পারভেজ সেলিম ।
মানুষ ঠিক কোথা হতে এলো? কবে এলো? এই নিয়ে মানুষের যুক্তি তর্ক আর বিশ্বাসের শেষ নাই। ধর্মীয় বিশ্বাসীদের কাছে এর উত্তর খুব সহজ। তবে যারা বিজ্ঞান মানতে চায়, মানবজাতীর এই বিশাল ব্যাপারটিকে নিয়ে তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এখনও সঠিক কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে নাই, তবু মানুষের অন্বেষণ চলমান। আর কে না জানে, বিজ্ঞান মাত্রই পরিবর্তনশীল।
বিগ ব্যাং : তারপর অ্যামিবা ও ডায়নোসর
বিজ্ঞানীদের মতে, বিগ ব্যাং এর সূচনা হয়েছিল ১৩৭০ কোটি বছর আগে। সেখান থেকেই গ্রহ, নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়। পৃথিবী নামক গ্রহটির জন্ম হয় ৪৫০ কোটি বছর আগে।
সৃষ্টির সাথে সাথে পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হয়নি। জন্মের ৭০ কোটি বছর পর, মানে আজ থেকে প্রায় ৩৮০ কোটি বছর আগে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছিল এই পৃথিবীতে। সেই প্রাণ ছিল এককোষি একটি প্রাণী। নাম অ্যামিবা।
সেই এক কোষি প্রাণী থেকে বহু কোষি প্রাণীর উদ্ভব। কয়েক শো কোটি বছরের বিবর্তণে এক অ্যামিবা থেকে হাজার হাজার বহুকোষি, ভিন্ন ভিন্ন প্রাণীর জন্ম হয়। তারাই ছিল মানুষের প্রথম পূর্বপুরুষ, যাদের রাজত্ব ছিল পানিতে। এই সময়কালকে ‘প্যালিওজোইক যুগ’ নামে ডাকে বিজ্ঞানীরা।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/11091-1-1024x1024.jpg)
জলজ প্রাণীরা এরপর ওঠে ডাঙ্গায়। পৃথিবীতে শুরু হয় উভয়চর প্রাণীর রাজত্ব। ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে এবার রাজার আসনে চলে আসে স্থলচর প্রাণীরা। মানে সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীতে ভরে ওঠে পৃথিবী। ছোট অ্যামিবা কয়েকশ কোটি বছরে রুপান্তরিত হয়ে পরিনত হয় বড় বড় ডায়নোসরে। ২৩ কোটি বছর আগে বিবর্তিত হওয়া ডায়নোসরেরা পৃথিবী দাঁপিয়ে বেড়িয়েছে প্রায় ১৫ কোটি বছর ধরে। পৃথিবী তখন ছিল সবুজে ভরা, তৃণভোজি প্রাণীদের স্বর্গরাজ্য।
এরপর বিশাল এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় হানা দেয় পৃথিবীতে। কেউ বলে উল্কার আঘাত, কেউ কেউ বলে আগ্নেয়গিরির আগুনে, কেউ বলে ভয়াবহ ভুমিকম্পে নিশ্চিন্ন হয়ে যায় পৃথিবীর সেইসকল বিশাল বিশাল প্রাণী। যেভাবেই হোক, ৬ কোটি বছর আগের সেই বিপর্যয়ে পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এই সবুজ গ্রহটি।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/11093-1024x576.jpg)
এরপর পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে বরফে ঢেকে যায়। মারা যায় অবশিষ্ট গাছ, পাখি, ঘাস সবকিছু। একে তো বৈরি আবহাওয়া তার উপর খাদ্যের অভাব, এবার বিলুপ্ত হয়ে যায় সরীসৃপ জাতীয় শীতল রক্তের প্রাণীরা। এর মাঝে কিছু প্রাণী যাদের রক্ত গরম তারা এই অসহিষ্ণু পরিবেশেও অবিশ্বাস্য রকমভাবে টিকে থাকে। নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকে তারা। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে শুরু হয় সেইসকল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দৌরাত্ব। মানুষের পুর্বপুরুষরা এবার বসবাস শুরু করে জঙ্গলে।
