শওকত হোসেন।।
ধর্ষণ কিভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব এই প্রসংগে সম্ভবত বাংলাদেশের সবাই কিছু না কিছু মতামত দিতে পারবেন, দিচ্ছেনও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষের মতামত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষের অভিমত হচ্ছে ধর্ষকের জন্য আরো কঠোর সাজার ব্যাবস্থা করতে হবে। ধর্ষণের সাজা এমনিতেই যথেস্ট কঠোর, যাবজ্জীবন কারাদন্ড। এর চেয়ে কঠোর সাজা আছে কেবল মৃত্যুদন্ড। এবং ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করার ব্যাপারেই দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বেশী মতামত পাওয়া যাচ্ছে। ধর্ষণ প্রসংগে মানুষের মতামতগুলো কি পরিমান এলোপাথাড়ি এবং ভ্রান্ত তা এই ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করার সপক্ষে মানুষের অভিমতের জোয়ার দেখেই কিছুটা অনুমান করা যায়।
I) ধর্ষণের সাজা কেনো মৃত্যুদন্ড করা উচিত নয় ;
ক) ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হলে ধর্ষণের পর ভিকটিমকে হত্যা করার প্রবণতা অনেক বেড়ে যাবে। পরিসংখ্যান বলছে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভিকটিম এবং ধর্ষক পরস্পরের পরিচিত। এছাড়া শিশু নির্যাতনকারীদের বেলায়ও প্রায় ব্যাতিক্রমহীনভাবে অপরাধীটি হয়ে থাকে ভিকটিম শিশুর কাছের বা পরিচিত কেও। এখন, ধর্ষণের সাজা যদি যাবজ্জীবন কারাদন্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড করা হয় তাহলে দৃশ্যটা হবে এরকম,
খুনের শাস্তি মৃত্যুদন্ড, ধর্ষণের শাস্তিও মৃত্যুদন্ড, এদিকে ভিকটিম আবার ধর্ষককে চিনেও ফেলেছে।
অতএব সাক্ষী বাচিয়ে রেখে লাভ কি?
ধর্ষকেরা ধর্ষণের পর অনেক চিন্তাভাবনা করে ভিকটিমকে হত্যা করার সিদ্ধ্বান্ত নিবে ব্যাপারটা এরকম না, ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হলে সারভাইবালের ন্যাচারাল ইন্সটিন্ক্ট থেকেই সে ভিকটিমকে খুন করার কথা ভাববে! “ডাকাতি করতে গিয়ে চিনে ফেলায় বাড়ীওয়ালাকে খুন ” এরকম খুনের ঘটনা আমরা প্রায়ই শুনতে পাই।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন যে, ধর্ষণ একটা সহিংস ( Violent) অপরাধ এবং বিপুল সংখ্যক ধর্ষক চরিত্রগতভাবেই (By nature) সহিংস হয়ে থাকে। ভিকটিমেরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হয় অল্পবয়েসী শিশু বা ভালনারেবল /নিড়িহ ও দুর্বল। ধর্ষণের অপরাধটি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই হয় নির্জনে, লোকচক্ষুর আড়ালে। সুতরাং সহিংসপ্রবণ ধর্ষক তার ভালনারেবল ভিকটিমকে একান্তে এবং নির্জনে পেয়ে যাচ্ছেন। এরুপ প্রেক্ষাপটে ধর্ষণের সাজা খুনের সাজার অনুরুপ মৃত্যুদন্ড করা হলে তার অনিবার্য পরিনতি হবে ধর্ষণের পর ভিকটিমকে হত্যা করার প্রবনতা বেড়ে যাওয়া, বিশেষ করে শিশু ভিকটিমদের ক্ষেত্রে এই হার অনেক বেড়ে যাবে বলে আশংকা করা হয়।
খ) ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হলে ধর্ষণের অপরাধে নালিশ করার প্রবনতা অনেক কমে যাবে। ভিকটিমের ওপর পারিবারিক ও সামাজিক প্রেশার আসবে ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে মিটিয়ে ফেলার। পুর্বেই বলা হয়েছে যে, প্রায় ৯৫% ক্ষেত্রেই অপরাধী এবং ভিকটিম পরস্পরের পরিচিত ও সম্পর্কিত থাকেন। আফটার অল – চাচাতো ভাই, পাড়াতো ভাই, চাচা, ফুপা, ক্লাশমেট, কলিগ অর্থাত পরিচিত “লোকটার একেবারে ফাসি হয়ে যাইবেরে বইন/ মা, সুতরাং মামলা করিস না!” এরকম সামাজিক ও পারিবারিক প্রেশার আসবে ভিকটিমের ওপর।
এমনিতেই ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের অপরাধ হচ্ছে সবচেয়ে কম নালিশ করা অপরাধ ( Less Reported)। ক্রিমিনোলজিকাল গবেষনায় দেখা গেছে যে বেশীরভাগ ধর্ষকেরাই ধর্ষণ করার সময় ধরে নেয় যে ভিকটিম নিশ্চই এই ঘটনাটি কাওকে জানাবেনা এবং নালিশই করবেনা। একারণেই অপরাধটি করার সময়ে আইনের বইয়ে ধর্ষনের সাজা কতটুকু আছে বা নেই তা নিয়ে ধর্ষকেরা মোটেই চিন্তা করেনা। প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই ধর্ষকের অনুমানই সত্য হয়, ভিকটিম তার সংগে ঘটা অপরাধটির কথা পুলিশকে জানায়না। ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হলে ভিকটিমের ওপর যেই বাড়তি পারিবারিক ও সামাজিক প্রেশার পরবে তার ফলে ধর্ষণের ঘটনায় নালিশ জানানোর পরিমান আশংকাজনকভাবে আরো কমে যাবে। নালিশ জানানোর পরিমান আরো কমে গেলে ধর্ষণের পরিমানও বেড়ে যাবে।
গ) ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করার পক্ষে যারা যুক্তি দেখিয়ে যাচ্ছেন তাদের একটা প্রিয় উদহারণ হচ্ছে এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২। তারা এরুপ বলতে পছন্দ করেন যে উক্ত আইনে এসিড নিক্ষেপ করে কাওকে আহত করার শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান করার পর থেকে এসিড সন্ত্রাস অনেক কমে গেছে। এই যুক্তিটি সম্পুর্নই ভুল। আসলে উক্ত আইনের মাধ্যমে খুচরা এসিড ক্রয় বিক্রয়, আমদানি, পরিবহন বা সংরক্ষন’কে এমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয় যে, এখন কেও যদি এসিড নিক্ষেপ করার উদ্দ্যেশ্য নিয়ে ঘুরেও বেড়ায়- তবুও ছয় মাস চেস্টা করেও সে নিক্ষেপ করার জন্য এসিড সংগ্রহই করতে পারবেনা। সফলতাটা মুলত এসেছে এসিডকে দুষ্প্রাপ্য করে দিয়ে, মৃত্যুদন্ডের বিধান করায় এসিড নিক্ষেপ কমে গেছে এই যুক্তিটি মোটেও সঠিক নয়।
ঘ) ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করার সপক্ষে যুক্তি দেখানো হয় এই বলে যে ” বর্তমানে প্রচলিত আইনে ধর্ষণের সাজা যথাযত পরিমানে নেই, সাজার পরিমান খুব কম “, সুতরাং সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড করা হলে অপরাধীরা ভয়ে এই অপরাধ আর করবেনা।
বর্তমানে বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সাজার পরিমান কম এই তথ্যটিই সঠিক নয়। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্ষণের সাজা হল যাবজ্জীবন কারাদন্ড ( দেখুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারা এবং দন্ডবিধির ৩৭৫ ধারা)। যাবজ্জীবন কারাদন্ড মানে কিন্তু ১৪ বছরের কারাদন্ড বা ২০ বছরের কারাদন্ড নয়, যাবজ্জীবন কারাদন্ড মানে আমৃত্যু কারাদন্ড। সুতরাং ধরে নেন যে ধর্ষণ প্রমান হলে ধর্ষককে মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে। যাবজ্জীবন/ আমৃত্যু কারাদন্ড কি শাস্তি হিশেবে লঘু/ অল্প হয়ে গেলো? মোটেও তা নয়। তারমানে, দেখা যাচ্ছে যে ” আইনে ধর্ষণের সাজা কম ” নামের কোন সমস্যা বাস্তবে আসলে বিরাজই করছেনা ( কারণ আইনে ধর্ষণের সাজা যথেস্টই কঠোর) । যেই সমস্যাটার অস্তিত্বই নেই সেটাকেই বড় সমস্যা মনে করে আমরা তা সমাধানের জন্য সবাই উঠেপরে লেগেছি।
ঙ) ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হলে কি ধর্ষণের পরিমান কমবে?
