বিশ্বব্রহ্মাণ্ড: বিষ্ময়কর অসমাপ্ত এক গল্প


পারভেজ সেলিম ।।


আমাদের এই মহাবিশ্বে আসলে কি ঘটছে? খালি চোখে আমরা প্রতিদিন দেখি সুর্য উঠছে, চাঁদ ডুবছে আরো কত কি! রাতের আকাশে মিটমিট করে জ্বলা তারা, আর মাঝে মাঝে গ্রহণ লাগা চাঁদ সূর্য দেখে আনন্দ পাই আমরা। এই দৃশ্যমান পৃথিবীর বাহিরে আরো কত কিছুই না ঘটছে! যা কিছু ঘটছে আমাদের এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে তার কতটুকু আমাদের  উপলব্ধির মধ্যে ধরা দিচ্ছে। খুবই কম, নগন্য পরিমান। তবু মানুষ তার জানার পরিধি বাড়িয়ে চলেছে। এখন পর্যন্ত কতটুকু ধারণা করতে পারলো মানুষ এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে।

এই দৃশ্যমান পৃথিবীর বাহিরে আরো কত কিছুই না ঘটছে

স্টেডি স্টেট তত্ত্ব: মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে স্থির !

এই মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে যেমন ছিল, তেমনিই আছে। স্থির ও অপরিবর্তনশীল। আলবার্ট আইনস্টাইন সহ পৃথিবীর বিশাল বিশাল মানুষেরা কঠিন সমর্থক ছিলেন এই তত্ত্বের। মহামতি আইনস্টাইন তার সুত্রের মধ্যে একটি ধ্রবকও বসিয়ে দিয়েছিলেন। যাতে গানিতিকভাবে প্রমাণ করা যায় যে এই মহাবিশ্ব প্রথম থেকেই স্থির ও একই রকম।

পরে এই জিনিয়াস স্বীকার করেছেন এই কসমোলজিক্যাল ধ্রুবকটি ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা ভূল।

আইনস্টানের সাথে সাধারণ মানুষেরাও তাদের ভূল বুঝতে পারে এবং সরে আসে এই তথ্য থেকে যে মহাবিশ্ব স্থির ও অপরিবর্তনশীল। 

এই মহাবিশ্ব প্রথম থেকেই স্থির ও একই রকম

১৯৬০ এর দশকে এসে জর্জ গ্যামফ সহ অনেক বিজ্ঞান প্রমাণ করতে সক্ষম হন এই মহাবিশ্ব শুধু ঘুরছেইনা , এর গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ সব সরে সরে যাচ্ছে। মানে এই মহাবিশ্ব স্থির নয়, সম্প্রসারণশীল। কেন এটি সরে যাচ্ছে? 

এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেল মহাবিশ্ব শুরুর এক বিশাল ঘটণা। তার নাম ‘বিগ ব্যাংগ’ বা বৃহৎ বিস্ফোরণ। সময় ও স্থানের শুরু সেখান থেকে।

প্রায় ১৩৭৫ কোটি বছর আগে একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছিল

বিগ ব্যাংগ: মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব 

প্রায় ১৩৭৫ কোটি বছর আগে একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছিল এই ব্রক্ষ্মান্ডে। সেখান থেকে শুরু হয়েছিল আজকের মহাবিশ্বের। ধীরে ধীরে ছায়পথ বা গ্যালাক্সি, সৌরজগত, সূর্য, গ্রহ, পৃথিবী, চাঁদ সৃষ্টি হতে থাকলো।

দেড় হাজার কোটি বছর ধরে তৈরি হয়েছে আমাদের এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ড, যা প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে বা সরে সরে যাচ্ছে একে অপরের কাছ থেকে। তবে পৃথিবী ও সূর্য সৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৫০০ কোটি বছর আগে।

এই সরে সরে যাবার তত্ত্ব বা থিউরি  সবাই মেনে নিলো কিন্তু বাস্তবে এর প্রমাণ কই? সমাধান করলেন এডউইন হাবল এসে। 

তিনি টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলেন যে মহাবিশ্ব সত্যই সম্প্রসারিত হচ্ছে। সাথে সাথে প্রশ্ন দেখা দিলো এই বিস্ফোরণের আগে কি ছিল তাহলে? 

মহাবিশ্ব সত্যই সম্প্রসারিত হচ্ছে

প্রশ্ন হচ্ছে বিগ ব্যাংগের আগে কি ছিল ?

বিজ্ঞান বলছে বিগ ব্যাং এর আগে কিছুই ছিল না, মানে মানুষের কোন ধারণা নাই বিগ ব্যাং এর আগের পরিস্থিতি সম্পর্কে। বিগ ব্যাং থেকেই সময় এবং স্থানের শুরু। এর আগে সব শুন্য। শুন্যের এক ছোট বিন্দুতে সমস্ত শক্তি নিহিত ছিল।সেখানে থেকেই বিষ্ফোরণ । কিন্তু কেন সেই বিন্দু বিস্ফোরিত হলো? কোথা থেকে এই বিন্দুতে এত শক্তি পুঞ্জিভুত হলো? উত্তর জানা নাই মানুষের !  

