পারভেজ সেলিম
সময়টা ৬১০ খ্রিস্টাব্দ। আরবের মরুভুমির এক ৪০ বছরের যুবকের কাছে নাজিল হলো স্রষ্টার এশ্বরিক বানী। তিনি ঘোষণা করলেন আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। মক্কায় জন্ম নিল নতুন এক ধর্ম। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বময়। হয়ে উঠল বিশ্বাসী মানুষের নতুন এক আশ্রয়স্থল। সেই ধর্মের নাম ইসলাম।
ইসলাম আগমনের পুর্বে মক্কা মদীনার মানুষের ধর্ম কি ছিল ? কোন কোন দেব দেবীর পূজা তারা করতো? ইহুদী, খ্রিষ্টানের অবস্থাই বা কি ছিল?
বর্তমান মুসলমানদের প্রধান ও পবিত্রতম শহর মক্কা ও মদিনা। মরুভুমির এই শহর দুটিতে খুব বেশি মানুষ বসবাস করতো না। সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয়, ইসলাম আসার আগ মূহর্তে মাত্র বিশ থেকে ত্রিশ হাজার মানুষের বসবাস ছিল নগর দুটিতে। কয়েকটি বংশ, গোত্রে ভাগ হয়ে তারা বসবাস করতো।
চারদেয়ালে ঘেরা কাবা ঘরটি ছিল মক্কার মানুষের কাছে পবিত্র স্থান। কারণ সেখানে সকল বংশ বা গোত্রের দেবতাদের মূর্তি থাকতো। প্রতি বছর পূজা, উৎসব কিংবা বলি দেয়ার জন্য সকলে মক্কায় জড়ো হতো।
পবিত্র কাবা ঘরে সেসময় ৩৬০ টি মূর্তি থাকার তথ্য পাওয়া যায়। মহানবী ও তার অনুসারিরা ইসলাম আগমনের পর সেই সকল মূর্তি সরিয়ে ফেলেছিলেন।
ইসলাম আসার আগে মক্কা বা তার আশেপাশের মানুষেরা এই সকল দেবদেবীই ছিল তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মুল স্তম্ভ। এই অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যেই দেবদেবী জনপ্রিয়তা কমবেশি ছিল। একের গোত্রের কাছে একেক দেবী বা দেবতা একেকভাবে সমাদৃত হতেন।
যেহেতু আদিম পরিবারগুলো ছিল মাতৃকেন্দ্রিক তাই তাদের উপসনার পাত্র হিসেবে দেবতাদের তুলনায় দেবীরা বেশি সমাদৃত ছিল। মক্কা আয় রোজগারেই বড় অংশই আসতো ছিল ধর্মীয় বার্ষিক আয়োজন আর ব্যবসা বাণিজ্য থেকে।
কাবা ঘরের ভিতর যত মূর্তি ছিল তাদের মধ্যে বেশকয়েকজন দেবদেবী ছিলেন ভীষণ প্রভাবশালী। এরা হলেন হুবাল, শামস, আল লাত, আল উজ্জা, মানাত, ইসহাফ-নাইলাহ ও নাসর। বাকি দেবদেবীর নাম সুনিদৃষ্ট করে পাওয়া যায় না। কোন ঐতিহাসিক তা সংরক্ষণ ও করেননি, তারা সময়ের অতল গহরে হারিয়ে গেছে।
হুবাল ছিল কাবার দেবতাদের মধ্যে প্রধান। ইবনে হিশামের মতে, মেসোপোটেমিয়া থেকে এই মূর্তিটি এনেছিলেন হেজাজের রাজা আমর ইবনে লুহাই। এই দেবতা মানুষের ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারতো। দেবতার এমন ঐশ্বরিক ক্ষমতা দেখিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতো দেবতা রক্ষণাবেক্ষনকারী মক্কার মানুষেরা।
