
পারভেজ সেলিম ।।
আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী যোদ্ধা কে? কে মাত্র ৩২ বছর বয়সে পুরো পৃথিবীর অর্ধেকটাই দখল করে ফেলেছিল? টানা ১০ বছরের যুদ্ধে কে পৃথিবীর ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছিল? গ্রিস থেকে ভারতের পাঞ্জাব দখলে কে একটি যুদ্ধেও হারেনি ? কে এই প্রভাবশালী ব্যক্তি যার কথা মানুষ দুই হাজার বছর পরও মনে রেখেছে? হ্যাঁ তিনি হচ্ছেন আলেকজান্ডার, আলেকজ্যান্ডার দ্যা গ্রেট !!!
কিন্তু কিভাবে এত অল্প বয়সের একজন তরুণ এত বিশাল সম্রাজ্য জয় করলো ? কতটা শক্তিশালী ছিল তার সেনাবাহিনী? কি এমন সম্মোহোনি ক্ষমতা ছিল তার, যা গত কয়েশ বছর ধরে চেষ্টা করেও অন্য কেউ করতে পারেনি ? কি এমন শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি জ্ঞানী অ্যারিস্টেটলের কাছ থেকে ?
এত পরাক্রমশালী যোদ্ধা কেন ভারতবর্ষ জয় করতে পারলেন না? অথবা ব্যক্তি আলেকজান্ডার কি উভয়কামি ছিলেন ? কিভাবে মৃত্যু হলো বিষে নাকি ম্যালেরিয়ায় ?
আলেকজেন্ডার কি সত্যিই মহান যোদ্ধা ছিলেন নাকি ছিলেন একজন দুর্ধর্ষ খুনি? পুরো লেখা জুড়ে আমার সেই উত্তর খুঁজব। নজর দেবো আলেকজান্ডারের জন্ম, মৃত্যু, শিক্ষা, প্রেম এবং যুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর দিকে। শুরুটা করা যাক আলেকজান্ডারের জন্ম দিয়ে।
দেবতা জিউসের পুত্র নাকি রাজা ফিলিপের :
বর্তমান ইউরোপের একটি ছোট দেশ মেসিডোনিয়া। এর রাজধানী ছিল পেলা, আর রাজা ছিলেন দ্বিতীয় ফিলিপ। রাজা ফিলিপের ছিল ৭ জন স্ত্রী।
সাল ৩৫৬ খ্রি.পূর্বের জুলাই মাস। যীশু খ্রিস্টের জন্মেরও সাড়ে তিনশ বছর আগের কথা। রাজার চতুর্থ স্ত্রী অলিম্পিয়াসের গর্ভে জন্ম নেয় ইতিহাসের নাক বদলে দেয়া এক যোদ্ধা। তার নাম তৃতীয় আলেকজেন্ডার বা মেগাস আলেকজেন্ডার। প্রায় ২৪০০ বছর আগে জন্ম নেয়া এই মহান যোদ্ধাকে সবাই এখন চেনেন ‘আলেকজেন্ডার দ্যা গ্রেট’ নামে।
কিন্তু আলেকজান্ডার কি রাজা ফিলিপের পুত্র ছিলেন? নাকি এই যোদ্ধার জন্মে দেবতাদেরও কোন হাত ছিল?
মা অলিম্পিয়া বিশ্বাস করতেন, রাজা ফিলিপের ঔরসে নয়, আলেকজান্ডারের জন্ম দেবতা জিউসের ঔরসে। তাই তার মতে আলেকজান্ডারের পিতা ফিলিপ নয় দেবতা জিউস। ছোটবেলা থেকে তিনি বারবার সে কথাই মনে করিয়ে দিতেন আলেকজান্ডারকে।
প্রাচীন গ্রিক জীবনীকার প্লুতার্ক তার লেখায় এইসব অলৌকিক ঘটনার সত্যতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন। তার মতে বিবাহের দিন অলিম্পিয়ার গর্ভে বর্জপাত হয়েছিল এবং ফিলিপ একদিন স্বপ্নে দেখেছেন অলিম্পিয়ার যৌনিদ্বার সিংহের ছাপযুক্ত সিলমোহর দিয়ে বন্ধ ।
এছাড়া আলেকজান্ডারের জন্মের দিন রাজা ফিলিপ দুটি রাজ্য জয়ের সুখবর পেয়েছিলেন এবং তার ঘোড়া অলিম্পিক গেমসে জয় লাভ করেছিল। প্রাচীন বিশ্বের একটি আশ্চর্য স্থাপনা আর্তেমিসের মন্দিরও সেই দিন সেটি পুড়ে গিয়েছিল। প্লুতার্কের মতে এসব ঘটনাই প্রমাণ করে আলেকজান্ডার স্বাভাবিক মানব সন্তান নয়, সে দেবতাদের শক্তি নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিল।
তবে এখনকার ইতিহাসবিদরা মনে করেন, এসব অলৌকিক ঘটনা দিয়ে আলেকজান্ডারকে অতিমানবীয় বানানো চেষ্টা করা হয়েছিল যা একেবারে সত্য নয়। আর এটা বেশি করেছিলেন তার মা অলিম্পিয়াস। উচ্চাকাঙ্খী অলিম্পাস আলেকজান্ডারের ঐশ্বরিক পিতৃত্বের কাহিনী প্রচলণ করেছিলেন। তিনি মনে করতেন তার ছেলে দেবতাদের শক্তি নিয়ে একদিন গ্রিক সাম্রাজ্য জয়ের সাথে পুরো বিশ্বজয় করবে!! তার জন্মে ঐশ্বরিক কোন ক্ষমতার প্রমাণ না পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে আলেকজেন্ডার, বিশ্বজয়ের মধ্যে দিয়ে মায়ের সেই স্বপ্ন কিছুটা পুরণ করেছিল !
শিক্ষা : অ্যারিস্টেটল যার শিক্ষক !
এথেন্সের অ্যারিষ্টটল ছিলেন দুনিয়ার একজন শ্রেষ্ট শিক্ষক এবং দার্শনিক। আলেকজেন্ডারের যখন ১৩ বছর বয়স তখন শিক্ষক হিসেবে অথেন্স থেকে মেসিডোনিয়ায় আনা হয় জ্ঞানী অ্যারিস্টটলকে !! কিন্তু কি কি শিক্ষা দিতেন অ্যারিস্টটল?
রাজনীতি, শরীরবিদ্যা, যুদ্ধবিদ্যা, বিজ্ঞান, ইতিহাস, চিকিৎসাবিদ্যা, দর্শণসহ সকল বিষয়ে কিশোর আলেকজান্ডারকে শিক্ষা দিয়েছেন অ্যারিস্টেটল। তবে সবচেয়ে বেশি পড়িয়েছেন হোমারের সাহিত্য। হোমারের বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়াডের প্রধান চরিত্র ‘আর্কিলিস’কে তার মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছিল অ্যারিস্টেটল। নিজেকে ‘আর্কিলিসে’র মত মহান যোদ্ধা হয়ে ওঠার শিক্ষা দিয়েছিলেন তিনি !!
ছোট আলেকজেন্ডারের মনে প্রশ্ন ছিল জয় করার কিছুই তো বাকি রাখেনি তার বাবা, গোটা গ্রিসই তো ইতিমধ্যে জয় করে ফেলেছে পিতা ফিলিপ। তাহলে সে বড় হয়ে কি জয় করবে ? অ্যারিস্টটল ছোট আলেকজান্ডারকে শেখাতেন, বাবা তো শুধু গ্রিস জয় করেছে বাকি বিশ্বটাই তো এখনও পড়ে আছে জয় করার জন্য। অনুমান করা যায় কিশোর আলেকজান্ডারের মনে পুরো বিশ্ব দখল করার বাসনা অ্যারিস্টটলই ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন !!
তবে আলেকজান্ডারের বিশ্ব জয়ের পিছনে তার মায়ের উচ্চাকাঙ্খা কাজ করেছে বলে মনে করেন অনেকে। মা অলিম্পিয়াস সবসময় তাকে ছোট্ট ‘আর্কিলিস’ বলে ডাকতেন। হোমারের ‘ইলিয়াডে’ আলেকজেন্ডার এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে পরবরর্তীতে সকল যুদ্ধে সাথে করে নিয়ে যেতেন এই মহাকাব্যটিকে।
টলেমি, ফিলোটাস, হেফাসটিওন সহ অনেক রাজকীয় ছেলেদের একসঙ্গে শিক্ষা দিতেন অ্যারিস্টেটল। পরে আমরা দেখব বিশ্বজয়ে ছোটবেলার এই বন্ধুদেরও অবদান কম নয়। অ্যারিস্টটলের তিন বছর শিক্ষা শেষ হয় আলেকজেন্ডারের বয়স যখন ১৬ বছর। এরপর আলেকজান্ডার যোগ দেয় মেসিডোনিয়ার সেনাবাহিনীতে।
অ্যারিস্টটল তার দুটি বই উৎসর্গ করেছিলেন এই মহান যোদ্ধাকে। আর শিক্ষককে নিয়ে আলেকজান্ডারের মুল্যায়ণ হচ্ছে ‘পিতা ফিলিপ আমাকে শুধু জন্ম দিয়েছে আর শিক্ষক অ্যারিস্টেটল আমাকে দিয়েছে সুন্দর জীবন ‘
মেসিডোনিয়ার রাজা: বয়স যখন ২০ !