উত্তর জানা নেই মানুষের । আর এমন কথা মেনে নিলেন না বিজ্ঞানীরা, বললেন এটি ভূল বিজ্ঞান। এই তত্ত্ব সঠিক নয়। এটি ধর্মের ব্যাখাকে মেনে নেয়া। তারা মনে করেন আপাতত মানুষ জানে না তবে একদিন জেনে যাবে বিগ ব্যাং এর আগে কি ছিল। সত্যি তাই হলো । এরপর এর সমাধান নিয়ে এসে নোবেল পুরষ্কার জিতে নিলেন এক বিজ্ঞানী।

রজার পেনরেজ / আগস্ট ৮, ১৯৩১

মহাবিশ্বঃ পেন্ডুলামের মত দুলছে! 

রজার পেনরেজ আসলেন ষাটের দশকে। তিনি এসে বললেন  বিগ ব্যাং এর আগে কি ছিল তার ব্যাখ্যা আছে। বিগ ব্যাং যে একটা বিন্দু থেকে বিস্ফোরিত হলো, সেখানে অসীম শক্তি ক্ষুদ্র একটি বিন্দুতে পুঞ্জিভূত ছিল। কিন্তু কিভাবে কোথা থেকে কিভাবে এল এই শক্তি? 

তার ব্যাখা দেবার চেষ্টা করেছেন রজার। তার মতে বিগ ব্যাং এর আগে আরেকটা মহাবিশ্ব ছিল।কয়েক কোটি বছর ধরে বিশাল সেই মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে হতে একটি বিন্দুতে এসে পৌঁছেছিল। সেই বিন্দুতে কিচ্ছুক্ষণ পুঞ্জিভুত থাকার পর আবার বিস্ফোরিত হয়ে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে শুরু করে। একসময় আবারো এই মহাবিশ্ব সংকোচিত হবে এবং একটি বিন্দুতে এসে পৌঁছেবে। তারপর আবার বিস্ফোরিত হবে।  অনেকটা পেন্ডুলামের দোলনের মত। 

পেন্ডুলাম যেমন একবার ডানে যায় মানে প্রসারিত হয়, পরে ফিরে আসে সাম্যাবস্তায় বা একটি বিন্দুতে, পরে আবারো বামে চলে যায়, মানে বামে প্রসারিত হয়। সেই প্রসারণ থেকে আবারে ডানে চলে যায়। কেউ যদি বাধা না দেয় তবে এই পেন্ডুলাম অনন্তকাল ধরে দুলতে থাকবে। রজার বলছেন এভাবে সংকোচণ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে বারবার বিগ ব্যাং এর মতো ঘটনা ঘটবে। এভাবেই একটা একটা যুগের শেষ হবে আর সূচনা হবে নতুন যুগের। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এমন ঘটনা আগে কত বার ঘটেছে আমরা কি তা জানি? না আমরা জানি না। এটিও অন্য ধারণা গুলোর মত একটি ধারণামাত্র। এটিকে নতুন কোন ধারণা এসে হয়ত বিদায় করে দেবে। 

২০২০ সালে রজার পেনরেজ মানুষের জানার এই পরিধি বৃদ্ধিতে অসামাণ্য অবদানের জন্য নোবেল পুরুস্কারে ভূষিত হন।

মহাবিশ্বের দোলাদুলির ভিতর ব্লাকহোল কোথায় হয়, কেন হয়? 

ব্লাকহোল তাহলে কি ?

এই মহাবিশ্বে কয়েক হাজার কোটি গ্যালাক্সি  আছে। সেখানে লক্ষ কোটি সৌরজগত আছে। তার মাঝে আছে একটি করে সুর্য। সুর্যকে কেন্দ্র করে অসংখ্য গ্রহ ঘুরছে।

সূর্যের যখন শক্তি শেষ হয়ে যাবে সে তখন ফুলতে থাকবে। এতটা বড় হবে যে শুক্রগ্রহের কক্ষপথে পৌঁছাবে। রক্তিম বামণ বলা হবে তখন সূর্যকে। মানে শুধু বড় হবে কিন্তু শক্তি থাকবে না। 

কয়েক লক্ষ বছর পরে সূর্য সাদা হবে, পরে ধীরে ধীরে কালো হয়ে যাবে সূর্য। শেষে তার শক্তি এত বেড়ে যাবে যে সৌরজগতের সব কিছুকে গ্রাস করে তার পেটের ভিতর নিয়ে নেবে।  এরপর সূর্যের চাইতে বেশি ভরের নক্ষত্ররা হয়ে যাবে একটি ‘ব্লাকহোল’।