সরাসরি উত্তর হচ্ছে ‘ না ‘। মৃত্যুদন্ড দিয়ে অপরাধ কমানো যায় এরকম কোন প্রমান পৃথিবীর কোন গবেষনাতেই পাওয়া যায়নি। ইংল্যান্ডে একসময় পকেটমারার ( pickpocketing) শাস্তি ছিল প্রকাশ্যে ফাসিতে ঝুলিয়ে মৃতুদন্ড। খোলা মাঠে পকেটমারকে ফাসিতে ঝুলানো হত, হাজার হাজার উৎসুক জনতা সেই পকেটমারের ফাসি দেখতে জড়ো হত। সেই জমায়েতের ভিতর থেকেও অনেকের পকেট মারা যেতো। আমেরিকার কিছু কিছু রাজ্যে বর্তমানে অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় আর কিছু কিছু রাজ্যে মৃত্যুদন্ড বিলুপ্ত করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় যেসব রাজ্যে মৃট্যুদন্ড আছে সেসব রাজ্য যেসব রাজ্যে মৃত্যুদন্ড নাই সেসব রাজ্যের চেয়ে গুরতর অপরাধ বেশী হয়। তবুও আমরা ভাবতে পছন্দ করি যে মৃত্যুদন্ড দিলে হয়তো সম্ভাব্য অপরাধীরা ভয়ে এই অপরাধটি আর করবেনা।
“আজীবন কারাগারে থাকতে হবে” এটা কি শাস্তি হিশেবে যথেস্ট ভিতীকর নয়? এমসি কলেজের অপরাধীগুলোর কথা ভাবুন। তারা যখন ধর্ষণ করছিল বা ধর্ষণের সিদ্ধ্বান্ত নিয়েছিল তখন তারা কি ধর্ষণের শাস্তি আইনে কম আছে এরকম ভাবছিল নাকি তারা ধরেই নিয়েছিল যে ভিকটিম এই ঘটনায় নালিশই করবেনা?
এই দুইয়ের মধ্যে কোনটা তাদের মনে খেলা করছিল বলে আপনার ধারনা? নিশ্চই দ্বিতীয়টা।
যাবজ্জীবন কারাদন্ড’কে ভয় পায়না এরকম আহাম্মক কি দুনিয়াতে আছে? সুতরাং আইনে ধর্ষণের সাজা কম তাই ধর্ষকেরা ধর্ষণ করার সাহস পাচ্ছে ব্যাপারটা এরকম নয়।
চ) বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই কি আসলে ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হোক এরকমটি চাচ্ছেন?
গনমাধ্যমের সংবাদসুত্রে জানা যাচ্ছে যে বাংলাদেশ সরকার ধর্ষণের সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদন্ড করার কথা ভাবছে, এই সংক্রান্ত আইনের সংশোধনীর খসড়া প্রস্তুতের কাজ চলছে। বলা হচ্ছে ব্যাপক গনদাবীর মুখে সরকার এরকম সংশোধনীর উদ্যেগ নিয়েছে।
ফেসবুকে সবাই যেভাবে ঝাপিয়ে পরে ধর্ষনকারীর ক্রসফায়ার চাইছে, মৃত্যুদণ্ড চাইছে এবং ধর্ষককে নুপংসুক বানানোর, চামড়া ছিলে লবন লাগিয়ে দেওয়ার, পুরুষাংগ কর্তন করে বাড়ীর সদর দরজায় ঝুলিয়ে রাখার প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছে তাতে যে কারো মনে হতে পারে যে বাংলাদেশে ধর্ষন একটি চুড়ান্ত অগ্রহনযোগ্য অপরাধ এবং এই বিষয়ে একটা সামাজিক ঐক্যমত তৈরী হয়েছে।এমনটি ভেবে থাকলে আপনি নিতান্তই ভুল করছেন কারন এটি মুল দৃশ্যের সামনের একটা সাময়িক পাতলা পর্দা মাত্র।
মুল দৃশ্যটা এরকম যে-এখনো বাংলাদেশে ধর্ষনের ঘটনা এলাকায় প্রচার হলে স্থানীয় শালিষে ধর্ষককে ২০ টি জুতার বাড়ী এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় আর ভিকটিমকে দেয়া হয় বাজে মেয়ের তকমা। এখনো, যৌন নির্যাতনের ঘটনায় “দুস্ট ছেলেরা, ব্যাটা ছেলেরা একটু আধটু এরকম করেই – তুমি মেয়ে মানুষ নিজে সামলে চলতে পারোনা” মর্মে প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়! এই সংস্কৃতি জেনারেশনের পর জেনারেশন চলতে চলতে অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে! সুতরাং ফেসবুকে অস্বাভাবিক ও কঠোরতম শাস্তির প্রস্তাবনা দেখে দেখে যদি ভেবে নেন আমরা ধর্ষনকে চুড়ান্তভাবে অগ্রহনযোগ্য মর্মে ঐক্যমতে পৌছেছি তাহলে আপনি প্রকৃত চিত্রটি দেখতে পাচ্ছেন না। একটা দুইটা ঘটনা চড়ম নৃসংসতা নিয়ে ভাইরাল হলে আমরা আঁতকে উঠে একটা তাতক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখাই কিন্তু এতে করে মুল যে দৃশ্যপট তাতে কোন বদল হয়না। আজকে যারা ফেসবুকে ” ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হোক ” মর্মে দাবী জানাচ্ছেন তিনিই কয়েকদিন পরে অন্য একটি ঘটনায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবেন ” ভালো মেয়েরা রেইপড হয়না “/ ধর্ষনের জন্য নারীর পোশাকই দায়ী/ ধর্ষনের বেশীরভাগ ঘটনাই মিথ্যা ( ইত্যাদি)। এমসি কলেজের ঘটনায় যারা ধর্ষক হিশেবে অভিযুক্ত তারাও কেওকেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে রেখেছেন “ধর্ষকদের ক্রসফায়ারে দেয়া হোক” !
অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পরপর বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ধর্ষন ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ভাইরাল হওয়ায় নাগরিকগন নিড়াপত্তাহীন বোধ করছেন, ‘আমি বা আমার পরিবারেরও কেও এরকম ঘটনার শিকার হতে পারে’ মর্মে আশংকা করে মুষড়ে পরেছেন এবং ধর্ষনের অপরাধ কেনো নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছেনা ভেবে কোন কুল কিনারা না পেয়ে ফেসবুকে এসে রেগেমেগে মতামত দিয়ে দিচ্ছেন ” ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হোক”! সাধারন জনগন অপরাধ বিজ্ঞানী নন। প্রকৃতপক্ষে তাদের চাওয়াটা হলো প্রত্যেকটা ধর্ষকের যেনো বিচার হয়, ধর্ষন এবং যৌন নির্যাতনের অপরাধ যেনো কমে আসে। কিন্তু কিভাবে এটি করা সম্ভব বা কিভাবে ধর্ষন কমানো সম্ভব সেটি যেহেতু তারা জানেননা, সেহেতু তারা সবচেয়ে সহযবোধ্য একটি সমাধানের প্রস্তাব দিচ্ছেন – ” ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হোক “! সরকারের উচিত হবে জনগনের এই রাগান্মিত দাবীটিকে আক্ষরিক অনুবাদ না করা। নাগরিকগন চিতকার করে সম্মিলিতকন্ঠে ‘ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড চাই’ বলছে বটে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা চাইছেন যেকোন মুল্যে, যেকোন উপায়ে ধর্ষন বন্ধ হোক, ধর্ষকের সাজা হোক, নারীরা নিড়াপদ ফিল করুক। সুতরাং ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড না করেও সরকার যদি অন্য কোন বিকল্প এবং টেকসই উপায়ে ধর্ষনের ঘটনা কমিয়ে ফেলতে পারেন, প্রত্যেকটা বা বেশিরভাগ ধর্ষকের সাজা নিশ্চিত করতে পারেন তাতে নাগরিকদের আপত্তি নেই, কারন সেটাই নাগরিকদের প্রকৃত চাওয়া। কিন্তু সরকার যদি ” ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হোক ” নাগরিকদের এই দাবীটির আক্ষরিক অনুবাদ করে সত্যি সত্যিই ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড করে তাহলে তা হবে একটি ভীষণ জনতুষ্টিবাদী ( Populist) ব্যার্থ উদ্যেগ। এতে করে বরং ধর্ষনের পর ভিকটিমকে হত্যা করার প্রবনতা বেড়ে যাবে, ধর্ষনের ঘটনায় নালিশ জানানোর পরিমান আরো কমে যাবে বিধায় অপরাধীদের মন থেকে শাস্তির ভিতী আরো কমে যাবে।
II) তাহলে, কি করা উচিত?
