আলেকজান্ডার: মহান যোদ্ধা নাকি দূর্ধর্ষ খুনি ?


 

পারভেজ সেলিম     পারভেজ সেলিম ।।


আলেকজান্ডার হচ্ছেন পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী যোদ্ধা। মাত্র ৩২ বছর বয়সে যিনি পৃথিবীর অর্ধেকটাই দখল করে ফেলেছিল। গ্রিস থেকে ভারতের পাঞ্জাব দখলে তিনি একটি যুদ্ধেও হারেনি। ইতিহাসের এই পরাক্রমশালী যোদ্ধার কথা মানুষ দুই হাজার বছর পরও মনে রেখেছে। সবাই তাকে চেনে আলেকজান্ডার, আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট নামে ।

পুরোধারাবাহিক জুড়ে আমরা নজর দেবো  আলেকজান্ডারের জন্ম, মৃত্যু, শিক্ষা, প্রেম এবং যুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর দিকে। আজ তের ও শেষ কিস্তি ।

আলেকজান্ডার : মহানযোদ্ধা নাকি দূর্ধর্ষ খুনি?

দীর্ঘদিন ধরে অনেকেই এই তর্ক  জড়িয়েছেন যে আলেকজান্ডার কি একজন মহান যোদ্ধা নাকি একজন দূর্ধর্ষ খুনি? আলেকজান্ডারকে প্রথম গ্রেট উপাধি দেয়ে রোমানরা এসে।  আর একজন দেশ দখলকারি হত্যাকারি হিসেবে দেখেন আধুনিক সময়ের অনেক মানুষ। আসলেই তার কোন পাল্লা ভারি ? একটু নজর দেয়া যাক ।

প্রথমে  আলেকজান্ডারের বর্বতার ঘটনাগুলোর দিকে নজর দেয়া যাক । আলেকজান্ডার  ক্ষমতা হাতে পেয়েই বিদ্রোহ দমনের নামে থিবস শহরে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেণ। ২০ হাজার মানুষকে দাস বানিয়েছিল যা তিনি না করলেও পারতেন। এসব করেছেন যেন তার নৃশংসতা দেখে মানুষ ভয় পায়।‘টায়ার’ নামের ছোট্ট দ্বীপ রাস্ট্রেও তিনি ভয়াবহ নৃসংশতা চালিয়েছে, ‘গাজায়’ ও একই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। ফেরার পথে ‘পোরসোপলিস’ শহর জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

তাকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বন্ধু সহযোদ্ধা ফিলোটাসকে হত্যা করেছেন। সাথে ফিলোটাসের পিতা সেনাপ্রধান ফারমিনওনকে খুন করিয়েছেন যাতে তিনি সন্তান হত্যার প্রতিশোধ নিতে না পারে। একই অভিযোগে আরো কয়েকজনকে হত্যা করেছেন আলেকজান্ডার।

তাকে অহংকারী অত্যাচারি  রাজা বলায় ,সহযোদ্ধা ও জেনারেল  ক্লাইটাসকে নিজ হাতে খুন করেন মদ্যপ আলেকজান্ডার।

প্রেমিক বন্ধু হেফাসটিওন মারা যাবার পর দেবতাকে উৎসর্গ করার নামে কয়েকশ মানুষ বলি দিয়েছিল আলেকজেন্ডার। ভারত অভিযানে যেতে না চাওয়ায় কয়কশ সৈন্যকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন এই যোদ্ধা। শুধু  এসব নৃশংসতা আলেকাজান্ডারকে একজন দূর্ধর্ষ খুনি চরিত্র হিসেবে প্রমাণের জন্য যথেষ্ট ।

কিন্তু তাকে গ্রেট বা মহান  উপাধি দেবার পিছনেও নিশ্চয়ই কিছু যুক্তি ছিল। সেগুলো কি ? ‘থেবস’ শহর ধ্বংস করেছিলেন কিন্তু কবি পিন্দারের বাড়ি ধ্বংসে তার মন সায় দেয়নি। ‘টায়ারে’র মানুষদের নৃসংশভাবে হত্যা করেছিলেন কিন্তু রাজাদের স্বসম্মানে রেখেছিলেন।

সব রাজ্য দখল করেই ধ্বংস করে ফেলেননি যেমনটা করেছিলেন চেঙ্গিস খান। পারস্যের রাজা দারুয়ুসকে পরাজিত করার পর তার বউ সন্তানকে আদর আপ্যায়নের মধ্যে রেখেছিলেন। দারুয়ুসকে মৃত অবস্থায় পাবার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে নিজে সমাহিত করেছিলেন।

আরো পড়ুন :

বখতিয়ার খলজি: বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক

যে দেশ জয় করেছেন সেখানকার রীতিনীতি মানতে চেয়েছিলেন আলেকজান্ডার। সেই দেশের পোষাক পরেছেন নিজের কৃষ্টি কালচার জোর করে চাপাতে  চাননি সেই দেশের মানুষকে। ‘পারকনসিস’ বা হাঁটু বাঁকা করে রাজাকে সম্মান জানানো ছিল পারস্যের সংস্কৃতি। পারস্য জয়ের পর নিজের সৈন্য ও জেনারেলদের মধ্যে এই প্রথা চালু করেছিলেন শুধু পারস্য সংস্কৃতিতে আপন করতে। যদি এ নিয়ে সেনাবাহিনী বিরোধীতা করেছিল অনেকে তবু তিনি তা করেছিলেন ।