পূর্বপুরুষ : পানি, জঙ্গল ছেড়ে গুহায়
এরমাঝে কেটে গেছে কয়েক কোটি বছর। মানুষের পূর্বপুরুষের দলটির বসবাস তখন জঙ্গলে। মানব সদৃশ নানান প্রাণীর বিচরণ তখন পৃথিবীর বুকে। বিবর্তণের ফলে দুইপায়ে হাঁটা মানুষের পূর্বপুরুষদের আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকার জঙ্গলে। বিজ্ঞানীরা যাদের নাম দিয়েছে ‘হোমিনিড’। সময়কাল আজ থেকে ৭০ লক্ষ বছর আগে।
গাছের ডালে তখন মানব সদৃশ অন্য প্রজাতীর বসবাস। স্বভাবে, আচরণে তখন সকলে প্রায় একই রকমভাবে বাঁচতো। মানুষ তখন কোনভাবেই অন্য প্রাণীকুল থেকে আলাদা ছিল না। প্রাইমেট বর্গীয় সেই সকল প্রাণীকে এক কাতারে রাখা হয় জীববিজ্ঞানের খাতায়। এই প্রাইমেট বর্গের একটি শাখা কয়েক লক্ষ বছর পর হয়ে উঠবে আধুনিক মানুষ, আর অন্য শাখাটি গেরিলা, শিম্পাঞ্জী বা বানর হয়ে থাকবে। মানুষ বানর থেকে আসেনি, তবে মানুষ ও বানরের দাদার দাদারা প্রায় একই ছিল।
১৯৭৪ সালে ইথুপিয়ায় কিছু হাড়গোড়ের সন্ধান পায় মানুষ। প্রাপ্ত ফসিলের বয়স নির্ণয়ের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা যায়, মানব সদৃশ এই প্রাণীটি পৃথিবীতে হেঁটে বেড়িয়েছেন আজ থেকে ৩২ লক্ষ বছর আগে। এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া মানুষের সবচেয়ে পুরাতণ নিদর্শণ। বিজ্ঞানীরা এর নাম দেয় লুসি। যিনি একজন নারী।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/luchi-424x1024.jpg)
লুসিকে বিজ্ঞানীরা ‘অস্ট্রালোপিথেকাস’ গোত্রভুক্ত করে, যা মানুষের পূর্বপুরুষের অনেকগুলো দলের মধ্যে একটি। মানে লুসিরাই প্রথম প্রাণী, যারা দুইপায়ে ভরদিয়ে হাটতে পারতো পৃথিবীর বুকে। এরপর ২৫ লক্ষ বছর আগে আরেকটু উন্নত মানের মানুষ পাওয়া যায়, যারা পায়ের সাথে সাথে হাতের ব্যবহারেও পারদর্শী হয়ে উঠেছিল। বিজ্ঞানের খাতায় যাদের নাম ‘হোমো হাবিলিস’। যাদেরকে প্রথম যথার্থ মানব হিসেবে গণ্য করা যায়। তাদের মস্তিস্ক ছিল বড় এবং তারা লাঠি ও পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার শুরু করেছিল।
মানুষের পূর্বপুরুষরা ততদিনে গাছের ডাল থেকে মাটিতে নেমে এসেছে। নিজেরাই খাবার সংগ্রহ করে, শিকার করে কিংবা অন্য পশুর শিকার করা খাবারে ভাগ বসায়।
১৫-২০ লক্ষ বছর আগে মানুষের আরেকটি উন্নত সংস্করণ আবির্ভূত হয় পৃথিবীতে। তখন জঙ্গল থেকে বের হয়ে মানুষ গুহায় বসবাস শুরু করেছে, আগুনের ব্যবহার শিখে ফেলেছে। নিজের বানানো পাথরের হাতিয়ার দিয়ে খাবারও সংগ্রহ করছে। বিজ্ঞানের খাতায় যাদের নাম ‘হোমো ইরেক্টাস’। মানুষের এই পূর্ব পুরুষদের দেখা যায় পূর্ব এশিয়ায়।