ধর্ষন পুরুষের অনিবার্য জৈবিক চাহিদা নয়, তাই যদি হত তাহলে পৃথিবীর সকল পুরুষই ধর্ষক হয়ে উঠতেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি যে কেও কেও ধর্ষক হয়ে উঠে- সকলেই না। এটা অনিবার্য জৈবিক চাহিদা নয় বলেই এটা দমন করা সম্ভব, নিদেনপক্ষে কমিয়ে আনা সম্ভব। ধর্ষন কমাতে হলে, যৌন অপরাধ ও নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে হলে এই সমস্যাটার মুল কারনগুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে।
মুল সমস্যাঃ- মুল সমস্যাটা হলো ৯৫% ক্ষেত্রেই ভিকটিমরা নালিশ জানায়না, নালিশ জানানোর মতন অনুকুল পরিবেশও নাই। একটা আদর্শ সিচ্যুয়েশান কল্পনা করে দেখুন যেখানে প্রত্যেকটা ধর্ষন বা যৌন নিগ্রহের ঘটনায় ভিকটিম অভিযোগ করছে এবং প্রত্যেকটা ঘটনায়ই মামলা হচ্ছে! অনুমান করে দেখুন কি অসাধারন হতে পারতো ব্যাপারটা! এমসি কলেজের অভিযুক্ত ধর্ষকেরা যদি জানতো তাদের ভিকটিম থানায় গিয়ে মামলা করে দিবে তারা কি অপরাধটা করতে সাহস পেতো? নোয়াখালীর অপরাধীগুলো যদি জানতো যে ভিকটিম এই ঘটনায় থানায় বা আদালতে মামলা করে দিবে তারা কি অপরাধটা ঘটাতো? যে ছেলেটা মামার বাড়ীতে বেড়াতে গিয়ে তার ৭ বছর বয়েসী শিশু মামাতো বোনের যৌনাংগে স্পর্শ করে সে কি জানেনা যে এই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দায়ের করা হলে তার ১০ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে? নিশ্চই জানে, তবুও কোন ভরসায় তাহলে সে এই অপরাধটা করে? ভরসা একটাই! সেটা হল ভিকটিম এই ঘটনাটা তার বাবা মা কে জানাবেনা, আর বাবা মা কে জানালেও ভিকটিমের বাবা মা ব্যাপারটা নিয়ে থানায় মামলা করবেনা। যে পুরুষটা বাসে নারী যাত্রীর গায়ে হাত দেয়, যেই পুরুষটা তার নারী সহকর্মীর গায়ে হাত দেয়, যেই মাওলানা /শিক্ষক তার শিশু ছাত্রের বা ছাত্রীর গায়ে হাত দেয়, বলাতকার করে, ধর্ষন করে সে কি জানেনা যে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে অভিযোগ দেওয়া হলে তার জন্য কঠোর সাজার বিধান ( যাবজ্জীবন কারাদন্ড) আইনে আছে? জানে। তবুও কোন ভরসায় তারা এগুলো করে? ভরসা একটাই,তা হলো- অপরাধীরা ধরেই নেয় যে, ভিকটিম এই অপরাধের জন্য আদতে নালিশই করবেনা। এবং ৯৫% ক্ষেত্রেই ধর্ষনকারীর / যৌন নির্যাতনকারীর অনুমানই সত্য হয়।
আপনাদের মনে হতে পারে যে প্রত্যেকটা ধর্ষন আর যৌন অপরাধের ঘটনায় মামলা হওয়া শুরু হলেতো লক্ষ লক্ষ মামলা হবে এই দেশে। না, তা হবেনা। ভিকিটিমেরা নালিশ করে দিবে এটা জানা থাকলে বা নালিশ জানানোর মতন অনুকুল পরিবেশ বিরাজ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষক বা নির্যাতনকারী অপরাধটি করার উদ্যেগই নিতো না।
সুতরাং ৯৫% ক্ষেত্রে ভিকটিমের নালিশ না জানানোটাই আসলে প্রধান সমস্যা। এই সমস্যাটারই সমাধান করতে হবে সবার আগে।
এই সমস্যাটার সমাধান করতে হলেও কেনো ভিকটিমেরা ৯৫% ক্ষেত্রেই নালিশ জানায়না সেই কারনগুলোও চিহ্নিত করতে হবে। সেই কারনগুলোর মধ্যে প্রধানতম কারনগুলো হল ধর্ষনের ঘটনায় ভিকটিমকেই দোষারোপ করা, ভিকটিমকেই খারাপ মেয়ের তকমা দেয়া, ধর্ষনের মামলা বিচারে বিলম্ব হওয়া ও চুড়ান্ত বিচারে অধিকাংশ অপরাধীর সাজা না হওয়া এবং ধর্ষন সম্পর্কে কতগুলো জনপ্রিয় কিন্তু ডাহা ভ্রান্ত ধারনাকে ( Rape Myth) সমাজে জনপ্রিয় করে রাখা ( যেমন- ভালো মেয়েরা রেইপড হয়না- গায়ে আঘাতের ক্ষত বা জোরাজোরির দাগ না থাকলে তা ধর্ষন নয় – মেয়েদের ‘ না ‘ মানে আসলে হ্যা, ধর্ষনের প্রচুর মিথ্যা মামলা নারীরা দায়ের করে, ধর্ষনের জন্য নারীর পোশাক এবং আচড়নই দায়ী ইত্যাদি)।
III) সমাধানের পথঃ-
ধর্ষনের সমস্যার সমাধান কিভাবে করা যায় সেই সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করার আগে এক নজরে একটু দেখে নেয়া দরকার Rape Myth বা ধর্ষন সংক্রান্ত জনপ্রিয় কিন্তু ভুল ধারনাগুলো কিভাবে ভিকটিমের নালিশ জানানোর ও বিচার প্রাপ্তির পথে অন্তরায় হিশেবে কাজ করে। Rape Myth বলতে বুঝায় ধর্ষন, ধর্ষক ও ভিকটিম সম্পর্কে ” সাধারন্যে বহুলভাবে প্রচলিত ও জনপ্রিয় কিন্তু আদতে ভ্রান্ত এমন সব ধারনা/ বিশ্বাস এবং অনুমান সমষ্টি যার সবগুলোই ঘুরেফিরে ভিকটিমের ( সাধারণত নারীর) বিরুদ্ধ্বে প্রচারিত।ধর্ষন সম্পর্কে এই ভ্রান্ত ধারনাগুলো এতোই জনপ্রিয় এবং বহুলভাবে প্রচারিত যে এসবের কারনে অধিকাংশক্ষেত্রেই ভিকটিম তার বিরুদ্ধ্বে সংঘটিত অপরাধের নালিশ জানাতেই সাহস পাননা। কিংবা নালিশ জানালেও দেখা যায় বিপুল সংখ্যক জাজমেন্টাল জনতা ( প্রায়শই মিডিয়াও) উল্টো ভিকটিমকেই ঘটনার জন্য দায়ী করছেন, ভ্রান্ত ধারনাগুলোর প্রভাবে অনেকেই ধর্ষকের পক্ষেও অনেক যুক্তি খুজে পান, কতেক ক্ষেত্রে ভিকটিমকে অবিশ্বাস করা হয়। রেইপ, রেইপিস্ট এবং ভিকটিম সম্পর্কে এরকম ডাহা ভ্রান্ত ধারনাগুলো আমি অনেক বিচারক, আইনজীবী, তদন্তকারী, পুলিশ, ডাক্তার, সাক্ষী প্রমুখ যারা ধর্ষনের ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সরাসরি জড়িত তাদের মধ্যেও দেখেছি। ফলশ্রুতিতে প্রথমত ধর্ষন ও যৌন নিগ্রহের ঘটনায় ভিকটিম অভিযোগই দায়ের করেননা কিংবা মামলা করলেও তাকে পদে পদে এইসব ভুল ধারনাগুলোর সাথেও লড়াই করতে হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভিকটিম তার অভিযোগ প্রমানে ব্যার্থ হন।
একটা ভুল ধারনা ব্যাপকভাবে প্রচলিত বা প্রতিষ্টিত হয়ে থাকলে সেই ধারনাকে পাশ কাটিয়ে সত্য প্রতিষ্টা করা ভয়ানক যন্ত্রনাদায়ক এবং প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার।
ধর্ষন সম্পর্কে ভুল ধারনার অন্ত নাই, উদহারনস্বরুপ কিছু তালিকা দিচ্ছি,
ক) নারীরা পর্দা করেনা বলেই ধর্ষন হয়। ধর্ষনের জন্য দায়ী নারীর পোশাক।[এটা সম্পুর্ন ভ্রান্ত এবং জঘন্য একটি ধারনা, এই রকম বক্তব্যের মাধ্যমে প্রকারান্তরে ভিকটিমকেই ধর্ষনের জন্য দায়ী করা হয়। এই ধারনা বহুলভাবে প্রচলিত থাকার কারনে ধর্ষনের শিকার যেকোন নারী ‘ বিচার চাইতে গিয়ে আমি নিজেই না আসামীর কাঠগড়ায় উঠে যাই’ ভেবে নালিশ জানাতে নিরুৎসাহিত হয় ]