৩৩৬ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দ। দেহরক্ষির হাতে রাজা ফিলিপ নিহত সাথে সাথেই মেসিডোনিয়ার রাজা ঘোষণা করা হয় আলেকজান্ডারকে। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। এর সাথে সাথেই আলেকজান্ডার হয়ে ওঠেন পুরো গ্রিক সম্রাজ্যের মহান অধিপতি। সে সময়ের রাজনীতিটুকু বুঝতে আরো দেড়শ বছর পিছনে ফিরে যেতে হবে ।
৫০০ খ্রি.পূ। সে সময়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি শহর রাষ্ট্র ছিল এথেন্স এবং স্পার্টা। আর্ট, যুদ্ধ আর দর্শণে এথেন্স ছিল জগৎবিখ্যাত। আর স্পার্টাদের ছিল অসীম সাহসী এক সেনাবাহিনী।
এই দুই দেশ একত্রে হয়ে বহি:শক্র পারস্যে আগ্রাসন প্রতিহত করেছিল। সালটা ৪৮০ খ্রি পূ । এথেন্স ও র্স্পাটানদের একজোট হয়ে করা সাহসী যুদ্ধের জন্য তার পারস্যকে হারিয়ে দিতে পেরেছিল। তবে তারা তাদের পবিত্র মন্দির রক্ষা করতে পারেনি। পারস্য বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছিল মন্দিরটিকে। তাদের এমন আক্রমণের কারণে গ্রিক বাসীরা যুগ যুগ ধরে ‘পারস্য সাম্রাজকে’ শক্র হিসেবে গণ্য করে আসছিল।
আরো পড়ুন :
গ্রিকের শহর রাস্ট্রগুলো এক হয়ে শক্র মোকাবেলা করার মতো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারছিল না। উল্টো একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতে করতে নিজেরাই দূর্বল হয়ে পড়েছিল।
ঠিক এই সময়ে গ্রিসের দক্ষিনে মেসিডোনিয়া নামের নতুন শক্তিশালী এক শহর রাষ্ট্রের উত্থান ঘটে। মেসিডোনিয়া ।
মেসিডোনিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ এক শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করেন। ‘সারিসা’ নামের নতুন এক যুদ্ধাস্ত্র এবং ‘ফ্যালানক্স’ নামের বিশেষ যুদ্ধ পদ্ধতি আয়ত্ব করে তারা একের পর এক পরাজিত করতে থাকেন গ্রিকের অন্য শহর রাষ্ট্র গুলোকে ।
ফিলিপের স্বপ্ন ছিল গোটা গ্রিসকে শক্তিশালী এক রাষ্ট্রে পরিনত করে পারস্যে সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। কিন্তু সকল রাষ্ট্র ফিলিপকে তাদের নেতা মানতে রাজি ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৩৩৮ খ্রি.পূর্বাব্দে ‘করোনিয়ার’ যুদ্ধে এথেন্স ও থিবসকে পরাজিত করার পর পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। প্রায় সকল রাষ্ট্র রাজা ফিলিপের নেতৃত্বে আসতে বাধ্য হয়। ১৮ বছরের পুত্র আলেকজান্ডারও এই যুদ্ধে সাহসী ভুমিকা পালন করেছিলেন।
‘করোনিয়া’ যুদ্ধ জয়ের পর গ্রিসের সকল নগর রাষ্ট্রগুলো ফিলিপের নেতৃত্ব মেনে, একমাত্র র্স্পাটা ছাড়া। গঠিত হয় একটি নতুন ইউনিয়ন যার নাম ‘হেলেনিক লীগ’।
এই লীগের মুল উদ্দ্যশ্য পুরো গ্রিকের শক্তি এক করে পারস্য আক্রমণ করা। পারস্য আক্রমণের সর্বাধিনায়ক হন রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ। কিন্তু হঠাৎ ফিলিপ নিহত হওয়ায় ভেস্তে যায় পারস্য আক্রমণের সকল পরিকল্পনা।
আরো পড়ুন :
ফিলিপের মৃত্যুর পর জটিলতা তৈরি হয় কে হবেন মেসিডেোনিয়ার রাজা ।
রাজা ফিলিপের ছিল ৭ স্ত্রী । দুই পুত্র, পাঁচ কন্যা । আলেকজান্ডার ছিলেন তার ২য় পুত্র । প্রথম পুত্র মানষিকভাবে অস্বাভাবিক ছিল বলে তার উত্তরাধিকার হবার সম্ভাবনা ছিল না। আলেকজান্ডারই ছিল যোগ্য উত্তরসুরি কিন্তু আলেকজান্ডারের রাজা হওয়াটা সহজ ছিলনা। কি ছিল তার বাধা ?
তার প্রধান বাধা ছিল তার মা অলিম্পাস । কারন জন্মসুত্রে তিনি মেসিডোনিয়ান ছিলেন না, তিনি ছিলেন এপাইরাসিও। এজন্য মা অলিম্পিয়াস সব সময় সন্দেহ করতেন যে রাজা ফিলিপ আলেকজেন্ডারকে কখনোই তার উত্তরসুরি করবেন না। তাকে নিজ চেষ্টায় অর্জন করতে হবে এই সিংহাসন।
যদিও আলেকজেন্ডার এসব বিশ্বাস করতেন না। তিনি ভাবতেন পিতা-পুত্রের সুসম্পর্কে কোন ঘাটতি নাই এবং তিনিই হবেন তার যোগ্য উত্তরসুরি। সেভাবেই তিনি প্রস্তুতও হচ্ছিলেন।
কিন্তু আলেকজান্ডারের বিশ্বাস ভাঙ্গে যখন জানতে পারেন তার পিতা আবার বিয়ে করছেন সেনাপ্রধান আত্তালোসের ভাইয়ের মেয়ে ‘কিলোপাত্রা ইউরিদিকে’। রাজা ফিলিপ এই বিশুদ্ধ মেসিডোনিয়ান নারীকে বিয়ে করছেন যাতে তার সিংহাসনের উত্তরসুরি পিতা মাতা দুজনের দিক থেকেই মেসিডোনিয়ান হন।
এটা শোনার পর আলেকজান্ডার বাবার মুখে মদের পাত্র ছুড়ে মেরেছিলেন এবং রাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ছয় মাস পর বাবা আবার ডেকে পাঠালে তার অভিমান ভাঙ্গে এবং রাজ প্রসাদে ফিরে আসেন ।
৩৩৬ খ্রি.পু বোন ‘কিলোপেত্রা’র বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন দেহরক্ষি ‘পাউসিনিয়াসের’ ছুরির আঘাতে নিহত হন রাজা ফিলিপ। আর সাথে সাথে সেখানকার রাজ সদস্য ও সেনাবাহিনী তাদের রাজা ঘোষণা করেন আলেকজান্ডারকে।
আরো পড়ুন :
২০ বছর বয়সে রাজা :
মাত্র বিশ বছর বয়সে রাজা হন আলেকজান্ডার। রাজা হয়েই একের পর এক হত্যা করতে থাকেন তার বিরুদ্ধের রাষ্ট্রীয় লোকদের। মেসিডোনিয়ার আগের রাজা চতুর্থ আমুনতাসকে হত্যা দিয়ে শুরু। এরপর মা অলিম্পাস হত্যা করেন তার সৎ মা কিলোপেত্রার দুইসন্তানকে, পরে কিলোপেত্রাও আত্নহত্যা করে। কিলোপেত্রার বাবা সেনাপ্রধান আত্তালোসকে হত্যা করা হয় সিংহাসন সুরক্ষা করার নামে। এভাবে নিজের ঘরের সাম্ভাব্য সকল বিরোধীকে হত্যার মাধ্যমে তিনি একজন শক্তিশালী রাজা হিসেবে তার অবস্থান সুদৃঢ় করেন।
এছাড়া মাত্র ২০ বছর বয়সি রাজাকে মেনে নিতে চাইলেন না অনেক রাষ্ট্র। বিদ্রোহ দেখা দিল বিভিন্ন দেশে। নিজের ঘর সামলানোর পর পুরো গ্রিসের এইসব রাষ্ট্রের বিদ্রোহ দমন দিয়েই শুরু হয় রাজা আলেকজান্ডারের যুদ্ধজীবন।
সেনাবাহিনী: কত শক্তিশালী ছিল এই আলেকজান্ডারের বাহিনী?
আলেকজান্ডার যখন বিশ্ব জয়ের জন্য বের হযন তখন তার বাহিনীর বাহিনীর মোট সদস্য ছিল প্রায় ৯২ হাজার । যার মধ্যে পদাতিক ছিল ৪৮,০০০ হাজার, অশ্ববাহিনী ছিল ৬,১০০ হাজার, নাবিক ছিল ৩৮,০০০ আর সাথে ছিল ১২০টি জাহাজ। পুরো গ্রিকের বিভিন্ন রাজ্য থেকে এসেছিল এসব সৈন্য। বাহিনীর সৈন্যরা সজ্জিত থাকতো বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দিয়ে ।
সবার অগ্রভাবে থাকতো নয় হাজার মেসিডোনিয়ান ‘ফ্যালানজাইট’। এই পদাতিক বাহিনীর মুল অস্ত্র ছিল ‘সারিসা’। সারিসা হল ১৮ ফুট লম্বা একটা ফলকা যুক্ত শক্ত পাইপ বা লোহার রড়। তাদের মুল শক্তি ছিল বিশেষ কায়দায় যুদ্ধ করা, যাকে বলা হয় ‘ফ্যালানক্স’। শক্রর আক্রমন ঠেকাতে মুহুর্তের মধ্যে সৈন্যদের ঢালগুলো একত্রিত করে এক নিছিদ্র ঢালের পাহাড় বানাতে পারতো তারা । আর সাধারনের চাইতে দ্বিগুন লম্বা ‘সারিসা’ নিয়ে আগিয়ে যেতে পারতো এই বাহিনী। যাদের নেতৃত্বে থাকতো সেনাপ্রধান ফারমিওন ।
আরো পড়ুন :
আর এই বাহিনীর পাহারায় থাকতো তিন হাজার ‘হাইপাসপিস্ট’। যাদের অস্ত্র ছিল ছোট বর্ষা আর ঢাল। নেতৃত্বে ছিল সেনাপ্রান ফারমিওনের পুত্র নিকানর ।
দ্বিতীয় সারিতে থাকতো ১২ হাজার গ্রীক ‘হপসলাইট’। গ্রীক থেকে আসা এসব পদাতিক বাহিনীর অস্ত্র ছিল ঢাল আর ৪ ফুট লম্বা বর্ষা।
ফ্যালানাক্সদের পিছনে ফিলোটাসের নেতৃত্বে থাকতো ‘দ্যা কিং কম্পিনিয়ন’ নামের একটি দূর্ধর্ষ অশ্ববাহিনী, যারা ঝটিকা আক্রমণ করে আবার ফ্যালানক্সদের ঢালের আড়ালে লুকিয়ে পড়তে পারতো।
এছাড়া বুলগেরিয়া ও থেসেলী, ইলেরিয়া থেকে আগত অন্যান্য অশ্ববাহিনী গুলোর অস্ত্র ছিল তীর ধনুক। ক্যালাস, ইরেজিয়াস ও ক্যাসান্ডারের নেতৃত্বে ছিল আরো কিছু অশ্ববাহিনী।
আলেকজান্ডার নিজে নেতৃত্ব দিতেন বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত অশ্ববাহিনী ‘রয়েল স্কোয়াড্রনের’। যুদ্ধের ময়দানে আলেকজান্ডারের সাহসী আর বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বে এই বাহিনী হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুসংগঠিত অপারেজেয় সেনাবাহিনী। এই সুজ্জিত বাহিনী টানা ৮ বছরের যুদ্ধে গ্রিক থেকে পাঞ্জাব দখল করে ফেলেছিল যেখানে তাদের একটি যুদ্ধেও পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে হয়নি
কোন কোন যুদ্ধ জিতেছিল আলেকজান্ডার ?
পৃথিবীতে যে কয়জন যোদ্ধা কোন যুদ্ধে হারেননি আলেকজান্ডার তার মধ্যে একজন। তার চাইতে বেশি রাজ্য দখল করতে পেরেছিল শুধুমাত্র আর একজন আর তিনি হলেন চেঙ্গিস খান। কিন্তু কোন কোন যুদ্ধ জিতেছিল আলেকজান্ডার?