বড় মস্তিষ্ক আর পেশিবহুল এক মানব প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল ইউরেশিয়া অঞ্চলে। ৩-৬ লক্ষ বছর আগে। নাম নিয়ান্ডার্থাল।
আর আজকের আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকায়, ২০-২৫ লক্ষ বছর আগে। যার কেতাবি নাম ‘হোমো সেপিয়ান্স’। আদিম সেই প্রজাতীর মানুষদের বসবাসের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় আফ্রিকা অঞ্চলে। সবচেয়ে পুরাতন যে হাতিয়ারটি প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখন পর্যন্ত উদ্ধার করতে পেরেছেন সেটিও ২৫ লক্ষ বছর আগের। তবে ঠিক কোন সময়টিতে এই প্রজাতী ‘হোমো স্যাপিয়ান্স’ হয়ে উঠলো তা বলা মুশকিল। তবে বর্তমান আধুনিক যে স্যাপিয়্যান্সের কথা বলছি তার উদ্ভব ২/৩ লক্ষ বছরের মধ্যে কোন এক সময়।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/human-1024x576.jpg)
অনন্তের পথে যাত্রা :
কয়েক লক্ষ বছর আফ্রিকায় থাকার পর হোমো সেপিয়ান্সরা বেরিয়ে পড়ে অজানার উদ্দেশ্য। মানুষের প্রথমবার অনন্তের পথে যাত্রা। সেটিও আজ থেকে ২০ লক্ষ বছর আগে। উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তারা।
এরপর অনেক বছর ধরে চলার পর মানুষের অনেকগুলো প্রজাতী পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে স্বাধীনভাবে বিকাশ লাভ করে। ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ায় বেড়ে উঠেছিল ‘নিয়ান্ডার্থাল’। এশিয়ার একদম পূর্বদিকে বেড়ে উঠেছিল ‘হোমো ইরেক্টাস’ প্রজাতির মানুষ।
কোন এক সময় দুই প্রজাতীর মধ্যে যুদ্ধও হয়েছিল। সেই যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল ‘হোমো সেপিয়্যান্সরা’। বিজয়ী নিয়ান্ডার্থালেরা তখন রাজত্ব করতে থাকে ইউরোপ ও এশিয়াজুড়ে।
পরবর্তীতে আজ থেকে ৭০ হাজার বছর আগে দ্বিতীয়বারের মতো হোমো স্যাপিয়ান্সরা আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে পড়ে। ততদিনে আরো উন্নত হয়েছে তারা। আফ্রিকা ছেড়ে মানুষেরা এসে পৌঁছায় মধ্য এশিয়ায়। এসময় ‘বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব’ ঘটে গেছে হোমো স্যাপিয়ান্সদের। এই গৃহত্যাগী দলটি আজকের মানুষের আসল পূর্বপুরুষ।
আফ্রিকা থেকে বের হয়ে স্যাপিয়্যান্স মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এশিয়া ঘুরে সবশেষ অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এইবার নায়ান্ডার্থাল ও অন্য প্রজাতীর মানুষদের পৃথিবী থেকেই ধীরে ধীরে নিশ্চিন্ন করে দেয় হোমো স্যাপিয়ান্সরা।
সহোদরদের বিলুপ্তি: মানুষ অবিচল
আজ থেকে ৩০ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে নিয়ান্ডার্থালরা। নিয়ান্ডার্থালদের মস্তিষ্ক স্যাপিয়ান্সদের চাইতে বেশ বড় ছিল, তারা অনেক পেশিবহুল ও শক্তিশালী ছিল তবু স্যাপিয়ান্স নয় বিলুপ্ত হয়ে যায় নিয়ান্ডার্থালেরা। কিন্তু কেন?