খ) জোরপূর্বক সেক্স/ যৌন কর্ম করা হলে তবেই সেটা ধর্ষন। যৌন কর্মের সময় ভিকটিম যদি শারিরিকভাবে আহত না হন বা ভিকটিমকে যদি মারধোর না করা হয়, বা ভিকটিম যদি ভীষনভাবে প্রতিরোধ বা বাধা না দেন ( দিতে ব্যার্থ হন) তাহলে সেটা ধর্ষন নয়। [প্রকৃত সত্য হচ্ছে – ধর্ষনের ক্ষেত্রে জোরাজোরি বা আঘাত সবসময় থাকেনা, অনেকসময় অসম ক্ষমতার সম্পর্কে [ inequal power relation] চাইলেও বাধা দেওয়া যায়না, এছাড়াও আক্রান্ত হবার সময়ে বেশিরভাগ ভিকটিমরাই স্থানু / বিবশ হয়ে যান বিধায় অসম্মতি থাকা সত্বেও শারিরীকভাবে বাধা দিতে পারেন না। এই ধারনাটার কারনে ধর্ষনের শিকার যেই ভিকটিমের গায়ে আঘাতের চিহ্ন নেই সে নালিশ জানাতে নিরুৎসাহিত হয়, তার মনে হয় তার অভিযোগ হয়তো কেও বিশ্বাস করবেনা কারন তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই ]
গ) মেয়েরা ভালোমতন বাধা দিলে পুরুষের পক্ষে নারীকে ধর্ষন করা সম্ভব নয়।
ঘ) ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হলে ধর্ষনের অপরাধ কমে আসবে।
ঙ) নারীরা ধর্ষনের প্রচুর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে থাকে। [ যৌতুকের প্রচুর মিথ্যা মামলা হয় এটা সত্য তবে ধর্ষনের মামলা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সত্য]
চ) ইভ টিজিং করলে আসলে অনেক মেয়েই মনে মনে খুশী হয় [ভ্রান্ত ধারনা, এটা কেবলি পুরুষের বিকৃত কল্পনা।]
ছ) মেয়েরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মুখে না বল্লেও আসলে তাদের সম্মতি থাকে। সম্মতি থাকলেও ছেনালিপনা করে মেয়েরা না বলে। [ এটাও পুরুষের বিকৃত কল্পনা। অপরাধবোধের হাত থেকে বাচার জন্য পুরুষেরা এরকমটি ভেবে থাকে]
জ) শুধু সুন্দরী ও তরুনী মেয়েরাই ধর্ষনের শিকার হয়। তাছাড়াও ভালো মেয়েরা রেইপড হয়না। [ সম্পুর্ন ভুল ধারনা, সব বয়েসের, সব রকমের নারীরাই ধর্ষনের শিকার হন।]
ঝ) মেয়েরা যদি কারো সাথে ঘুরতে যায় বা কারো গারিতে উঠে, বা কারো সাথে ডিনারে যায় বা কারো বাসায় যায় বা সিনেমা দেখতে যায় বা কিছুটা সুসম্পর্ক যদি কারো সাথে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে যে সে আসলে সেক্স এর জন্য সম্মতি দিয়েছিল, নাহলে সে কেনো যাবে পুরুষটার সাথে। [কনসেন্ট বা সম্মতি ছাড়া সেক্স মানেই ধর্ষন। কিন্তু এরকম Victim Blaming এর ভয়ে অনেক ভিকটিমই মামলা করেনা। ধর্ষকেরাও এটা জানে, তাই ধর্ষকেরাও ধরে নেয় যে ভিকটিম আদতে নালিশই জানাবেনা]
ঞ) মেয়েটা নিজেই যদি মদ্য পান করে থাকে তাহলে নিশ্চই মেয়েটা সেক্স এর জন্য সম্মতি দিয়েছিল। [একসাথে বসে মদ খাওয়া মানে সেক্স এর জন্য সম্মতি প্রদান করা নয়]
ট) অনেক নারীই গোপনে গোপনে আসলে রেইপড হতেই চায়। [এটাও পুরুষের বিকৃত কল্পনা। পৃথিবীর কোন নারীই ধর্ষিত হতে চায়না।]
ঠ) নিজের বিবাহিত স্ত্রী কে যাই করা হোক সেটা ধর্ষন নয়। নিজের বিবাহিত স্ত্রী’কে আবার ধর্ষন করে কিভাবে। [ভ্রান্ত ধারনা, সম্মতিহীন সেক্স মানেই ধর্ষন।]
ড) কোন নারী যদি প্রস্টিটিউট হয়, ডিভোর্সড হয় বা তার যদি বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্কের ইতিহাস থাকে তাহলে তার ধর্ষনের অভিযোগটি সম্ভবত মিথ্যা কারন সে সম্ভবত সম্মতি দিয়েছিল। এবং তার সাথে যাই করা হোক সেটা ধর্ষন নয় [নোয়াখালীর ভিডিওটা ভালোমতন খেয়াল করলে দেখবেন যে সেই ভিডিওতেই ক্রিমিনালগুলোর একজন বলছিল “এটা কিন্তু ফেসবুকে যাবে, লাইভ হবে নাকি মামা, লাইভ হবে।” তারমানে সেই অপরাধীরা ভাবেওনি যে তারা একটা অপরাধ করছে, তারা ( তাদের ভাষায়) অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত একজন চরিত্রহীন নারীকে শাস্তি দিচ্ছেন ( নীতিপুলিশিং / Moral Policing করছেন), সুতরাং এটা অপরাধ হবে কেনো, এটা ফেসবুকে ছেড়ে দিবো, এই ছিল তাদের ধারনা]
ঢ) ধর্ষন একটি আগাগোড়াই যৌন অপরাধ, ধর্ষকেরা আসলে তাদের যৌন উত্তেজনা সামাল দিতে না পেরে ধর্ষন করে, এবং নিশ্চই মেয়েটা ধর্ষককে যৌন সুরসুরি দিয়েছিল বিধায় ধর্ষক তার নিয়ন্ত্রন হারিয়েছিল। [ ধর্ষনের একটা প্রধান মটিভেশান যদিও সেক্স কিন্তু আদতে ধর্ষকেরা যৌন আনন্দের জন্য ধর্ষন করেনা। তারা মুলত নিজেকে পাওয়ারফুল ফিল করার জন্য বা ভিকটিমের সাফারিং ও হিউমিলিয়েশান উপভোগ করার জন্যই ধর্ষন করেন, ধর্ষকেরা যৌন উত্তেজনা সামাল দিতে না পেরে ধর্ষন করে এরকমও নয় ]
ণ) একবার যদি কোন মেয়ে কোন পুরুষের সাথে সেক্স করে তাহলে পরবর্তীতেও সে নিশ্চই সম্মতি দিয়েছিল। অর্থাত যার সাথে আগে সম্মতিতে সেক্স হয়েছে সে নিশ্চই পরেরবার আর যাইহোক ধর্ষন করেনি। [ সম্পুর্ন ভ্রান্ত ধারনা, একই ব্যাক্তির সাথেও প্রত্যেকবারের প্রত্যেকটা যৌনকর্মের জন্য পৃথক ও স্বাধীন সম্মতি আবশ্যক]
ত) যারা আসলেই ধর্ষনের শিকার হয়েছে তারা সাথেসাথেই ভীষন কান্নাকাটি করার কথা, সাথে সাথে পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা, যারা বেশ কিছুদিন পরে অভিযোগ করেছে তারা আসলে মিথ্যা বলছে, ঘটনার পরপর কোথায় ছিলেন? [না, অনেক কারনেই তৎক্ষনাৎ অভিযোগ করা যায়না, এছাড়া আঘাতের ( Trauma) প্রতিক্রিয়া ব্যাক্তিভেদে ভীন্ন হয়, অনেক রেইপ ভিকটিমই কান্নাকাটি করতে পারেনা]
থ) ধনী বা সফল বা সুদর্শন বা উচ্চশিক্ষিত পুরুষেরা ধর্ষন করেননা। ধর্ষকেরা বেশিরভাগই লো লাইফ সাইকোপ্যাথ। [ ভুল ধারনা। যেকোন পুরুষই ধর্ষক হয়ে উঠতে পারেন। সফল বা সুদর্শন হলেই কেও রেইপ করবেন না ব্যাপারটা এরকম নয়। রেপিস্টরা মানষিক রোগী নন তারা অপরাধী।]
বাংলাদেশে ধর্ষন সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারনাগুলো (Rape Myth) ব্যাপক জনপ্রিয়। এগুলো শুধু ধর্ষকের ধারনা নয় বরং এগুলোই বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের বিশ্বাস। ধর্ষকেরা তাদের ট্যুইস্টেড বিলিফ এর রিইনফোর্সমেন্ট/ রিএশ্যুরেন্স পায় সমাজের বিদ্যমান এই ধারনাসমুহ থেকে। আর এই জনপ্রিয় কিন্তু ভুল ধারনাগুলোর চাপেই অধিকাংশ ধর্ষনের শিকার নারীই অভিযোগ দায়ের করতে আগ্রহ পায়না। এইসব মিথ, এইসব ভ্রান্ত ধারনাসমুহু সমাজে জিইয়ে রেখে আমরা কি আশা করতে পারি ধর্ষনের শিকার ভিকটিমটি অপরাধ ঘটার পরপরই অভিযোগ নিয়ে এগিয়ে আসবে? না, এটা সম্ভব নয়। এক আধটা ঘটনায় যখন ভিকটিম নালিশ জানায় বা মামলা করে, আমার ধারনা তখন ধর্ষক নিজেও অবাক হয় ” কি ব্যাপার! আমিতো ভেবেছিলাম সে কাওকে বলবে না ‘!