রাজা হবার আগে আলেকজান্ডার সবচেয়ে বড় যুদ্ধ জিতেছিল ‘করোনয়িায়’ যুদ্ধ। এই যুদ্ধ ছিল এথেন্স ও থিবস বাহিনীর বিরুদ্ধে। ১৮ বছর বয়সে জেতা এই যুদ্ধে ছোটবেলার বন্ধু, টলেমি, হেফাসটিওন, ফিলোটাস খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিলেন ।
অনেকে মনে করেন এথেন্স জয়ের কারনেই পরবর্তীতে তার মেসিডোনিয়ার রাজা হবার পথ সুগম হয়েছিল। অনেকেই তখন বাবার চাইতে বেশি শক্তিশালী যোদ্ধা ভাবতে শুরু করে পুত্রকে। আর এই জয়ে ফিলিপ সমগ্র গ্রিকের প্রধান সেনানায়ক হয়ে উঠেছিলেন। এরপরই পারস্য জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ।
খ্রি.পু. ৩৩৬ সালে দেহরক্ষির হাতে ফিলিপ নিহত হলে, রাস্ট্র ক্ষমতা চলে আসে পুত্রের হাতে। অল্প বয়সী আলকেজান্ডারকে তখন অনেক রাস্ট্র রাজা হিসেবে মেনে নিতে চায়নি। তিনি জানতেন ঘর সামলাত না পারলে বাইরে গিয়ে কিছুই করা যাবে না। তাই গ্রিকের বিদ্রোহী রাজ্য গুলোকে শক্তহাতে দমন শুরু করেন আলেকজেন্ডার।
থেবস, এথেন্স, থিসিলি সহ অনেক রাষ্ট্রে এক একের পর অভিযান চালান তিনি। সবাইকে ভয় দেখানোর জন্য থেবস রাজ্যকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এই শহরের ত্রিশ হাজার মানুষকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। তবে একটি বাড়ি ধ্বংস করেননি আলেকজান্ডার তা হলো কবি পিন্দারের বাড়ি। কারন কবি পিন্দারকে খুব পছন্দ করতেন আলেকজান্ডার ।
আরো পড়ুন :
পুরো গ্রিক তার নিয়ন্ত্রণে আসার পর, বাবার অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত সেনাপতি এন্টিপাতের হাতে গ্রিকের ভার দিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন পারস্য সম্রাজ্য দখলের স্বপ্ন নিয়ে । সময়টা হল ৩৩৪ খ্রি.পু বসন্তকাল। আজকের তুরুস্কের হেলস্পট দিয়ে এশিয়া যাত্রা শুরু করেন তিনি। এটা ছিল প্রাচীন ইতিহাসে সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় আগ্রাসন।
পারস্য বাহিনীর সাথে যে তিনটি বড় যুদ্ধ হয় তার প্রথমটি ‘গ্রানিকাস’ নদীর পাশে।
এই যুদ্ধে আলেকজান্ডার মৃত্যুর মুখে পড়েছিল। দুইজন পারস্যের যোদ্ধা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে আলেকজান্ডার মাটিতে পড়ে যান এবং তার বুকে ছুরি বসানোর ঠিক আগ মুহুর্তে কোথা হতে উড়ে এসে আক্রমনকারির হাত এক কোপে কেটে ফেলেছিলেন সেনাপতি ক্লাইটাস। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান আলেকজান্ডার ।
এই যুদ্ধে গ্রিকরা দুই পক্ষেই যুদ্ধ করেছিল।পারস্যের পক্ষে কিছু সৈন্য যুদ্ধ করেছিল শুধু স্বর্ন লাভের আশায় আর আলেকজান্ডার পক্ষে যুদ্ধ করেছিল বাধ্য হয়ে কারন তাদের দেশ তখন আলেকজান্ডারের দখলে। যুদ্ধ শেষে আলেকজান্ডার তাই মনে করেছিলেন গ্রিক যোদ্ধারা এই যুদ্ধে গা বাঁচিয়ে যুদ্ধ করেছেন।
‘গ্রানিকাসের’ যুদ্ধে এই অপ্রতিরোদ্ধ বাহিনীর কাছে হেরে যায় পারস্য বাহিনী। সৈন্যরা ক্ষমা প্রার্থনা করেও কেউ বাঁচতে পারেনি। কচুকাটা করা হয় পারস্য বাহিনীকে। ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড ঘটে এই যুদ্ধে। তখনকার পরাক্রমশালী পারস্য সম্রাজের বিরুদ্ধে আলেকজান্ডারের এটা ছিল এক বিশাল জয় ।
এরপর জয়ী বাহিনী সামনের দিকে আগাতে থাকলে সহজেই সবকিছু আলেকজান্ডারের দখলে চলে আসে। কিন্তু বিদ্রোহ করে বসে ছোট একটি দ্বীপ রাস্ট্র টায়ার। কোন ভাবেই আলেকজান্ডারের বশ্যতা স্বীকার করছিল না তারা। এক মাইল নদী পার হয়ে দ্বীপে যেতেও পারছিল না আলেকজান্ডারের সৈন্যরা। ৭ মাসের চেষ্টা শেষে টায়ার আক্রমণ করে আলেকজেন্ডারের বাহিনী। এর পর যা ঘটে তা ইতিহাসের আরেকটি বর্বরোচিত হত্যাকান্ড।
ছয় হাজার টায়ার বাসীকে কেটে টুকরো করা হয়, দুই হাজারজনকে ক্রশবিদ্ধ করে নদীর পাশে ফেলে রাখা হয় বাকি ৩০ হাজার নারী বৃদ্ধ ও শিশুকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পুরো যুদ্ধ জীবনে প্রথম এমন নির্মম নৃসংশ হত্যাকান্ড চালান আলেকজান্ডার । এরপর গাজা দখল করতে গিয়েও একই রকম হত্যাকান্ড ও বর্বরতার পরিচয় দিয়েছিল আলেকজান্ডারের বাহিনী ।
এরপর তারা লিডিয়া, লাইসিয়া, ফ্রিজিয়া, গডিয়াম দখল করে কোন ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই। এখানেই গড়িয়াম নটের বিখ্যাত ঘটনা ঘটে।
কয়েকশ বছর ধরে একটি ষাড়ের গাড়ী আর জোয়ালে এত জটিল করে রশির গিট বাধা ছিল যে কেউ খুলতে পারতো না। প্রচলিত ছিল এই গিট যে খুলতে পারবে সেই হবে এই দেশের রাজা এবং সেই পুরো এশিয়া শাসন করবে। আলেকজান্ডার মুহুর্তেই তলোয়ারের এক কোপে দু টুকরা করে ফেলেছিলেন সেই ‘গরডিয়াম নট’।
এরপর থেকে আপাতভাবে খুব জটিল দেখতে কোন একটি সমস্যার সমাধান যদি মুহুর্তেই খুব জোরের সাথে সহজভাবে দিয়ে দেয় তাকে বলা হত ‘গরডিয়ান নট’। পরবর্তীকালে ইংরেজি সাহিত্য এই রুপক শব্দযুগলের বহুল ব্যবহৃত হয়।
এরই মধ্যে যুদ্ধে যুদ্ধে চলে গেছে ১৮ মাস। সাল ৩৩৩ খ্রি.পূ নভেম্বর মাস। সিসিলি জয়ের পর সিরিয়ার ‘ইসাসে’ গিয়ে পারস্যে বাহিনীর কাছে আবার যুদ্ধ বাধে। এটি পারস্য বাহিনীর সাথে ২য় বড় যুদ্ধ। পারস্যের রাজা দারুয়ুস নিজে এই যুদ্ধে যোগ দেন এবং এই যুদ্ধেও প্রচুর হত্যাকান্ড ঘটে। মৃত মানুষ দেখে বুন্ধু টলেমি আলেকজান্ডারকে বলেছিলেন, ‘এই মৃত শরীরগুলো যদি পাহাড়ের খাদে দেয়া যায় তাহলে সৈন্যরা অনাসয়ে পাহাড় অতিক্রম করে যেতে পারবে’। ‘ইসাসের’ যুদ্ধে হারার পর পালিয়ে যায় পারাস্যের পরাক্রমনশালী রাজা দারুয়ুস ।
এরপর কোন প্রতিরোধ ছাড়াই মিশর সহজে দখল হয়ে যায়। বাহিনীকে রাস্তায় রাস্তায় স্বাগত জানায় মিসরবাসী । সবাই পারস্য রাজার অত্যাচারে অতিষ্ট ছিল তাদের মুক্তিদাতা হিসেবে গন্য করেছিল আলেকজান্ডারকে । তাকে তাদের সর্বোচ্চ দেবতা ‘আমুনের সন্তান’ উপাধী দেয় মিশরেরমানুষ। তাদের নতুন ফারাও হয়ে যান আলেকজান্ডার ।
এখান থেকে আবার টায়ারে ফেরত যাবার সময় খবর পান মেসিডোনিয়ার বিরুদ্ধের যুদ্ধ শুরু করেছে স্পার্টারা।
এন্টিপাত সেই যুদ্ধ ভালোভাবে সামাল দেবার ফলে আলেকজান্ডারকে আর মেসিডেোনিয়ায় ফেরত যেতে হয়নি।
আলেকজান্ডার এবার খুঁজতে বের হয় পারস্যের পালিয়ে যাওয়া রাজা দারুয়ুসকে। দারুযুস তখন বিশাল সম্রাজ্যের অন্য প্রান্তে চলে গেছে। সেখান থেকে সে যুদ্ধ না করার প্রস্তাব পাঠায় আলকেজান্ডারের কাছে। অর্ধেক রাজ্য, রাজকন্যা, সোনাদানা দিয়ে শান্তি স্থাপন করতে চায় দারুয়ুস কিন্তু আলেকজেন্ডার বলেন তিনি অর্ধেক দখল করতে আসেননি তিনি এসেছেন পুরোটাই দখল করতে।
খুঁজতে খুঁজতে ৩৩১খ্রি. পু ১অক্টোবরে ‘গুয়াগামেলা’ নামক স্থানে পারস্যের বিশাল সৈন্য বাহিনীর সাথে গ্রীক বাহিনীর দেখা হয় ।
