
পারভেজ সেলিম ।।
সাল ৬২৪ খ্রি.। কুরাইশদের অত্যাচারে মক্কা থেকে মুসলমানেরা মদিনায় এসেছে দুই বছর হল। এতদিনে মুসলমানদের ঘরে একটি সন্তানও জন্ম গ্রহণ করেনি। ইসলাম বিরোধীরা চারিদিকে গুজব ছড়াতে শুরু করল যে যারা মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করেছেন তাদের আর কোন সন্তান হবে না।
এ সময় আবু বকরের কন্যা আসমার ঘর আলো করে জন্ম নিল এক ফুটফুটে ছেলে সন্তান। মদিনায় মুসলমানদের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। নিজের পিতার নামের সাথে মিল রেখে মহানবী নিজেই আদর করে তার নাম রাখেন আব্দুল্লাহ। মদিনায় হিজরতের পর জন্ম নেয়া প্রথম মুসলিম সন্তান।
পরবর্তীতে এই আব্দুলাইই হবেন যুদ্ধের ময়দানে জীবন উৎসর্গ করা ইসলামের প্রথম খলিফা। হবেন ইসলামের প্রথম দিকের সকল বিজয় আর নৃসংশতার রাজস্বাক্ষী।
আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকরের নাতি। বড় মেয়ে আসমা ও সাহাবী জুবায়ের ইবনুল আওয়ামের প্রথম সন্তান। মহানবীর স্ত্রী আয়শার ভীষণ প্রিয় ছিলেন ভাগ্নে ইবনে জুবায়ের। বাবা জুবায়ের ছিলেন মহানবীর প্রিয় একজন সাহাবী। যিনি ‘উটের যুদ্ধ’ বা ‘বসরার যুদ্ধে’ শহীদ হয়েছিলেন।
ছোটবেলায় ইবনে যুবায়ের দেখেছেন ইসলামের বিজয় কিভাবে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে । তার বয়স যখন আট তখন মুসলমানদের কাঁদিয়ে পরপারে চলে যান প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)।
এরপরে ২৯ বছর খুলাফায়ে রাশেদিনের চার খলিফার অন্যন্য ইসলামী শাসনব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে বেড়ে ওঠেন তিনি । মধ্য বয়সে স্বাক্ষী হয়েছেন উমাইয়াদের অন্যায় অবিচার আর অত্যাচারের। ৬৮০ সালে ই্য়াজিদের ক্ষমতার গ্রহণের প্রতিবাদকারী মহান সাহাবীদের একজন ছিলেন এই আবদুল্লাহ।
শেষে মদীনা ছেড়ে ইমাম হাসান কুফার দিকে রওয়ানা হলে মক্কায় থেকে যান ইবনে যুবায়ের। স্বাক্ষী হন ইসলামের সবচেয়ে মর্মান্তিক ও বেদনার ঘটনা কারবালার। ইমাম হোসাইন শহীদ হন কারবালার প্রান্তরে।
বৃদ্ধ বয়সে এসে তিনি মুসলমানদের প্রিয় খলিফা নির্বাচিত হবেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতিবাদ করে যান উমায়াইদের অন্যায় আর নৃশংসতার বিপক্ষে।
৬৮০ সালে অক্টোবরে যখন কারবালায় হত্যাকান্ড ঘটে তখন মক্কাতে বসে আবারো বিদ্রোহ করেছিলেন ৫৬ বছর বয়সী ইবনে যুবায়ের। মক্কার মুসলমানেরা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল ইবনে যুবায়েরের নেতৃত্বে।
এ সময় ইয়াজিদ নানা রকম প্রলোভন দেখিয়েও যখন ইবনে যুবায়েরকে বশে আনতে পারেননি তখন মক্কা আক্রমণ করেছিলেন। ৬৮৩ সালের অক্টোবরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল কাবা ঘরে। তার কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল ইয়াজিদের। ইয়াজিদের মৃত্যুর পর মুসলমানদের আশা ভরসার একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিলেন বৃদ্ধ আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের। ৫৯ বছর ইসলামের খলিফা নির্বাচিত হন মহানবীর বংশের শেষ প্রভাবশালী এই সাহাবী ।
আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের খিলাফত:
ইয়াজিদের মৃত্যুর পর বেশিরভাগ মুসলমান উমাইয়াদের পক্ষ ত্যাগ করেন। সেসময় মুসলমান শাসিত ৮টি প্রদেশের একটি মাত্র উমাইয়াদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর সেটি হল দামেস্ক।
মক্কা তখন আব্দুলাহ ইবনে জুবায়েরের অধীনে। মুসলমানেরা এবার তাকে প্রকাশ্যে খলিফা নির্বাচিত করে বায়য়াত গ্রহণ করতে থাকেন। কুফা, মিশর, বসরা, ইয়েমেন, আলজেরিয়া, খোরাসানের গভর্নরেরা উমাইয়াদের পক্ষ ত্যাগ করে ইবনে জুবায়ের পক্ষ গ্রহণ করেন। দামেস্ক ছাড়া পুরো মুসলিম উম্মাহ প্রধান হন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাযের।
জানা যায় মৃত্যুর আগে দামেস্কের জনগনের পক্ষে বায়াত গ্রহণের শপথ নিয়েছিলেন দ্বিতীয় মুয়াবিয়াও। দামেস্ক থেকে সেসময় মারওয়ানও বায়াত গ্রহণের জন্য মক্কায় আসছিলেন। কিন্তু পথে কুফার কুখ্যাত গভর্নর কারবালা হত্যাকান্ডের প্রধান কুশীলব উবায়েদুল্লাহ ইবনে জিয়াদের সাথে দেখা হওয়া সবকিছু উল্টে যায়।
ইবনে জিয়াদ মারওয়ানকেই খলিফা হবার জন্য প্রলুব্ধ করতে থাকেন। কারন আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের যদি খলিফা নির্বাচিত হন তাহলে কারবালা হত্যাকান্ডের বিচার শুরু করবেন বলে তিনি ভীত ছিলেন। তাই তিনি চান না ইবনে জুবায়ের খলিফা হোক। তিনি মারওয়ানকে খলিফা হতে প্ররোচিত করতে থাকেন।
ক্ষমতার এমন প্রলোভনে মারওয়ানের মনও পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি দামেস্কে ফিরে গিয়ে নিজেই খলিফা হয়ে যান। ইসলামের গতিপথ আবারো ঘুরে যায় ভিন্নদিকে।
মারওয়ানের মৃত্যু হয় ৬৮৫ সালের মে মাসে। দামেস্কের ক্ষমতায় বসেন ছেলে আব্দুল মালেক। আর অন্যদিকে কুফায় বিদ্রোহের আগুন দেখা দেয়।
কুফায় মুখতারের প্রতিশোধের বিদ্রোহ:
৬৮৫ সালের ১৮ অক্টোবর কুফার ক্ষমতা দখল করেন মুখতার আল সাকাফি। কারবালায় ইমাম হোসেনসহ অন্যান্য শহীদদের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন তিনি।
ক্ষমতায় বসার এক বছরের মধ্যে কুফার গর্ভনর উরায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ, ইমাম হোসেনের গলায় ছুরি চালানো শিমারসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেন।
এরপর মুখতার আলীয় খেলাফত নামে নুতুন এক খেলাফতের ঘোষণা দেন। ইমাম হোসেনের সৎ ভাই, খলিফা আলীর আরেক পুত্র মোহাম্মদ ইবনে আল হানাফিয়াকে ইমাম মাহাদী ঘোষণা করেন মুখতার। এই নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়।
ইয়াজিদের মৃত্যুর পর মুখতারের সাথে ইবনে জুবায়েরের যে সখ্যতা তৈরি হয়েছিল, ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করে।
সাকাফির প্রতি বিশ্বাস হারতে শুরু করে ইবনে জুবায়ের। শেষে মুখতারকে নিয়ন্ত্রণ করতে তার ভাই মাসহাবকে কুফায় প্রেরণ করতে বাধ্য হন জুবায়ের।
৬৮৭ সালের ৩রা এপ্রিল ১৯ জন সঙ্গী সহ মাসহাবের বাহিনীর নিকট প্রাণ হারান মুখতার আল সাকাফি। মাত্র ১৮ মাস ক্ষমতায় ছিলেন কুফার এই বিপ্লবী নেতা।
সাকাফির কারবালা হত্যাকান্ডের প্রতিশোধের ধারণা সুদুর প্রসারি প্রভাব ফেলে মুসলমানদের মনে। বিশেষ করে শিয়াদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি হয়ে ওঠেন মুখতার আল সাকাফি।
উমাইয়াদের বিজয় ও নৃশংসতা :
৬৮৪ সালে মারওয়ানের মৃত্যুর পর পুত্র আব্দুল মালেক দামেস্কের ক্ষমতা খুব শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন। ধীরে ধীরে অন্য প্রদেশ গুলো দখল করতে থাকে মালেক। ৬৯১ সালে কুফাও দখলে চলে যায় আব্দুল মালেকের। মক্কা ছাড়া বাকি প্রদেশ উমাইয়ারা পুর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
কুফা দখলের পর আবারো মক্কা অবোরোধ করে উমাইয়ারা। দুর থেকে গোলার আঘাতে যুবায়েরর পক্ষের অনেক মুসলমান নিহত হয় । দীর্ঘ অবরোধে বাকিরাও ধীরে ধীরে যুবায়েরের পক্ষ ত্যাগ করতে তাকে। মক্কায় ইবনে যুবায়ের একা হয়ে পড়েন। সাহস আর বীরত্বের সাক্ষী হতে একা পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন মা আসমা; খলিফা আবু বকরের বড় কন্যা।
এমন পরিস্থিতি ইবনে জুবায়ের দ্বিধাহীন মন নিয়ে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। মায়ের মতামত জানতে চান। মা নির্ভয়ে নি:সকোচে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, ‘আল্লাহর শপথ তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করো। উমাইয়াদের কাছে আত্নসমর্পণের চেয়ে ইসলামের জন্য শহীদ হওয়া কি শ্রেষ্ঠ নয়’!
মায়ের এমন মতে খুশি হন ইবনে জুবায়ের। মাযের কপালে চুমু খেয়ে, মুসলমানেরা যে আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে নত স্বীকার করেন না তা আবারো প্রমাণে বেরিয়ে পড়েন। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও একাই উমাইয়ার বিশাল বাহিনীর সাথে যুদ্ধ শুরু করেন তিনি।
৬৯২ সালের নভেম্বরে মক্কায় শহীদ হন আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের। সন্তান হারানোর বেদনা নিয়ে গর্ব ভরে একা দাঁড়িয়ে থাকেন আবু বকরের কণ্যা।
হত্যার পর তার শরীরের উপর চালানো হয় চরম নিষ্ঠুরতা।মায়ের সামনে কাটা মস্তক এনে বিদ্রুপ করতে থাকে উমাইয়ারা। এই নৃশংসতার নেতৃত্বে ছিলেন ইরাকের কুখ্যাত সেনাপতি হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।
কারবালার যুদ্ধে যেমন নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ইমাম হোসাইন একাই লড়েছিলেন, তেমনি ইবনে জুবায়েরও ইসলামের জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে একাই যুদ্ধের ময়দানে গিয়েছিলেন উমাইয়া বাহিনীর বিপক্ষে।
হায় আফসোস ! ইমাম হোসেনের মৃত্যুকে সহ্য করতে হয়নি তার মা ফাতেমাকে কিন্তু নিজ সন্তানের কাটা মস্তক আর ছিন্নভিন্ন রক্তাত্ব শরীর সহ্য করতে হয়েছে বৃদ্ধা মাতা আসমাকে।শহীদ মাতা গর্ভ ভরে আল্লার কাছে ফরিয়াদ করেন ‘নিশ্চয়ই তুমি আমার মনের ইচ্ছা পুরুন করেছো, আমার সন্তান ইসলামের সম্মান বাঁচতে জীবন দিযেছে মা হিসেবে এর চাইতে আমরা আর গর্বের কি আছে !’
৬৮০ সালে কারবালা যুদ্ধ দিয়ে শুরু হওয়া ইসলামের ‘দ্বিতীয় ফিতনা’ শেষ হয় ৬৯২ সালে।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরে মৃত্যুর পর ইসলামী উম্মাহ একমাত্র ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন আব্দুল মালেক ইবনে মারওয়ান। শুরু হয় উমাইয়াদের দীর্ঘমেয়াদী শাসন।
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
ভিডিও সৌজন্য : Banglabox
You could definitely see your enthusiasm within the
work you write. The sector hopes for more passionate writers like you who aren’t afraid to say how they believe.
At all times follow your heart.
761511 867008Dead composed topic matter, thanks for data . 513471
876543 528571You ought to participate in a contest for among the very best blogs on the web. I will suggest this internet site! 567942
But wanna comment on few general things, The website style and design is perfect, the articles is rattling fantastic : D.
I was pretty pleased to discover this great site. I need to to thank you for your time for this particularly fantastic read!! I definitely appreciated every part of it and I have you book marked to see new stuff on your blog
Absolutely indited subject material, appreciate it for entropy. “In the fight between you and the world, back the world.” by Frank Zappa.