ধর্ষন বা ভিকটিম সম্পর্কিত এসব ডাহা ভ্রান্ত ধারনায় জর্জরিত উত্তেজিত আমজনতার ” ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড চাই ” মর্মে সম্মিলিত স্লোগান শুনে আপনার কি আসলেই মনে হচ্ছে এরা সম্মতিবিহীন সেক্স ঘটলেই সেটার সাজা মৃত্যুদন্ড চাইছে? না। তারা মৃত্যুদন্ড চায় পর্দানশীল নারীকে যদি সম্পুর্ন অপরিচিত এক বা একাধিক ব্যাক্তি ভীষন সহিংসভাবে মারধোর করে জোরপুর্বক মেয়েটির বাসায় ঢুকে ধর্ষন করে কেবল সেই ধর্ষণের। আইন সংশোধন করে ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড করা হলে এদের অনেকেই ” শরিয়া আইনের কিঞ্চিত বাস্তবায়ন করতে পারার” আনন্দে তৃপ্ত হবেন। কিন্তু এদেরকে কাছে ডেকে একান্তে জিজ্ঞাসা করেন সম্মতিহীন যৌন সম্পর্ককে এরা আদৌ ধর্ষন মনে করে কিনা, যে মেয়েটা তার ছেলেবন্ধুর বাসায় সিনেমা দেখছিল সেই মেয়েটার সাথে যদি তার বয়ফ্রেন্ড মেয়েটার সম্মতি ছাড়াই সেক্স করে তখনো সে ছেলেটার মৃত্যুদন্ড চায় কিনা, যে মেয়েটা পর্দা করেনা, যে মেয়েটার গায়ে আঘাতের চিহ্ন নাই তার ক্ষেত্রেও এরা ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড দাবী করে কিনা, কিংবা আদৌ সেই অমতের যৌন সম্পর্ককে তারা ধর্ষন মনে করে কিনা! আজ যারা ” ধর্ষকের ফাসি চাই” বলে চিল্লাপাল্লা করছে তারাই একদিন ফেসবুকে ঝর তুলবে ” এইটা ধর্ষন না ” মেয়েটা সেখানে গিয়েছিল কেনো, এই মেয়েটারই বিচার চাই কিংবা তারা দুজনেই সমান অপরাধী ইত্যাদি।
এই সর্বনাশা, ক্ষতিকর Rape Myth গুলোকে দুর করার জন্য কোন সিস্টেমেটিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক রাস্ট্রীয় উদ্যেগ কি কখোনো চোখে পরেছে? মনে হচ্ছে আমরা সমস্যার মুল কেন্দ্রটি এখনো সনাক্তই করতে পারিনি।
IV) সুনিদৃস্ট প্রস্তাবঃ-
১) ধর্ষন রোধে সমন্বিত উদ্যেগ নিতে হবে ( Multy Sectoral Approach)
আমি প্রস্তাব করছি রাস্ট্র/ সরকার সমস্যাটার গুরত্ব এবং বিশালত্ব অনুধাবন করুক, অবিলম্বে অনুধাবন করুক যে বাংলাদেশ এই মুহুর্তে একটা অসুস্থ ধর্ষনের সংস্কৃতি/ ধর্ষণ করার এবং ধর্ষন করে পার পেয়ে যাওয়ার মতন ভীষন অনুকুল পরিবেশ বিরাজ করছে।
আমি প্রস্তাব করছি অবিলম্বে একটা জাতীয় কমিশন গঠন করা হোক যাদের থাকবে বিস্তৃত অনুসন্ধানী এবং সুপারিশের এখতিয়ার। অমুক মন্ত্রনালয়ের সচিব আর তমুক মন্ত্রনালয়ের উপসচিব নিয়ে গঠিত কোন কাগুজে কমিশন নয় বরং ধর্ষন ও যৌন নির্যাতনের প্রকৃত কারন অনুসন্ধানে এবং ধর্ষন প্রতিরোধে কার্যকর সুপারিশ প্রদানে সক্ষম একটি বিশেষজ্ঞ ও স্বাধীন কমিশন যাদের প্রত্যেকটা শুপারিশ সরকার অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করবে সেই কমিশনে শিক্ষাবিদ থাকবেন, সমাজবিজ্ঞানী থাকবেন, আইনজীবী থাকবেন, বিচারক থাকবেন, পুলিশের প্রতিনিধি থাকবেন, অপরাধবিজ্ঞানী/ ক্রিমিনোলজিস্ট থাকবেন, সরকারী দল ও বিরোধীদলের সংসদ সদস্য থাকবেন, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ থাকবেন, আইন মন্ত্রনালয়- স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয় – শিক্ষা মন্ত্রনালয়- স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় – তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি থাকবেন এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররাও থাকবেন।
১(ক ) কমিশন যদি সুপারিশ করে যে সমাজে বিদ্যমান Rape Myth / ধর্ষন সম্পর্কে প্রচলিত জনপ্রিয় কিন্তু ভ্রান্ত ধারনাসমুহু দুর করার জন্য, ভিকটিম ব্লেইমিং / স্লাট শেইমিং বন্ধ করার জন্য, কনসেন্ট বা সম্মতির গুরত্ব সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃধ্বির জন্য সাধারন শিক্ষার পাঠ্যক্রমে ও সিলেবাসে প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তবে সরকার যেনো তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। কমিশন যদি সুপারিশ করে যে, শিশুরা যেনো গুড টাচ ও ব্যাড টাচের প্রার্থক্য, স্নেহের স্পর্শ ও যৌন স্পর্শের মধ্যকার প্রার্থক্য বুঝতে পারে এরকম শিক্ষনীয় বিষয়বস্তু পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত তাহলে শিক্ষামন্ত্রনালয় সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে। শক্তিশালী পুরুষতন্ত্র বা মোল্লাতন্ত্র নারাজ হতে পারে ইত্যাদি রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকার যেনো একমুহুর্তও দ্বিধাগ্রস্থ না থাকে। এজন্য নিশ্চই বিপুল সংখ্যক শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষনের প্রয়োজন হবে- উক্ত প্রশিক্ষনের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দে যেনো সরকার একটুও কার্পন্য না করে।
১(খ) কমিশন যদি সুপারিশ করে যে, টেলিভিশনে বা পত্রিকায় বা গনমাধ্যমে যেসকল বিজ্ঞাপনে, নাটকে, সিনেমায়, গানে, টক্সিক ম্যাসকুলিনিটিকে মহিমান্মিত করে দেখানো হয় সেসকল বিজ্ঞাপন বা সিনেমা বা কন্টেন্ট নিষিদ্ধ্ব করতে হবে তবে সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয় যেনো সেই সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করে। সমাজে বিদ্যমান Rape Myth বা ধর্ষন সংক্রান্ত প্রচলিত ভুল ধারনাগুলো দুর করার জন্য বিপুল পরিমানে ফ্যাক্ট বেইজড ক্যাম্পেইন করা লাগতে পারে। উক্ত ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট খাতে সরকার তথ্য মন্ত্রনালয়কে বাজেট বরাদ্দ দিবে। জেন্ডার সংবেদনশীল সাংবাদিকতায় সক্ষমতা অর্জন করতে হলে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন ও প্রনোদনা দরকার হতে পারে, সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করবে, এর জন্য সুনিদ্রিষ্ট বাজেট বরাদ্দ থাকবে।
২) আমি প্রস্তাব করছি অবিলম্বে নতুন করে আরো ২০০০ বিচারক নিয়োগ দেয়া হোক, নতুন আদালত, স্পেশালাইজড আদালত সৃজন করা হোক যেনো ধর্ষন ও যৌন নির্যাতনের মামলাসমুহু দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা যায়। ধর্ষন ও যৌন নির্যাতনের মামলাসমুহু নিষ্পত্তিতে কেনো বিলম্ব হচ্ছে এবং কেনো একচ্যুয়াল কনভিকশানের হার এতো কম তার কারন অনুসন্ধান করে প্রত্যেকটা কারন দুর করা হোক।
এইখানে আমি পাঠকদেরকে কিছু মর্মান্তিক তথ্য দেবো যাতে করে আপনারাও বুঝতে পারবেন কেনো ধর্ষনের মামলা নিষ্পত্তিতে এতো বিলম্ব হয়। সমগ্র বিচার বিভাগের জন্য এবারের বাজেটে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা। আপনারা কি জানেন যে, গুলিস্থান টু যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নির্মান খরচ প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা। পুরো ব্যাপারটাই বিস্ময়কর না? একটা দেশের এন্টায়ার বিচার বিভাগের এক বছরের বাজেট একটা ফ্লাইওভারের নির্মান খরচের চেয়েও কম। প্রায় ১৮ কোটি জনগনের জন্য বিচারক আছেন মাত্র ১৮০০ জন, দরকার প্রায় ৫০০০ বিচারক।
সরকার জংগী দমন করতে চায়, মাদক দমন করতে চায়, দুর্নিতী দমন করতে চায়, ধর্ষন ও যৌন অপরাধও দমন করতে চায়, আন্তরিকভাবেই চায়। কিন্তু যুতসই উপায়ে এগুলো দমন করার ওপায় হচ্ছে দুর্নীতিবাজের, মাদক কারবারীর, জংগী সন্ত্রাসীর এবং সেক্সুয়াল অফেন্ডার্সদের সাজা নিশ্চিত করা। সেই সাজাটা নিশ্চিত করবে বিচার বিভাগ। কিন্তু এইখানে সরকারের যাবতীয় কার্পন্য। নতুন বিচারক নিয়োগ হয়না, নতুন আদালত সৃস্টি করেনা। একটা জেলায় ফৌজদারি বিচারের জন্য সরকারের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা হলেন পাবলিক প্রসিকিউটর বা পিপি। এই পিপি সাহেবরাই ধর্ষনের মামলায় ভিকটিমের পক্ষে সাক্ষ্য প্রমান আদালতে উপস্থাপন করেন। পিপি সাহেবদের বেতন কত শুনলে অবাক হবেন, প্রতিদিন ২০০ টাকা, অনেকটা দিনমুজুরের মতন! একজন বিচারকের কাছে ৬ হাজার ৮ হাজার করে মামলা, তাই দ্রুত বিচার নিস্পত্তি তো দুরের কথা একেকটা মামলায় তারিখ পরে ৩/৪ মাস পরেপরে, এক পর্যায়ে বিচারপ্রার্থী তার বিচার পাওয়ার ইচ্ছা হারিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরে কিন্তু তবুও নতুন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়না।
আমার প্রস্তাব হচ্ছে বিচার বিভাগের বাজেট বৃদ্দ্বি করা হোক, নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হোক, সহায়ক স্টাফ, স্টেনোগ্রাফার নিয়োগ দেয়া হোক, পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিসকে শক্তিশালী করা হোক, বিচারক ও প্রসিকিউটরদের মধ্যে বিরাজমান Rape Myth বা ধর্ষন সংক্রান্ত ভুল ধারনাসমুহু দুর করার জন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করা হোক।
আমার প্রস্তাব হচ্ছে পদ্মা সেতু যেমন সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প তেমনি ধর্ষন ও যৌন নির্যাতন দমনও সরকারের অগ্রাধিকার / priority লক্ষমাত্রা হওয়া উচিত। এবং বাজেট বরাদ্দে সেই অগ্রাধিকারের প্রতিফলন থাকা উচিত। কিন্তু যেকোন কারনেই হোক ঘটনা ঘটে চলেছে সম্পুর্ন তার উল্টোদিকে। বিচার বিভাগের জন্য বাজেট গত ৫ বছরে মোট বাজেটের ০.৪৬ শতাংশ থেকে কমতে কমতে এখন ০.৩১ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
এই যখন বাস্তব পরিস্থিতি তখন আমরা ব্যাপক হারে শোরগোল করে যাচ্ছি ধর্ষনের সাজা বৃধ্বি করে মৃত্যুদন্ড করার জন্য। বিচার বিভাগের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা নিয়ে কাওকে আলোচনা করতেও শুনিনা। ভিকটিম যদি নালিশ না করে, বিচারে অপরাধীর সাজা যদি না হয় তাহলে আইনের বইয়ে সাজার পরিমান কত আছে বা কি আছে তাতে কিইবা আসে যায়?