হুবাল ছাড়া শামস নামের আরেক দেবতার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল কাবার ছাদে। তীর্থে আসা মানুষেরা কুরবানির পশুদের রক্ত দেবতাদের প্রতি উৎসর্গ করতো। কখনও কখনও তার উদ্দেশ্যে মানুষকেও বলি দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।
দেবী আল-লাত ছিলেন সন্তানদান আর উর্বরতার প্রতীক। আল-লাতকে সাধারনত একটি সাদা পাথর বা মূর্তির মাধ্যমে পূজা করা হতো। প্রধানত তায়েফ শহরে এর প্রধান মন্দির ছিল। এছাড়া আবরের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষেরা এই দেবীর পূজা করতো। মক্কার কুরাইশ বংশের লোকেরাও এর পূজারী ছিলেন। তার মন্দিরের নিয়মিত উৎসব ও বলি প্রদাণ করা হতো।
দক্ষিণ আরবে আল-লাতের জনপ্রিয়তা কম থাকলেও ধারণা করা হয় ইয়েমেনের আরব গোত্রগুলোর মধ্যে তার জনপ্রিয়তা অনেক বেশি ছিল। এছাড়া পূর্ব আরবেও তার উপাসনা করা হতো।
আল-উজ্জা ছিলেন শক্তি, যুদ্ধ ও সৌন্দর্য্যের প্রতীক। তাকে সাধারনত একটি বৃক্ষ বা পাথরের মাধ্যমে পূঁজা করা হতো। মক্কার পূর্বদিকে নাখলা ছিল আল-উজ্জার আরাধনার কেন্দ্র। আল-উজ্জা মানে সবচেয়ে শক্তিশালি শুকতারা।
ইসলাম আগমনের পুর্ব আল-উজ্জাই ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবী কুরাইশদের মধ্যে। একবার যুবক বয়সে নবী মোহাম্মদও তার উদ্দেশ্য বলি দিয়েছিলেন। তা উপাসনার জায়গাটিতে তিনটি গাছ ছিল। মানুষ বলি দেওয়াও ছিল তার আরাধনার আরেকটি অঙ্গ বিশেষ।
অন্যদিকে মানাতকে ভাগ্য, সময় এবং মৃত্যু সংক্রান্ত দেবী হিসেবে মানা হত। তিনি ভাগ্যের নিয়ন্ত্রক ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের দেবী হিসেবে পূঁজিত হতেন।
যুদ্ধ, ব্যবসা ও ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্তের সময়ে মানাত পূজিত হতো। মানাতের সম্মানে বিভিন্ন উৎসব পালিত হতো এবং মন্দিরে বিভিন্ন ধরণের বলি দেয়া হতো। মানাতের মন্দিরে তীর্থযাত্রা করার প্রথা ছিল, যা মানুষের জীবনে বিশেষ গুরুত্ববহ ছিল।
মক্কা ও মদীনার রাস্তার মাঝখানে কুদাইদ নামক স্থানে ছিল তার অবস্থান। তার মুল উপসানা স্থলে ছিল একটি কালো পাথর। আউস ও খাজরাজ উপজাতির মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয়। আজ পর্যন্ত আরবরা তাদের সকল দুর্দশার জন্য এই মানাতকে দায়ী করেন।
লাত, উজ্জা ও মানাত এই তিনদেবীকে আল্লাহ তিন কন্যা মনে করা হতে। এই তিন দেবীর তিনটি বিগ্রহমূর্তিই ছিল কাবাপ্রাঙ্গণে। ইসলাম আগমনের পূর্বে লোকেরা সেগুলোর পূজা-আরাধনা করত। এছাড়া পৌত্তলিকরা কোরবানির পশুকে মানাতের কাছে নিয়ে জবাই করত।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এদের সম্পর্কে বলেছেন:
“তোমরা কি ভেবে দেখেছো লাত এবং উজ্জা সম্পর্কে?
এবং তৃতীয় আরেকটি মানাত সম্পর্কে?
তবে কি তোমাদের জন্য পুত্রসন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যাসন্তান?
