মহানবীর ১৩ বিয়ে: বিতর্ক ও ফজিলত !

পারভেজ সেলিম ।।

শেষ নবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.) ইসলামের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমানের সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। ৬২ বছরের জীবনে তিনি তেরটি বিয়ে করেছিলেন। কারো কারো মতে এই সংখ্যা এগারোটি। ইসলাম অবিশ্বাসীরা মহানবীর জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হিসেবে এই বিয়ের সমালোচনা করতে থাকেন। আর বিশ্বাসীরা মনে করেন এসব বিয়ে নিশ্চয়ই আল্লাহর নির্দেশেই হয়েছে, এর অবশ্যই কোন না কোন ফজিলত আছে।

মহানবী প্রথম বিয়ে করে ২৫ বছর বয়সে। প্রথম স্ত্রী খাদিজা ছিলেন বিধবা এবং তার চেয়ে পনের বছরের বড়। প্রথম স্ত্রী যখন মারা যান তখন মহানবীর বয়স পঞ্চাশ। পরবর্তী বারো বছরে তিনি বাকি বারোটি বিয়ে করেন। মহানবীর শেষ স্ত্রী ছিলেন মায়মুনা। ৫৯ বছর বয়সে তিনি এই বিধবা বৃদ্ধাকে বিয়ে করেছিলেন। মহানবীর তের জন স্ত্রীর পরিচয় জানা যাক।

১. খাদিজা (রা.) :

খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ ছিলেন চল্লিশ বছর বয়সী মক্কার একজন বিধবা এবং ধনী নারী। মহানবীর যখন ২৫ বছর বয়স তখন মক্কার প্রভাবশালী এই নারী ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসে। খাদিজার এর আগে একাধিকবার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু স্বামীরা মারা গেছেন। খাদিজা (রা.)কে যখন মহানবী বিয়ে করেন তখন তা৥র বয়স ছিল চল্লিশ বছর। 

মহানবী নবুয়্যত লাভ করেন বিয়ের ১৫ বছর পর, চল্লিশ বছর বয়সে। খাদিজার ঘরেই শেষ নবীর চার সন্তানের জন্ম হয়। ফাতেমা, জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম। তিনি ছিলেন ধনাঢ্য, বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ, বিশ্বাসী এবং সুন্দরী নারী। এজন্য ইসলামে তাকে বলা হয়েছে সর্বোত্তম নারী।

খাজিদার (রা.) মৃত্যুর পর শেষনবী একবার তৃতীয় স্ত্রী স্ত্রী আয়শার (রা.) থুতনি চেপে ধরেছিলেন শুধুমাত্র খাদিজাকে বুড়ি বলার কারণে। বোঝা যায় স্ত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন প্রথম স্ত্রী খাদিজাকে।

মহানবীর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সংসার করা নারী হচ্ছেন খাদিজা। তার মৃত্যুর আগে মহানবী দ্বিতীয় কোন বিয়ে করেননি।

০২.  সাওদা:

মহানবী ৫১ বছর বয়সে বিয়ে করেন সাওদা বিনতে যাময়াকে। তিনি ছিলেন সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী, দীর্ঘাঙ্গী, অহিংসুক এবং বিধবা নারী।

প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর সন্তানদের দেখভালের জন্য এই বিয়ে মহানবী করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

০৩.  আয়শা (রা.):

মহানবী ৫২ বছর বয়সে মাত্র ৬ বছরের শিশু আয়শা বিনতে আবু বকরকে বিয়ে করেন। মহানবী তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন বিয়ের তিন বছর পরে মানে নয় বছর বয়সে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮৯৬)

তিনি ছিলেন খলিফা আবু বকরের কন্যা, প্রজ্ঞা-জ্ঞানবতী, প্রত্যুৎপন্নমতি, প্রখর স্মৃতিশক্তি ও তীক্ষ বুদ্ধি সম্পন্ন, সুন্দরী, উদার ও মহৎ।

আয়শাকে (রা.) বিয়ের তিনটি কারণ বলা হয়: 