সরকারের কাছে টাকা নাই এটা আমরা কেওই বিশ্বাস করিনা, প্রায়শই আমরা শুনতে পাই বিভিন্ন আপাতঅপ্রয়োজনীয় খাতে সরকার বিশাল অংকের টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকেন, কিন্তু অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করে যেই বিভাগটি সেই বিভাগের বার্ষিক বাজেট একটা ফ্লাইওভারের নির্মান খরচের চেয়েও কম!
আমি বাজেট প্রনেতা সার্বভৌম জাতীয় সংসদ এবং সরকারের কাছে আহবান জানাই যে আপনারা বিচার বিভাগের বাজেট বৃধ্বি করুন, নতুন বিচারক ও লজিস্টিক্স দেন যেনো দ্রুততম সময়ে ধর্ষকের সাজা নিশ্চিত করা যায়।
৩) আমি প্রস্তাব করছি ধর্ষন, যৌন অপরাধের এবং ডমেস্টিক ভায়োলেন্স ও নারী শিশু নির্যাতনের মামলাসমুহের তদন্তের জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল ও বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত পুলিশের একটা বিশেষায়িত ইউনিট গঠন করা হোক। সিটিটিসি ( কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশানাল ক্রাইম ইউনিট) এবং কাউন্টার টেররিজম ইউনিট যেমন জংগী গ্রেফতারে সফলতা দেখিয়েছে, পিবিআই যেমন চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তে সক্ষমতা দেখিয়েছে, মহাসড়কে টহলের জন্য যেমন হাইওয়ে পুলিশ আছে, পর্যটন নগরীসমুহে যেমন ট্যুরিস্ট পুলিশ আছে, বিশেষ অপরাধ দমনে যেমন র্যাব গঠন করা হয়েছিল তেমন করে পুলিশের একটা বিশেষায়িত ইউনিট থাকুক যারা কেবলমাত্র সেক্স অফেন্ডার্স এবং নারী শিশু নির্যাতন মামলাসমুহু তদন্ত করবেন এবং প্রসিকিউশানকে সাক্ষী উপস্থাপনে সহায়তা করবেন। তাদের কাছে রেইপ কিট (Rape Kit) থাকবে, কিভাবে সেক্স অফেন্ডার্সদের ডাটাবেজ সংগ্রহ করতে হয় তা তারা জানবেন, তারা বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ও সংবেদনশীল হবেন, Rape Myth বা ধর্ষন সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারনাসমুহ থেকে তারা মুক্ত থাকবেন, ভিকটিম নারী বা শিশুকে কিভাবে কাউন্সেলিং করতে হয় এই বিষয়েও তারা প্রশিক্ষিত হবেন, এরকম একটা বিশেষ ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এর জন্যও বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ আবশ্যক হবে। নারীরাতো আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক। আমি আমার সারা জীবনে এরকম একজন নারীকেও দেখিনি যে তার জীবনে কোন না কোন ভাবে ধর্ষন বা যৌন নির্যাতনের শিকার হননি। এরকম ব্যাপক ও বিস্তৃত একটি অপরাধের জন্য পুলিশের একটা বিশেষায়িত ইউনিট অবশ্যই গঠন করা যেতে পারে। সরকারের লক্ষমাত্রা হওয়া উচিত এমন একটা পরিস্থিতি তৈরী করা যেখানে প্রত্যেকটা ধর্ষন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী এবং শিশু দ্বিধাহীনভাবে তার নালিশ জানাতে পারে এবং দ্রুততম সময়েই অপরাধীর চুড়ান্ত দন্ড হয়েছে এটা দেখতে পারে।
৪) প্রায় ব্যাতিক্রমহীনভাবে ধর্ষকেরা, সেক্স অফেন্ডার্সরা বা পেডোফাইলরা ক্রমিক অপরাধী হয়ে থাকে। অন্যান্য অপরাধীদের চেয়ে যৌন অপরাধীরা এইদিক থেকে বেশ ব্যাতিক্রম। উদহারনস্বরুপ, বিভিন্ন কারনেই খুনের অপরাধ ঘটে, একজন খুনী হয়তো যাকে খুন করা দরকার তাকে খুন করা হয়ে গেলে বাকী জীবনে তার আর খুন করার দরকার নেই। কিন্তু একজন ধর্ষক ঘুরেফিরে বারবারই ধর্ষন করবে, ধর্ষন করার চেস্টা করবে, যৌন নির্যাতনের মতন অপরাধ ঘটাতে থাকবে। এজন্য উন্নত ও সক্ষম সকল দেশেই আলাদা করে ” সেক্স অফেন্ডার্স ডাটাবেইজ” থাকে। সেই ডাটাবেইজে যৌন অপরাধে অভিযুক্ত ও দন্ডিত প্রত্যেকের আংগুলের ছাপ, নাম পরিচয়, ঠিকানা ও বিস্তারিত লিপিবদ্ধ্ব থাকে। পরবর্তীতে অজ্ঞাত অপরাধী কতৃক যৌন অপরাধের ঘটনা ঘটলেই সেই ডাটাবেইজে সার্চ করে দেখা হয় কারো আংগুলের ছাপের সাথে মিলছে কিনা, কিংবা ভিকটিমকে তাদের ছবি দেখানো হয়। যৌন অপরাধে বা শিশু যৌন নির্যাতনে ( Paedophiles) একবার দন্ডিত হলে এমনকি কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও সেই অপরাধী যেই এলাকায় থাকবে সেই এলাকার থানায় গিয়ে নিজের নাম রেজিস্ট্রি করতে হয় এই মর্মে যে ” আমি একজন দন্ডিত যৌন অপরাধী “, এটা করা হয় এজন্য যেনো উক্ত এলাকার অবিভাবকেরা এই উচ্চঝুকির সম্ভাব্য শিশু নির্যাতনকারীটি সম্পর্কে অবগত থাকেন। কারন, গবেষনা বলছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যৌন অপরাধীরা এতোটাই ক্রমিক ( Serial) অপরাধী যে সম্ভাব্য প্রথম সুযোগেই সে আবার একই রকম অপরাধ ঘটাবে। এই যখন বাস্তবতা তখন বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ টি ধর্ষনের ঘটনায় সাজা হয় ২ থেকে ৩ জনের। বাকী ৯৯৮ জন সাজার আওতার বাইরে থাকে। বাকীদের মধ্যে ৯৫% ক্ষেত্রে ভিকটিম অভিযোগই করেনা আর যেই ৫% এর বিরুদ্ধ্বে অভিযোগ করা হয় তাদের মধ্যে মাত্র ৫% এর সাজা হয়। এবারে অনুমান করে দেখুন বছরের পর বছর ধরে এরকম চলতে চলতে কি পরিমান অসনাক্ত ( Undetected) ধর্ষক, সেক্স অফেন্ডার্স এবং শিশুকামী ( Paedophiles) মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশে! গবেষনায় দেখা গেছে যে, দন্ডিত ধর্ষকও নিজেকে ধর্ষক মনে করেনা, সে সবসময় এই ইলিউশানেই থাকে যে সে যা করেছে তা ঠিকই করেছে৷ সুতরাং, এই অসনাক্ত ধর্ষক ও যৌন নির্যাতকেরা আত্মোপলব্দি থেকে নিজে নিজেই সংশোধন হয়ে যাবে এই সম্ভাবনাও নেই বল্লেই চলে।
আমার সুনিদৃষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে সেক্স অফেন্ডার্সদের জন্য কেন্দ্রীয় ডাটাবেইজ করা হোক যেখানে প্রত্যেক অভিযুক্ত এবং দন্ডিত যৌন অপরাধীর বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষিত থাকবে এবং তারজন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা হোক
৫) ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত আলামতের সাথে অভিযুক্তের ডিএনএ পরীক্ষার ( তুলনা) মাধ্যমে ধর্ষকের সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু আবারো একটা হতাশার তথ্য দেই। শুধু যে বিচার বিভাগেরই বাজেট কম তা নয় বরং বিচার সংস্লিস্ট প্রত্যেকটা সেকশানেরই গরিবী হাল। সারা বাংলাদেশে এই মুহুর্তে ডিএনএ ল্যাব আছে মাত্র ২ টা ( একটা চালায় পুলিশের CID আরেকটা চালায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ) । দুরবর্তী জেলা থেকে ডিএনএ স্যাম্পল কালেক্ট করে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় এক বছরের মতন। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল পেতে পেতেই এক বছর লেগে গেলে দ্রুত বিচার কিভাবে সম্ভব হবে? প্রত্যেক জেলায় জেলায় একটা করে ডিএনএ ল্যাব থাকতে পারতো, ডিএনএ ল্যাব পরিচালনার জন্য, স্যাম্পল সংগ্রহ, সংরক্ষনের জন্য দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ দেয়া যেতো। কিন্তু এইসব করতেই বাজেট দরকার। আমি প্রস্তাব করছি আগামী বাজেটেই অন্তত বিভাগীয় শহরগুলোতে একটি করে ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করা হোক।
V) শেষ কথা
আমি আগাগোড়াই বিশ্বাস করি পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে হবে সরকারকেই। সরকারের উচিত হবে জনতুষ্টিবাদী কোন নগদ কিন্তু অকার্যকর সমাধানের দিকে না গিয়ে সমস্যার মুলে আঘাত করা, দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধানের পথ খুজা। এই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে হবে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে। দেশের প্রায় ৯ কোটি মানুষকে ধর্ষন আর যৌন নির্যাতনের নিড়ন্তর আতংকের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে, সুতরাং এর থেকে মুক্তির জন্য যদি আগামী বাজেটে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় সেটা কি খুব বেশী কিছু হবে? ৫ টা ফ্লাইওভার বানানো যাবে এই টাকা দিয়ে। সরকারকে এখন তার অগ্রাধিকার/ Priority ঠিক করতে হবে। আর এসব কিছুই না করে আমরা যদি লোকরঞ্জনবাদী সমাধানের দিকে যাই, কেবলমাত্র ধর্ষনের সাজা মৃত্যুদন্ড করে দেই, তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশী হবে।
শওকত হোসেন
লেখকের ফেসবুক হতে

Paragraph writing is also a excitement, if you know afterward you can write if not it is complex to write. Emylee Ulberto Cila
ধন্যবাদ
Awesome write-up. I am a normal visitor of your web site and appreciate you taking the time to maintain the nice site. I will be a frequent visitor for a really long time. Jacquie Cleavland Carlynn
Hey there. I discovered your web site by way of Google at the same time as looking for a related matter, your site came up. It seems good. I have bookmarked it in my google bookmarks to visit then. Eveleen Harvey Edd
Fusce imperdiet vel mauris a aliquet. Aliquam massa est, placerat ac justo in, tempus fringilla diam. Phasellus sed efficitur leo. Suspendisse porta mauris nec augue malesuada porta. Midge Bogey Glantz
whoah this weblog is fantastic i love reading your posts. Stay up the great paintings! You know, lots of individuals are hunting round for this info, you could aid them greatly. Clementina Hewet Reuben
Hi there i am kavin, its my first time to commenting
anywhere, when i read this post i thought i could also make comment due to this
good paragraph.
Also visit my web-site … best cannabis gummies – https://www.peninsuladailynews.com/,
With havin so much written content do you ever run into any issues of plagorism or
copyright violation? My website has a lot of
exclusive content I’ve either authored myself or outsourced but it
seems a lot of it is popping it up all over the internet
without my permission. Do you know any solutions to
help protect against content from being stolen? I’d
really appreciate it.
Feel free to surf to my web-site … best THC vape carts
It is the best time to make some plans for the future and it is time to be
happy. I’ve read this post and if I could I wish to suggest
you few interesting things or suggestions. Maybe you can write next articles referring to
this article. I want to read even more things about it!
Take a look at my web site :: where to find weed
Nice post. I learn something new and challenging
on sites I stumbleupon on a daily basis. It will always be useful
to read content from other authors and practice a little something from other web sites.
Here is my blog post: how to buy weed online (https://www.seattleweekly.com/)
If you are going for finest contents like I do, only go
to see this web page daily because it provides quality contents, thanks
Feel free to visit my web page: buy tiktok followers
– http://www.usmagazine.com –
It’s amazing for me to have a website, which is good in favor of my know-how.
thanks admin
Here is my website – how to find weed – http://www.seattleweekly.com –
Very nice write-up. I absolutely appreciate this website. Thanks!
Also visit my blog; dispensaries near me
This information is priceless. How can I find out more?
my web-site: buy weed online
If some one desires to be updated with newest technologies afterward
he must be pay a quick visit this web site and be up to
date everyday.
Also visit my site: buy weed
Thanks a lot for sharing this with all folks you actually recognize what
you are speaking approximately! Bookmarked. Please additionally talk over with my site =).
We can have a hyperlink exchange arrangement between us
Great blog! Is your theme custom made or did you download it from somewhere?
A design like yours with a few simple tweeks would really make my
blog stand out. Please let me know where you got your theme.
Thanks
Awesome blog! Do you have any suggestions for aspiring writers?
I’m hoping to start my own site soon but I’m a little lost on everything.
Would you recommend starting with a free platform like WordPress or go for a paid option? There
are so many choices out there that I’m completely overwhelmed ..
Any tips? Cheers!
My web page … premium jane
Hello! I know this is kinda off topic but I was wondering which blog
platform are you using for this site? I’m getting sick and tired of
Wordpress because I’ve had issues with hackers and I’m looking at alternatives for
another platform. I would be fantastic if you could point me
in the direction of a good platform.
Here is my page: painkillers for dogs
Everything said made a great deal of sense. However, what about this?
what if you added a little content? I am not suggesting your information isn’t solid., but suppose you added something to maybe
get a person’s attention? I mean ধর্ষণ: মৃত্যুদন্ডের চেয়েও ভালো সমাধান আছে। is a little boring.
You should peek at Yahoo’s front page and note how they write article titles to grab people interested.
You might add a related video or a related pic or two to grab readers excited about everything’ve written. Just my opinion, it
would bring your posts a little bit more interesting.
my web blog best cbd gummies for pain
I could not refrain from commenting. Well written!
Feel free to visit my web site: best kratom
Spot on with this write-up, I actually feel this
website needs a great deal more attention. I’ll probably be returning to see
more, thanks for the information!
Greetings! I know this is somewhat off topic but I was wondering if you knew
where I could locate a captcha plugin for my comment form?
I’m using the same blog platform as yours and I’m having trouble finding
one? Thanks a lot!
петровы в гриппе актеры и роли
где фильм
в хорошем качестве
Hello, after reading this awesome article i am as well delighted to share my experience here with colleagues.
Here is my web blog :: Heraldnet
Dune смотреть онлайн
39541 510358 http://t.me/psy_9000
Метод расстановок. Системно-феноменологическая психотерапия Духовные расстановки.
Системно-феноменологическая психотерапия.
Организационные расстановки.
Структурные расстановки. Системно-феноменологическая психотерапия.
чернобыль сериал смотреть бесплатно в хорошем качестве
Битва экстрасенсов 2021 смотреть онлайн 22
сезон серии битва экстрасенсов смотреть онлайн бесплатно битва экстрасенсов 21 сезон смотреть
новые танцы 2021 смотреть новые танцы
на тнт 2 новые танцы 2021 смотреть онлайн бесплатно тнт новые танцы
смотреть онлайн 2021 бесплатно
Битва Экстрасенсов 22 сезон (2021)
смотреть онлайн бесплатно битва экстрасенсов сезоны даты выхода битва экстрасенсов онлайн
Миллиарды 5 сезон 11 серия
A person essentially assist to make seriously posts I’d state.
That is the very first time I frequented your web page and to this point?
I surprised with the research you made to create this actual submit incredible.
Fantastic process!
Check out my web site :: drinking with lord jones cbd gummies [royalcbd.com]
Смотрите лучшие фильмы смотреть фильм онлайн бесплатно форсаж 9 полностью все свежие новинки кино 2021,
которые уже вышли в прокат.
Все лучшие фильмы онлайн: самый полный каталог кино смотреть фильм дюна в хорошем качестве онлайн фильмы:
2021 год — смотреть онлайн.
Смотреть лучшие фильмы онлайн бесплатно Пацанки 6 сезон 3 серия смотрите самый полный список фильмов 2021 года
Поиск фильмов, новости кино Игра в кальмара 3 серия смотреть онлайн
смотреть онлайн фильмы 2021 года, уже вышедшие
в хорошем качестве HD 720 и 1080, бесплатно.
Смотреть фильмы онлайн в хорошем качестве Игра в кальмара 2 сезон 1 серия смотреть онлайн 50 лучших фильмов первой половины
2021 года
Смотреть лучшие фильмы онлайн бесплатно Холостячка 2 сезон 7 серия фильмы:
2021 год — смотреть онлайн.