৩ লক্ষ বছর আগে মানুষের ৯ টি প্রজাতি হেঁটে বেড়িয়েছে পৃথিবীতে। এখন শুধুমাত্র হোমো স্যাপিয়ান্সরা টিকে আছে। স্যাপিয়্যান্সদের চাইতে বেশি বুদ্ধিমান হবার পরও নিয়ান্ডারথালরা কেন হেরে গেল তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর মতপার্থক্য । তবে এই নিয়ে দুই ধরণের তত্ত্ব সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়
এক. সংকর প্রজনন তত্ত্ব।
ইউরোপ ও এশিয়ায় হোমো সেপিয়ান্স ও নিয়ান্ডার্থালেদের একসাথে অনেক বছর বসবাসের তথ্য পাওয়া যায়।
২০২২ সালে সুইডিশ বিজ্ঞানী ড.সেভান্তে পেবো ডিএনএ গবেষণার ফলাফল জানালেন, হোমো স্যাপিয়ান্সের সাথে নিয়ান্ডালথালের যৌন সম্পর্ক হয়েছিল এবং তারা বংশবিস্তার করেছিল। এর ফলে মানুষের এতদিনের জানা ইতিহাস পাল্টে যায়।
ইউরোপ এশিয়ার মানুষকে তাহলে আর পরিশুদ্ধ হোমোস্যাপিয়েন্স বলা যায় না! তারা নিয়ান্ডার্থাল ও স্যাপিয়ান্সের সংকর। এখন পর্যন্ত গবেষণা তাই বলছে। নোবেল দেয়া হয়েছে ড. পেবোকে।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/paeaebo_svante_mitschaedelimprofil_friedrun_reinhold.1280x0-hidpi-1024x683.jpg)
পরবর্তী গবেষণায় ইউরোপের মানুষের শরীরে ১-৪% ডিএনএ মিল পাওয়া যায় নিয়ান্ডার্থালদের সাথে। আর ডেনিসোভার মানুষের সাথে বর্তমান অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের ডিএনএ মিলে যায় ৬%।
৬০ হাজার বছর আগে হোমো স্যাপিয়ান্সরা চীনে পৌঁছায়। হোমো ইরাক্টাসদের সাথে স্যাপিয়ান্সরা মিলেমিশে সন্তান উৎপাদন করতে থাকে।
ধারণা করা হয়, এই সংকর প্রজননের ফলে কয়েক হাজার বছরে নিয়ান্ডার্থাল আর ইরেক্টাসরা হোমো স্যাপিয়ান্সদের সাথে মিশে গেছে। ফলাফল পরিসমাপ্তি ঘটেছে সম্ভাবনাময় মানুষের দুুটি প্রজাতির। কিন্তু তার স্বপক্ষে পুরোপুরি অবস্থান নেবার মতো প্রমাণাদি এখনও পাওয়া যায় না। তাই অন্য আরেকটি তত্ত্ব জনপ্রিয় হচ্ছে আর সেটি হলো প্রতিস্থাপন তত্ত্ব।
দুই. রিপ্লেসমেন্ট থিউরি বা প্রতিস্খাপন তত্ত্ব। মানুষের অন্য প্রজাতীরা বিলুপ্ত হবার পিছনে স্যাপিয়ান্সদের এক বিশাল ভূমিকা আছে বলে ধরা হয়।
স্যাপিয়্যান্সরা যখন যেখানে পৌঁছেছে সেখানকার আদিবাসী প্রাণীদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে। কখনো কখনো তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে।
স্যাপিয়ান্সরা আদি থেকেই অসহিষ্ণু। এখনও তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
হতে পারে হোমো স্যাপিয়্যান্সরা খাদ্যের প্রযোজনে নিয়ান্ডার্থালদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেছিল। অসংখ্য নিয়ান্ডারথাল হয়ত হত্যার শিকার হয়েছে। তাই যদি হয় তাহলে মানব ইতিহাসের এটাই ছিল প্রথম গণহত্যা।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/11094-1024x1024.jpg)
এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে না পারা এবং খাদ্যাভাসের খুব পরিবর্তন না করতে পারায় অনেক প্রজাতী বিলুপ্ত হয়েছে বলে অনেকের মত।
