
পারভেজ সেলিম ।।
শ্রীলংকা মুলত দুটো জাতিসত্তায় বিভক্ত দেশ। সিংহলী ও তামিল। অনেকটা দেশভাগের আগে আমাদের হিন্দু-মুসলমানের মতো। সিংহলীরা বৌদ্ধ আর তামিলরা হিন্দু। কিন্তু তাদের জাতীসত্ত্বায় ধর্ম আমাদের মতো জেঁকে বসেনি। তারা নিজেদের সিংহলি কিংবা তামিল বলতে বেশি ভালোবাসে ধর্মীয় পরিচয়ের চাইতে।

তামিলরা তাদের নিজেদের একটি স্বাধীন ভুখন্ডের স্বপ্ন দেখেছে বহুদিন। ১৯৪৮ ব্রিটিশরা চলে যাবার সময় দুটি আলাদা রাষ্ট্র না করায় তামিলরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করতে থাকে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রের ভাষার প্রশ্নে, শিক্ষা, উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে তামিলরা নিজের বঞ্চিত মনে করতে থাকে এবং নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের চিন্তা সবার মাঝে সংক্রামিত হতে থাকে।
প্রথম কয়েক দশক আলোচনায় কোন ফল লাভ না হওয়া ১৯৭৬ সালে ভিলুপিল্লাই প্রভারকণ নামের এক তরুণ মাত্র ২২ বছর বয়সে এক সশস্ত্র গ্রুপ গড়ে তোলে। এক দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের দিকে ঝুকে পড়ে শ্রীলংকা। ‘লিবারেশন অব তামিল টাইগার ইলাম’ সংক্ষেপে এলটিটিই নামের সংগঠনটি খুব দ্রুত মানুষের নজরে চলে আসে।
আত্নঘাতি হামলায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধিকে হত্যা করে এলটিটিই। ভারতের শান্তি রক্ষার নামে শ্রীলংকাকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে বাধ্য করে এই হামলার মধ্য দিয়ে। হয়েছেও তাই। এই হত্যাকান্ডের পর ভারত নিরপেক্ষ ভুমিকা গ্রহণ করে। শ্রীলংকা থেকে তাদের সকল সেনা ফিরিয়ে আনে।
তামিল নিধণে নিজের দেশের মানুষকে যেভাবে হত্যা করেছে রাজাপাকসের সরকার, তারতো একটা প্রাকৃতিক বিচার আছে! অনেকে মনে করেন এক যুগ পর মাহেন্দ্রের এমন অপমানজনক বিদায় আসলে তামিলদের অভিশাপের ফল।
এক লাখ তামিল হত্যার রক্ত লেগে আছে শ্রীলংকার সরকারের হাতে। তাদের মধ্য রাজাপাকসে সরকারই ছিল সবচেয়ে নৃশংস। মাহেন্দ্রের নির্দেশে সে সসয় দানব হয়ে উঠেছিলে শ্রীলংকার সেনাবাহিনী।
১৯৪৮ সালে মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ ছিল তামিল, আর এখন তা নেমে এসেছে ১১ শতাংশে। অনেকটা বাংলাদেশে হিন্দুদের আর ভারতে মুসলমানদের অবস্থার মতো। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করা হচ্ছে সংখালঘুদের।
অন্যদিকে তামিল যোদ্ধারাও যেভাবে আত্নঘাতি হামলা চালিয়ে রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে সেটিও কাম্য ছিলনা।
স্বাধীন একটি ভুখন্ডের আশায় যত রক্তপাত হয়েছে তার সবটাই বৃথা গেছে তামিলদের। আপাতত। ভবিষ্যতের কথা বলা যায় না।