এমন শক্তিশালী গর্ত তৈরি হবে যে যেখান থেকে আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারবে না। তাই তা কালো দেখাবে। 

বাস্তবে যদিও আমাদের সুর্য্য ব্লাক হোল হবে না কারণ এর ভর তুলনামুলকভাবে কম। আমাদের সুর্যের চাইতে ২০ গুন বেশি ভারি নক্ষত্ররাই শুধুমাত্র ব্লাকহোলে পরিনত হতে পারবে।

এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডে  অনেক নক্ষত্র আছে যাদের কয়েক লক্ষ কোটি বছর আগে শক্তি শেষ হয়েছে তারা এখন ‘ব্লাকহোল’ এ পরিনত হয়েছে বা হচ্ছে। 

এমন কোটি কোটি ব্লাকহোল দিয়ে ভরে আছে আমাদের বিশ্বব্রষ্মান্ড। আমাদের যে ছায়াপথ তার নাম মিল্কিওয়ে। তার মাঝখানেও একটি ব্লাকহোল আছে। 

প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি সেই ব্লাকহোল দেখতে পাচ্ছি? 

ব্লাকহোল’ তো কৃষ্ণ বা কালো তাকে মানুষের দেখতে পারার কথা নয়.

মানুষ কি ব্লাকহোল দেখেছে?

‘ব্লাকহোল’ তো কৃষ্ণ বা কালো তাকে মানুষের দেখতে পারার কথা নয়। বিজ্ঞানের উন্নতিতে এরকম ক্যামেরা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে যে এখন ব্লাকহোলের ছবিও তুলতে পারে মানুষ। সেই ছবি দেখলে দেখা যাবে একটা কালো জায়গার চারিদিক দিয়ে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। 

আবার প্রশ্ন দেখা দিল, ব্লাকহোল থেকে তো কিচ্ছু বের হয়ে আসার কথা না তাহলে আলো বের হচ্ছে কিভাবে ? এবার সমাধান নিয়ে হাজির সময়ের আরেক জিনিয়াস বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস। তিনি বলছেন ব্লাকহোল থেকে কিছুই বের হয় না এই তথ্য সঠিক নয়। 

ইভেন্ট হরিজন বা ঘটনা দিগন্ত থেকে কিছু কণা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। ব্লাক হোলের কেন্দ্র থেকে একটি নিদিষ্ট ব্যাসার্ধ পযর্ন্ত এর মধ্যে কোন কিছু পড়লে তা আর বের হতে পারে না  কিন্তু ব্যাসার্ধের শেষ প্রান্তের দিকের কোন একটি কণার মধ্যে মজার একটি ঘটণা ঘটে। 

সেখানে প্রতিটি কনার যে এন্টিকনা তৈরি হয় তা বাহিরের দিকে বের হয় আর কণাটিকে ভিতরের দিকে টেনে নেয় ব্লাকহোল। বাহিরে বের হওয়া কণাটির বিচ্ছূরণ আমার দেখতে পাই।

কেন ব্লাকহোলের চারিদিকে আলো দেখা যায় সেটা না হয বোঝা গেল কিন্তু এর ভিতরে মানুষ পড়লে কি হবে? 

ব্লাকহোলে মানুষ পড়লে কি হবে ?

একসময় জানতাম ব্লাকহোল মানে সবকিছু্ হারিয়ে যাওয়ার গর্ত। হকিং বলছেন না সবকিছু হারিয়ে যাবে না। মানুষ যদি ব্লাকহোলের ভিতর পড়ে তাহলে সেও কোন একসময় সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পারে। কোয়ান্টাম বল বিদ্যায় এই চর্চা আছে।

তবে যে মানুষটি বের হবে তা আগের মানুষ থাকবে কিনা তা আমরা জানি না। কাঠামোগতভাবে সে থাকবে না তবে তার তথ্য হারিয়ে যাবে না। তথ্য বলতে মানুষ যা দ্বারা গঠিত তার তথ্যসমুহ পাওয়া যাবে। এখানে তথ্য বলতে ইলেকট্রন,প্রোটন ইত্যাদিতে বোঝানো হচ্ছে আরকি।  

ইভেন্ট হরিজন বা ঘটনা দিগন্ত  তাহলে কি ?

ঘটনা দিগন্ত হচ্ছে একটি ঘটনার স্থান-কাল এর সীমানা যার  ভিতরে কি হচ্ছে তা মানুষ আর জানতে পারে না । মানে মানুষে জানার সীমানা হচ্ছে ঘটণা দিগন্ত।

ঘটনা দিগন্ত মুলত কৃষ্ণবিবরের সাথে যুক্ত। ঘটনা দিগন্তের সীমানা থেকে  আলো বাইরের কোন দর্শকের কাছে পৌছাতে পারেনা কারণ এই সীমা পর্যন্ত মধ্যাকর্ষণ শক্তি খুবই শক্তিশালী থাকে।

সহজ করে বললে ব্লাক হোলের ঘটনায় এর চারিদিকের সীমানাকে বলা যায় ঘটনা দিগন্ত।

এটি দেখতে একরঙ্গা রংধনুর মতো যার কেন্দ্র কালো। 

কৃষ্ণ বিবরের আশে পাশে আরো কিছু দিগন্ত আছে যেমন পরম দিগন্ত, আপাত দিগন্ত ইত্যাদি।

ওয়ার্মহোল কিন্তু মোটেও গরম কিছু নয়

ওয়ার্মহোল কি তাহলে ?

