পারভেজ সেলিম
রবীন্দ্রনাথ বিয়ে করেন ২২ বছর বয়সে। সময় ১৮৮৩। বাংলাদেশের খুলনার মেয়ে মৃণালিনী দেবীকে যখন বিয়ে করেন তখন তার বয়স দশ। তিনিই রবীন্দ্রনাথের একমাত্র স্ত্রী।
ঠাকুর বাড়ির কর্মচারি বেণীমাধবের কন্যা ছিলেন মৃনালিনী। পড়াশুনা গ্রামের স্কুলে। ডাক নাম ছিল ভবতারিনী।
মাত্র উনত্রিশ বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। তাদের উনিশ বছরের সংসারে দুই পুত্র ও তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে

আরো দেখুন:
সংসারধর্ম পালণ করলেও রবীন্দ্রনাথের মনের নাগাল পাওয়া হয়ত সম্ভব হয়নি গ্রামের এক মেয়েটির। অন্তত কবির চিঠিপত্রে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
১৮৯০ সালে জানুয়ারির এক চিঠিতে স্ত্রীকে তিনি লিখছেন ‘একেই তো বলে বাঙ্গাল, ছি ছি ছেলেটাকে পর্যন্ত বাঙ্গাল করে তুললে গো’। কি অসহিষ্ণু, অমার্জিত ভাষা রবীন্দ্রনাথের, ভাবা যায়!
ঠিক একই সময়ে ভাতিজি ইন্দিরা দেবীকে তিনি লিখছেন ‘মানুষ কি লোহার কল যে নিয়ম অনুসারে চলবে?’
রবীর জীবনে একটি বিশেষ চরিত্র মৃনালিনী দেবি। সংসার জীবনটা তার সাথে কাটালেন। এই সম্পর্কটি ছিল যেন শুধু প্রয়োজনের। সন্তান আর সংসারের। কবির অনুভূতি সৃষ্টির যে জ্বালানী তা স্বামী-স্ত্রীর এই প্রয়োজনের সম্পর্ক দিয়ে মেটেনি এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বিয়ের সময় মৃনালিনীর বয়স দশ রবীন্দ্রনাথের ২২ বছর।
কবি বুঝতে পেরেছিলেন মৃনালিনীর পক্ষে তার মনের নাগাল পাওয়া হয়ত অসম্ভব। তাই লিখেছেন
‘ তুমি মোরে পারো না বুঝিতে?
…
কিছু আমি করিনি গোপণ
যা আছে, সব আছে
তোমার আখির কাছে
প্রসারিত অবারিত মন
দিয়েছি সমস্ত মোর করিতে ধারণা
তাই মোরে বুঝিতে পারোনা?….
স্ত্রীকে চিঠিতে তিনি ‘ভাই ছুটি’ সম্মোধন করতেন রবীন্দ্রনাথ। বাড়ির ছোট বউ তাই ছুটি। নামের আগে ভাই, বোঝাই যায় রোমান্সকে কিভাবে বিদায় দিয়েছিলেন তাদের স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্ক হতে।

মৃণালিনী দেবীকে তিনি সম্মান করতেন, শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু কতটুকু ভালোবাসতেন তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।
বিশাল একজন কবির মানসে কতুটুক আলোড়ন তুলতে পেরেছিলেন ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা এক সাধারণ মেয়ে, রবীর সৃষ্টির দিকে তাকালে অবশ্য তা বোঝা যায়। তবে তার মৃত্যুর পর আর দ্বিতীয় কোন বিয়ে করেননি রবীন্দ্রনাথ।
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
আরো পড়ুন :
রবীন্দ্রনাথের দশ নারী উপাখ্যান (পুরো পর্ব)
আনা তড়খড়: রবীন্দ্রনাথের প্রথম নারী
লুসি স্কট: রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিদেশিনী
কাদম্বরী দেবী: রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় প্রেম
মৃণালিনী দেবী: রবীন্দ্রনাথের একমাত্র বউ
ইন্দিরা দেবী: ভাতিজির সাথে রবীর প্রেম
তোমিকো ওয়াদা কোরা: রবীন্দ্রনাথের জাপানী প্রেম
রানু মুখার্জি: রবীন্দ্রনাথ তখন ৫৭ রানু ১২
ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো: রবীর ওগো বিদেশিনী
মৈত্রেয়ী দেবী: গুরুদেবের সঙ্গে প্রেম
হেমন্তবালা দেবী: রবীন্দ্রনাথের শেষ নারী
শেষের কথা: রবীন্দ্রনাথের দশ নারী
আরো দেখুন: