পারভেজ সেলিম
সাল ১৯৩১। সবেমাত্র প্যারিস থেকে ফিরেছেন কবি। ভিক্তোরিয়া ওকাম্প এখনও কবির মনের কিনারায়।
এমনি এক বিকেলে শান্তিনিকেতনের ঠিকানায় একটি অচেনা নারীর চিঠি আসে। নামের জায়গায় লিখা ‘খদ্যোৎবালা’।
কিছুদিন পর আবার চিঠি আসে। এবার ‘দক্ষবালা’ নামে। হাতের লেখা একই। খদ্যােৎ বা জোনাকি এবার হয়েছেন দক্ষ বা প্রজাপতি। বোঝাই যাচ্ছে ছদ্দ নামে নিজেকে কেউ আড়াল করছেন কবির কাছে।
জোনাকি থেকে প্রজাপতির এমন রুপান্তর প্রবীণ রবী ঠাকুরের মনে কি যেন এক ভালোলাগা খেলতে লাগল।
অপরিচিত এই নারীর সাথে শুরু হলো চিঠি চিঠি খেলা। রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ৭০ আর হেমন্তবালার ৩৭ বছর।
১৯৩১ সালের এপ্রিলে এই নারীর অনুরোধে তাকে ‘নীহারিকা’ নামের একটা কবিতা লিখে পাঠিয়েছিলেন। তখনও তার আসল পরিচয় জানেন না কবি। ছদ্দ নামে চিঠি লেখা অচেনা অজানা এক নারীকে কবিতা পাঠাচ্ছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, যখন তার বয়স সত্তুর।
‘কালোর বুকে আলোর বেদন লেগে
কেন এমন খনে
কে যেন সে উঠল হঠাৎ জেগে
আমার শূন্য মনে।’
চিঠিতেই ধীরে ধীরে আত্নার সর্ম্পক তৈরি হয় দুজনের।
কবি লিখেছিলেন ‘তোমার জন্য খোলা রইল আমার দুয়ার’।
সেই অচেনা নারীর পরিচয় খোলাসা হয় অনেক পরে। তার আসল নাম হেমন্তবালা। গৌরীপুরের জমিদার বজেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী কন্যা। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছিল। এক ছেলে এক মেয়ে আছে সংসারে। স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় চলে এসেছিলেন বাপের বাড়ি। সংসারের জীবনে সুখী ছিলেন না। বাপের বাড়ি এসে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নিচ্ছেলেন। এমন সময় যোগাযোগ রবী ঠাকুরের সাথে।
দশ বছরে বরীন্দ্রনাথ ২৬৪ টা চিঠি লিখেছেন হেমন্তবালাকে।
৭০-৮১ বছর পর্যন্ত হেমন্তবালাই ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী। জীবনের শেষদিকে অনুভূতি ভাগাভাগির আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিলেন হেমন্তবালা।
নিজেও কবিতা লিখতেন হেমন্তবালা । অনেক কবিতা পাঠিয়েছেন রবীন্দ্রনাথকে
‘কারাগার
বেধেছে আমায়
পথ নাহি পায়
উতলা খঞ্জন দুটি পিঞ্জর ভিতরে
মিছামিছি পাখা ঝাপটায়ে মরে
কোথা তুমি
ওগো মোর প্রিয় বন-ভুমি
হে উদার মহা আকাশ
লহ নিজ পাশ
দেখা দাও হে কাণ্ড রুচির
মাগি নতশির’
কবিতা বেশ মনোযোগ দিয়েই পড়তেন কবি। এক চিঠিতে হেমন্তবালাকে লিখছেন
‘তোমার চিঠিতে তোমার কবিতার যে পরিচয় পেয়েছি, তাতে আমি বিষ্মিত হয়েছি, অত্যন্ত খাঁটি কবিতা, বানানো নয় পরিনত লেখনীর সৃষ্টি’।
হেমন্ত বালাই একমাত্র নারী যার সাথে রবীন্দ্রনাথের বিচ্ছেদ ঘটেনি। বিচ্ছেদের আগেই পরপারে চলে যান বিশ্বকবি।
কবির প্রয়াণের ৩৫ বছর পর ১৯৭৬ সালে ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন রবীর জীবনের শেষ নারী হেমন্তবালা দেবী।
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
আরো পড়ুন :
রবীন্দ্রনাথের দশ নারী উপাখ্যান (পুরো পর্ব)
আনা তড়খড়: রবীন্দ্রনাথের প্রথম নারী
লুসি স্কট: রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিদেশিনী
কাদম্বরী দেবী: রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে বড় প্রেম
মৃণালিনী দেবী: রবীন্দ্রনাথের একমাত্র বউ
ইন্দিরা দেবী: ভাতিজির সাথে রবীর প্রেম
তোমিকো ওয়াদা কোরা: রবীন্দ্রনাথের জাপানী প্রেম
রানু মুখার্জি: রবীন্দ্রনাথ তখন ৫৭ রানু ১২
ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো: রবীর ওগো বিদেশিনী
মৈত্রেয়ী দেবী: গুরুদেবের সঙ্গে প্রেম
হেমন্তবালা দেবী: রবীন্দ্রনাথের শেষ নারী
শেষের কথা: রবীন্দ্রনাথের দশ নারী
আরো পড়ুন :
jazz
hello!,I really like your writing so a lot! share we keep up a correspondence extra approximately your post on AOL? I need an expert in this house to unravel my problem. May be that is you! Taking a look ahead to see you.
Escape reality, enter a realm of digital adventures – your next level awaits! Lodibet
Thanks for sharing your knowledge on this topic. It’s much appreciated.