ব্লাকহোলের ভিতরে এমন একটি ক্ষুদ্র পথ বা সুড়ঙ্গ যার মধ্যে যদি কোন মানুষ পড়ে যান তাহলে বের হয়ে অপর প্রান্তে অন্য কোন গ্যালাক্সিতে চলে যেতে পারবে। বিশাল দুরুত্বে মানুষের অতিক্রম শুধু ওয়ার্মহোলের মধ্য দিয়েই সম্ভব। ওয়ার্মহোল কিন্তু মোটেও গরম কিছু নয় ।

এটি মানুষের একটি কল্পনা প্রসুত ধারণা। বাস্তবে এটি আছে কিনা কিংবা কিভাবে এটি কাজ করবে তা মানুষ জানে না। এর জন্য আরো অনেক গবেষণার প্রয়োজন। ১৯৩৫ সালে প্রথম এই ধারণা দেন দুই বিজ্ঞানী পরে তাদের না্মেই এটি ‘আইনস্টাইন ও রোশেন ব্রীজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। 

এই ব্রীজ শব্দটি দিয়েই আসলে ওয়ার্মহোলের ধারণা পা্ওয়া যায়। দুটি স্থান-কালকে এক করার জন্য ওয়ার্মহোল ব্রীজের মত কাজ করে। যেমন পদ্মা সেতু। মাওয়া থেকে জাজিরা প্রান্তে নদী দিয়ে পার হতে যেখানে কয়েক ঘন্টা সময় লাগত আর এখন সেখানে কয়েক মিনিট লাগে। এখানে পদ্মা সেতু ওয়ার্মহোলের মতো কাজ করছে।

কয়েক লক্ষ কোটি মাইল দুরুত্বের ‍দুটি গ্যালাক্সিতে যাতায়ত করতে যেখানে কয়েক কোটি বছর লাগবে সেখানে ওয়ার্মহোলের মধ্যে দিয়ে গেলে হয়ত কয়েক দিনে যাওয়া সম্ভব। 

একদিন মানুষ অন্য গ্যালাক্সিতে যাবে এই ওয়ার্মহোল ব্যবহার করে। যেদিন ইন্জিনিয়ারিংএর বিশাল উন্নতি ঘটবে সেইদিন এটি সম্ভব হবে।

একদিন মানুষ অন্য গ্যালাক্সিতে যাবে এই ওয়ার্মহোল ব্যবহার করে

টাইম ট্রাভেল তাহলে কি সম্ভব ?

বিজ্ঞানের সবচেয় জনপ্রিয় প্রশ্ন সম্ভবত এটাই যে মানুষ কি অতীত বা ভবিষ্যতে যে পারবে?  মানে টাইম ট্রাভেল করা কি সম্ভব। সহজ উত্তর হচ্ছে সম্ভব। তবে অনেকগুলো শর্ত সাপেক্ষে।

ওয়ার্মহোলের মধ্যে দিয়ে হলে সম্ভব। কিন্তু কিভাবে? আইনস্টাইন বলছে মানুষ যদি আলোর বেগে যেতে না পারে তবে মানুষ অতীত বা ভবিষ্যত কোথাও যেতে পারবেনা। 

তবে কখনো যদি মানুষ আলোর গতি অর্জন করতে পারে তবেই শুধু টাইম ট্রাভেল সম্ভব। 

কিন্তু জটিলতা হচ্ছে একটি পদার্থ আলোর বেগে গেলে তো পদার্থ আর পদার্থ থাকবে না, মানে মানুষ আর মানুষ থাকবেনা, পদার্থ পরিবর্তিত হয়ে শক্তিতে রুপান্তরিত হয়ে যাবে। শক্তি থেকে পুনরায় পদার্থে পরিবর্তন করতে হলে জীবন্ত বস্তু কতটা জীবন্ত থাকবে তা একটি বিশাল সমস্যা।

 তবে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং সমস্যা। এটার সমাধান হয়ত ইঞ্জিনিয়ারেরা একদিন করে ফেলবেন।

আইনস্টাইন বলছেন, মহাবিশ্বকে একটি চাদরের মতো ভাবুন। এটার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে মানুষের কয়েক লক্ষ বছর লাগবে কিন্তু চাদরটাকে যদি মুড়িয়ে একপ্রান্তের সাথে মিল করে দেয়া যায় তাহলে খুব অল্প সময়ে এই প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়া যায়। ওয়ার্মহোল আসলে এই পথটিই করে দেয়। 