‘গুয়াগামেলার যুদ্ধ’ পারস্যে বাহিনীর সাথে আলেকজান্ডারের শেষ বড় যুদ্ধ। পারস্যের সৈন্য ছিল ৭০ হাজার আর গ্রিক বাহিনীর সৈন্য ছিল তার অর্ধেক। এই যুদ্ধে কয়েকশ গ্রিক সৈন্য মারা যায় আর পারস্যের মারা কয়েক হাজার যোদ্ধা। কিন্তু রাজা দারুয়ুস এবারও পালাতে সক্ষম হন। ‘গুয়াগামেলা’যুদ্ধ জয়ের পরই পারস্যে আলেকাজন্ডারের দখলে চলে আসে।
এরপর রাজধানী ব্যবলিনের দিকে যাত্রা শুরু করেন আলেকজান্ডার। সুসা শহরে তাকে পারস্যের বৈধ সম্রাট হিসেবে মুকুট পরানো হয়। ব্যবিলন পৌঁছার পর এর সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হয় যান অ্যালেকজ্যান্ডার। অ্যারিস্টটলের কাছে তারা সবসময় শুনে এসেছে পারস্যের মানুষ খুবই বর্বর এবং কিন্তু বাস্তবে এত সুন্দর শহর দেখে এত মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি ও তার বাহিনী ব্যাবিলনে এসে অ্যারিস্টটলের জানাশোনা নিয়ে টিপ্পনী কেটেছিলেন।
৩৩০ খ্রি.পু. সে সময়েরআরেক সমৃদ্ধশালী শহর ‘পারসোপলিসকে’ জ্বালিয়ে দেয় আলেকজেন্ডার। কেউ বলে দেড়শ বছর আগে পারস্যের আগ্রাসনের প্রতিশোধ হিসেবে এই জঘন্য কাজ করেছেন তিনি। কেউ বলে সে এই সিদ্ধান্ত নেবার সময় মধ্যপ ছিলেন আলেকজান্ডার নয়ত এমন জঘন্য সিদ্ধান্ত তিনি নিতেন না। যেমন তিনি ব্যবিলন ও সুসা শহরের কোন ক্ষতি করেননি।
পারাস্যের পলাতক রাজা দারুযুস নির্মমভাবে খুন হন তারই গর্ভনর বেসাসের হাতে। এরপর বেসাস নিজেকে পারস্যের নুতুন রাজা ঘোষনা করেন। আর এই ঘোষনাকে কোনভাবে মেনে নিতে পারেননি আলেকজান্ডার। তিনি বলেছিলেন, ‘এক আকাশে যেমন একটাই সূর্য তেমনি এক পারস্যে একটাই রাজা থাকবে আর সেটা হল আলেকজান্ডার’।
মৃত দারুযুসকে সম্মানের সহিত পারস্যের রাজকীয় সামাধীস্থলে সমাহিত করে বেসাসকে খুঁজতে বের হয় আলেকজেন্ডার।
বেসাসকে খুঁজতে খুঁজতে বর্তমান আফগানিস্তানের কান্দাহার পর্যন্ত চলে আসে আলেকজান্ডারের বাহিনী। কুন্দুজ পৌঁছালে বেসিসের লোকজনই তাকে ধরিয়ে দেয়। বেসিসকে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে তার মৃতুদন্ড কার্যকর করে আলেকজান্ডার।
৩২৭ খ্রি পু. জ্যাকসারটিস নদীর পাশে যুদ্ধ দিয়ে তার পারস্য জয় শেষে হয় আলেকজান্ডারের বাহিনী। ততক্ষনে তিনি হিন্দুকুস পর্বত পার হয়ে এসেছেন। এই পর্বতের কথা অ্যারিস্টটলের কাছে অনেক শুনেছিলেন তিনি। আর এই পর্বতের ওপারেই পৃথিবীর শেষ প্রান্ত। এবার সেই শেষ প্রান্ত জয়ের বাসনা তার মনে উঁকি দিতে থাকে। ভারত আক্রমণের জন্য সামনে আগাতে থাকে আলেকজান্ডার।
আলেকজান্ডারের ভারত অভিযান :
আলেকজান্ডার ভারত অভিযান শুরু করেন ৩২৭ খ্রি.পু। ১৯ মাস ভারতে ছিল আলেকজান্ডারের বাহিনী। তারমধ্যে ৭০ দিন টানা বৃষ্টি হতে থাকে, এমন বৃষ্টি কখনো দেখেননি তারা। এমন জল এবং জঙ্গলের যুদ্ধ একেবার নুতন এই বাহিনীর কাছে। তারপরও তারা ‘ট্যাকসিল’ আজকের পাকিস্তানের অংশ এবং পাঞ্জাবের পুরোটায় দখল করে ফেলেন ।
কিন্তু শক্তিশালী হাতিবাহিনী নিয়ে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলে পারভাস রাজ্যের রাজা পুরুস। পুরো বাহিনীকে পর্যদুস্ত করে তোলো ভারতীয় বাহিনী। আলেকজান্ডারের বাহিনী এত বড় প্রতিরোধের মুখে আগে কখনো পড়েনি।
যুদ্ধে আলেকজান্ডারের ঘোড়া বুসেফেলিস নিহত হয়। ৮ বছর ধরে অপরাজিত বাহিনী পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছায়। তবে শেষ পর্যন্ত আলেকজান্ডারের কাছে হেরে যান রাজা পুরুস।
পরাজিত রাজাকে বন্দি করে হয় যখন আনা হয় তখন আলেকজান্ডার জিজ্ঞেস করে ‘আপনি কি আশা করেন আমার কাছে?’ রাজা উত্তর দেয় ‘একজন রাজা একজন রাজার কাছে যা আশা করে তাই’ উত্তর শুনে আলেকজান্ডার তাকে ছেড়ে দেন এবং পুরো রাজ্য ফিরিয়ে দেন।
তবে নতুন ইতিহাসবিদরা জানাচ্ছেন ভারতীয় রাজা পুরসের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন আলেকজান্ডার এবং এই যুদ্ধের আঘাতে পরে মারা যান এই শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা।
আরো পড়ুন : বখতিয়ার খলজি: বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক
সৈন্যরা দীর্ঘ ৮ বছর ধরে যুদ্ধ করতে করতে এখন ক্লান্ত। তারা বাড়ি ফিরতে চায়। বিয়েস নদীতের কাছে তারা বিদ্রোহ করে বসে। তারা আর সামনে আগাতে চায় না। গঙ্গা নদীর ওপারে ভারতের মুল ভুখন্ড ‘গঙ্গারিডাই’ নামের রাজ্যে বিশাল হাতিবাহিনী অপেক্ষা করছে। এসব শোনার পর বিশাল বাহিনীর বিপক্ষে যুদ্ধ করার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল আলেকজান্ডারের সৈন্যরা।
কিন্তু আলেকজান্ডার কিছুতেই ভারত জয় না করে ফিরবে না। বাহিনী দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। বিদ্রোহী কয়েকজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় তবু এই বিদ্রোহ থামেনা। শেষে পর্যন্ত ভারত জয়ের বাসনা ত্যাগ করে দেশে ফেরত যাবার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন আলেকজান্ডার। অধরাই থেকে যায় সারা পৃথিবী জয়ের স্বপ্ন। সালটা ৩২৫ এর ফেব্রুয়ারি মাস। শেষ হয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘ আগ্রাসন যাত্রা।
দেশে ফেরার জন্য দুটি পথে ফেরে তার বাহিনী একটি পাকিস্তানের মুরুভুমি হয়ে আরেকটি সমুদ্র পথে। ফেরার পথে রোদ গরম আর অনাহার এত সৈন্য মারা যান যে, আগের কোন যুদ্ধে এত সৈন্য মারা যায়নি। শেষ পর্যন্ত ব্যবিলনে ফিরতে সক্ষম হন তারা। এর দুবছর পর বেবিলনেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় আলেকজান্ডারের।
কারা হত্যা করতে চেয়েছিল আলেকজান্ডারকে ?
আলেকজান্ডারকে বিভিন্ন সময় হত্যার চেষ্টা করা হয়। তার কোনটিই সফল হয়নি। তবে এসব হত্যার সকল অভিযোগ যে সত্য ছিল তা নয়। তবে আলেকজান্ডারকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে অনেক কয়েকজনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় ।

ছোটবেলার বন্ধু ফিলোটাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ষড়যন্ত্র করেছিলেন আলেকজান্ডারকে হত্যার। কেউ কেউ অবশ্য বলে এ অভিযোগ সত্য নয়।
মদ্যপ অবস্থায় কোন এক নারীর কাছে ফিলোটাস বলেছিলেন, তার ও তার বাবার যোগ্যতায় আলেকজ্যান্ডার এত রাজ্য জয় করতে পেরেছে। তারা ছাড়া আলেকজান্ডার এসব অর্জন করতে পারতেন না। এমন মন্তব্যকে আলেকজান্ডার রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অপরাধ মনে করেছিলেন। তাই অপরাধের শাস্তি হিসেবে ফিলোটাসকে হত্যা করা হয়। পরে বাবা ফারমিয়নকেও হত্যা করা হয় যাতে ছেলে হত্যার প্রতিশোধ তিনি নিতে না পারেন।
আরো পড়ুন : বখতিয়ার খলজি: বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক
মেসিডোনিয়ার অভিজাত রাজকীয় এক সদস্যের ছেলে হারমোলেয়াসকে একই অভিযোগে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়।
এছাড়া একই অপরাধে আলেকজেন্ডারের অফিসিয়াল ইতিহাসবিদ ক্যালিস ফিনিসকে জেলে পাঠানো হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।
আলেকজান্ডার কি সমকামি ছিলেন ?