১. হয়রত আবু বকরের সাথে সম্পর্ক আরো সুগভীর করা। 

২.আরবের মেধাবী নারী ছিলেন আয়েশা (রা.)। 

৩.ওহি নাজিল হয়েছিল তাকে বিয়ে করার জন্য। 

প্রথম স্ত্রী খাদিজার পরে আয়শার সাথেই মহানবীর সম্পর্ক সবচেয়ে উজ্জল দেখা যায়। আয়শার (রা.) ঘরেই মহানবী মৃত্যুবরণ করেন ৬২ বছর বয়সে।

০৪.  হাফসা: 

মহানবী ৫৪ বছর বয়সে বিয়ে করেন হাফজা বিনতে উমরকে। তিনি ছিলেন সুন্দরী, গুণবতী। হাফসা ছিলেন দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের বিধবা কন্যা। 

স্বামী খুনাইস ইবনে হুজাইফা মারা গেলে হয়রত উমর প্রথমে হয়রত আবু বকর পরে হয়রত উসমানকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা তা নাকচ করায় শেষে মহানবী হাফসাকে বিয়ে করতে সম্মত হন।

০৫. জয়নব:

মহানবী ৫৫ বছর বয়সে  বিয়ে করেন জয়নবকে। জয়নাব বিনতে খুযাইমা ছিলেন বিধবা, নিঃস্বদের জননী, সুন্দরী। বিবাহের মাত্র ৮ মাস পরেই তিনি মারা যান। 

স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র খাদিজা ও জয়নব মহানবীর মৃত্যুর আগে মারা যান।

০৬.  উম্মে সালমা:

মহানবী ৫৫ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ, দূরদর্শী, রাধুনী, সুন্দরী। 

তিনি স্ত্রীদের মধ্যে সবার শেষে মৃত্যুবরণ করেন সালমা। তার পুরো নাম ছিল উম্মে সালমা হিন্দ বিনতে আবি উমাইয়্যা। ৬২ হিজরী মানে কারবালা যুদ্ধের পরের বছর তিনি মারা যান।

০৭.  জয়নব বিনতে জাহাশ:

মহানবী ৫৬ বছর বয়সে ৩৫ বছরের জয়নবকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন মহানবীর পালক পুত্র জায়েদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী। এছাড়া জয়নব ছিলেন মহানবীর ফুপাত বোন। তিনি ছিলেন দাতা এবং অতীব সুন্দরী। মহানবী তাদের বিয়ে দিয়েছিলেন।

নিজ পালক পুত্রের বধুকে বিয়ের জন্য একটি আয়াত নাজিল হয়েছিল:‘আপনি মানুষকে ভয় করেন অথচ ভয়তো আল্লাহকে করা উচিত।’ (সুরা আহযাব)’। 

মহানবীর জয়নব নামে দুই স্ত্রী ছিলেন, ইনি হলেন দ্বিতীয় জয়নব।

০৮.  জুওয়াইরিয়া  

মহানবী ৫৬ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন অতি রূপসী, গুণবতী, বিধবা। জাওয়াইরিয়া বিনতে হারিস ছিলেন যুদ্ধবন্দিনী এবং গণিমতের মাল।

০৯.  রায়হানা:

মহানবী ৫৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন রায়হানাকে। রায়হানা ছিলেন ইহুদী, বিধবা এবং সুন্দরী।  খন্দকের যুদ্ধ শেষে বনু কুরাইজা গোত্রের বিধবা ছিলেন রায়হানা।

এই রায়হানা বিনতে যায়েদের সাথে মহানবীর বিয়ের ব্যাপারটি পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।

১০.  মারিয়া বিনতে সাম’উন (মেরি) :

মহানবী ৫৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন এই মেরিকে। তিনি ছিলেন খ্রীস্টান, অপহৃতা ও বিধবা। এই ঘরে মহানবীর এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছিল।

মিশরের সম্রাট মুকাউকিসের পক্ষ হতে মহানবীর জন্য উপহার পাঠিয়ে ছিলেন এই নারীকে। মহানবী তাকে দাসী হিসেবে গ্রহণ করেন। তার গর্ভে ইব্রাহীম নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় যে ১৬ অথবা ১৮ মাস বয়সে মৃত্যুবরণ করে। 