যেহেতু ব্লাকহোলের ভিতর সময় থেমে যায় বা স্লো হয়ে যায় তাই এর মধ্যে দিয়ে যাবার পর আপনি যেখানে পৌঁছাবেন সেটা ভবিষ্যৎ। যদি আবার ফিরে আসেন তখন দেখবেন, যে পৃথিবী রেখে আপনি গিয়েছিলেন সেটি আর তেমন নাই, কয়েকশ বছর সামনে এগিয়ে গেছে।

তবে টাইম ট্রাভেল করে অতীতে ফেরা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।  কেউ বলছে, ভবিষ্যতে যাওয়া যত সহজ, অতীতে যাওয়া তত সহজ নাও হতে পারে। আর যদি যাওয়া যায় তবে তাতে শুধু দর্শক হিসেবে দেখতে পারবেন কিন্তু কোন ঘটনার সাথে যুক্ত হতে পারবেন না। 

যেমন ধরুণ টাইম ট্রাভেল করে আপনি অতীতে গেলেন,  এবং আপনি আপনার দাদার বিয়েটা ভেঙ্গে দিলেন অথবা ধরুন তর্কের খাতিরে তাকে মেরে ফেললেন। তাহলে তো আপনার দাদার বিয়ে হলো না বা দাদা না থাকলে তো আপনার বাবার জন্মও হলো না। আর আপনার বাবা না থাকলে তো  তাহলেও আপনারও জন্ম হলো না। 

এখন আপনি নিজেই যদি না থাকেন তাহলে ভবিষ্যৎ থেকে কিভাবে অতীতে ফিরবেন। এটা একটা প্যারাডক্স বা ধাঁধার মতো যার উত্তর আপনাকে দুটোকেই সত্য মনে হবে।

সময় সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কি? 

সময় সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যে ধারণা তা অনেক পুরোনো যাকে ‘নিউটনীয় ধারণা’ বলা হয়। যেখানে সময় লম্বা একটা ফিতার মতো, এর শুরু হয়েছে এবং তা চলছে। 

অতীত ও ভবিষ্যৎ এর ধারণাটা তাই এখানে সহজ। পৃথিবীতে বাস করে সময়ের এমন ধারণা নিয়ে আপনি পুরো জীবন পার করে দিতে পারবেন তাতে কোন সমস্যা হবে না।

কিন্তু বাস্তবে তা নয়। পৃথিবীর বাহিরের মহাবিশ্বে সময়ের এই ধারণা পুরোপুরি অকেজো।

বিজ্ঞান আগিয়ে যাবার ফলে সময়ের ধারণা পাল্টে গেছে মাত্র একশো বছর আগে। আলবার্ট আইনস্টাইন এসে সব ওলোটপালট করে দিয়েছেন। যাকে ‘আইনস্টানীয় ধারণা’ বলা যায়। মানে সময়ের শুরু বা শেষ নাই। কিংবা সময় এর গতি মহাবিশ্বের সকল স্থানে সমান নয়।

যেমন ধরুণ আপনি যদি ব্লাক হোলের চারপাশ দিয়ে দশ বছর ঘোরেন (পৃথিবীর সময় অনুযায়ী) এবং আপনার যমজ ভাই যদি পৃথিবীর চারপাশ দিয়ে দশ বছর ঘোরেন। তারপর আপনারা দুজনে যদি ঢাকায় ফিরে আসেন তাহলে দেখবেন, আপনার ভাই আপনার চাইতে বেশি বুড়ো হয়ে গেছে, মানে আপনার ভাইয়ের বয়স বেড়েছে দশ বছর, আর আপনার বয়স বেড়েছে হয়ত দুই বছর।

এর কারণ হলো ব্লাক হোলের ‘মধ্যাকর্ষণ শক্তি’ পৃথিবীর চাইতে এত বেশি ছিল ব্লাক হোল সময়কে টেনে ধরে স্লো করে দিতে পেরেছিল। তাই আপনার ক্ষেত্রে বয়স বা সময় বাড়তে পারে নাই।

পৃথিবীতে কোন বস্তুকে আমরা পরিমাপ করি দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতা দিয়ে। এজন্য একে বলা হয় ‘ত্রিমাত্রিক জগৎ’। যা আমরা সহজে বুঝি।

আইনস্টাইন এসে আরেকটা মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন, সেটি হলো সময়। মহাবিশ্বের কোন কিছুকে পরিমাপ করতে হলে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চ্তা এবং সময় দিয়ে পরিমাপ করতে হবে। এটিকে ‘চতুর্মাত্রিক জগৎ’ বলা হয়। যা বুঝতে আমাদের কষ্ট হয়।  