আলেকজেন্ডার ২৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন রুখসানাকে। তিনি ছিলেন ব্যকট্রিয়া রাজ্যের রাজকন্যা। বর্তমানে এলাকটি পড়েছে ইরানের মধ্যে। রুকসানা ভেতর যে সাহস আর ক্ষিপ্রতা দেখেছিলো, তাতেই তার মনে হয়েছে, তার অনাগত বীর সন্তানের মা হবার জন্য এর চেয়ে যোগ্য নারী আর কেউ হতে পারে না। তাই প্রথম দেখাতেই প্রেম এবং বিয়ে। অনেকে মনে করে এই বিয়ে আলেকজ্যান্ডারের এক রাজনৈতিক দূরদর্শিতা। তিনি চেয়েছিলেন নতুন দেশের মানুষের মন জয় করতে। ৩২৭ খ্রি.পু বিয়ে হয় তাদের। আলেকজেন্ডারে মৃত্যুর পর একটি পুত্র সন্তানও জন্ম দেয় রোকসানা। ১৩ বছর বয়সে সন্তান এবং মা দুজনকেই মেরে ফেরা হয়।

ভারত অভিযান ব্যর্থ হয়ে ফেরার পথে সুসায় ৮০ জন জেনারেলকে ধুমধাম করে বিয়ে দেন আলেকজান্ডার । সেই অনুষ্ঠানে নিজেও দুটি বিয়ে করেন। একজন হলেন পারস্যের পরাজিত রাজা দারুয়েসের কন্যা বারসিনে, অন্যজন পারস্যের রাজকন্যা পারেসাটিস। প্রথম স্ত্রী রোখসানা পরে তাকে হত্যা করে।

এছাড়া খুব অল্প বয়সে একজন তরুনী প্রেমে পড়ার সন্ধান পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন আলেকজান্ডারের প্রথম শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল ‘ক্যাম্পাসফি’ নামের সেই তরুনীর সাথে । পরবর্তীতে তাকে আর ইতিহাসের পাতায় কোথাও পাওয়া যায় না ।
ইতিহাসবিদেরা বলছেন, আলেকজান্ডারের ছিল তিন বউ এবং অনন্ত দুই জন পুরুষ প্রেমিক।একজন হচ্ছেন তার ছোটবেলার বন্ধু হেফাসটিওন। হেফাসটিওনকে তিনি এতটা ভালোবেসেছিলেন যে তার মৃত্যু শোকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে আলেকজেন্ডার একই রোগে মারা যান। অনেকে বলে থাকেন তার মধ্যে অত্যধিক রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল, কিন্তু সে সম্পর্ক শারিরিক ছিল কিনা তার সত্যতা খুঁজে পায়নি কেউ

তবে আরেকজন পুরুষের সাথে তার সম্পর্ক শরীর পর্যন্ত গড়িয়েছিল আর তিনি হলেন বাগোস। পারস্যের জয়ের পর বাগোসের সাথে তার দেখা হয় সুসাতে, তিনি ছিলেন রাজা দারুয়ুসের হেরেমখানার খোজা। মুত্যু পর্যন্ত বাগোস তার সাথে ছিলেন নিবিড়ভাবে। মৃত্যুর পর বাগোসের আর কোন খবর পাওয়া যায় ইতিহাসে।
আলেকজান্ডারের খুব বেশি নারী প্রীতির খবর জানা যায় না। তবে অনেক নারীর সাথে তার ভালো সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। হেরেমখানায়ও খুব কম যেতেন আলেকজান্ডার। তবে নারী পুরুষ সকলের সাথে তার বিশেষ সর্ম্পকের খবর কোন আজানা বিষয় নয়। সেই হিসেবে আলেকজান্ডার যে উভয়কামী ছিলেন তা নিশ্চিত ।
প্রিয়-অপ্রিয় : আলেকজান্ডারের কাছের ১১ জন মানুষ !
আলেকজান্ডারের আশেপাশে কারা ছিলেন ? কারা তার পরামর্শদাতা? কারা তার সহযোদ্ধা । কেমন সম্পর্ক ছিল তাদের সাথে ? শুরু করা যাক তার পিতাকে দিয়ে ।
ফিলিপ ছিলেন আলেকজান্ডারের পিতা ও মেসডোনিয়ার রাজা। যুদ্ধে এক চোখ হারানো পিতা পারস্য অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু দেহরক্ষীর হাতে নিহত হবার পর বাবার সেই স্বপ্ন পুরণের দায়িত্ব তুলে নেন আলেকজান্ডার ।
অলিম্পাস হচ্ছেন আলেকজান্ডারের মা। উচ্চাকাঙ্খী এই মা সবসময় বলতেন আলেকজান্ডারের জন্ম হয়েছে বিশ্ব জয়ের জন্য। তিনি দাবি করতেন দেবতা জিউসের সন্তান আলেকজেন্ডার। সারাজীবন মায়ের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি আলেকজেন্ডার। বিশ্ব জয়ের জন্য বের হবার পর আর কখনো দেখা হয়নি মা আর পুত্রের ।
ফারমিওনয় ছিলেন মেসিডোনিয়ার সেনাপ্রধান। যুদ্ধ জয়ে বাবার বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ এই সেনাপতির অবদান ছিল অনেক বেশি। তিনি যাতে পুত্র হত্যার প্রতিশোধ নিতে না পারেন সেজন্য তাকেও হত্যা করেছিলেন আলেকজান্ডার। এর আগে তাকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুত্র ফিলোটাসকে হত্যা করেছিলেন আলেকজান্ডার ।
আরো পড়ুন :
রামায়ণ: আদিপুরুষের হাজার বছরের গল্প
হেফোসটিওন হচ্ছেন ছোটবেলার বন্ধু এবং পুরুষ প্রেমিক। যার মৃত্যু শোকে অসুস্থ হয়ে পরে আলেকজান্ডার মারা যান। আলেকজান্ডারের ছিল তিন বউ এবং দুই জন পুরুষ প্রেমিক। হেফাসটিওন ছিলেন তাদের একজন । সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু, প্রেমিক ও সহযোদ্ধা। অনেকে মনে করেন হোমারের ‘ওডেসিতে’ ‘আর্কিলিকসে’র প্রাণের বন্ধু ও সহযোদ্ধা যেমন ছিল ‘প্যাট্রোকেলাস’ তেমনি আলেকজান্ডারের ছিলেন ‘হেফাসটিওন’।
ছোট বেলার বন্ধু ও সহযোদ্ধা টলেমি। একসাথে অ্যারিস্টটলের কাছে শিক্ষা নিয়েছেন। মৃত্যুর পর যিনি আলেকজান্ডারের লাশ ছিনিয়ে এনে সামাধি করেছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ায়। কারন এই লাশ নিয়ে শুরু হয়েছিল রাজনীতি।
সবাই মনে করতো যার কাছে আলেকাজান্ডারের লাশ থাকবে তিনিই হবেন বিশাল সাম্রাজের বৈধ উত্তরসুরি। তাই ব্যবিলন থেকে এথেন্সে ফেরার পথে টলেমি জোর করে নিয়ে যান এবং গোপনে দাফন করেন । তবে ঠিক কোন জায়গায় তাক দাফন কার হয়েছে তা কেউ জানে না শুধুমাত্র টলেমি ছাড়া। তাই আলেকজান্ডারের কবর আজ অমীমাংসিত রহস্য !!
আরো পড়ুন :
ক্লাইটাস ছিলেন সহযোদ্ধা ও জেনারেল। খুবই শক্তিশালী ও সাহসী যোদ্ধা। ‘গ্রানিকাসে’র যুদ্ধে আলেকজান্ডারকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। পারস্যের সৈন্যরা যখন তার বুকে ছুরি বসাতে যাবে এমনসময় সেই সৈন্যর হাত এ কোপে কেটে বাঁচিয়ে দিয়েছিল আলেকজান্ডারকে। পরে আলেকজান্ডারের স্বৈরাচারি বা একনায়ক হয়ে ওঠাকে মেনে নিতে পারেনি ক্লাইটাস। বলেছিলেন ‘আলেকজান্ডার অত্যাচারি অহংকারি রাজা হয়ে উঠেছে’। এই কথা শুনে রাগে উত্তেজিত মদ্যপ আলেকজান্ডার নিজের হাতে ক্লাইটাসকে খুন করেন । যদিও পরে এই খুনের জন্য অনেক অনুশোচনা করেছিলেন আলেকজান্ডার।
আরো পড়ুন :
ফিলোটাস বন্ধু ও সহযোদ্ধা এবং সেনা প্রধান ফারমিওনের ছেলে। আলেকজান্ডারকে হত্যার ষড়যন্ত্রের জন্য তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। পরে তার পিতা ফারমিওনকেও হত্যা করা হয় যাতে সে ছেলের হত্যার প্রতিশোধ নিতে না পারে। এন্টিপাত যার হাতে গ্রিক সম্রাজ দিয়ে বিশ্বজয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন আলেকজান্ডার।
পারস্যজয়ের মাঝামাঝি সময় একবার স্পার্টানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল মেসিডোনিয়া। খুব ভালোভাবে এই বিদ্রোহ দমন করে স্পার্টাদের পরাজিত করেছিল এন্টিপাত যা ফলে পারস্যে জয় অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে আসতে হয়নি আলেজান্ডারকে। আলেজান্ডারের মৃত্যুর পর তাকে হত্যা করা হয়।
রোখসানা আলেকজান্ডার প্রথম বউ এবং একমাত্র পুত্রের জননী। আলেকজান্ডার মারা যাবার তের বছর পর মা ও পুত্রদুজনকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। বাগোস ছিল পারস্যের হেরেমখানার একজন খোঁজা পুরুষ, যাকে আলেকজান্ডার ভালোবাসতেন । মৃত্যুর দিন পর্যন্ত পরম বিশ্বস্ততা আর ভালোবাসা নিয়ে পাশে ছিলেন এই যুবক। বাগোস একমাত্র পুরুষ যার সাথে আলেকজান্ডারের ভালোবাসার সম্পর্ক শরীর পর্যন্ত গড়িয়েছিল।
অ্যারিস্টটল ছিলেন আলেকজান্ডারের প্রিয় শিক্ষক ও দার্শনিক। যার কাছথেকে বিশ্বজয়ের স্বপ্ন ঢুকেছিল আলেকজান্ডারের মাথায়। তিন বছরের শিক্ষা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল আলেকজান্ডারকে।
আলেকজান্ডারের মৃত্যু রহস্য:
কিভাবে মৃত্যু হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পরাক্রমশালী এই ব্যক্তির তা আজও অমীমাংসিত । জুন মাসের ১০ তারিখ সাল ৩২৩ খ্রী.পু. তখন তার বয়স মাত্র ৩২ বছর। বেবিলনের নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে মৃত্যু হয় প্রাচীণ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি আলেকজান্ডারের।
তার মৃত্যুর সঠিক কারন আজও উন্মোচিত হয়নি কারন সেদিনকার সময় চিকিৎসা ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না, ছিলনা ফরেনসিক পরীক্ষার ব্যবস্থাও। তার মৃত্যুর সাম্ভাব্য যে কয়েকটি কারন ধারণা করা হয় তা হলো:
ম্যালেরিয়া জ্বর:
অনেকে মনে করেন তার মৃত্যু হয়েছে ম্যালেরিয়া জ্বরে। ভারতে আক্রমনের সময় দীর্ঘদিন জঙ্গলে যুদ্ধ করতে হয়েছে । সেসময় সিলিফিস মশার কামড়ে তার এই রোগ হয় দিন এবং কিছু রোগে ভোগার পর তিনি মারা যান। ঠিক একই রোগে কিছুদিন আগে তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু ও সহযোদ্ধা হেফাসটিওনেরও এর মৃত্যু হয়েছিল। কারো কারো মতে এই রোগটি ছিল টাইফয়েড অথবা কলেরা ।
আরো পড়ুন :
বিষ প্রয়োগ:
তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়েছে। কে করছে তার সঠিক নাম জানা যায়না। তবে তার বিশ্বস্ত জেনারেলরা কেউ করতে পারেন । এর কারন আলেকজান্ডারের একনায়কতন্ত্র মনোভাব, নিজেকে দেবতার আসনে বসানোসহ নানা কারনে জেনারেলদের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এসব থেকে মুক্তির জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ভারতীয় রাজার আঘাতে মৃত্যু:
