পারভেজ সেলিম
সাল ১৯২৪
বিয়ের পর রানুর সাথে কবির সম্পর্কের ছেদ পড়েছে।
রবী বাবু এবার যাচ্ছিলেন দক্ষিন আমেরিকার দেশ পেরুতে। জাহাজে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যাত্রা বিরতি দিয়ে বিশ্রাম নিতে তাকে যেতে হয় আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে।
এই খবর যখন ভিক্তরিয়া ওকাম্পের কাছে পৌঁছালো তখন তিনি বিচলিত হয়ে পড়লেন।
১৮৯৯ সালের ৭ এপ্রিল আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে জন্ম ওকাম্পোর। রবীর সাথে দেখা হবার ১২ বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন বার্নাডো এস্ত্রাদাকে। সালটা ১৯১২।

স্বামীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে ১৯২১ সালে প্রেমিক মার্তিনেথের সাথে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু সে সসম্পর্কও তাকে শান্তি দিতে পারেনি। প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন।
জীবনের এমন কঠিন সময়ে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি তাকে জীবন যন্ত্রণায় কিছুটা শান্তি দিয়েছিল।
বিশ্বসাহিত্য তার ছিল বেশ জানা শোনা। সেসময় স্প্যানিশ ভাষার লেখালেখিতে বেশ নাম ডাক হয়েছে তার। পরে ফরাসী ও ইংরেজিতেও সাহিত্য চর্চা করতে শুরু করেন ভিক্তোরিয়া।
পৃথিবীর অন্য প্রান্তের বৃদ্ধ কবি রবীন্দ্রনাথকে বসিয়েছিলেন মনের কোঠায়।তাই কবির আর্জেন্টিনা আসার খবরে বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন এই লেখিকা।
এতদিন রবীন্দ্রনাথকে তিনি প্রাণ দিয়ে চিনতেন এবার সরাসরি সেবা করার সুযোগ পাবেন।
১৯২৪ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ১৯২৪ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত ভিক্তোরিয়া কাটালেন রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য। নিজের গহনা বিক্রি করে রবীর জন্য বাড়ি ভাড়া করে রেখেছিলেন কাছে।
এর আগে স্প্যানিশ কবি হিমেনেথ ১৯১৫-১৯২২ সালের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের ২২ টি বই এর অনুবাদ করে ফেলেছেন। যার মধ্যে দিয়েই রবী এক পরিচিতি মুখ স্প্যানিশ সাহিত্যে।
চৌত্রিশ বছরের ওকাম্পের আবির্ভাব হলো তেষট্টি বছরের রবীন্দ্রনাথের জীবনে।তার নাম তিনি দিয়েছিলেন বিজয়া। পূরবী কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গও করেছিল তাকে।

৬৩ বছর বয়সে আর্জেন্টাইনের ভিক্টোরিয়া ওকাম্প হয়ে যান রবীর বিজয়া।
‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’। এই গান তিনি লিখেছিলেন ৩৪ বছর বয়সী ওকাম্পের জন্যই।
সকল চিঠিপত্র ঘাটাঘাটি করলে বোঝা যায় ওকাম্পো মনে প্রানে এবং শরীরে রবীকে কাছে পেতে চাইতেন, কিন্তু রবীবাবুর সবকিছুতে হয়ত সায় ছিল না।
তিনি বাধ্য হয়ে বললেন..
‘দয়া করো দয়া করো, আরণ্যক এই তপস্বীরে/ ধৈর্য্য ধরো,ওগো দিগঙ্গনা’।
তবু ওকাম্পের বয়ানে জানা যায় শুধু একদিন রবীন্দ্রনাথের হাত স্পর্শ করেছিল ওকাম্পের স্তনাগ্র।

রবীন্দ্রনাথে অবহেলা আর নির্ল্পিতায় পরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন ওকাম্প। এতে কবিও বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন, সেই বেদনা দিয়ে ফুটিয়েছেন কাব্য…
‘একদিন নিজেকে নুতন নতুন করে সৃষ্টি করেছিলে মায়াবিনী
আমারই ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে
আজ তারি উপর তুমি টেনে দিলে
যুগান্তের কালো যবনিকা
বর্নহীন, ভাষাবিহীন।’
ভালোবেসেও কেন সরে গিয়েছিলেন ওকাম্পো। সেটা হয়ত অনুমান করা যায়, রবীন্দ্রনাথেকে শরীরে ও মনে চেয়েছিলেন ওকাম্প কিন্তু ররবীন্দ্রনাথ সরে থাকতেন এক বিশেষ রোমান্টিকতায়।
পরবর্তীতে পিয়ের দ্রিউলা রোশেল নামক এক ফরাসী যুবকের সাথে প্রেম হয়েছিল ওকাম্পোর। যদিও সেই সম্পর্ক খুব সুখকর ছিলনা।

১৯৩০ সালে প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের ছবির একক প্রদর্শনী করেছিলেন বিজয়া।
প্যারিসে ছবি প্রদর্শণ করে ইউরোপের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন তার প্রিয় রবীন্দ্রনাথকে। এরপরই যেন তার কর্তব্য শেষ। এবার বিদায়ের পালা। তাদের শেষ দেখা হয় Gare du Nord রেল স্টেশনে।
ট্রেন ছেড়ে দিলো… আরেকটি প্রেমময় বেদনাবোধ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ পৌঁছে যাচ্ছেন জীবনের শেষ দশকের দিকে।
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর ৩৮ বছর পর ১৯৭৯ সালের ২৭ জানুয়ারি ৮৮ বছর বয়সে মারা যান রবীন্দ্রনাথে ওগো বিদেশিনী ওকাম্পো ।
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
আরো পড়ুন :
রবীন্দ্রনাথের দশ নারী উপাখ্যান (পুরো পর্ব)
আনা তড়খড়: রবীন্দ্রনাথের প্রথম নারী
লুসি স্কট: রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিদেশিনী
কাদম্বরী দেবী: রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় প্রেম
মৃণালিনী দেবী: রবীন্দ্রনাথের একমাত্র বউ
ইন্দিরা দেবী: ভাতিজির সাথে রবীর প্রেম
তোমিকো ওয়াদা কোরা: রবীন্দ্রনাথের জাপানী প্রেম
রানু মুখার্জি: রবীন্দ্রনাথ তখন ৫৭ রানু ১২
ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো: রবীর ওগো বিদেশিনী
মৈত্রেয়ী দেবী: গুরুদেবের সঙ্গে প্রেম
হেমন্তবালা দেবী: রবীন্দ্রনাথের শেষ নারী
শেষের কথা: রবীন্দ্রনাথের দশ নারী
আরো পড়ুন :
Ahaa, its nice dialogue concerning this article at this place at this website, I have read all that,
so at this time me also commenting at this place.
Nice post. I learn something totally new and challenging on blogs I
stumbleupon on a daily basis. It’s always interesting to read content from other
writers and practice a little something from other sites.
Wow! After all I got a webpage from where I be able to really obtain valuable information regarding my study
and knowledge.
Nie zgadzam się z tym punktemNa naszej stronie znajdziecie bardziej aktualne informacje.
Good day! I could have sworn I’ve visited this site before but after looking at some of the posts I
realized it’s new to me. Anyhow, I’m definitely delighted I found it
and I’ll be bookmarking it and checking back often!