‘স্পেস-টাইম’ বা স্থান-কাল নামে নতুন শব্দের যুক্ত হলো ডিকশনারীতে। 

নতুন এই ধারণাটি মহাবিশ্বের সকল বড় ঘটণাকে (ব্লাকহোল, টাইম ট্রাভেল) সহজে ব্যাখা করতে পারে।

ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ইন্টারস্টেলার (২০১৪)

যে বস্তু যত ভারি সেখানে ‘স্থান- কালের বক্রতা’ তত বেশি হয়। যেমন ব্লাকহোলের ভর এত বেশি যে সেখান থেকে যেমন আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারেনা তেমনি সেখানে সময়ও স্লো হয়ে যায়।

সময়ের আদি নিউটনীয় ধারণা আমাদের সবার মধ্যে এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে, সময় সম্পর্কে আইনস্টাইনীয় এই ধারণা আমাদের উপলব্ধিতে আনতে তালগোল পাকিয়ে যায়। 

তবে এমন একদিন আসবে যখন মানুষ এক গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সিতে ছুটো ছুটি করবে তখন নিউটনীয় ধারণা থেকে মানুষ বের হয়ে আসবে।

 এই পৃথিবীতে বাস করে সময়ের আইনস্টানীয় ধারণা উপলব্ধি করা আমাদের মতো সাধারণদের জন্য হয়ত কঠিন। এই বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের অতি ক্ষুদ্রের ক্ষুদ্র অংশে আমাদের বসবাস। এখানে বসে সময় ধীরে যাওয়া বা দ্রুত যাওয়া ব্যাপারটা আঁচ করা মুশকিল।

তবে ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ইন্টারস্টেলার (২০১৪)’ সিনেমাটি যারা দেখেছেন তারা সময়ের অতীত আর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেতে পারেণ। আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন।

তবে বিজ্ঞানের এসব ধারণা কি প্রকৃতি বা স্রষ্টার বিরুদ্ধে? ধর্ম কি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল বিজ্ঞানের এসব ধারণার বিরোধিতা করে। ধর্ম আর বিজ্ঞান কি মুখোমুখি নাকি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে?

কখনো যদি মানুষ আলোর গতি অর্জন করতে পারে তবেই শুধু টাইম ট্রাভেল সম্ভব

তাহলে বিজ্ঞান ও ধর্ম কি মুখোমুখি !

বিজ্ঞান আর ধর্মের পার্থক্য হলো, বিজ্ঞান যেখানে প্রতিনিয়ত নিষ্ঠার সাথে সঠিক সিদ্ধান্তের কাছে পৌঁছার জন্য ‘পুরাতন সত্যকেই’ অগ্রাহ্য করে ‘নুতন সত্যকে উপস্থাপণ’ করতে প্রস্তুত থাকে, সেখানে ধর্মীয় পুরোহিতরা পুরানো স্থির ধারণাকেই নিষ্ঠার সাথে ‘সত্য’ বলে ধরে নেন।

বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে, ত্রুটি সংশোধণের ক্রমধারার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ধর্মীয় বয়ানকে গোড়া থেকে অভ্রান্ত ও চিরন্তণ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়

ধর্ম স্থির আর বিজ্ঞান চলমান

ফলে বিজ্ঞান যে ব্যাখা দেয় তা আপাত দৃষ্টিতে ধর্মের অনেক ব্যাখাকে বানচাল করলেও এটা সত্য নয় যে, তা আবার অন্যসময় বিজ্ঞান দ্বারা ব্যাখা করা যাবে না।

আবার ধর্মের যেসব বয়ান বিজ্ঞানের প্রমাণের শর্তে আটকে যায় সেটাও সাময়িক, সামনের অগ্রগামী বিজ্ঞান হয়ত তার সমাধান দিয়ে দিতে পারে।

ধর্ম স্থির আর বিজ্ঞান চলমান। বিজ্ঞান স্রষ্টাকে অস্বীকার করবার ক্ষমতা দেখায় না, সে সত্যের কাছাকাছি পৌঁছানোর জন্য বারবার নিজেকে ভাঙ্গে গড়ে। 

ধর্ম একটু মধ্যম সংকটে পড়লেই বিজ্ঞানকে নাকচ করে দিতে চায়। ‘ধর্ম ও বিজ্ঞানের কি তাহলে মুখোমুখি’, এমন চটকদার বিজ্ঞাপণ তাই কিছু ব্যবসায়ীর কারসাজি, তাতে ব্যবসাটা ভালো হয় সে বিজ্ঞানের হোক কিংবা ধর্মের।

মানুষের এই বির্তক যেমন অনন্তকাল চলবে তেমনি এই বিষ্মব্রাক্ষ্মণ্ডের অজানা গল্পের পুরোটা জানা হয়ত অসমাপ্ত থেকে যাবে। নাকি সব জেনে যাবে মানুষ!! হয়ত, হয়তবা না।