তাহলে এই বন্টন অসঙ্গত।
এগুলো তো কেবল কিছু নাম যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছ, যার সমর্থনে আল্লাহ কোনো দলিল বা প্রমাণ প্রেরণ করেননি। তারা তো কেবল অনুমান এবং নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে পথনির্দেশ এসেছে।”
সূরা নজম (আয়াত: ১৯-২৩)
জর্ডানের পেট্রাতে জনপ্রিয় দেবী ছিল আল-উজ্জা, হিজাজ অঞ্চলে হুবাল, মানাত এবং হাওরান এবং সিরিয়াতে জনপ্রিয় দেবী ছিল আল-লাত।
এছাড়া ইসহাফ ও নায়লা ছিলেন প্রেমের দেবদেবী। ইসহাফ ও নায়লা সম্পর্কে যে মিথ বা গল্প প্রচলিত আছে তা হলো। ইসহাফ নায়লা আবরে দুই প্রেমিকজুটি ছিল। একদিন তার কাবা ঘরের মধ্যে ‘অনৈতিক’ সর্ম্পকে স্থাপন করে। এই পবিত্র ঘরে এই ধরনের কাজের জন্য দেবতারা তাদের শাস্তি দেয়। পাথরে পরিনত হন তারা।
পরবর্তীতে এই দুই জুটি আরবের বিভিন্ন গোত্রের মানুষ কাছে দেবতা হয়ে ওঠেন। প্রেম বা ভালোবাসার দেবী হিসেবে পূজিত হন তারা।
‘আল্লাহ’ নামের এক দেবতার তথ্য পাওয়া যায়। এই নামটি অনেক পুরাতন। দুটি শিলালিপিত এই নামটি পাওয়া যায় দক্ষিণ আরবে। একটি হলো আল উলা নামক স্থানে মিনাইয়ান। অপরটি হলো সাবায়ী শিলালিপি। সিরিয়া থেকেই প্রথম ‘আল্লাহ’ ধারণাটি পেয়েছিল। লিহয়ান ছিল ‘আল্লাহ’ আরাধনার প্রথম কেন্দ্র।
মদিনার মানুষের মানুষে ধর্মবিশ্বাস ছিল কিছুটা ভিন্ন।। সেখানে ইহুদীদের বসবাস ছিল অনেকদিন ধরেই।
মদীনায় মুলত পাঁচটি গোত্র উল্লেখযোগ্য ছিল। আউস ও খাজরাজ। যারা ছিলেন পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী মানুষ। এছাড়া ছিল তিনটি ইহুদী গোত্র বনু নাদির, বনু কাইনুকা ও বনু কুরাইজা।
ইহুদীদের বসবাস ছিল মুলত জেরুজালেম বা আজকের ইসরাইল ফিলিস্তিন অঞ্চলে। খ্রিষ্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজার তাদের জেরুজালেম থেকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এসময় অনেক ইহুদী পালিয়ে আসেন আরবে এবং সেখানে বসতি স্থাপন করেন।
৭০ খ্রিষ্টাব্দে রোমানরা যখন জেরুজালেম ধ্বংস করে তখন আরেক দফায় ইহুদীরা মধ্যে প্রাচ্যে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যায়। এছাড়া ব্যবসা বানিজ্যের জন্য হিজাজ, ইয়ামামা এবং ইয়েমেনে তারা আসতে শুরু করেন এবং বসতি গড়েন।
ইসলামের মতোই ইহুদীরা একঈশ্বরবাদে বিশ্বাস করতো। মদীনায় তাদের প্রভাব বেশ শক্তিশালী ছিল। মদীনায় অনেকে ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ইব্রাহিমের একেশ্বরবাদী ধারণাটি তিনটি প্রভাবশালী ধর্মের জন্ম দিয়েছে। ইহুদী, খ্রিষ্টান এবং সবশেষ ইসলাম ।
খিষ্ট্রান ধর্ম বিশ্বাসী মানুষও ছিল আরব ভুখন্ডে।
আরবে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের প্রধান মাধ্যম ছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও ইথুপিয়ার অ্যাক্সামাইট রাজ্য। বর্তমান সৌদি আরবের দক্ষিন-পশ্চিম অংশে অবস্থিত নাজরান অঞ্চলে খ্রিষ্টানদের একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। এখানকার একটি সম্প্রদায় বাইজেন্টাইন সম্রাজের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতো।
এছাড়া ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চল, জর্ডানের দক্ষিনের গাসানিদ রাজ্য, ইরাকের দক্ষিনের হিরা অঞ্চল ছিলো খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ বসবাস।
ইসলাম আসার পূর্বে একেশ্বরবাদের চর্চাও হতো মক্কা ও তার আশেপাশে। অল্পকিছু মানুষ এই ধর্ম চর্চা করতো। এরা মূর্তিপুজা করতো না, তারা ইব্রাহিমের ধর্মে অনুসারী ছিল।
ইব্রাহিমের একেশ্বরবাদ যদিও ইহুদী খ্রিষ্টানরা পালন করতো তবে কুরাইশদের বংশে বনু হাশিম গোত্রের সদস্যরা এই ধর্ম বিশ্বাস করতো। তাদের হানিফি সম্প্রদায় বলা হতো।
শেষ নবী মোহাম্মদ (সা.) এর দাদা আবু মোত্তালিব কাবা ঘর রক্ষার জণ্য এক আল্লার কাছেই প্রার্থনা করেছিলেন। যখন ইয়েমেনের রাজা আব্রাহা হাতির পাল নিয়ে কাবাঘর ধ্বংসের জন্য এসেছিলেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন এই কাবা ঘরের মালিক এক আল্লাহ আমরা তার ভৃত্যের সমান। এই ঘরকে নিশ্চয়ই তিনিই রক্ষা করবেন।
কিছু মানুষ নাস্তিক্যবাদের চর্চাও করতো । মৃত্যুর পরের জীবনে তাদের বিশ্বাস ছিল না।
সাবিয়ানরা চাঁদ, সূর্য, গ্রহ তারার পূঁজা করতো। ইরানের দ্বৈতবাদী ধর্ম জুরাথুষ্ট্রবাদে বিশ্বাসী মানুষ ছিল। যারা মনে করতো ভালো ও মন্দের দুই বিশাল দেবতা সারাক্ষণ যুদ্ধে লিপ্ত আছে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা অসীমকাল ধরে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব আরবে সূর্য দেবতা শামসের উপাসনা হতো। কাবার কালো পাথরও তাদের উপাসনার সাথে যুক্ত ছিল।
কাবা ঘরের কোন ছাদ ছিল না। কালো উল্কা পিন্ডের আশ্রয়স্থল মনে করা হত। কারণ তখন মানুষ উল্কাপিন্ডকে ভক্তিযোগ্য বস্তু হিসেবে শ্রদ্ধা করতো। এর চারিদিকের জায়গায় হারাম বা পবিত্র ভূমি বলা হত। সেখানে বছরে একবার তীর্থযাত্রা হতো এবং কুরবানী দেয়া হতো।
পৌত্তলিকদের বিশ্বাসমতে, কাবার কালো পাথরটি সূর্য, চাঁদ, তারা বা অন্য কোনো গ্রহ থেকে পড়েছে এবং তাই সেটি মহাজাগতিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে। কালো পাথরকে তাই স্রস্টার পাঠানো পবিত্র বস্তু হিসেবে তারা মনে করতো।
কাবা ঘরের কালো পাথর মুসলমানদের কাছে পবিত্র বস্তু হিসেবে গন্য হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জন্মেরও আগেও মক্কার পৌত্তলিকরা এই পাথরটির উপাসনা করতো।
সবশেষে এটা বলা যায় লাত, উজ্জা, মানাত, শামস, তালফ ও হুবাল ছিল মক্কার ও তার আশেপাশের মানুষের প্রধান দেবতা।
এছাড়া ইহুদী, খ্রিষ্টান, জুরাথ্রুস্ট, নাস্তিকতাবাদ এবং প্যাগান ধর্মসহ অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী মানুষের বসবাস ছিল আরব ভুখন্ডে। এক বর্বর বেদুইন যাযাবর জাতীকে একতাবদ্ধ করে একটি শক্তিশালী জাতী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিল ইসলাম। আর আবরের মানুষেরা প্রায় সকলেই ইসলামের এই বিশ্বাসে শান্তি খুঁজে পেয়েছিল।
১৪০০ বছরের বেশি সময়ধরে ‘শান্তির ধর্ম’ নামে ইসলাম টিকে আছে। পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত টিকে থাকবে বলেই মুসলানদের বিশ্বাস।
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
আরো পড়ুন :
Wow, amazing blog layout! How long have you been blogging for? you made blogging look easy. The overall look of your web site is magnificent, as well as the content!
먹튀검증소: https://nktoday.kr/
tipobet porn
tipobet porn
tipobet porn
Fantastic site. Lots of helpful information here. I am sending it to some friends free brazzers videos https://brazzers.pw/
I like your writing very so much! proportion we keep up a correspondence extra approximately https://brazzers.pw/ free brazzers videos
child porn
child porn
Simply wish to say your article is as amazing The clearness in your post is just nice and i could assume youre an expert on this subject Well with your permission let me to grab your feed to keep updated with forthcoming post Thanks a million and please carry on the gratifying work
I do not even know how I ended up here but I thought this post was great I dont know who you are but definitely youre going to a famous blogger if you arent already Cheers
What i dont understood is in reality how youre now not really a lot more smartlyfavored than you might be now Youre very intelligent You understand therefore significantly in terms of this topic produced me personally believe it from a lot of numerous angles Its like women and men are not interested except it is one thing to accomplish with Woman gaga Your own stuffs outstanding Always care for it up
Excellent blog here Also your website loads up very fast What web host are you using Can I get your affiliate link to your host I wish my web site loaded up as quickly as yours lol
빠르고 안전한 먹튀검증으로 먹튀 피해를 예방하세요. 먹튀검증 전문 커뮤니티 먹튀감정사에서 먹튀 없는 안전놀이터 정보를 제공합니다.