যেভাবেই হোক ধীরে ধীরে হোমো স্যাপিয়ান্স দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে নিয়ান্ডার্থাল, ইরেক্টাসসহ মানুষের অন্য প্রজাতীরা। পরবর্তীতে তাদের জিনও বিলুপ্ত হয়ে যায়।
একসাথে এক আকাশের নিচে :
মানুষের বিভিন্ন প্রজাতি একের পর এক পৃথিবীতে এসেছে এবং বিলুপ্ত হয়েছে এমন ধারণাটা সঠিক নয়। অনেক কয়েকটি প্রজাতীর মানুষ একসাথে একি সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়ে উঠেছিল।
পূর্ব এশিয়ায় বা চীনে যখন হোমো ইরাক্টাসরা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে, তখন হয়ত ইউরোপে নিয়ান্ডার্থালের জয়জয়কার চলছে, ওদিকে পুর্ব আফ্রিকায় হোমো রুডলফেনসিস, হোমো এরগ্যাস্টার কিংবা হোমো স্যাপিয়্যান্সদের পূর্বপুরুষরা হয়ত খাবারের সন্ধান করছে।
ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে ‘হোমো সলোয়েনসিস’ আর ফ্লোরেস নাম ছোট দ্বীপে ‘হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস’ প্রজাতীর ভিন্ন ভিন্ন মানুষেরা হয়ত এক চাঁদের আলোয় জীবন যাপন করছে একই সময়ে।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/human-2-1024x1001.jpg)
এর মধ্যে হোমো ইরাক্টাসরাই সবচেয়ে বেশি ২০ লক্ষ বছর টিকে ছিল পৃথিবীতে। মানুষের আর কোন প্রজাতি এত দীর্ঘ সময় টিকে থাকেনি। স্যাপিয়ান্সরাও এই রেকর্ড ভাঙ্গতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ আধুনিক সেপিয়ান্সদের বর্তমান বয়স ২/৩ লক্ষ বছরের বেশি হবার নয়।
হোমো এরগ্যাস্টার, হোমো ইরাক্টাস, হোমো রুডলফেনসিস, হোমো নায়ানডার্থাল, হোমো সলোয়েনসিস, হোমো ডেনিসোভা, হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস এরা সকলেই বিভিন্ন প্রজাতীর মানুষ। সকলেই একে একে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। এখন টিকে আছে শুধু ‘হোমো স্যাপিয়ান্স’ প্রজাতীটি। যাকে আমরা আধুনিক মানুষ বলছি।
‘হোমো সলোয়েনসিসরা’ হারিয়ে যায় ৫০ হাজার বছর আগে, এরপর বিলুপ্ত হয় ডেনিসোভারা, ৩০ হাজার বছর আগে শেষ হয় নায়ানডার্থাল, আর ইরেক্টাসরা বিলুপ্ত হয়েছে ১.৫ লক্ষ বছর আগে।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/11096-576x1024.jpg)
সবশেষ মানুষের যে প্রজাতীটি হারিয়ে যায় তারা হলো ফ্লোরেস দ্বীপের বামন আকৃতির মানুষ, যারা ‘হোমো ফ্লোরেন্সিয়ানসিস’ নামে পরিচিত। সময়টা ১২ হাজার বছর আগে।
সেপিয়েন্সদের টিকে থাকার এমন অপ্রতিরোদ্ধ সাফল্যের কারণ কী ছিল? তার সঠিক উত্তর খুজে পাওয়া খুব সহজ নয়। তবে
মানুষের অন্যান্য প্রজাতিগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার পিছনে হোমো স্যাপিয়ান্স সবচেয়ে বড় যে অস্ত্রটি ব্যবহার করতে পেরেছে তা হলো ভাষা । যোগাযোগ করার ভাষা হোমো স্যাপিয়ান্সদের চাইতে আর কোন প্রজাতী দ্রুত রপ্ত করতে পারেনি । সকলে পিছিয়ে পড়ে স্যাপিয়ান্সদের থেকে।
এরপর পৃথিবীর একক রাজা হয়ে ওঠে ‘হোমো স্যাপিয়ান্সরা’। প্রতিদ্বন্দীহীন পৃথিবীর এক বিশাল শক্তিধর সম্রাট।
শিকারি মানুষ এবার কৃষক :