পারভেজ সেলিম

একজন লেখক, সাংবাদিক এবং চলচ্চিত্রকর্মী ।


২৮৮ thoughts on “বিশ্বব্রহ্মাণ্ড: বিষ্ময়কর অসমাপ্ত এক গল্প

  1. Unquestionably believe that which you stated. Your favorite justification appeared to be on the net the simplest thing to be aware of. I say to you, I definitely get irked while people consider worries that they plainly do not know about. You managed to hit the nail upon the top and also defined out the whole thing without having side effect , people can take a signal. Will likely be back to get more. Thanks

  2. Оптимизация позиционирования в результатах поиска – важный аспект SEO. Это зависит от качества контента, бэклинков, технических аспектов. Рекомендуется использовать семантически связанные ключевые слова, такие как рейтинг сайта, SERP-анализатор, позиционный анализ и отслеживать изменения с помощью инструментов, таких как Google Analytics и SERP-трекеры.
    позиции сайта[url=https://captains-club.ru/]позиции сайта[/url][url]https://captains-club.ru/[/url]

  3. Are you searching for a stamp maker? Our business creates custom stamps for a variety of purposes. We use the latest technology to ensure each stamp is precise and of high quality. Choose from a extensive variety of sizes and designs, or send us your design for a custom stamp. We offer stamp maker fast turnaround times and excellent customer service. Let us help you create the ideal stamp.
    [url=https://stamp-maker.us/]stamp maker[/url][url]https://stamp-maker.us/[/url]

  4. First off I want to say terrific blog! I had a quick question that I’d like to ask if you don’t mind. I was curious to know how you center yourself and clear your thoughts before writing. I have had a hard time clearing my mind in getting my thoughts out. I do enjoy writing but it just seems like the first 10 to 15 minutes are wasted just trying to figure out how to begin. Any ideas or tips? Cheers!

  5. Hey I know this is off topic but I was wondering if you knew of any widgets I could
    add to my blog that automatically tweet my newest twitter
    updates. I’ve been looking for a plug-in like this for quite some
    time and was hoping maybe you would have some experience with something like this.
    Please let me know if you run into anything. I truly enjoy reading your blog and I look forward to your new updates.

  6. Have you ever considered about including a little bit more than just your articles? I mean, what you say is valuable and all. However just imagine if you added some great images or video clips to give your posts more, “pop”! Your content is excellent but with pics and video clips, this blog could definitely be one of the most beneficial in its field. Fantastic blog! Это сообщение отправлено с сайта https://ru.gototop.ee/

  7. Howdy! I know this is kinda off topic however , I’d figured I’d ask. Would you be interested in exchanging links or maybe guest writing a blog article or vice-versa? My site addresses a lot of the same subjects as yours and I feel we could greatly benefit from each other. If you are interested feel free to send me an e-mail. I look forward to hearing from you! Awesome blog by the way!

  8. Excellent goods from you, man. I have bear in mind your stuff prior to and you are just too excellent.
    I actually like what you’ve got here, certainly like what
    you’re stating and the way in which by which you assert it.
    You are making it enjoyable and you still care for to
    keep it smart. I can’t wait to learn far more from you. That is actually
    a tremendous website.
    powered by GoToTop.ee
    https://ru.gototop.ee/

  9. Everything typed made a ton of sense. However, think about this, what if you were to create a awesome post title?
    I mean, I don’t want to tell you how to run your website, but what if you added something that makes
    people want more? I mean বিশ্বব্রহ্মাণ্ড:
    বিষ্ময়কর অসমাপ্ত এক গল্প – আলোর দেশে is kinda vanilla.
    You ought to look at Yahoo’s home page and note how they create news
    titles to grab people to click. You might add a related video or a pic
    or two to get people excited about what you’ve written. In my opinion, it would make your
    blog a little livelier.

  10. My coder is trying to convince me to move to
    .net from PHP. I have always disliked the idea because of the costs.
    But he’s tryiong none the less. I’ve been using Movable-type on a
    number of websites for about a year and am anxious about switching to another platform.
    I have heard good things about blogengine.net.
    Is there a way I can import all my wordpress posts into it?

    Any kind of help would be greatly appreciated!

  11. My coder is trying to persuade me to move to .net from PHP. I have always disliked the idea because of the expenses. But he’s tryiong none the less. I’ve been using Movable-type on several websites for about a year and am nervous about switching to another platform. I have heard excellent things about blogengine.net. Is there a way I can transfer all my wordpress content into it? Any kind of help would be really appreciated!

  12. My programmer is trying to persuade me to move to .net from PHP. I have always disliked the idea because of the expenses. But he’s tryiong none the less. I’ve been using Movable-type on a variety of websites for about a year and am worried about switching to another platform. I have heard very good things about blogengine.net. Is there a way I can transfer all my wordpress content into it? Any kind of help would be really appreciated!

  13. First off I would like to say fantastic blog! I had a quick question that I’d like to ask if you don’t mind. I was interested to know how you center yourself and clear your head before writing. I’ve had a tough time clearing my mind in getting my ideas out. I truly do enjoy writing however it just seems like the first 10 to 15 minutes are usually wasted simply just trying to figure out how to begin. Any suggestions or hints? Cheers!

  14. I don’t know if it’s just me or if perhaps everybody else experiencing problems with your website. It seems like some of the written text within your posts are running off the screen. Can someone else please provide feedback and let me know if this is happening to them as well? This might be a issue with my web browser because I’ve had this happen before. Thanks

  15. What i do not realize is in reality how you’re not really a lot more smartly-liked than you may be right now. You are so intelligent. You realize therefore significantly when it comes to this topic, produced me individually believe it from so many various angles. Its like men and women aren’t fascinated unless it’s something to accomplish with Lady gaga! Your personal stuffs great. Always take care of it up!

  16. I don’t know if it’s just me or if perhaps
    everybody else experiencing issues with your blog. It appears
    as if some of the text on your posts are running off the screen.
    Can someone else please provide feedback and let me know
    if this is happening to them as well? This might be a issue with my
    internet browser because I’ve had this happen previously.
    Many thanks

  17. Не знаете, какой подрядчик выбрать для устройства стяжки пола? Обратитесь к нам на сайт styazhka-pola24.ru! Мы предоставляем услуги по залитию стяжки пола любой площади и сложности, а также гарантируем высокое качество работ и доступные цены.

  18. Today, I went to the beachfront with my kids. I found a sea shell and gave it to my 4 year old daughter and said “You can hear the ocean if you put this to your ear.” She placed the shell to her ear and screamed. There was a hermit crab inside and it pinched her ear. She never wants to go back! LoL I know this is totally off topic but I had to tell someone!

  19. What i don’t realize is in fact how you are now not really a lot more smartly-favored than you might
    be now. You’re so intelligent. You realize thus
    significantly in the case of this topic, made me for my part consider it
    from a lot of numerous angles. Its like men and women are not involved
    unless it’s something to do with Lady gaga! Your personal stuffs excellent.
    All the time handle it up!

  20. Hello would you mind stating which blog platform you’re using? I’m looking to start my own blog in the near future but I’m having a difficult time selecting between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal. The reason I ask is because your design and style seems different then most blogs and I’m looking for something completely unique. P.S My apologies for being off-topic but I had to ask!

  21. Эта статья просто великолепна! Она представляет информацию в полном объеме и включает в себя практические примеры и рекомендации. Я нашел ее очень полезной и вдохновляющей. Большое спасибо автору за такую выдающуюся работу!

  22. Эта статья – настоящий кладезь информации! Я оцениваю ее полноту и разнообразие представленных фактов. Автор сделал тщательное исследование и предоставил нам ценный ресурс для изучения темы. Большое спасибо за такое ценное содержание!

  23. I believe everything posted was actually very logical. But, what about this?
    what if you typed a catchier post title? I mean, I don’t want to tell you how to run your website, however what if you added something
    that grabbed a person’s attention? I mean বিশ্বব্রহ্মাণ্ড: বিষ্ময়কর অসমাপ্ত এক গল্প –
    আলোর দেশে is a little plain. You could look at Yahoo’s front page and
    see how they create post titles to grab viewers interested.
    You might try adding a video or a pic or two to get people interested about everything’ve written. Just my opinion, it might make your posts a little bit more interesting.

  24. What i do not realize is in truth how you are no longer really a lot more well-favored than you
    might be right now. You’re very intelligent. You already know therefore considerably when it comes to this topic, produced me in my opinion imagine
    it from numerous various angles. Its like men and women don’t seem to be interested except it is one thing to accomplish with Woman gaga!
    Your own stuffs outstanding. All the time handle it
    up!

  25. Эта статья – источник ценной информации! Я оцениваю глубину исследования и разнообразие рассматриваемых аспектов. Она действительно расширила мои знания и помогла мне лучше понять тему. Большое спасибо автору за такую качественную работу!

  26. With havin so much written content do you ever run into any issues of plagorism or copyright violation? My site
    has a lot of exclusive content I’ve either created myself or outsourced
    but it appears a lot of it is popping it up all over the web without my permission. Do you know any solutions to
    help reduce content from being ripped off? I’d definitely appreciate
    it.

  27. Эта статья является настоящим источником вдохновения и мотивации. Она не только предоставляет информацию, но и стимулирует к дальнейшему изучению темы. Большое спасибо автору за его старания в создании такого мотивирующего контента!

  28. Unquestionably believe that that you said. Your favorite justification appeared to be on the net the easiest factor
    to be aware of. I say to you, I definitely get annoyed whilst other people think about worries that
    they plainly do not recognize about. You controlled to hit the nail upon the top and also outlined out the entire
    thing without having side-effects , other people can take a signal.
    Will probably be again to get more. Thanks

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x