탑플레이어 포커 머니상은 우수한 서비스와 안정적인 시스템으로 포커 머니 거래의 새로운 기준을 제시합니다. 지금 바로 탑플레이어 포커 머니상을 경험해보세요!
https://m-today.net/verify
I appreciate your honesty in this post. It’s refreshing to see someone talk openly about the challenges of remote work. Check out [Asian Drama](https://asiandrama.live/?utm_source=google&utm_medium=search&utm_campaign=promotion) for more real-life experiences.
An informative and well-written piece. The principles are easily understood and applied thanks to your thorough explanations and practical examples. Thank you for taking the time to provide such detailed information. Your time and knowledge are much appreciated.
Your writing has a way of resonating with me on a deep level. I appreciate the honesty and authenticity you bring to every post. Thank you for sharing your journey with us.
Temp Mail Good post! We will be linking to this particularly great post on our site. Keep up the great writing
Simply desire to say your article is as surprising The clearness in your post is simply excellent and i could assume you are an expert on this subject Fine with your permission let me to grab your feed to keep up to date with forthcoming post Thanks a million and please carry on the gratifying work
탑플레이어 포커 머니상 – 포커 머니 거래의 편리함을 경험하세요! 간편하고 빠른 거래 시스템으로 누구나 쉽게 포커 머니 거래를 할 수 있습니다. https://www.topplaymoney.com/
How Does It Work?
I’ve been following your blog for quite some time now, and I’m continually impressed by the quality of your content. Your ability to blend information with entertainment is truly commendable.
Business dicker I really like reading through a post that can make men and women think. Also, thank you for allowing me to comment!
탑플레이어포커머니상 365일 빠른 충환전 최저가 시세 보장 안심하고 게임하세요. 빠르고 안전한 머니 충환전 시스템으로 언제든지 편리하게 이용 가능합니다.
Real Estate naturally like your web site however you need to take a look at the spelling on several of your posts. A number of them are rife with spelling problems and I find it very bothersome to tell the truth on the other hand I will surely come again again.
Your blog is a beacon of light in the often murky waters of online content. Your thoughtful analysis and insightful commentary never fail to leave a lasting impression. Keep up the amazing work!
Hi i think that i saw you visited my web site thus i came to Return the favore I am attempting to find things to improve my web siteI suppose its ok to use some of your ideas
Jeg setter pris på at du tok deg tid til å skrive og dele denne innsiktsfulle artikkelen. Den var klar og konsis, og jeg fant dataene veldig nyttige. Din tid og energi brukt på forskning og skriving av denne artikkelen er sterkt verdsatt. Enhver som er interessert i dette emnet vil uten tvil dra nytte av denne ressursen.
Thanks, I have just been looking for information about this subject for a long time and yours is the best I’ve discovered till now. However, what in regards to the bottom line? Are you certain in regards to the supply?
deneme bonusu veren siteler
allegheny county real estate For the reason that the admin of this site is working, no uncertainty very quickly it will be renowned, due to its quality contents.
Techarp I truly appreciate your technique of writing a blog. I added it to my bookmark site list and will
Aluminum Pipes : Lightweight and resistant to corrosion, aluminum pipes are used in HVAC and automotive applications. ElitePipe Factory in Iraq offers durable aluminum pipe solutions.
Usually I do not read article on blogs however I would like to say that this writeup very compelled me to take a look at and do it Your writing style has been amazed me Thank you very nice article
Reinforced Concrete Pipes : Durable and strong, these pipes are used for large-scale drainage systems. ElitePipe Factory in Iraq provides reinforced concrete pipes for infrastructure projects.
What is a good dental health? My website: prodentim reviews
먹튀검증소: https://mtverify.com/
먹튀검증소: https://mtverify.com/
nagano tonic: nagano tonic