পারভেজ সেলিম
(পর্ব : ০৮)
১৯৪৭ সালে পাঞ্জাবের মালোয়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন সরদার যোগিন্দর সিং ব্রার ও নিহাল কৌর এর সংসারে। ৭ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট এই ছেলে একদিন ভারতের ধর্ম ও রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসবে।
অনেকের কাছে তিনি দেশদ্রোহী ও ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী আবার অনেকের কাছে তিনি মর্যাদাবান একজন সাধুপুরুষ এবং আধ্যাত্মিক গুরু। পিতা ছিলেন এলাকায় প্রভাবশালী শিখ নেতা। ভিন্দ্রানওয়ালের জন্ম ও দেশভাগ একই বছরে।
ছোটবেলা থেকে গুরুদুয়ারে যাতায়ত করতেন তিনি। বয়স যখন ৬ তখন পিতার সহায়তায় জার্নেইল সিং ধর্মীয় শিক্ষালয় দমদমি তাকশালে ভর্তি হন। এই প্রতিষ্ঠান শিখদের কাছে বিশেষ ভাবে সমাদ্রিত।
আহমেদ শাহ আবদালী একবার স্বর্ণমন্দির আক্রমণ করেছিলেন। পাঁচ হাজার শিখ যোদ্ধা নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বাবা দীপ সিং প্রতিরোধ গঠণ করেছিল। এরপর থেকো শিখদের কাছে স্বাধীন দেশ খালিস্তান আন্দোলনের আঁতুড়ঘর হিসেবে মর্যাদা লাভ করে এই প্রতিষ্ঠানটি।
দমদমি তাকসালের প্রধান কার্যালয় ছিল চকমেহতা গ্রামে। অমৃতসর থেকে যা ২৫ মাইল দুরে।খালিস্তান আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই চক মেহতা। ভিন্দ্রানওয়ালে আশ্রয় নেবার পরেই কেন্দ্র স্বর্নমন্দিরে স্থান্তরিত হয়।
এক বছরের কোর্স সমাপ্ত করে কৃষিকাজের জন্য গ্রামে ফিরে আসেন জার্নেইল। দমদমি তাকশাল এর প্রধান তখন করতার সিং।এসময় পাঞ্জাবে রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক বিষ বাষ্পের খেলা শুরু হয়ে গেছে।
কর্তার সিং তার শিষ্যদের মধ্যে স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের স্বপ্ন গেথে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন। ভিন্দ্রানওয়ালে প্রথম থেকেই একজন কট্টোরপন্থী শিখ হওয়ায় খুর দ্রুত কর্তার সিং এর প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন।
মৃত্যুর আগে দমদম তকসালের প্রধান বানিয়ে দিয়ে যান প্রিয় শিষ্য জার্নেই সিং ভিন্দ্রানওয়ালেকে।১৯৭৭ সালে ৩১ বছর বয়সে করতার সিং এর স্থলাভিষিক্ত হন জার্নেইল।আনুষ্ঠানিকভাবে দমদম তাকশালের প্রধান হবার পর তার পরিচয় দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারিদিকে।
ধীরে ধীরে ‘জার্নেইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে’ জনপ্রিয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে থাকেন।
মূলত ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সাল তার প্রচার-প্রসারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সময় ছিল। পাঞ্জাবে হিন্দু সংস্কৃতির আভিজাত্যের বিরোধিতা করেই আলোচিত হয়েছিলেন তিনি।
ধর্মীয় গুরুর এমন আক্রমণাত্মক পোষাক ও মানসিকতা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল পুরো অমৃতসর জুড়ে। দশম গুরু গোবিন্দ সিংয়ের ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে ভিন্দ্রানওয়ালে নিজে সূঁচালো তীর সঙ্গে রাখতেন।
পাঞ্জাবে অপ্রতিরোদ্ধ এবং ভীষন প্রভাবশালী ব্যাক্তি তখন ভিন্দ্রানওয়ালে। আইনশৃংখলা ও সাধারণ মানুষ জিম্মি তখন এই শিখ সাধুর হাতে।
১৯৮৪ সালের ১-১০ জুন খালিস্তানপন্থিদের কাছে স্বর্নমন্দির উদ্ধারের জন্য এক রক্তক্ষয়ী অভিযান পরিচালনা করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই অভিযানের নাম ‘অপারেশন ব্লু স্টার’। সরকারী ভাষ্য অনুয়ায়ী ৮৩ জন সেনা, ৫৫৪ জন শিখ বিদ্রোহী ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়।
বহু প্রাণের বিনিময়ে শেষ হয় ইতিহাসের একটি মাত্র অধ্যায়ের। খালিস্তান আন্দোলনের পরিসমাপ্তি বলে ধরে নেয় অনেকে।সহযোদ্ধাদের সাথে সেই অপারেশনে নিহত হন জার্নেইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে।
(চলবে..)
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী