আনন্দমঠ: কেন এত বিতর্কিত?


পারভেজ সেলিম


‘আনন্দমঠ’ নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্কটি হচ্ছে, এটি সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে ভরপুর। মুসলমানদেরকে এখানে ভিলেন বা খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে লেখক যে ভাষা করেছেন তা মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতি লেখকের ব্যক্তিগত ঘৃণার বহি:প্রকাশ ঘটেছে বলেই অনেকে মনে করেন।

গল্পের সময়কাল যখন বাঙলার মসনদে মীরজাফর আলী খান। বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্ষমতায় বসেছেন কিছুদিন আগে। মুসলমানদের মধ্যেও এই বিশ্বাসঘাতককে নিয়ে নেতিবাচকতা কয়েকশ বছর ধরে চলমান। তবে বঙ্কিম যখন তার পরিচয় দেন ‘পাপিষ্ঠ নরাধম বিশ্বাসহন্তা মনুষ্যকুলকলঙ্ক’ হিসেবে, তখন মনে হয় তিনি শুধু ব্যক্তি মীরজাফরকে বলছেন না, তিনি যেন পুরো মুসলমান সম্প্রদায়কেই কটাক্ষ করছেন।

শুধু তাই নয়, মুসলমানদের বাড়ীকে ‘শূকুরনিবাস’ মনে করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে চায় বঙ্কিমের চরিত্ররা।

পরতে পরতে যেখানে বিদ্বেষ ছড়ানো, সেখানে মুসলমানরা ঘৃণাভরা এই উপন্যাস প্রত্যাখান করিবে এ আর অস্বাভাবিক কি! 

‘আনন্দমঠে’র গল্পের কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে কিনা? এটি আরেকটি চলমান বিতর্ক। এর উত্তর অবশ্য লেখক নিজে দিয়েছেন।

‘আনন্দমঠ’ প্রকাশিত হইলে পর, অনেকে জানিতে ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিলেন, ঐ গ্রন্থের ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে কিনা। সন্নাসী-বিদ্রোহ ঐতিহাসিক বটে, কিন্তু পাঠককে সে কথা জানাইবার বিশেষ প্রয়োজনের অভাব। এ বিবেচনায় আমি সে পরিচয় কিছুই দেই নাই। ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা আসার উদ্দেশ্য ছিল না, সুতারাং ঐতিহাসিকতার ভাণ করি নাই। এক্ষণ দেখিয়া শুনিয়া ইচ্ছা হইয়াছে, ‘আনন্দমঠে’র ভবিষ্যৎ সংস্করণে সন্নাসী বিদ্রোহের কিঞ্চিৎ ঐতিহাসিক পরিচয় দিব।

পাঠক মহাশয় অনুগ্রহ-পূর্ব্বক আনন্দমঠকে…’ঐতিহাসিক উপন্যাস’ বিবেচনা না করিলে বড় বাধিত হইবো।’

লেখকের ভাষ্য মতে, এটি ইতিহাস নির্ভর কিন্তু ঐতিহাসিক নয়। সেটাই সত্য বটে।

যেমন সত্যিকারে সন্নাসী বা ফকিরেরা উত্তরবঙ্গের ছিল, বীরভুমের নয়। অথচ উপন্যাসের পটভুমি বীরভুমের জঙ্গলে। তাছাড়া তারা লুটেরা ছিল, কেহ কেহ অযোধ্যা সুবায় জমিদারিও করিত; মাতৃভুমির উদ্ধার, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মত মহাব্রত, সন্নাসীদের স্বপ্নেরও অতীত ছিল। 

কিন্তু উপন্যাসে বঙ্কিম তাদের দেশমাতৃকার সন্তান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের কর্মকে গৌরবে মহিমান্নিত করেছেন। এটা লেখকের কল্পনার এক অনন্য শক্তির প্রকাশ।

অনেকের মতে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারণার সূচনা এই উপন্যাসের মাধ্যমে। আজ ভারতের রাজনীতিতে হিন্দুত্ববাদের যে আগ্রাসন, তার দর্শণের সুতিকাগার মনে করা হয় বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠ’কে।

মুসলমানদের প্রতি যে ঘৃণা ছড়ানো পুরো উপন্যাস জুড়ে সেটাই এই উপন্যাসকে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত করেছে। 

লেখক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান মনে করেন, মুসলমানের টাকায় পড়াশুনা করে (হাজী মহসীন বৃত্তি) বঙ্কিমচন্দ্র তার ঋণ শোধ করেছিলেন মুসলমানের বিরুদ্ধেই কলম ধরে।

‘আনন্দমঠে’ মুসলমান রাজাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে গিয়ে উপন্যাসের কথিত ‘হিন্দু সন্তানেরা’ যেভাবে সাধারণ মুসলমানদের ঘরে আগুন দিচ্ছে, হত্যা করছে এবং সেটাকে লেখক যেভাবে জাস্টিফাই করছে, তখন মনে হয় লেখকের কল্পণার চরিত্রগুলোর ধর্মীয় চেতনাকে দেশপ্রেমের মোড়কে পরিবেশ করে নতুন এক নেতিবাচক রাজনৈতিক ধারণা জন্ম দিচ্ছেন লেখক।

‘আনন্দমঠ’ প্রকাশ পায় ১৮৮২ সালে।  উপমহাদেশের ইতিহাসে কাকতালিয়ভাবে সে বছরেই তামিড়নাড়ুর সালেম শহরে এক মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। তাতে নিহত হয় দুপক্ষের বহু মানুষ। মসজিদ ভাঙ্গে হিন্দুরা আর মন্দির ভাঙ্গে মুসলমানেরা। এটিই ব্রিটিশ ভারতে শুরু হওয়া হিন্দু-মুসলমানের প্রথম দাঙ্গা।

পরবর্তীতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয় এই হিন্দু মুসলমানের রক্তাত্ব দ্বন্দের কারণে। দেশরক্ষা আর বিপ্লবের নামে সে এক ভয়াবহ মানুষ হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছিল হিন্দু আর মুসলমানেরা। 

কলকাতায় একদিনে পাঁচহাজার মুসলমাকে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট, তার প্রতিশোধ হিসেবে দুই মাসের মধ্যেই বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালিতে পাঁচ হাজার হিন্দুকে কচুকাটা করা হয়েছিল। সময়টা ১৯৪৬ সালে ১০ অক্টোবর।

বঙ্কিমের ‘আনন্দমঠ’ সরাসরি এই সকল দাঙ্গার জন্য দায়ী না হলেও শিক্ষিত হিন্দুদের মনে মুসলিম বিদ্বেষের যে বীজ রোপিত হয়েছিল তার চরমতম বহি:প্রকাশ ঘটে পরবর্তী সত্তর বছরে। ফলাফল দেশভাগের রক্তাত্ব সমাপ্তি। এখন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উপমহাদেশের রাজনীতির মুল হাতিয়ার।

উপন্যাসের চতুর্থ খন্ডের প্রথম পরিচ্ছদের এক ভয়াবহ দৃশ্যের অবতারণা করেছেন লেখক। 

সেই এক রাত্রের মধ্যে গ্রামে গ্রামে নগরে নগরে মহাকোলাহল পড়িয়া গেল। সকলে বলিল, ‘মুসলমান পরাভূত হইয়াছে, দেশ আবার হিন্দুর হইয়াছে। সকলে একবার মুক্তকণ্ঠে হরি হরি বল |’ গ্রাম্য লোকেরা মুসলমান দেখিলেই তাড়াইয়া মারিতে যায়। কেহ কেহ সেই রাত্রে দলবদ্ধ হইয়া মুসলমানদিগের পাড়ায় গিয়া তাহাদের ঘরে আগুন দিয়া সর্বস্ব লুঠিয়া লইতে লাগিল। অনেক যবন নিহত হইল, অনেক মুসলমান দাড়ি ফেলিয়া গায়ে মৃত্তিকা মাখিয়া হরিনাম করিতে আরম্ভ করিল, জিজ্ঞাসা করিলে বলিতে লাগিল, ‘মুই হেঁদু’।

বঙ্কিমের কল্পিত দৃশ্যগুলোরই যেন বাস্তব চিত্রায়ন দেখতে পাই  হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময়গুলোতে। 

বঙ্কিমেরচন্দ্রের চরিত্ররা সশস্ত্র হিন্দু বিপ্লবী। অথচ ‘শত্রু মুসলমানদের’ হটাতে ‘আরেক শত্রু’ ইংরেজদের হাতে নিজের দেশকে তুলে দিতে তাদের কোন অনুশোচনা ছিল না। এতটাই বিদ্বেষ ছিল মুসলমানদের প্রতি।

