিরির আগুনে, কেউ বলে ভয়াবহ ভুমিকম্পে নিশ্চিন্ন হয়ে যায় পৃথিবীর সেইসকল বিশাল বিশাল প্রাণী। যেভাবেই হোক, ৬ কোটি বছর আগের সেই বিপর্যয়ে পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এই সবুজ গ্রহটি।
এরপর পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে বরফে ঢেকে যায়। মারা যায় অবশিষ্ট গাছ, পাখি, ঘাস সবকিছু। একে তো বৈরি আবহাওয়া তার উপর খাদ্যের অভাব, এবার বিলুপ্ত হয়ে যায় সরীসৃপ জাতীয় শীতল রক্তের প্রাণীরা। এর মাঝে কিছু প্রাণী যাদের রক্ত গরম তারা এই অসহিষ্ণু পরিবেশেও অবিশ্বাস্য রকমভাবে টিকে থাকে। নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকে তারা। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে শুরু হয় সেইসকল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দৌরাত্ব। মানুষের পুর্বপুরুষরা এবার বসবাস শুরু করে জঙ্গলে।
পূর্বপুরুষ : পানি, জঙ্গল ছেড়ে গুহায়
এরমাঝে কেটে গেছে কয়েক কোটি বছর। মানুষের পূর্বপুরুষের দলটির বসবাস তখন জঙ্গলে। মানব সদৃশ নানান প্রাণীর বিচরণ তখন পৃথিবীর বুকে। বিবর্তণের ফলে দুইপায়ে হাঁটা মানুষের পূর্বপুরুষদের আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকার জঙ্গলে। বিজ্ঞানীরা যাদের নাম দিয়েছে ‘হোমিনিড’। সময়কাল আজ থেকে ৭০ লক্ষ বছর আগে।
গাছের ডালে তখন মানব সদৃশ অন্য প্রজাতীর বসবাস। স্বভাবে, আচরণে তখন সকলে প্রায় একই রকমভাবে বাঁচতো। মানুষ তখন কোনভাবেই অন্য প্রাণীকুল থেকে আলাদা ছিল না। প্রাইমেট বর্গীয় সেই সকল প্রাণীকে এক কাতারে রাখা হয় জীববিজ্ঞানের খাতায়। এই প্রাইমেট বর্গের একটি শাখা কয়েক লক্ষ বছর পর হয়ে উঠবে আধুনিক মানুষ, আর অন্য শাখাটি গেরিলা, শিম্পাঞ্জী বা বানর হয়ে থাকবে। মানুষ বানর থেকে আসেনি, তবে মানুষ ও বানরের দাদার দাদারা প্রায় একই ছিল।
১৯৭৪ সালে ইথুপিয়ায় কিছু হাড়গোড়ের সন্ধান পায় মানুষ। প্রাপ্ত ফসিলের বয়স নির্ণয়ের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা যায়, মানব সদৃশ এই প্রাণীটি পৃথিবীতে হেঁটে বেড়িয়েছেন আজ থেকে ৩২ লক্ষ বছর আগে। এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া মানুষের সবচেয়ে পুরাতণ নিদর্শণ। বিজ্ঞানীরা এর নাম দেয় লুসি। যিনি একজন নারী।
লুসিকে বিজ্ঞানীরা ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’ গোত্রভুক্ত করে, যা মানুষের পূর্বপুরুষের অনেকগুলো দলের মধ্যে একটি। মানে লুসিরাই প্রথম প্রাণী, যারা দুইপায়ে ভরদিয়ে হাটতে পারতো পৃথিবীর বুকে। এরপর ২৫ লক্ষ বছর আগে আরেকটু উন্নত মানের মানুষ পাওয়া যায়, যারা পায়ের সাথে সাথে হাতের ব্যবহারেও পারদর্শী হয়ে উঠেছিল। বিজ্ঞানের খাতায় যাদের নাম ‘হোমো হাবিলিস’। যাদেরকে প্রথম যথার্থ মানব হিসেবে গণ্য করা যায়। তাদের মস্তিস্ক ছিল বড় এবং তারা লাঠি ও পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার শুরু করেছিল।
মানুষের পূর্বপুরুষরা ততদিনে গাছের ডাল থেকে মাটিতে নেমে এসেছে। নিজেরাই খাবার সংগ্রহ করে, শিকার করে কিংবা অন্য পশুর শিকার করা খাবারে ভাগ বসায়।