এখন অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন আলেকজান্ডার ভারতীয় রাজা পুরুসের সাথে যুদ্ধ জয়ী হননি চুড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছিলেন। সেই যুদ্ধে তার প্রিয় ঘোড়া বুসেফেলিসের মৃত্যু হয় সাথে আলেকজান্ডারও মারাত্বকভাবে আহত হন। তার বুকে তীর বেঁধে যায়। আহত অবস্থায় তিনি বেবিলনে ফিরে আসেন এবং এই আঘাতের কারনে সেখানে মারা যান।
শোকের মৃত্যু:
অনেকে মনে করেন আলেকজান্ডার শোকে, দু:খে এবং হতাশায় মৃত্যু বরণ করেছেন। ভারতবর্ষ জিততে না পারার হতাশা, প্রিয় মানুষদের কাছে একনায়ক হয়ে ওঠা, অত্যাচারি অহংকারি রাজা হয়ে যাওয়াকে তিনি মেনে নিতে পারছিল না। এমনকি সহযোদ্ধা ক্লাইটাস তাকে অত্যাচারি রাজা বলায় নিজ হাতে তাকে খুন করেছিলেন। সেই হত্যার গ্লানি আর অনুশোচনায় জর্জরিত ছিলেন তিনি। এরপর সবচেয়ে বড় শোকটা আসে যখন তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু হেফাসটিওন মারা যায়। এই মৃত্যুতে আলেকজান্ডার প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বন্ধুকে বাঁচাতে না পারার কারনে চিকিৎসকে মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত দিয়েছিলেন আলেকজান্ডার।
হেপাসটিওনের মৃত্যুর কিছুদিন পর একই রোগে যুদ্ধের ময়দানে হার না মানা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পরাক্রমশালী ব্যক্তিটি যখন হার মানেন তখন তার বয়স মাত্র ৩২ বছর।
বিশাল সাম্রাজ্যের শেষ পরিনতি :
১০ জুলাই ৩২৩ খ্রি.পু। মাত্র ৩২ বছর বয়সে রহস্যজনক এক রোগে মারা যান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি আলেকজান্ডার। মারা যাবার সময় কোন উত্তরসুরি রেখে যাননি তিনি। যখন মারা যান তখন তার প্রথম সন্তান স্ত্রী রোখসানার পেটে।
তার মৃত্যুর পর এতবড় সাম্রাজ্যের মালিক কে হবেন? এমন প্রশ্ন বারবার করা হলে আলেকজ্যান্ডার শুধু ফিসফিস করে বলেছিলেন, ‘যে শ্রেষ্ঠ সেই হবে এই সাম্রাজের প্রধান’। তবে এই নিয়েও মতভেদ আছে।অনেকে দাবি করেন তিনি ফিসফিস করে সেনাপতি ‘ক্রাইটাস’এর নাম বলেছিলেন কিন্তু সেখানে তিনি উপস্থিত না থাকায় অন্যরা বলে বেড়ায় যে তিনি বলেছে ‘ক্রাটাস্টোস’ মানে ‘টু দ্যা স্ট্রংগেস্ট’ তার মানে যে শ্রেষ্ট এবং শক্তিশালী সেই হবে পরবর্তী রাজা।
আরো পড়ুন :
তার মৃত্যুর পর চার টুকরো হয়ে যায় তার সম্রাজ্য। আর মৃত্যুর সাথে সাথেই তার লাশ নিয়ে শুরু হয় তার জেনারেলদের মধ্যে দ্বন্দ। তার এই মৃতদেহ নিজের কাছে রাখলে সেই হবে বৈধ উত্তরসুরি এটাই ছিল সবার চিন্তা। মৃতদেহ নিয়ে সবার মধ্যে দ্বন্দ যখন চরমে তখন একটি সোনায় মোড়ানো গাড়িত করে মৃতদেহ মেসিডোনিয়ায় পাঠানো হয়।
কিন্তু রাস্তায় তার মৃতদহে হাইজ্যাক করে মিসরের আলেকজান্দ্রিয়াতে দাফন করেন বন্ধু সহযোদ্ধা টলেমি। যদিও কোথায় তাকে সমাহিত করা হয়েছে তা কেউই জানে না। আলেকজান্ডারের সমাধিস্থল তাই আজও একটি অমীমাংসিত রহস্য।
মেসিডোনিয়া ও গ্রীস দখল করে ক্যাসানডার, ব্যবিলন দখলে যায় টলেমীর, আর ভারতে অংশটুকু যায় জেনারেল সেলুকাসের দখলে। যদিও তার মৃত্যু দুই বছরের মধ্য ভারতে আলেকজান্ডারের শাসন শেষ হয় মৌর্য সম্রাজের উত্থানের কারনে।রোকসানা অন্যদুই স্ত্রীকে হত্যা করে এবং নিজে মেসিডোনিয়া চলে যায় শাশুড়ী অলিম্পাসের কাছে।
মৃত্যুর ১৩ বছর পর মেসিডোনিয়ায় পুত্রের সাথে রোখসানাকেও বিষ প্রযোগে হত্যা করে ক্যাসানদ্রোস। যাতে ভবিষ্যৎ কোন উত্তরসুরি না থাকে। মা অলিম্পিয়াসকেও প্রথমে মৃত্যদন্ড দেয়া হলেও সৈন্যরা মহান আলেকজান্ডারের মাকে খুন করতে অপরাগতা জানান। পরে তাকে পাথরছুড়ে হত্যা করে ক্যাসানদ্রোসের পরিবার। আর ক্যাসানদ্রোস মধ্য গ্রিসের রাজা হন এন্টিপাতকে হত্যা করে।
আলেকজান্ডারের ভালোবাসার পুরুষ বাগোস যে মুত্যুর দিন পর্যন্ত পরম মমতা আর ভালোবাসা নিয়ে সাথে ছিল, তার খবর ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে যায়। আর কোন হদিস পাওয়া যায় না ।
আলেকজান্ডারের বিশেষ কিছু চমকপ্রদ ঘটনার দিকে নজর দেয়া যাক
দুই চোখের রং:
আলেকজান্ডারের দুই চোখের রং ছিল দুই রকম। তার একটা চোখ ছিল কালো অন্ধকার আর একট ছিল আকাশের মতো নীল। এটাকে বলা হয় ‘হেডারোক্রোমিয়াম ইরোডাস’। পৃথিবীতে এক হাজার জন মানুষের মধ্যে মাত্র ছয় জনের এমনটা হয়ে থাকে।
ঘোড়ার নাম বুসেফেলিস :
আলেকজান্ডারের ঘোড়ার নাম ছিল বুসেফেলিস। প্রাচীন গ্রিকে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল প্রানীটি। ৩২৬ খ্রি.পূ হাইডোসপিসের যুদ্ধে মারা যায়। মৃত্যু আগ পর্যন্ত সকল যুদ্ধে ঘোড়াটি তার সাথে ছিল। এ নিয়ে একটি মিথ চালু আছে।
যখন এই ঘোড়াটি তার বাবা কিনতে যায় তখন কেউ ঘোড়াটিকে কেউ সামলাতে পারছিল না। কিন্তু কিশোর আলেকজান্ডার বুঝতে পারছিলেন কি সমস্যা। তাই তার্র্র্র বাবার সাথে বাজি ধরেছিল যে সে ঘোড়াটিকে বশে আনতে পারবে। বাবাও রাজি হলেন। আলেকজান্ডার দেখলেন ঘোড়াটি তার নিজের ছায়াকে ভয় পাচ্ছে, সে ঘোড়ার মাথাটি সূর্য থেকে ঘুরিয়ে দিলেন যাতে ছায়া দেখা না যায়। এরপর ঘোড়ার পিঠে চলে আলেকজান্ডার দৌড়াতে থাকেন। ঘোড়ার নাম রাখেন বুসেফেলিস যা অর্থ ষাড়ের মাথা।
আরো পড়ুন :
অ্যারিস্টটল ও ডায়াজিনাস :
বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল তার সরাসরি শিক্ষক ছিলেন ও আর সে সময়ের আরেক বিখ্যাত দার্শনিক ডায়াজিনাসের সাথে তাদের সাক্ষাতের কথোপোকথন এখনও বিখ্যাত হয়ে আছে।
এই জ্ঞানী ছিলেন আরাম-আয়েশ আর পার্থিব বস্তু বিবর্জিত। তিনি একটি পিপার মধ্যে থাকতেন, তার একটি থালা, একটি আলখাল্লা আর একটি মাত্র লাঠি ছিল সম্বল ।
অথেন্স জয়ের পর আলেকজেন্ডার এই জ্ঞানী মানুষটিকে দেখতে এসে বলেছিলেন, ‘আমি কি করতে পারি আপনার জন্য ? ডায়াজিনাস স্পষ্ট এবং তৎক্ষনাৎ বলেছিলেন ‘আপতত একটু সরে দাঁড়াও যাতে রোদটুকু আমার কাছে আসতে পারে, কারন তুমি আমাকে যা দিতে পারো না তা থেকে আমাকে বঞ্চিত করতে পারো না’ ।
আশেপাশের অনেকে এ নিয়ে ঠাট্টা করলে আলেকজেন্ডার বলেছিলেন’ আমি যদি আলেকজেন্ডার না হতাম তবে আমি ডায়াজোনিস হতাম’। এটা শোনার পর দার্শনিক অবশ্য বলেছিলেন অন্যভাবে ‘আমি যদি ডায়াজনিস না হতাম তাহলে আমিও ডায়াজিনাস হতে চাইতাম’।
শহরের নাম :
আলেকজান্ডারের নামে ৭০ টি শহরের নামকরন করা হয়েছিল। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় তাকে সমাহিত করা হয়। তার প্রিয় ঘোড়া বুসেফেলিসের নামেও কয়েকটি শহরের নামকরন হয়েছিল। এখনও পাকিস্তানে এই নামে একটি শহর আছে বলে জানা যায় ।
প্রথম ইউরোপিয়ান :
আলেকজান্ডার প্রথম ইউরোপিয়ান যিনি এশিয়া দখল করেছিলেন এবং এত বড় সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পেরেছিলেন। একমাত্র আলেকজান্ডারই ১৫ বছরে একটি যুদ্ধেও হারেনি ।
গরডিয়ান নট :
এশিয়া মাইনর বা আজকের তুরস্কের একট দেশ ছিল ‘গরডিয়ন’। আর সেই দেশে কোন রাজা ছিল না। একটা ষাড়ের গাড়িতে একটি জোয়ালের রশি জটিল গেরো দিয়ে বাধা ছিল। প্রচলিত ছিল যে এই জটিল গেরো কেউ খুলতে পারবে না। তবে যদি কেউ খুলতে পারে সেই হবে এই দেশের রাজা এবং সে পুরো এশিয়া শাসন করবে । আলেকজেন্ডার এটা শোনার পর তরবারি বের করে এক কোপে কেটে দুটুকরো করে ফেলে সেই গেরো ।
এর পর থেকে আপাতভাবে খুব জটিল দেখতে কোন একটি সমস্যার সমাধান যদি মুহুর্তেই খুব জোরের সাথে সহজভাবে কেউ দিয়ে দেয় তাকে বলে ‘গরডিয়ান নট’। ইংরেজি সাহিত্যে রুপক হিসেবে খুব ব্যবহৃত হয় এই ‘গরডিয়ন নট’। শেক্সপিয়ারও এটি ব্যবহার করেছেন তার সাহিত্যে ।
আরো পড়ুন :
মা অলিম্পিয়াস:
মা অলিম্পিয়াস দ্বারা খুবই প্রভাবিত ছিলেন আলেকজান্ডার। দেশ জয়ে বের হবার পর সেই মায়ের সাথে তার আর কখনো দেখা হয়নি। আলেকজেন্ডার যখন ভারত অভিযান ব্যর্থ হয়ে ব্যবিলনে ফেরেন তখন মা ছিলেন ম্যসিডোনিয়ায়। তাকে আনতে চেয়েছিলেন ব্যবিলনে তবে তার আসার আগেই মারা যান আলেকজান্ডার ।
বাবার হত্যাকারি মা :
বাবার হত্যার পিছনে তার মা অলিম্পাস অথবা আলেকজান্ডার নিজে জড়িত ছিল বলে অনেকে ধারণা করেন। যদিও এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে মায়ের সকল কাজ ও কর্মে এটি অস্বাভাবিক বলে মনেও হয়না অনেকের ।
জুলকারনাইন :
ইসলাম ধর্মে এক পরাক্রমশালী বাদশার নাম বলা আছে তিনি হলেন ‘জুলকারনাইন’। অনেকের মতে আলেকজান্ডারই জুলকারনাইন। মধ্যপ্রাচ্য তাকে বলে ‘ইস্কানদার’ আর ভারতে এসে সেই নাম হয়ে গেছে ‘সিকান্দার’। ইতিহাসের জুলকারনাইন, ইস্কানদার, সিকান্দার ও আলেকজান্ডার আসলে একই ব্যক্তি বলে মনে করেন অনেকে । আবার আলেকজান্ডার জুলকারনাইন নন বলেও বিশ্বাস আছে মুসলমানদের মধ্যে ।
আলেকজান্ডারের কবর :
আলেকজান্ডারকে আলেকজান্দ্রিয়ায় সমাহিত করেছিল তার সহযোদ্ধা বন্ধু টলেমি। কিন্তু কোথায় তাকে দাফন করা হয়েছে তা কেউ জানেনা। আলেকজান্দ্রিয়ায় কোথায় শুয়ে আছে তা আজো এ অমীমাংসিত রহস্য
মহান যোদ্ধা নাকি দূর্ধর্ষ খুনি?
দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই এই তর্ক জড়িয়েছেন যে আলেকজান্ডার কি একজন মহান যোদ্ধা নাকি একজন দূর্ধর্ষ খুনি? আলেকজান্ডারকে প্রথম গ্রেট উপাধি দেয়ে রোমানরা এসে। আর একজন দেশ দখলকারি হত্যাকারি হিসেবে দেখেন আধুনিক সময়ের অনেক মানুষ। আসলেই তার কোন পাল্লা ভারি ? একটু নজর দেয়া যাক ।
প্রথমে আলেকজান্ডারের বর্বতার ঘটনাগুলোর দিকে নজর দেয়া যাক। আলেকজান্ডার ক্ষমতা হাতে পেয়েই বিদ্রোহ দমনের নামে থিবস শহরে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেণ। ২০ হাজার মানুষকে দাস বানিয়েছিল যা তিনি না করলেও পারতেন। এসব করেছেন যেন তার নৃশংসতা দেখে মানুষ ভয় পায়।‘টায়ার’ নামের ছোট্ট দ্বীপ রাস্ট্রেও তিনি ভয়াবহ নৃসংশতা চালিয়েছে, ‘গাজায়’ ও একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ফেরার পথে ‘পোরসোপলিস’ শহর জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।
তাকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বন্ধু সহযোদ্ধা ফিলোটাসকে হত্যা করেছেন। সাথে ফিলোটাসের পিতা সেনাপ্রধান ফারমিনওনকে খুন করিয়েছেন যাতে তিনি সন্তান হত্যার প্রতিশোধ নিতে না পারে। একই অভিযোগে আরো কয়েকজনকে হত্যা করেছেন আলেকজান্ডার।
তাকে অহংকারী অত্যাচারি রাজা বলায় ,সহযোদ্ধা ও জেনারেল ক্লাইটাসকে নিজ হাতে খুন করেন মদ্যপ আলেকজান্ডার।
প্রেমিক বন্ধু হেফাসটিওন মারা যাবার পর দেবতাকে উৎসর্গ করার নামে কয়েকশ মানুষ বলি দিয়েছিল আলেকজেন্ডার। ভারত অভিযানে যেতে না চাওয়ায় কয়কশ সৈন্যকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন এই যোদ্ধা। শুধু এসব নৃশংসতা আলেকাজান্ডারকে একজন দূর্ধর্ষ খুনি চরিত্র হিসেবে প্রমাণের জন্য যথেষ্ট ।
কিন্তু তাকে গ্রেট বা মহান উপাধি দেবার পিছনেও নিশ্চয়ই কিছু যুক্তি ছিল। সেগুলো কি ? ‘থেবস’ শহর ধ্বংস করেছিলেন কিন্তু কবি পিন্দারের বাড়ি ধ্বংসে তার মন সায় দেয়নি। ‘টায়ারে’র মানুষদের নৃসংশভাবে হত্যা করেছিলেন কিন্তু রাজাদের স্বসম্মানে রেখেছিলেন।
সব রাজ্য দখল করেই ধ্বংস করে ফেলেননি যেমনটা করেছিলেন চেঙ্গিস খান। পারস্যের রাজা দারুয়ুসকে পরাজিত করার পর তার বউ সন্তানকে আদর আপ্যায়নের মধ্যে রেখেছিলেন। দারুয়ুসকে মৃত অবস্থায় পাবার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে নিজে সমাহিত করেছিলেন।
আরো পড়ুন :
বখতিয়ার খলজি: বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক
যে দেশ জয় করেছেন সেখানকার রীতিনীতি মানতে চেয়েছিলেন আলেকজান্ডার। সেই দেশের পোষাক পরেছেন নিজের কৃষ্টি কালচার জোর করে চাপাতে চাননি সেই দেশের মানুষকে। ‘পারকনসিস’ বা হাঁটু বাঁকা করে রাজাকে সম্মান জানানো ছিল পারস্যের সংস্কৃতি। পারস্য জয়ের পর নিজের সৈন্য ও জেনারেলদের মধ্যে এই প্রথা চালু করেছিলেন শুধু পারস্য সংস্কৃতিতে আপন করতে। যদি এ নিয়ে সেনাবাহিনী বিরোধীতা করেছিল অনেকে তবু তিনি তা করেছিলেন ।
রোখসানার মতো একজন সাধারন রাজকন্যাকে বিয়ে করেছেন জেনারেলদের বিরোধিতা সত্যেও। এটাকে আলেকজান্ডারে একটি বিশেষ মানবিক গুন হিসেবে দেখেন অনেকে। তবে অনেকে অবশ্য বলেন এটা তার রাজনৈতিক দুরদর্শিতা। নতুন রাজ্যের মানুষের মন জয় করতে তিনি রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন ।
ভারতের রাজা পুরুসকে পরাজিত করার পরও রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। নারীদের প্রতি তার সহমর্মিতার কথাও জানা যায়। হেরেমখানায়ও খুব একটা যেতেন না আলেকজান্ডার। অথচ একজন সামান্য হেরেমেখানার খোঁজা বাগোসকে ভালোবেসে আমৃত্যু কাছে রাখতে তার একটুও বাঁধেনি। অনেক দাসদের মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি ।
ভারতবর্ষ জয় না করেই শেষ পর্যন্ত সৈন্যদের চাওয়ার কাছে নিজেকে সমর্পন করে ফিরেও এসেছেন। জীবনে কখনো পরাজিত না হওয়া আলেকজান্ডার নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়েছেন সহযোদ্ধাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে। পুরো পৃথিবী জয় না করেই ফিরে যাওয়াই হয়তো আলেকজান্ডারকে ‘মহান যোদ্ধা’ করেছে ।
শেষ কথা :
পৃথিবীতে ইতিহাস লিখে রাখা হয় শুধু বিজয়ীদের ভাষ্যে! যে জেতে এখনও তাকে ‘সিকান্দার’ বলা হয় । জুলকারনাইন, ইস্কান্দার, সিকান্দার কিংবা আলেকজান্ডার যেই হোক না কেন, যুগে যুগে মানুষ এমন একজন যোদ্ধাকে কল্পনা করেছে যে কখনো হারবেনা শুধু জিতেই যাবে। ইতিহাসে শুধু জিতে যাবার এই মিথের একজন নায়ক প্রয়োজন ছিল। আলেকজান্ডার সেই মিথের প্রয়োজন মিটিয়েছে। ইতিহাসের প্রভাবশালী এই চরিত্র তাই কারো কাছে ‘দ্যা গ্রেট’ কারো কাছে ‘অপারাজেয় খুনি’ হিসেবে হাজার বছর ধরে বেঁচে আছেন আরো হাজার বছর হয়ত বেঁচে থাকবেন ।
pg slot99 เกมสล็อต ค่าย พีจี ถือเป็นค่าย เกมสล็อตออนไลน์ มาแรงตลอดหลายปี ที่ผ่านมา เปิดตัวใหม่ มาใน รูปแบบเกมสล็อต 3D มีเกมสล็อต น่าสนุกตื่นเต้น ที่นักเดิมพัน ในการเข้าเล่น
ทดลอง เล่นสล็อต pg SLOT สมัคร เกมสล็อต เว็บตรง เกมฟรี สล็อต ทดลองเล่นฟรี ถอนได้ แล้ววันนี้ทางเว็บไซค์ได้รวบรวมเกมสล็อตที่น่าสนใจให้ทุกท่านได้ทดลองเล่นฟรีมากกว่า 100 เกม
정품 비아그라,비아그라구매,비아그라구입,처방전없이 초간편주문.합리적인가격.비아그라 퀵배송,비아그라온라인약국,시알리스.각종 발기부전치료제 판매 전문 온라인스토어 13년동안 단 1건도 가품판매에 관한 스캔들이 없는 믿을수 있는 스토어 입니다.
Hey, hello. I found your weblog using msn. It’s a really neat article. I will definitely come to your favorite and learn more helpful information. Thank you for sending me the post. I’ll be back for sure. 안전놀이터
Wow, amazing blog layout! How long have you been blogging? You make blogs look easy. The overall look of your website is great, not to mention the content! 토토사이트
สล็อตpgทดลองเล่น
pg slot เว็บหลัก
tga bet
pg slot เว็บหลัก
Excellent blog here! Also your site loads up fast! What host are you using? Can I get your affiliate link to your host? I wish my website loaded up as fast as yours lol
I couldn’t resist commenting. Very well written!
