বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠে’র চতুর্থ খন্ড



(চতুর্থ খন্ড )

১.

সেই রজনীতে হরিধ্বনিতে সে প্রদেশভূমি পরিপূর্না হইলো।

সকলে বলিল, মুসলমান পরাভূত হইয়াছে, দেশ আবার হিন্দুর হইয়াছে।

গ্রাম্য লোকেরা মুসলমান দেখিলেই তাড়াইয়া মারিতে যায়। কেহ কেহ সেই রাত্রে দলবদ্ধ হইয়া মুসলমানদিগের পাড়ায় গিয়া তাহাদের ঘরে আগুন দিয়া সর্বস্ব লুটিয়া লইতে লাগিল। অনেক যবন নিহত হইল, অনেক মুসলমান দাড়ি ফেলিয়া গায়ে মৃত্তিকা মাখিয়া হরিনাম করিতে আরম্ভ করিল, জিজ্ঞেস করিলে বলিতে লাগিল, ‘মুই হেঁদু’।

এ সকল কথা কল্যানীর কানে গেল। সে স্বামী দর্শনে যাত্রা করিলো।

পথে শান্তির সাথে দেখা হইলো। শান্তি তাকে পদচিহ্ন গ্রামে নিয়ে গেল।

২.

শান্তি যখন আশ্রম ত্যাগ করে তখন জীবনান্দ আশ্রেমে উপস্থিত।

জীবনান্দ মহেন্দ্রকে সব খুলিয়া বলিল।

সেই রজনী প্রভাতে মহেন্দ্র কল্যাণীর মিলন হইল।

জীবনান্দ তাদের জানালো, আপনারা পদচিহ্নে গমন করুন সেইখানে কন্যাকে পাইবেন।

জীবনান্দ ভরুইপুরে নিমাইয়ের কাছে কণ্যাকে আনিতে গেলেন।

কিন্তু নিমাই সুকুকে প্রথমে দিতে রাজি হইলো না।

পরে সুকুকে কোলে লইয়া কাঁদিতে কাঁদিয়ে চলিয়া গেল।

৩.

পদচিহ্নের নতুন দূর্গমধ্যে সমবেত মহেন্দ্র, কল্যানী, জীবানন্দ, শান্তি, নিমাই, নিমাইয়ের স্বামী ও সুকুমারি।

মহেন্দ্র জানত না যে নবীনান্দ আসলে স্ত্রী লোক এবং জীবানন্দের ধর্মপত্নী।

সব খোলাসা হইলো।

৪.

উত্তর বাঙ্গলা মুসলমানের হাতছাড়া হইয়াছে। মুসলমান কেহই এ কথা মানেন না। মনকে চোখ ঠারেন।

মেজর এডওয়ার্ডনামা দ্বিতীয় সেনাপতি নতুন সেনা লইয়া উপস্থিত হইলেন সন্তান শাসনার্থে।

নতুন পরিকল্পনা হইল।

মাঘী পূর্নিমায় নদী তীরে যে মেলা হইবে সেইদিন পদচিহ্ন দূর্গ আক্রমণ করবে ইংরেজরা।

এডওয়ার্ড রটিয়া দিলেন মেলা আক্রমণ করিবেন যাতে পদচিহ্নে আক্রমণ করা সহজ হয়।

৫.

শান্তি ও জীবানান্দ পরামর্শ করে দুজনে দুই বনে গেল।

শান্তি পুরুষবেশ ছেড়ে বৈষ্ণবী বেশ ধরিয়া ইংরেজ শিবিরে গেল।

গান শুনিয়া তথ্য জোগাড় করিলো। আর পদচিহ্ন দূর্গে কতজন সন্তান আছে এই তথ্য জোগাড় করে দেবে বলে ইংরেজদের ঘোড়া সহ বের হলো। সাথে এক ইংরেজ লিন্ডলে।

ইংরেজরে ফেলে রেখে ঘোড়া নিয়ে পালিয়ে গেল শান্তি। জীবানন্দের কাছে পৌঁছলে। ইংরেজদের খবর দ্রুত সত্যানন্দ ও মহেন্দ্র কাছে পৌঁছাতে চলিয়া গেল শান্তি।

৬.

আবার যুদ্ধ হইল। সন্তান আর ইংরেজ।

জীবনান্দ একাই যুদ্ধে জীবন দিতে এগিয়া গেল। তার দেখা দেখি অনেক সন্তান এগিয়া গেল। 

ইংরেজরা পরাজিত হইল। 

সংঘর্ষে বিশাল রাজসৈন্য নিষ্পেষিত হইলো। ওয়ারেন হেস্টিংসের কাছে সংবাদ লইয়া যায় এমন লোক রহিল না।

৭.

