পারভেজ সেলিম
বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে রোমান্টিক পুরুষ বলা হয় রবীন্দ্রনাথকে। কত বিচিত্র বিষয়ের প্রেমে মজেছিলেন কবি তার সৃষ্ট শিল্পের দিকে তাকালেই খুব সহজেই তা অনুমান করা যায়। কবির শিল্প চর্চায় প্রকৃতি প্রেমের মতোই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে নারীর প্রেম।
প্রেমের সেই প্রকাশ তিনি যেভাবে করেছেন তা বাংলার শিল্প সাহিত্যের ভান্ডারকে করেছে ঐশ্বর্যময়।
রবীন্দ্রনাথ তার পুরো আশি বছরের জীবনে অনেক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। সেই সম্পর্কের আবেগ এবং উষ্ণতা দিয়ে রচনা করছেন অসংখ্য গান, কবিতা, গল্প। এছাড়া তার প্রেমময় সকল চিঠিপত্র তো বাংলা ভাষার এক অনন্য সম্পদ।
তবে রবীন্দ্রনাথের নারীপ্রেম বর্তমান সময়ের নারী পুরুষের প্রেমের মাণদন্ডে বিচার করলে তার সঠিক মুল্যায়ণ করা হবে না।
তার নারী প্রেমকে তিনি এমন এক অনন্য স্বকীয় উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন যে তার শত্রুরাও সেটাকে ‘লাম্পাট্যে’র নেতিবাচকতায় দেখতে চান না এবং সেটি সর্বজন স্বীকৃত।
সব মিলিয়ে দশ জন নারীর সাথে রবীন্দ্রনাথের মানষিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া যায়। কোনটা খুব গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী আবার কোনটা ক্ষণস্থায়ী। এসব সম্পর্কের নির্যাস দিয়েই সৃষ্টি হয়েছে দারুণ সব বিরহ, প্রেম, আর ভালোবাসার বৈচিত্রময় উপলব্ধির বহুমুখি বয়ান।
দেখা গেছে, যে সম্পর্ক যত গভীর হয়েছে তার সৃষ্ট শিল্পের মানও তেমন উন্নত পর্যায়ে পৌঁছেছে। মানুষে মানুষে সম্পর্কের এমন অসাধারণ ও মননশীল ব্যবহার পৃথিবীর অন্য কোন শিল্পীর জীবনে এত তীব্রভাবে আর দেখা যায় না।
রবীন্দ্রনাথের জীবনের সেই দশ নারীর দিকে নজর দেয়া যাক।
(প্রথম কিস্তি)
১. নলিনী: প্রথম নারী
বরীন্দ্রনাথের প্রথম প্রেমে পড়ার খবর পাওয়া যায় তার ১৭ বছর বয়সে। মেয়েটির আসল নাম আনা তড়খড়। সবাই চিনতো অন্নপূর্না দেবী নামে।
ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলেতে যাবার আগে রবি গিয়েছিলেন মেজ দাদা সত্যেন্দ্রনাথ এর কাছে। তিনি তখন আহমেদাবাদের সেশান জাজ।
মেজদাদা বোম্বেতে তার বন্ধুর বাসায় পাঠিয়েছিলেন কিশোর রবিকে, যাতে লন্ডনে যাবার আগে কিছু আদব কায়দা শিখে নিতে পারে।
বন্ধু আত্নারাম পান্ডুরঙের বিলেত ফেরত মেয়ে অন্নপূর্না দেবীর বয়স তখন বিশ বছর, কারো কারো মতে তেইশ, বরীন্দ্রনাথ তখন সবে মাত্র সতের।
রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রেম তার চেয়ে তিন বছরের বড় এই মারাঠি মেয়েটির সাথে। সময় ১৮৭৮। রবীন্দ্রনাথ প্রথম প্রেমিকার নাম দিয়েছিলেন নলিনী।
তরুণ রবীর মুখশ্রী এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে আনা রবিকে বলেছিলেন ‘তুমি কোন দিন দাঁড়ি রেখো না, তোমার মুখের রুপ যেন ঢাকা না পড়ে’। প্রথম প্রেমিকার সেই কথা যে রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীতে রাখতে পারেননি সেটা আমরা সকলে জানি।
পরের বছরই আনার বিয়ে হয়ে যায় এক আইরিশ যুবকের সাথে। সময়টা ১৮৭৯ সালের ১১ নভেম্বর। যুবকের নাম হ্যারল্ড লিটলডেল। যিনি ছিলেন বরোদার রাজকুমার কলেজের উপাধ্যক্ষ।
১৮৯১ সালে ৫ জুলাই মাত্র ছত্তিশ বছর বয়সে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান আনা। রোগের নাম যক্ষা। মৃত্যুর আগেই বিয়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল আনার। তার দুইটি মেয়ে সন্তান ছিল।
‘নলিনী’ নামটি তার এত পছন্দ হয়েছিল যে দেশি ও বিলেতি সংবাদপত্রে তিনি ‘আনাবাই নলিনী’ নামটি ব্যবহার করতেন।
অনেক দিন পরে পুরবী কাব্যগ্রন্থের ’ক্ষনিকা’ কবিতায় আনাকে স্মরণ করেছেন কবি
…..
ভেবেছিনু গেছি ভুলে; ভেবেছিনু পদচিহ্নগুলি
পদে পদে মুছে নিল সর্বনাশী অবিশ্বাসী ধূলি।
আজ দেখি সেদিনের সেই ক্ষীণ পদধ্বনি তার
আমার গানের ছন্দ গোপনে করেছে অধিকার;
দেখি তারি অদৃশ্য অঙ্গুলি
স্বপ্নে অশ্রুসরোবরে ক্ষণে ক্ষণে দেয় ঢেউ তুলি।……
আনার বিয়ের বছরই রবীন্দ্রনাথ বিলেতে চলে যান ব্যারিষ্টারি পড়তে।
(চলবে..)
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
আরো পড়ুন :
রবীন্দ্রনাথের দশ নারী উপাখ্যান (পুরো পর্ব)
আনা তড়খড়: রবীন্দ্রনাথের প্রথম নারী
লুসি স্কট: রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিদেশিনী
কাদম্বরী দেবী: রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় প্রেম
মৃণালিনী দেবী: রবীন্দ্রনাথের একমাত্র বউ
ইন্দিরা দেবী: ভাতিজির সাথে রবীর প্রেম
তোমিকো ওয়াদা কোরা: রবীন্দ্রনাথের জাপানী প্রেম
রানু মুখার্জি: রবীন্দ্রনাথ তখন ৫৭ রানু ১২
ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো: রবীর ওগো বিদেশিনী
মৈত্রেয়ী দেবী: গুরুদেবের সঙ্গে প্রেম
হেমন্তবালা দেবী: রবীন্দ্রনাথের শেষ নারী
শেষের কথা: রবীন্দ্রনাথের দশ নারী
আরো দেখুন:
Hi! I simply want to offer you a big thumbs up
for the excellent information you have here on this post.
I am returning to your website for more soon.
winter jazz music
Hey very interesting blog!
It’s perfect time to make some plans for the future and it is time to
be happy. I’ve read this post and if I could I desire to
suggest you some interesting things or suggestions.
Maybe you can write next articles referring to this article.
I want to read even more things about it!