তবে এই বিয়ে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মতে।

১১.  সাফিয়া:

মহানবী ৫৮ বছর বয়সে সাফিয়াকে বিয়ে করেন। তিনি শিক্ষিত, বিধবা এবং ভালো রাধুনী। সাফিয়া বিনতে হুওয়াই ছিলেন হযরত হারুন এর বংশধর।

১২. উম্মে হাবিবা:

মহানবী ৫৮ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করেন। তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্তা, বুদ্ধিমতি। হাবিবা ছিলেন ইসলামের প্রথম দিকের শত্রু আবু সুফিয়ানের কন্যা। তিনি ছিলেন অতীব সুন্দরী। 

তার স্বামী খ্রীষ্টান হন আবিসিনিয়ায় থাকার সময়। মহানবী আবিসিনিয়ার বাদশাকে এই বিবাহের প্রস্তাব দিলে বাদশা নিজেই উকিল হন এবং ৪০০ দীনার মহরানায় বিয়ে হয়। তার আরেক নাম রামালাহ বিনতে আবী-সুফিয়ান ।

১৩.  মায়মুনা:

মহানবী ৫৯ বছর বয়সে তাকে বিয়ে করেন। মায়মুনা ছিলেন বৃদ্ধা, তালাকপ্রাপ্তা বিধবা, ধর্মপারায়ণ। 

তার আসল নাম ছিল বাররা পরে মহানবী তার নাম রাখেন মায়মুনা বিনতে হারিছ। 

মায়মুনাই ছিলেন মহানবীর সবশেষ বিবাহিত স্ত্রী।

মহানবীর বিয়ে: বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের ভিন্নমত!

মহানবী মোট ১৩টি বিবাহ করেছেন, কারো মতে তার বিয়ে ১১ টি। দুইটি বিয়ে নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। এরা হলেন রায়হানা ও মেরি।

৫০ বছর বয়সে শেষ নবীর প্রথম স্ত্রী খাদিজা (রা.) মারা যান। পরের ১২ বছর তিনি আরো ১২ টি বিয়ে করেন। যাদের মধ্যে ১১ জন বিধবা ১ জন স্বামী পরিত্যক্তা আর একজন হলেন অল্প বয়সী কুমারী। যিনি ছিলেন খলিফা হয়রত আবু বকরের কন্যা আয়শা (রা.)।

মক্কায় থাকতে শেষনবী শুধুমাত্র দুটি বিয়ে করেছিলেন। আর বাকি বিবাহগুলো করেন মদিনায় হিয়রতের পর। 

মহানবী একজন স্ত্রীকেও তালাক দেননি। স্ত্রীদের মধ্যে ২ জন ছিলেন ইহুদী, ১ জন ছিলেন খ্রিস্টান।

দুইজনের সাথে বিয়ে হয় আল্লাহর সরাসরি নির্দেশে। একজন আয়শা (রা.) আরেক জন পালক পুত্রের স্ত্রী জয়নব।

মহানবীর সবচেয়ে সফল বিয়ে প্রথম স্ত্রী খাদিজার সাথেই। মহানবীর মৃত্যুর আগে মাত্র দুইজন স্ত্রী মারা যান এরা হলেন খাদিজা (রা.) ও জয়নাব বিনতে খুযাইমা। বাকি এগারো জন স্ত্রী মারা যান শেষনবীর মৃত্যুর পর। সবার শেষে মারা যান জয়নব বিনতে খুজাইমা।

শেষ নবীর দুই স্ত্রীর নাম ছিল জয়নব। একজন তার পালক পুত্রের স্ত্রী জয়নব বিনতে জাহাশ আরেকজন জয়নব বিনতে খুজাইমা, যিনি সবার শেষে মৃত্যুবরণ করেন।

বিশ্বাসীদের মতে বহু বিবাহের কারণ :