I’m gone to tell my little brother, that he should also pay a visit this weblog on regular basis to get updated from most recent gossip.
I really like it when folks come together and share views. Great blog, continue the good work!
Fantastic site. A lot of useful information here. I’m sending it to some buddies ans also sharing in delicious. And obviously, thank you in your effort!
You can definitely see your expertise in the article you write. The world hopes for more passionate writers like you who aren’t afraid to mention how they believe. Always go after your heart.
can encourage change and assist the user find constructive methods porn christmas pussy christmas pussy of working via the dependancy (Maltz & Maltz, 2006; Zitzman
I like the valuable information you supply for your articles. I will bookmark your weblog and check again here frequently. I am moderately certain I will be informed many new stuff right here! Good luck for the following!
continuously i used to read smaller articles or reviews which also clear their motive, and that is also happening with this post which I am reading here.
It’s hard to find well-informed people about this topic, but you sound like you know what you’re talking about! Thanks
Hey there would you mind letting me know which webhost you’re working with? I’ve loaded your blog in 3 completely different web browsers and I must say this blog loads a lot quicker then most. Can you suggest a good web hosting provider at a honest price? Thanks a lot, I appreciate it!
Write more, thats all I have to say. Literally, it seems as though you relied on the video to make your point. You clearly know what youre talking about, why waste your intelligence on just posting videos to your site when you could be giving us something enlightening to read?
Thank you, I have recently been searching for information approximately this topic for ages and yours is the best I have found out so far. However, what concerning the conclusion? Are you positive concerning the source?
Magnificent site. A lot of useful information here. I’m sending it to some buddies ans also sharing in delicious. And naturally, thank you on your effort!
Yes! Finally something about %keyword1%.
Way cool! Some very valid points! I appreciate you writing this post and the rest of the site is also really good.
I always spent my half an hour to read this webpage’s articles or reviews every day along with a cup of coffee.
I am now not positive the place you are getting
your information, but great topic. I needs to spend some time finding out more or understanding more.
Thank you for fantastic information I used to be looking for this info for my mission.
Nice answers in return of this query with real arguments and describing all regarding that.
I believe what you postedwrotesaidthink what you postedwrotesaidthink what you postedwrotethink what you postedtypedsaidWhat you postedwrote was very logicala ton of sense. But, what about this?consider this, what if you were to write a killer headlinetitle?content?typed a catchier title? I ain’t saying your content isn’t good.ain’t saying your content isn’t gooddon’t want to tell you how to run your blog, but what if you added a titleheadlinetitle that grabbed a person’s attention?maybe get people’s attention?want more? I mean %BLOG_TITLE% is a little vanilla. You could look at Yahoo’s home page and see how they createwrite post headlines to get viewers interested. You might add a related video or a related picture or two to get readers interested about what you’ve written. Just my opinion, it might bring your postsblog a little livelier.
Hi Dear, are you really visiting this website regularly, if so after that you will absolutely get good knowledge.
What’s Happening i’m new to this, I stumbled upon this I have found It positively helpful and it has helped me out loads. I hope to give a contribution & assist other users like its helped me. Good job.
Now I am going to do my breakfast, when having my breakfast coming yet again to read more news.
I don’t even know how I ended up here, but I thought this post was good. I don’t know who you are but definitely you are going to a famous blogger if you are not already 😉 Cheers!
Great delivery. Outstanding arguments. Keep up the good work.
Today, I went to the beach with my kids. I found a sea shell and gave it to my 4 year old daughter and said “You can hear the ocean if you put this to your ear.” She put the shell to her ear and screamed. There was a hermit crab inside and it pinched her ear. She never wants to go back! LoL I know this is entirely off topic but I had to tell someone!
Its like you read my mind! You seem to know so much about this, like you wrote the book in it or something. I think that you could do with some pics to drive the message home a bit, but other than that, this is wonderful blog. An excellent read. I’ll definitely be back.
This piece of writing will help the internet users for setting up new website or even a weblog from start to end.
Heya this is kinda of off topic but I was wondering if blogs use WYSIWYG editors or if you have to manually code with HTML. I’m starting a blog soon but have no coding knowledge so I wanted to get advice from someone with experience. Any help would be greatly appreciated!
It’s an awesome post designed for all the web viewers; they will get benefit from it I am sure.
I just like the valuable information you provide to your articles.
I’ll bookmark your blog and take a look at once more here frequently.
I am somewhat sure I will be told a lot of new stuff
right here! Good luck for the next!
Hi there, I enjoy reading all of your article. I like to write a little comment to support you.
I am curious to find out what blog system you have been utilizing? I’m experiencing some minor security problems with my latest website and I would like to find something more risk-free. Do you have any solutions?
Красивый частный эротический массаж в Москве с джакузи
Do you mind if I quote a couple of your posts as long as I provide credit and sources back to your weblog? My website is in the very same area of interest as yours and my visitors would truly benefit from a lot of the information you present here. Please let me know if this okay with you. Regards!
Normally I do not read article on blogs, however I wish to say that this write-up very pressured me to try and do so! Your writing taste has been amazed me. Thank you, quite great article.
Hello! Do you use Twitter? I’d like to follow you if that would be ok. I’m definitely enjoying your blog and look forward to new updates.
Saved as a favorite, I like your web site!
Hello there! Do you know if they make any plugins to protect against hackers?
I’m kinda paranoid about losing everything I’ve
worked hard on. Any tips?
Hello! I’ve been following your web site for a long time now and finally got the bravery to go ahead and give you a shout out from Austin Tx! Just wanted to mention keep up the excellent job!
I am extremely inspired with your writing skills and alsosmartly as with the format on your blog. Is this a paid subject or did you customize it yourself? Either way stay up the nice quality writing, it’s rare to see a nice blog like this one nowadays..
I wanted to thank you for this great read!! I definitely enjoyed every little bit of it. I have you book-marked to check out new stuff you post
Hi colleagues, fastidious paragraph and nice urging commented
here, I am actually enjoying by these.
Right now it looks like Drupal is the best blogging platform out there right now. (from what I’ve read) Is that what you’re using on your blog?
We stumbled over here coming from a different web page and thought I might as well check things out. I like what I see so now i am following you. Look forward to looking over your web page for a second time.
Currently it seems like WordPress is the best blogging platform available right now.
(from what I’ve read) Is that what you are using on your blog?
Wow, superb blog structure! How lengthy have you ever been blogging for?
you made blogging look easy. The entire glance of your web site is wonderful, let alone
the content material!
Excellent pieces. Keep writing such kind of info on your blog.
Im really impressed by your site.
Hello there, You have done a fantastic job. I will definitely digg it and in my opinion recommend to my friends.
I’m sure they’ll be benefited from this web site.
When I originally commented I clicked the “Notify me when new comments are added” checkbox and now each time a comment is added I get three emails with the same comment. Is there any way you can remove me from that service? Thank you!
Great web site you have here.. It’s hard to find high-quality writing like yours these days. I truly appreciate people like you! Take care!!
Pretty component to content. I simply stumbled upon your blog and in accession capital to say that I acquire in fact enjoyed account your blog posts. Any way I’ll be subscribing on your augment or even I achievement you get entry to persistently rapidly.
Hello there, simply was aware of your blog through Google, and found that it is really informative. I’m gonna watch out for brussels. I will appreciate should you continue this in future. Lots of other people will probably be benefited from your writing. Cheers!
Quality posts is the important to interest the visitors to pay
a quick visit the web page, that’s what this web site is providing.
I am really loving the theme/design of your website. Do you ever run into any web browser compatibility problems? A number of my blog visitors have complained about my website not operating correctly in Explorer but looks great in Chrome. Do you have any ideas to help fix this issue?
Very nice article, exactly what I needed.
Hi I am so happy I found your weblog, I really found you by mistake, while I was researching on Askjeeve for something else, Regardless I am here now and would just like to say many thanks for a remarkable post and a all round thrilling blog (I also love the theme/design), I dont have time to go through it all at the minute but I have book-marked it and also included your RSS feeds, so when I have time I will be back to read much more, Please do keep up the superb jo.
First off I want to say wonderful blog! I had a quick question in which I’d like to ask if you don’t mind. I was curious to know how you center yourself and clear your mind before writing. I have had a difficult time clearing my mind in getting my thoughts out. I do enjoy writing but it just seems like the first 10 to 15 minutes are usually wasted just trying to figure out how to begin. Any suggestions or tips? Cheers!
Hi there to every one, since I am in fact keen of reading this weblog’s post to be updated daily. It contains nice stuff.
This article gives clear idea designed for the new people of blogging, that actually how to do blogging and site-building.
Hi there, I log on to your new stuff regularly. Your writing style is awesome, keep doing what you’re doing!
Hey there just wanted to give you a quick heads up. The text in your post seem to be running off the screen in Chrome. I’m not sure if this is a format issue or something to do with internet browser compatibility but I thought I’d post to let you know. The layout look great though! Hope you get the problem resolved soon. Kudos
Hi there just wanted to give you a quick heads up. The text in your post seem to be running off the screen in Ie. I’m not sure if this is a format issue or something to do with internet browser compatibility but I thought I’d post to let you know. The design and style look great though! Hope you get the problem resolved soon. Kudos
I read this post fully concerning the difference of most recent and earlier technologies, it’s remarkable article.
As the admin of this web site is working, no doubt very quickly it will be famous, due to its quality contents.
Somebody essentially help to make seriously articles I’d state.
That is the very first time I frequented your web page and to this point?
I surprised with the analysis you made to create this particular post amazing.
Great task!
I have read so many posts concerning the blogger lovers but this piece of writing is in fact a nice article, keep it up.
Helpful info. Fortunate me I found your site by chance, and I am surprised why this coincidence did not came about in advance! I bookmarked it.
Hi, always i used to check webpage posts here early in the dawn, as i like to learn more and more.
What a data of un-ambiguity and preserveness of precious familiarity concerning unexpected feelings.
wonderful publish, very informative. I’m wondering why the other experts of this sector do not realize this. You should continue your writing. I am sure, you have a huge readers’ base already!
I blog quite often and I truly appreciate your content. This article has really peaked my interest. I will bookmark your site and keep checking for new information about once a week. I subscribed to your RSS feed as well.
Having read this I thought it was extremely informative. I appreciate you finding the time and effort to put this informative article together. I once again find myself spending a significant amount of time both reading and commenting. But so what, it was still worth it!
you are really a just right webmaster. The web site loading velocity is incredible. It sort of feels that you are doing any unique trick. Moreover, The contents are masterpiece. you have performed a fantastic process in this topic!
May I simply just say what a relief to uncover someone who truly knows what they’re
discussing over the internet. You actually realize
how to bring a problem to light and make it important.
More people ought to check this out and understand this side of your story.
It’s surprising you aren’t more popular given that you
most certainly possess the gift.