পূর্নিমার রাত। সেই ভীষণ রণক্ষেত্র এখন স্থির।

নিশিথকালে এক রমনী অনেক খোঁজাখুজির পর জীবানন্দের মৃতদেহ খুঁজিয়া পাইলো। সেই রমনীর নাম শান্তি।

কিন্তু তার দেহে প্রাণ নাই।

এমন সময় এক জটাধারী পু্রুষ এসে জীবানন্দের চিকিৎসা করিয়া প্রাণ ফিরিয়া দিল।

শান্তি আর জীবনান্দ আর দেশে ফিরিতে চায় না। তারা হিমালয়ের উপর কুটির প্রস্তুত করিয়া দুজনে আরাধনা করবি যাতে মার মঙ্গল হয়, সেই বর মাগিবে।

তখন দুজনে উঠিয়া, হাত ধরাধরি করিয়া জোছনাময় নিশীথে অনন্তে অন্তর্হিত হইল।

৮.

সত্যানন্দ ঠাকুর রণক্ষেত্র হইতে কাহাকে কিছু না বলিয়া আনন্দমঠে চলিয়া আসিলেন।

সেখানে সত্যানন্দ বিষ্ণুমন্ডপে বসিয়া ধ্যানে প্রবৃত্ত।

এমন সময় চিকিৎসক আসিলেন, ‘তোমার কার্য সিদ্ধ হইয়াছে, মুসলমানরাজ্য ধ্বংস হইয়াছে। আর তোমার এখন কোনও কার্য নাই। অনর্থক প্রাণীহত্যার প্রয়োজন নাই।’

সত্য বলল, ‘মুসলমানরাজ্য ধ্বংস হইয়াছে, কিন্তু হিন্দুরাজ্য স্থাপিত হয় নাই। এখনও কলিকাতায় ইংরেজ প্রবল।

তিনি। হিন্দুরাজ্য এখন স্থাপিত হইবে না- তুমি থাকিলে এখন অনর্থক নরহত্যা হইবে। অতএব চলো।

সত্যানন্দ তীব্র মর্মপীড়ায় কাতর হইলেন। বলিলেন, ‘হে প্রভু! যদি হিন্দু রাজ্য স্থাপিত হইবে না, তবে কে রাজা হইবে? আবার কি মুসলমান রাজা হইবে?

তিনি বলিলেন, না, এখন ইংরেজ রাজা হইবে।

সত্যানন্দের দুই চক্ষে জলধারা বহিতে লাগিলো।

অনেক তর্ক শেষে, মহাপুরুষ সত্যানন্দের হাত ধরিলেন। কে কাহাকে ধরিয়াছে? জ্ঞান আসিয়া ভক্তিকে ধরিয়াছে। ধর্ম আসিয়া কর্মকে ধরিয়াছে; বিসর্জন আসিয়া প্রতিষ্ঠাকে ধরিয়াছে; কল্যাণী আসিয়া শান্তিকে ধরিয়াছে। এই সত্যানন্দ শান্তি; এই মহাপুরুষ কল্যাণী। সত্যানন্দ প্রতিষ্ঠা, মহ্পুরুষ বিসর্জন।

বিসর্জন আসিয়া প্রতিষ্ঠাকে লইয়া গেল।

(সমাপ্ত)



২২ thoughts on “বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠে’র চতুর্থ খন্ড

  1. เพราะโดนเฟสบุคปิดกั้นบ่อยๆ ทำให้คนกดไลค์กดแชร์น้อย บทความนี้จึงอยากจะมาแนะนำ บริการปั้มไลค์ทำอย่างไร มาบอกเหตุผลว่าทำไมการปั๊ม ผู้ ติดตาม facebook ถึงมีความสำคัญ หรือใครที่อยาก ปั้มไลค์เฟส ให้ได้สักหลักพันหลักหมื่นให้ไว บริการปั้มไลค์สามารถทำได้ไหม ปั้มไลค์แล้วยอดผู้ติดตามไม่มีลด อยากเป็นที่รู้จักแพร่หลายไว อยากให้ร้านดังสินค้าขายดี บริการปั้มไลค์สามารถช่วยให้ร้านของคุณมีความเคลื่อนไหวมากขึ้นฟีดอัพเดทบ่อย เมื่อโปรไฟล์ของคุณอัพเดทอยู่เรื่อยๆอัลกอริทึมก็จะประมวลผลเห็นผู้คนพบเจอ facebook ของคุณได้มากขึ้น เป็นอีกหนึ่งช่องทางในการขาย https://thip-like.com/

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x