রোখসানার মতো একজন সাধারন রাজকন্যাকে বিয়ে করেছেন জেনারেলদের বিরোধিতা সত্যেও। এটাকে আলেকজান্ডারে একটি বিশেষ  মানবিক গুন হিসেবে দেখেন অনেকে। তবে অনেকে অবশ্য বলেন এটা তার রাজনৈতিক দুরদর্শিতা। নতুন রাজ্যের মানুষের মন জয় করতে তিনি রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন ।

ভারতের রাজা পুরুসকে পরাজিত করার পরও রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। নারীদের প্রতি তার সহমর্মিতার কথাও জানা যায়। হেরেমখানায়ও খুব একটা যেতেন না আলেকজান্ডার। অথচ একজন সামান্য হেরেমেখানার খোঁজা বাগোসকে ভালোবেসে আমৃত্যু কাছে রাখতে তার একটুও বাঁধেনি। অনেক দাসদের মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি ।

ভারতবর্ষ জয় না করেই শেষ পর্যন্ত সৈন্যদের চাওয়ার কাছে নিজেকে সমর্পন করে ফিরেও এসেছেন। জীবনে কখনো পরাজিত না হওয়া আলেকজান্ডার নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিয়েছেন সহযোদ্ধাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে। পুরো পৃথিবী জয় না করেই ফিরে যাওয়াই হয়তো আলেকজান্ডারকে ‘মহান যোদ্ধা’ করেছে ।

শেষ কথা :

পৃথিবীতে শুধু বিজয়ীদের ইতিহাস লিখে রাখা হয় ! যে জেতে এখনও তাকে ‘সিকান্দার’ বলা হয় । জুলকারনাইন, ইস্কান্দার, সিকান্দার কিংবা আলেকজান্ডার যেই হোক না কেন যুগে যুগে মানুষ এমন একজন যোদ্ধাকে কল্পনা করেছে যে কখনো হারবেনা শুধু জিতেই যাবে। ইতিহাসে শুধু জিতে যাবার এই মিথের একজন  নায়ক প্রয়োজন ছিল। আলেকজান্ডার সেই মিথের প্রয়োজন মিটিয়েছে। ইতিহাসের প্রভাবশালী এই চরিত্র তাই কারো কাছে ‘দ্যা গ্রেট’ কারো কাছে ‘অপারাজেয় খুনি’ হিসেবে হাজার বছর ধরে বেঁচে আছেন আরো হাজার  বছর হয়ত বেঁচে থাকবেন ।



পারভেজ সেলিম
লেখক ও চলচ্চিত্রকর্মী

 

আলেকজান্ডারের অন্যান্য পর্ব :

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

১৪৮ thoughts on “আলেকজান্ডার: মহান যোদ্ধা নাকি দূর্ধর্ষ খুনি ?

  1. Bert Hellinger. Глубинные системные расстановки Системные-расстановки.
    Глубинные системные расстановки.
    Глубинные системные расстановки.
    Глубинные системные расстановки.
    Системные расстановки.

  2. Have you ever considered about including a little bit more than just your articles? I mean, what you say is valuable and all. Nevertheless think about if you added some great graphics or video clips to give your posts more, “pop”! Your content is excellent but with images and video clips, this site could undeniably be one of the greatest in its niche. Amazing blog!

  3. Hey there! I realize this is somewhat off-topic but I had to ask. Does building a well-established blog like yours take a massive amount work? I’m completely new to operating a blog but I do write in my diary everyday. I’d like to start a blog so I will be able to share my experience and views online. Please let me know if you have any suggestions or tips for new aspiring bloggers. Appreciate it!

  4. My coder is trying to persuade me to move to .net from PHP. I have always disliked the idea because of the expenses. But he’s tryiong none the less. I’ve been using Movable-type on numerous websites for about a year and am anxious about switching to another platform. I have heard fantastic things about blogengine.net. Is there a way I can transfer all my wordpress content into it? Any kind of help would be really appreciated!

  5. Have you ever considered about including a little bit more than just your articles? I mean, what you say is fundamental and all. Nevertheless think about if you added some great pictures or video clips to give your posts more, “pop”! Your content is excellent but with images and video clips, this website could undeniably be one of the most beneficial in its niche. Good blog!

  6. Undeniably believe that that you stated. Your favourite justification appeared to be at the internet the simplest thing to consider of. I say to you, I definitely get irked even as other people consider worries that they plainly do not recognise about. You controlled to hit the nail upon the top as welland also defined out the whole thing with no need side effect , folks can take a signal. Will likely be back to get more. Thank you

  7. I’ve been exploring for a little bit for any high-quality articles or blog posts in this kind of space . Exploring in Yahoo I at last stumbled upon this site. Reading this info So i’m satisfied to show that I have a very good uncanny feeling I came upon exactly what I needed. I so much unquestionably will make certain to don?t fail to remember this web site and give it a look on a continuing basis.

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x