খাদিজার মৃত্যুর পর  সওদাকে বিয়ে করেন চার কন্যা সন্তানকে দেখভাল করার জন্য। সওদা ছিলেন বয়স্কা ও বিধবা। মহানবী বহুবিবাহের এমন আরো বেশ কিছু কারণ আছে বলে মনে করেন বিশ্বাসীরা।

১. আত্নীয়তার সম্পর্ক স্থাপন: 

তিনি খলিফাদের দুই মেয়েকে বিয়ে করেন। এরা হলেন প্রথম খলিফা আবু বকরের কন্যা আয়শা আর দ্বিতীয় খলিফা উমরের কন্যা হাফসা। 

এছাড়া তিনি অন্য দুই খলিফার সাথে নিজের মেয়ে বিয়ে দেন। হয়রত আলীর সাথে বিয়ে দেন ফাতেমার আর তৃতীয় খলিফা উসমানের সাথে বিয়ে দেন তার দুই কন্যা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুম। 

তার প্রিয় সহযোদ্ধাদের সাথে আত্নীয়তার বন্ধন গাঢ় করতে তিনি এই দুটি বিয়ে করেছিলেন। সে সময় আরবে বহু বিবাহ প্রথা চালু ছিল। 

২. শত্রুতা দুর করা : 

আবু সুফিয়ান প্রথমে ছিলেন ইসলামের বড় শত্রু। পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। মহানবীর  ১২তম স্ত্রী ছিলেন উম্মে হাবিবা। হাবিবা ছিলেন সেই আবু সুফিয়ানের কন্যা।

উম্মে সালমা ছিলেন আবু জাহেলের গোত্র বনু মাখজুম গোত্রের নারী। 

এছাড়া জুইয়ারিয়া ছিলেন বনু মস্তালিক ও সাফিয়া ছিলেন বনু নাজির গোত্রের। জুয়াইরিয়াকে বিয়ে করার পর সাহাবায়ে কেরাম ওই গোত্রের ১০০ যুদ্ধবন্দী পরিবারকে বিনাশর্তে মুক্তি দেন। কেননা, তারা হয়ে গেছে রাসূল (সা.) এর শ্বশুরপক্ষের লোক।

৩. দ্বীনের প্রচার প্রসার :

ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি অনেক কয়েকটি বিয়ে করেছিলেন বলে মুসলমানদের বিশ্বাস।

৪. জাহেলি যুগের প্রথা বিলোপ :

জাহেলি যুগ থেকে আরব সমাজে এ কুসংস্কার চালু ছিল যে, পালকপুত্র হিসেবে গ্রহণ করলে সে আপন পুত্রের মর্যাদা লাভ করবে। 

মহানবী পালকপুত্র জায়েদের স্ত্রীকে বিয়ে করে সব কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিলোপ সাধন করেন।

আল্লাহ তায়ালা সূরা আহজাবের ৩৭ নম্বর আয়াতে এই বিয়ে ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন।

৫. আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দান : 

অনেক নারীর স্বামী যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। যেমন হজরত সাউদা, হজরত হাফসা, হজরত জয়নব বিনতে খোজাইমা অথবা স্বামীর সাথে কুফুতে গরমিল হওয়া ইত্যাদি কারণে মহানবী তাদেরকে বিয়ে করে আশ্রয়দান করেন এবং তাদের কষ্ট লাঘব করেন ।

এছাড়াও আরো কিছু ইতিবাচক বিষয়কে মহনবীর বহুবিবাহের কারণ মনে করেন ইসলাম বিশ্বাসীরা।

অবিশ্বাসীদের মনে বিয়ে নিয়ে যে সকল প্রশ্ন!