উপন্যাসের শেষ পরিচ্ছদে এসে লেখকের পুরো বক্তব্যটাই আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শেষ অংশটুকু যেন উপন্যাসের চাইতে সুলখিত প্রবন্ধ হয়ে উঠেছে।

এসময় স্বামী সত্যানন্দের সাথে তার গুরুর যে বিতর্কটি হয় তা ক্লাসিক বির্তকের মর্যাদা পেতে পারে।

যদিও শেষ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হওয়া যায়না, তবু বৃহৎ স্বার্থে ক্ষুদ্রের বলিদানের যে দৃশ্য কল্পণা করেছেন লেখক, তা অনন্য।

দেশ বা রাস্ট্রের ধারণা বঙ্কিমের এই উপন্যাসের এক যুগান্তকারি চিন্তার বহি:প্রকাশ। আহমদ ছফা তো মনে করেন, বঙ্কিমের সাহিত্যের অবদানের চাইতে এই ‘রাষ্ট্র ধারণা’র প্রভাব কোন অংশে কম নয়।

এই উপন্যাসের ব্যবহৃত ‘বন্দেমাতরম’ গানটি দেশ স্বাধীনের পর ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

ভারতের জনগন তাদের দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটায় এখন এই গানের মধ্যে দিয়ে।

শেষ পরিচ্ছেদ :

উপন্যাসের শেষ পরিচ্ছেদে এসেই স্পষ্ট হয় গল্পের মুল দর্শনচিন্তা।

স্বামী সত্যানন্দ ঠাকুর রণক্ষেত্র হইতে কাহাকে কিছু না বলিয়া ‘আনন্দমঠে’ চলিয়া আসিলেন।

সেখানে সত্যানন্দ বিষ্ণুমন্ডপে বসিয়া ধ্যানে প্রবৃত্ত। এমন সময় চিকিৎসক আসিলেন,‘তোমার কার্য সিদ্ধ হইয়াছে, মুসলমানরাজ্য ধ্বংস হইয়াছে। আর তোমার এখন কোনও কার্য নাই। অনর্থক প্রাণীহত্যার প্রয়োজন নাই।’

সত্য বলল, ‘মুসলমানরাজ্য ধ্বংস হইয়াছে, কিন্তু হিন্দুরাজ্য স্থাপিত হয় নাই। এখনও কলিকাতায় ইংরেজ প্রবল।

তিনি। হিন্দুরাজ্য এখন স্থাপিত হইবে না- তুমি থাকিলে এখন অনর্থক নরহত্যা হইবে। অতএব চলো।

সত্যানন্দ তীব্র মর্মপীড়ায় কাতর হইলেন। বলিলেন, ‘হে প্রভু!  যদি হিন্দু রাজ্য স্থাপিত হইবে না, তবে কে রাজা হইবে? আবার কি মুসলমান রাজা হইবে?

তিনি বলিলেন, না, এখন ইংরেজ রাজা হইবে।

সত্যানন্দের দুই চক্ষে জলধারা বহিতে লাগিলো।

অনেক তর্ক শেষে, মহাপুরুষ সত্যানন্দের হাত ধরিলেন। কে কাহাকে ধরিয়াছে? জ্ঞান আসিয়া ভক্তিকে ধরিয়াছে। ধর্ম আসিয়া কর্মকে ধরিয়াছে; বিসর্জন আসিয়া প্রতিষ্ঠাকে ধরিয়াছে; কল্যাণী আসিয়া শান্তিকে ধরিয়াছে। এই সত্যানন্দ শান্তি; এই মহাপুরুষ কল্যাণী। সত্যানন্দ প্রতিষ্ঠা, মহাপুরুষ বিসর্জন।

বিসর্জন আসিয়া প্রতিষ্ঠাকে লইয়া গেল।

‘আনন্দমঠে’র গল্প এভাবেই শেষ হলো। 

সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের ক্ষমতার পারমানবিক বোমা নিক্ষিপ্ত হইল মুসলমানদের উপর। হিরোশিমা, নাগাশাকির মতো ক্ষতবিক্ষত হইলো মুসলমানের মন, উল্লসিত হইল কিছু সাম্প্রদায়িক হিন্দু। কিছু মানুষ স্তব্ধ হইলো ক্ষমতার এমন অপব্যবহার দেখে। বঙ্কিম কারো কাছে নায়ক হইল, কারো কাছে শক্তিশালী সাম্প্রদায়িক লেখক হয়ে রইলো।