১৫-২০ লক্ষ বছর আগে মানুষের আরেকটি উন্নত সংস্করণ আবির্ভূত হয় পৃথিবীতে। তখন জঙ্গল থেকে বের হয়ে মানুষ গুহায় বসবাস শুরু করেছে, আগুনের ব্যবহার শিখে ফেলেছে। নিজের বানানো পাথরের হাতিয়ার দিয়ে খাবারও সংগ্রহ করছে। বিজ্ঞানের খাতায় যাদের নাম ‘হোমো ইরেক্টাস’। মানুষের এই পূর্ব পুরুষদের দেখা যায় পূর্ব এশিয়ায়।
বড় মস্তিষ্ক আর পেশিবহুল এক মানব প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল ইউরেশিয়া অঞ্চলে। ৩-৬ লক্ষ বছর আগে। নাম নিয়ান্ডার্থাল।
আর আজকের আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকায়, ২০-২৫ লক্ষ বছর আগে। যার কেতাবি নাম ‘হোমো সেপিয়ান্স’। আদিম সেই প্রজাতীর মানুষদের বসবাসের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় আফ্রিকা অঞ্চলে। সবচেয়ে পুরাতন যে হাতিয়ারটি প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পেরেছেন সেটিও ২৫ লক্ষ বছর আগের। তবে ঠিক কোন সময়টিতে এই প্রজাতী ‘হোমো স্যাপিয়ান্স’ হয়ে উঠলো তা বলা মুশকিল। তবে বর্তমান আধুনিক যে স্যাপিয়্যান্সের কথা বলছি তার উদ্ভব ২/৩ লক্ষ বছরের মধ্যে কোন এক সময়।
অনন্তের পথে যাত্রা :
কয়েক লক্ষ বছর আফ্রিকায় থাকার পর হোমো সেপিয়ান্সরা বেরিয়ে পড়ে অজানার উদ্দেশ্য। মানুষের প্রথমবার অনন্তের পথে যাত্রা। সেটিও আজ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে। উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তারা।
এরপর অনেক বছর ধরে চলার পর মানুষের অনেকগুলো প্রজাতী পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে স্বাধীনভাবে বিকাশ লাভ করে। ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায় বেড়ে উঠেছিল ‘নিয়ান্ডার্থাল’। এশিয়ার একদম পূর্বদিকে বেড়ে উঠেছিল ‘হোমো ইরেক্টাস’ প্রজাতির মানুষ।
কোন এক সময় দুই প্রজাতীর মধ্যে যুদ্ধও হয়েছিল। সেই যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল ‘হোমো সেপিয়্যান্সরা’। বিজয়ী নিয়ান্ডার্থালেরা তখন রাজত্ব করতে থাকে ইউরোপ ও এশিয়াজুড়ে।
পরবর্তীতে আজ থেকে ৭০ হাজার বছর আগে দ্বিতীয়বারের মতো হোমো স্যাপিয়ান্সরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে পড়ে। ততদিনে আরো উন্নত হয়েছে তারা। আফ্রিকা ছেড়ে মানুষেরা এসে পৌঁছায় মধ্য এশিয়ায়। এসময় ‘বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব’ ঘটে গেছে হোমো স্যাপিয়ান্সদের। এই গৃহত্যাগী দলটি আজকের মানুষের আসল পূর্বপুরুষ।
আফ্রিকা থেকে বের হয়ে স্যাপিয়্যান্স মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এশিয়া ঘুরে সবশেষ অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এইবার নায়ান্ডার্থাল ও অন্য প্রজাতীর মানুষদের পৃথিবী থেকেই ধীরে ধীরে নিশ্চিন্ন করে দেয় হোমো স্যাপিয়ান্সরা।
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
I truly appreciate your technique of writing a blog. I added it to my bookmark site list and will
vip izmir travesti sitesini arıyorsan tıkla ve hemen vip izmir travesti sitesine giriş yap.
yasam ayavefe best man