অবিশ্বাসীদের মনে তিনটি বিয়ে নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হয়ে থাকে। প্রথম স্ত্রী বিধবা ও ধনী ৪০ বছর বয়সী  খাদিজা। তৃতীয় স্ত্রী মাত্র ৬ বছর বয়সী শিশু আয়শা এবং পালক পুত্রের তালাক প্রাপ্তার স্ত্রী জয়নব। 

বাকি স্ত্রীদের ব্যাপারে ছোট খাট বির্তক থাকলেও সেগুলো শুধু স্ত্রী সংখ্যা বির্তকে জড়িয়ে থাকে। যেমন জওয়াইরিয়া ছিলেন গতিমতের মাল। মায়মুনা ছিলেন বৃদ্ধা ইত্যাদি।

খাজিদার (রা.) সাথে বিয়ে নিয়ে বিতর্ক :

অবিশ্বাসীদের অভিযোগ সম্পত্তির লোভে মহানবী এই বিধবা ও বয়স্ক নারীকে বিয়ে করেছিলেন।

বিশ্বাসীদের মতে এমন লোভের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, মহানবী খাদিজার ব্যবসা দেখভাল করতেন। তিনি সৎ এবং পরিশ্রমী ছিলেন। খাদিজার পক্ষ থেকেই এই বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। তিনি তা পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে  এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

আয়শার(রা.)  সাথে বিয়ে :

অবিশ্বাসীদের কাছে সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত বিয়ে হলো হয়রত আয়শা (রা.)কে বিয়ে।

তিনি মাত্র ৬ বছরের একজন শিশুকে বিয়ে করেছিলেন। ৯ বছরে বয়সে তার সাথে শারিরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৮৯৬)। অবিশ্বাসীদের মতে এটি একটি অমানবিক বাল্য বিবাহ।

বিশ্বাসীদের মতে সেসময় আরবদের মধ্যে এমন কমবয়সী মেয়ের বিয়ের প্রথা ছিল। এই বিয়েতে কোন পক্ষ থেকে বাধা আসেনি। বাংলাদেশেও এমন বয়সে বিয়ের তথ্য পাওয়া যায়।

ভিন্ন ধর্মে কমবয়সী মেয়ে বিয়ের উদাহরণ পাওয়া যায় ইতিহাসে। খ্রিষ্টানদের পবিত্র মাতা মেরি ১১ বছর বয়সে যীশুর জন্ম দিয়েছিল, ওল্ড টেস্টামেন্ট বলা আছে ইসহাক নবী ৪০ বছর বয়সে ৩ বছরের মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। ইহুদীদের ধর্মমতে ৩ বছর বয়সী মেয়ে বিয়ে বৈধ। হিন্দুধর্মের সীতার বিয়ে হয়েছিল ৫/৬ বছর বয়সে।

১৯২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্টের কোথাও কোথাও বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ছিল ৭ বছর।

তাছাড়া আয়শাকে বিয়ে করার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশনা ছিল। (বুখারি: ৩৮৯৫)। যেখানে আল্লার সরাসরি নির্দেশ ছিল, কুরআনে উল্লেখ আছে তাই মুসলমানদের মনে এই বিয়ে নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।

পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিবাহ :

যায়েদ ছিলেন কালব গোত্রের হারেসা ইবনে শারাহীল নামক এক ব্যক্তির পুত্র। ছোটবেলার তাকে অপহরণ করে নিয়ে মেলায় বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে খাদীজার ভাই এর পুত্র হাকিম ইবনে হিযাম তাকে কিনে নিয়ে যান এবং পরে ফুফু খাদিজাকে উপঢৌকন হিসেবে পেশ করেন।

মহানবীর সাথে বিয়ের পর খাদিজার কাছ থেকে জায়েদকে তিনি নিয়ে নেন তার ভালো ব্যবহার আর আদব কায়দার জন্য। এরপর তার বাবা মা খোঁজ পেলে তাকে মুক্তিপণ দিয়ে নিয়ে যেত চায় কিন্তু জায়েদ মহানবীর সাথেই থাকার পক্ষেই মত দেন। তখন তার বয়স পনের বছর। এরপর লোক তাকে যায়েদ ইবনে মোহাম্মদ বা মুহাম্মাদের ছেলে বলেই ডাকতো। মক্কায় ১৩ বছর থাকার পর মহানবী যখন মদিনায় চলে আসেন তখন যায়েদও তার সাথে চলে আসে। 

মহানবীর ফুফাতো বোন জয়নবের বয়স তখন ৪০ ছিল। এর আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। প্রথম স্বামী মারা যাবার পর মহানবী নিজেই পালক পুত্র জায়েদের সাথে বিয়ে দেন বোন জয়নবকে।