বাঙলায় নতুন ইতিহাসের দ্বার উন্মোচিত হলো। রাজনীতির মাঠে সাহিত্যের প্রভাবের ইতিহাস।


পারভেজ সেলিম

লেখক,সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী


(প্রথম পর্ব : আনন্দমঠ: মুসলিম বিদ্বেষ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের জন্ম

১৫ thoughts on “আনন্দমঠ: কেন এত বিতর্কিত?

  1. ดูเว็บโป๊ ไทยคุณภาพที่คัดสรรหนังXมาอย่างดีไม่มีโฆษณาแบบ Porn Hd โป๊จากทั่วโลกอย่าง beeg hqporner pornhub xvideos xnxx xhamster tube8 ที่ไม่ทำให้ผู้ชมทุก ดูหนังโป๊ และไม่ได้มีแค่นั้นเรายังมี คลิปโป๊ vk 18+ onlyfans จากทางกลุ่มลับที่หาดูยากรวมทั้ง เกย์ เลสเบี้ยน สาวสอง ทอมดี้ ควย ที่คอยรองรับทุกท่าน อีกทั้งเรายังรับประกันความดูก่อนใครโดยชมผ่านเว็บ ดูหนังโป๊ หี ดูหนังโป๊ฟรี เว็บไซต์ดูหนังโป๊ออนไลน์ยอดนิยม สามารถรับชมผ่านมือถือและคอมพิวเตอร์ได้ หนังโป๊ หนัง18+ หนังโป๊เด็ก เย็ดสด

  2. ดูหนังออนไลน์ HD พากย์ไทย เต็มเรื่อง มาสเตอร์ ดูหนังHD 2023 ดูหนังใหม่ หนัง ดูหนังฟรี ดูหนัง เว็บดูหนังออนไลน์ หนังมาใหม่ Master zoom หนังออนไลน์ ซูม ดูหนังฟรี พากย์ไทย นำมาให้ชมกันแบบฟรี ดูหนังออนไลน์ 2024ดูหนังสนุก ดูหนังฟรี ไม่มีสะดุด ไม่มีโฆษณากวนใจ ดูหนังออนไลน์ HD พากย์ไทย เต็มเรื่อง มาสเตอร์ ดูหนังHD 2023 ดูหนังใหม่ หนัง ดูหนังฟรี ดูหนัง เว็บดูหนังออนไลน์ หนังมาใหม่ Master zoom หนังออนไลน์ ซูม ดูหนังฟรี ดูหนังออนไลน์ HD พากย์ไทย เต็มเรื่อง มาสเตอร์ ดูหนังHD 2023 ดูหนังใหม่ หนัง ดูหนังฟรี ดูหนัง เว็บดูหนังออนไลน์ หนังมาใหม่ Master zoom หนังออนไลน์ ซูม ดูหนังฟรี

  3. ดูหนังโป๊ หนังเอ็ก หนังโป๊ฟรี หนังX หนังAV คลิปโป๊ XXX หี ควย | Teeneeweb.com ดูเว็บโป๊ beeg hqporner pornhub xvideos xnxx xhamster tube8 ดูหนังโป๊ และไม่ได้มีแค่นั้นเรายังมี คลิปโป๊ vk 18+ onlyfans เกย์ เลสเบี้ยน สาวสอง ทอมดี้ ที่คอยรองรับทุกท่าน ดูหนังโป๊ โป๊ของเรา หนังโป๊เด็กเย็ดสด

  4. This article was incredibly insightful! I was captivated by the thoroughness of the information and the clear, engaging way it was delivered. The depth of research and expertise evident in this post is remarkable, significantly elevating the content’s quality. The insights in the opening and concluding sections were particularly compelling, sparking some ideas and questions I hope you will explore in future articles. If there are any additional resources for further exploration on this topic, I would love to delve into them. Thank you for sharing your expertise and enriching our understanding of this subject. I felt compelled to comment immediately after reading due to the exceptional quality of this piece. Keep up the fantastic work—I’ll definitely be returning for more updates. Your dedication to crafting such an excellent article is highly appreciated!

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x