১২ হাজার বছর পূর্বে মানুষ তার জীবন চক্রে এক বিশাল পরিবর্তণ ঘটায়। কয়েক লক্ষ বছরের শিকারী জীবন ছেড়ে খাদ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করে তারা। কৃষি বিপ্লবের সূচনা হয় মানুষের হাতে। শিকারী থেকে মানুষ হয়ে ওঠে কৃষক।
পৃথিবীর সকল প্রাণী থেকে এবার পুরোপুরি আলাদা হয়ে ওঠে যায় মানুুষেরা। কোটি কোটি বছরের খাদ্যে পরনির্ভরশীলতার শিকল ভেঙ্গে ফেলে তারা। নিজের খাদ্য শিকার না করে উৎপাদন করা একমাত্র ব্যতিক্রমি ও অদ্ভুত প্রাণীটি হলো আজকের মানুষ।
আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে কৃষিকাজ শুরু করে মানুষেরা। ফলে তখন বেদুইণের মতো ঘোরাঘুরি বন্ধ হয়ে গেলো। এক জায়গায় বসতি স্থাপন শুরু করলো। গুহা ছেড়ে মানুষ গিয়ে উঠল নিজেদের বানানো কুটিরে।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/Goal1-1024x576.jpg)
আধুনিক মানুষেরা মাটি খুঁড়ে যে ইতিহাস বের করেছে, তাতে দেখা যায়, নীল নদের আশেপাশে মানুষ তার প্রথম আবাস্থল বানিয়েছিল।
খ্রি.পূর্ব ১৭০০০ বছর আগে মানুষ তার প্রথম স্থায়ী আবাসস্থল বানায়। ৯ হাজার খ্রি.পূর্বে তারা বসতি গাড়ে, ইউফ্রিস আর তাইগ্রিস নদীর তীরে।
এরপর শুরু হয় সুমেরিয়দের শহর-রাষ্ট্রের ধারণা। উরুক ছিল তাদের শ্রেষ্ঠ শহর। বর্তমানের ইরাক শহরের কাছে ২০ হাজার মানুষ বসবাস করতো সেই শহরে।
প্রথম সভ্যতার পুস্তকি নাম ‘মেসোপটেমিয়া সভ্যতা’। আজ মাত্র থেকে ৭ হাজার বছর আগের ঘটণা।
তবে কিছুদিন আগে বর্তমান পাকিস্তানে ‘মেহেরগড়’ নামের যে স্থানের সন্ধান পেয়েছে মানুষ তার বয়স দেখা যাচ্ছে ৯ হাজার বছর। সেই হিসেবে এখন পর্যন্ত খুজে পাওয়া মানুষের সবচেয়ে পুরাতন সভ্যতার নিদর্শন আমাদের ‘সিন্ধু সভ্যতা’।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/human-timeline.jpg)
মানুষের তিন বিপ্লব: বুদ্ধি, কৃষি ও বিজ্ঞান
যেদিন মানুষ আফ্রিকা ছেড়ে বের হলো তাদেরকেই যদি আমরা আমাদের প্রথম পুর্বপুরুষ ধরি তাহলে তাদের বয়স ৭০ হাজার বছর। মানুষের বেরিয়ে পড়ার এই সিদ্ধান্তকে বলা যায় মানুষের যুগান্তকারি প্রথম সিদ্ধান্ত। প্রথম বিপ্লব। বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব। মানব ইতিহাসে প্রথম বাঁক।
এরপর দ্বিতীয় যে বিপ্লবী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মানুষ তার নাম দিতে পারি কৃষি বিপ্লব। লক্ষ বছরের শিকারি প্রাণীটি হয়ে ওঠে কৃষক। মানুষের দ্বিতীয় বিপ্লব কৃষিবিপ্লব। যার শুরু ১২ হাজার বছর আগে।
মানুষের তৃতীয় বিপ্লবটি হলো বৈজ্ঞানিক বিপ্লব। যার শুরু মাত্র ৫০০ বছর আগে। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ শুধু তার অতীত ইতিহাস খুজে বের করার সামর্থ্য অর্জন করে নাই, একসময়ের এক আকাশের নিচে, একি জঙ্গলে বসবাসকারি সকল প্রাণীর প্রভু আর নিয়ন্ত্রণকর্তা হয়ে ওঠেছে। মানুষের চেয়ে শক্তিশালি প্রাণী এখন শুধু মানুষ।
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/T782SRyMrR2ZC1MH_Point-d-arc.jpg)
মানুষ যদি সেদিন বেরিয়ে না পড়তো, মানুষ যদি শিকারী জীবন ছেড়ে কৃষিকাজ শুরু না করতো, যদি বিজ্ঞানকে আঁকড়ে না ধরতো, কেমন হতো এই পৃথিবী?