মুতার যুদ্ধে যায়েদ নিহত হলে বিধবা হয়ে যান জয়নব। এরপরই মহানবীর সাথে তার বিয়ে হয়। এ নিয়ে সে সময়ই ভিন্নমত তৈরি হয়েছিল ।

পালক পুত্রের স্ত্রীকে বিয়ে নিয়ে সুরা নাজিল হয় সেসময়। সূরা আহযাব। বিশ্বাসীরা মনে করেন তিনি আল্লার নির্দেশ পালন করেছেন আর অবিশ্বাসীদের মতে তিনি ষড়যন্ত্র করে পালক পুত্রকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন এবং দুপক্ষের আলাদা আলাদা যুক্তি দেবার চেষ্টা করেন।

অবিশ্বাসীরা মতে মহানবী দরজার ওপারে জয়নবের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করেণ। 

আর বিশ্বাসী মুসলমানদের মতে জয়নবকে বিয়ে করার কয়েক কারণ মনে করেন:

১. মুসলমানদের মতে কুরআন ও আল্লাহর ইচ্ছা তিনি পালক পুত্রের বিধবা স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন।

২. জয়নবের বিয়ে সুখের ছিল না। জয়নব ও  যায়েদের বিয়ে যেহেতু মহানবীর ইচ্ছাতেই হয়েছিল তাই অসুখী ও পরে বিধবা বোনের জন্য নিজেকে দায়ী মনে করে, তাই তাকে বিয়ে করে সেই প্রায়শ্চিত্ত করেছিলেন।

৩. জয়নব শক্তিশালী আরব গোত্র আসাদ ইবন খুযায়মা এর সদস্য ছিলেন। পিতৃসূত্রে যাদের সাথে মহাম্মদ (সা.) এর বেশ কয়েকটি খণ্ডযুদ্ধ চলছিল ঐ সময়ে। যেহেতু তার প্রথমটি বাদের পরের প্রায় সব বিয়ে রাজনৈতিক ভাবনাযুক্ত এটাও সেরকম হতে পারে। শুধু বিয়ের মাধ্যমে তিনি অনেক শত্রুকে মিত্র করে ফেলেছিলেন।

শেষের আগে :

নিরপেক্ষভাবে এই সিদ্ধান্তে আসা কঠিন কেন আসলে শেষ নবী এতগুলো বিয়ে করেছিলেন। এজন্য বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীরা নিজেদের বিশ্বাসের উপর ভর করে নিজ নিজ সিদ্ধান্ত নেন।

বিশ্বাসীদের মত, তিনি যা করেছেন সঠিক করেছেন, আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী করেছেন। এজন্য বিয়ে নিয়ে তার চরিত্রকে কুলষিত করার চেষ্টা করা অন্যায়। ঈমানদার মুসলমানেরা তা কখন করেননা ।

আর অবিশ্বাসীরা বলেন, তিনি এমনই নারী লোভী ছিলেন। আর নারীর প্রতি এমন লোভ বর্তমান সময়ে একজন মানুষের চরিত্রের সবচেয়ে দুর্বল দিক হিসেব ধরা হয়।

বিশ্বাসীরা যা বিশ্বাস করে তার যেমন সম্মান দেয়া উচিত, তেমনি অবিশ্বাসীরা এই বিয়ে নিয়ে নিজের মনগড়া ভাবনা যুক্ত করে প্রশান্তি পেতে চাইলে তা করতে দেয়া উচিত। কিন্তু বিয়ে নিয়ে বির্তক করে পুরো ইসলামকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা সঠিক নয় বলেই আমার মনে হয়।

কারণ মহানবী ১৩ বিয়ে করেছিলেন এটি ঐতিহাসিক সত্য। এটা বিশ্বাসীরা যেমন স্বীকার করেন, অবিশ্বাসীরাও তাই বলেন। বির্তকটি শুধু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মধ্যে আটকে আছে। 

১৪ thoughts on “মহানবীর ১৩ বিয়ে: বিতর্ক ও ফজিলত !

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x