এই সকল সিদ্ধান্ত কি মানুষে নিজেই নিয়েছে নাকি কোন এক অমোঘ প্রাকৃতিক নিয়তের ইশারায় নড়ছে আর অনন্তের পথে যাত্রা করছে ? এর উত্তর মানুষের হয়ত কখনো জানা হবে না। তবু মানুষ সামনে এগুতে থাকবে !!
![](https://alordeshe.com/wp-content/uploads/2023/11/assyria.jpg)
শেষের আগের কিস্তি:
ধর্মীয় বিশ্বাসী মানুষদের কাছে বিজ্ঞানের এই বিবর্তনীয় মতবাদকে খুবই হাস্যকর লাগে হয়ত! কাল্পনিক গল্পের মতো! তাদের কাছে খুবই বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য মতবাদটি হলো, স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবেই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। তাদের কিছু পরিবর্তন হয়ত হয়েছি কিন্তু বিবর্তন হয়নি।
আদম-হাওয়া, অ্যাডাম-ইভ কিংবা মনু – সতরুপা রুপে পৃথিবীতে এসেছে । তারাই বংশবিস্তার করে আজকের অবস্থানে এসেছে। এই মতবাদটি খুব সহজ এবং সাধারণ। তাই হয়ত বেশির ভাগ মানুষ এটাতে প্রশান্তি পায়।
অন্যদিকে অল্প কিছু মানুষ তাদের সহযাত্রীদের উন্নয়ন আর দূর্দশার প্রাচীন ও বর্তমান বয়ান লিপিবদ্ধ করায় মনোনিবেশ করেন।
৩০ হাজার বছরের আগে ফ্রান্সের শভে পুঁদ্যার্ক গুহায় আমাদের কোন এক পূর্বপুরুষ তার হাতের ছবি একে হয়ত বলতে চেয়েছে আমিও ছিলাম তোমাদের সাথে। আজ এত বছর পর তার হাত স্পর্শ করে বলতে ইচ্ছে করে আমরা এখনো যাত্রা জারি রেখেছি। হয়ত অনন্তের পথে !!
পারভেজ সেলিম
লেখক,সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
বিবর্তনবাদ আরো পড়ুন:
বিবর্তনবাদ: মানুষের অনন্ত যাত্রা! (পুরো পর্ব)
বিবর্তনবাদ: মানুষের কয়েকশ কোটি বছরের যাত্রা! ( (১ম পর্ব)
বিবর্তনবাদ: সহোদরদের বিলুপ্তি মানুষ অবিচল (২য় পর্ব)
বিবর্তনবাদ: শিকারি থেকে কৃষক তারপর সভ্যতা ! (৩য় পর্ব)
Your insights are thought-provoking.
It is a very excellent website. Please continue to develop.
บาคาร่า
It’s a game. Five dollars is free. Try it It’s not an easy game
->-> 토토사이트.COM
Ankara, Türkiye’nin başkenti ve en önemli hukuk merkezlerinden biridir. Burada görev yapan avukatlar, ülkenin hukuki yapısının temel taşlarından biridir. Özellikle bürokrasinin yoğun olduğu bu şehirde, avukatların bilgi ve deneyimleri, hem bireysel hem de kurumsal müvekkiller için büyük önem taşır. Ankara avukatları, geniş bir yelpazede hukuki hizmetler sunarak, adaletin sağlanmasına katkıda bulunurlar.
нумерология код на любовь облако койпера, пояс
койпера и облако оорта что означает варить мясо
во сне страшный суд таро манара
значение в отношениях, башня манара зона комфорта в матрице судьбы 4, зона комфорта 5 матрица судьбы