Вы можете смотреть Фильмы совершенно
бесплатно Звезды в Африке 7 серия смотреть новинки фильмов
2021 года онлайн в HD качестве
и без регистрации в онлайн кинотеатре
Поиск фильмов, новости кино Шоу Маска 2 сезон Украина 2 серия все фильмы мирового
проката 2021 года
Смотрите лучшие фильмы Вечер с Владимиром Соловьевым смотреть фильмы 2021 года онлайн
Смотреть фильмы онлайн бесплатно Кріпосна 3 сезон 1 серія всі серії списки лучших фильмов с рейтингом и отзывами
https://bit.ly/Vichni-Vichni-Film-Vichni-dyvytys-onlayn
Дивитися популярні фільми 2021-2021 року streetviewer
Дивитися фільми українською мовою онлайн в HD якості Вечные
Новинки фільми, серіали, мультфільми 2021 року, які вже вийшли Ви можете дивитися українською на нашому сайті
Главный герой
Фільми та серiали 2020 українською мовою в HD якості
Охотники за привидениями смотреть онлайн
Всі фільми новинки 2020
року онлайн українською в хорошій якості Ампир V
Фільми українською в хорошій
якості – онлайн без реклами
Небо 2021
Дивитися фільми українською
онлайн Страшные истории для рассказа незнакомцам
Дивитися популярні фільми 2021-2021 року Последняя дуэль
33634 427490 https://clck.ru/XEMJK
Найкращі українські фільми 2021 року Хэллоуин убивает
Всі фільми новинки 2020 року онлайн українською в хорошій якості Ледяной демон смотреть онлайн
kratom 100g
в этом посте
he has a good point
clicking here
This really answered my downside, thank you!
en güncel kriptopara haberleri ve alt coin haberleri kriptopara dünyasından en güncel haberler https://bit.ly/kriptopara-haberleri kriptopara
en güncel kriptopara haberleri ve alt coin haberleri kriptopara dünyasından en güncel haberler https://bit.ly/kriptopara-haberleri kriptopara
en güncel kriptopara haberleri ve alt coin haberleri kriptopara dünyasından en güncel haberler https://bit.ly/kriptopara-haberleri kriptopara
I really like it whenever people get together and share opinions. Great site, continue the good work!
Nice! This was literally the thing I have been searching for.
Heya i am for the first time here. I found this board and I
find It truly useful & it helped me out a lot. I hope to give something back and help others
like you helped me.
If some one wants expert view on the topic of blogging
then i recommend him/her to visit this web site,
Keep up the good work.
Thanks a lot for sharing this with all folks you really understand what you
are speaking about! Bookmarked. Please additionally consult with my site =).
We could have a hyperlink exchange arrangement among us
yutube
Флэш
At this time it appears like BlogEngine is the best blogging platform available right now.
(from what I’ve read) Is that what you’re using on your blog?
Hi, just wanted to tell you, I liked this post. It was practical.
Keep on posting!
Hi, Neat post. There’s an issue with your website in web explorer, would test this?
IE nonetheless is the market chief and a big component of folks will leave out your great writing due to this problem.
Hi there would you mind stating which blog platform you’re
working with? I’m going to start my own blog in the near future but I’m having a
tough time deciding between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and
Drupal. The reason I ask is because your design seems different then most blogs and
I’m looking for something unique. P.S My
apologies for getting off-topic but I had to ask!
Hi would you mind letting me know which webhost you’re using?
I’ve loaded your blog in 3 different browsers and I must say this blog loads a lot quicker then most.
Can you suggest a good internet hosting provider at a fair price?
Thanks, I appreciate it!
It’s not my first time to pay a visit this site, i am visiting this website dailly and take nice data from here all the time.
When I originally left a comment I appear to have clicked the -Notify me when new comments are added- checkbox and from now on each
time a comment is added I get four emails with the
exact same comment. Perhaps there is a way you can remove me from that
service? Thanks!
Wow, marvelous blog layout! How long have you been blogging for?
you make blogging look easy. The overall look of your web site is fantastic,
as well as the content!
En uygun fiyatlara Fantazi Gecelik satın al. Sefamerve Fantazi Gecelik Satın Al.
En uygun fiyatlara Fantazi Gecelik satın al. Sefamerve Fantazi Gecelik Satın Al.
Great post.
Yesterday, while I was at work, my cousin stole my
iPad and tested to see if it can survive a 40 foot drop, just so she can be
a youtube sensation. My iPad is now broken and she has 83 views.
I know this is totally off topic but I had to share it with someone!
With havin so much content do you ever run into any issues of plagorism or copyright violation? My website has a lot of completely unique content I’ve either authored myself
or outsourced but it appears a lot of it is popping it up all over the web without my permission.
Do you know any ways to help reduce content from being ripped off?
I’d truly appreciate it.
best university https://kaptan.edu.kg/
With havin so much content and articles do you ever run into any problems of plagorism
or copyright violation? My website has a lot of exclusive
content I’ve either created myself or outsourced but it seems a lot of it is popping it up all over the internet without my permission. Do you know any techniques to help stop content from being
stolen? I’d definitely appreciate it.
Hello there! Do you use Twitter? I’d like to follow you if that would be ok.
I’m absolutely enjoying your blog and look
forward to new posts.
This is really interesting, You are a very skilled blogger.
I’ve joined your feed and look forward to seeking more
of your excellent post. Also, I have shared
your website in my social networks!
If you are going for best contents like me, only visit this web page all the time because it offers feature contents, thanks
I like what you guys tend to be up too. Such clever work and exposure!
Keep up the amazing works guys I’ve incorporated you guys
to our blogroll.
Does your blog have a contact page? I’m having problems locating it but,
I’d like to shoot you an e-mail. I’ve got some ideas for your
blog you might be interested in hearing. Either way, great
site and I look forward to seeing it expand over time.
What’s up to all, how is the whole thing, I think
every one is getting more from this site, and your views
are good for new viewers.
Excellent pieces. Keep posting such kind of info on your blog.
Im really impressed by your site.
Hello there, You’ve performed an excellent job.
I will certainly digg it and individually suggest to my friends.
I’m confident they will be benefited from this web
site.
çok yararlı bir paylaşım olmuş teşekkür ederim çok işime yarıcak.
I’m glad I saw your page, it’s very informative, you’re really great, please continue like this.
I like your website very much, the explanations are very clear and simple, I wish your page to improve, goodbye, love and respect.
I’m glad I saw your page, it’s very informative, you’re really great, please continue like this.
I used to be recommended this website by way of my cousin. I’m
1xbette herkes kazanıyor sizde hemen 1xbete gelin kazananlardan olun
ip stresser
What’s up friends, its enormous piece of writing concerning teachingand entirely explained, keep it up all the time.
Also visit my homepage; tracfone 2022
I am a website designer. Recently, I am designing a website template about gate.io. The boss’s requirements are very strange, which makes me very difficult. I have consulted many websites, and later I discovered your blog, which is the style I hope to need. thank you very much. Would you allow me to use your blog style as a reference? thank you!
Good day! This is my first comment here sso I just wanted to giv a quick shout out and say I
really enjoy reading through your posts. Cann you recommend any other blogs/websites/forums that goo over
the ssame subjects? Thanks a lot!
my page Ümit Üveyt İnan
Wow, this piece of writing is pleasant, my younger
sister is analyzing these things, thus I am going to inform her.
Review my website; xbox gift card exchange
Helpful information. Fortunate me I discovered your site accidentally, and I am shocked why this twist of fate
did not took place earlier! I bookmarked it.
Also visit my web site – Tarot readings
Great blog you have here.. It’s hard to find excellent writing like yours
nowadays. I really appreciate people like you! Takke care!!
Also visit my blogg :: ehliyet sınav soruları
Hi there, I enjoy reading through your post. I like to write a little coomment to support you.
Here is myy blog :: havuzlu villa kiralama
I constanntly emailed this website post page to all my contacts, because if like
to read it next my contacts will too.
My site şantiye çadırı
you’re actually a just right webmaster. The site loading pace is incredible.
It seems that you’re doing any distinctive trick.
In addition, The contents are masterpiece. you have
performed a fantastic task on this subject!
We are a bunch of volunteers and opening a brand new
scheme in our community. Your site provided us with helpful information to work
on. You’ve done a formidable activity and our whole group might be thankful to you.
hi!,I liie your writing very a lot! sharee wee keep in toucch extra approximately your article on AOL?
I neeed an expert on this space to solve my problem. Maybe
that’s you! Having a look ahead to seee you.
Also visit my website; web site
You’ve made some decent points there. I looked on the net for additional information about the issue and found most individuals will go along with your views on this web site.
What’s up friends, pleasant paragraph and good arguments commented
at this place, I am genuinely enjoying by these.
With havin so much content do you ever run into any issues of plagorism or copyright violation? My blog has
a lot of unique content I’ve either authored myself or outsourced but it appears a lot of it is popping it up
all over the web without my agreement. Do you know any ways to help reduce content from
being stolen? I’d certainly appreciate it.
First off I want to say great blog! I had a quick question in which I’d like to ask if you do not mind.
I was curious to know how you center yourself and clear your head before writing.
I have had a hard time clearing my thoughts in getting my thoughts out
there. I do take pleasure in writing but it just seems like the first 10 to 15 minutes tend to be wasted just trying to figure out how to begin. Any
suggestions or hints? Many thanks!
Satta Matka Satta Matka panels
Hi there to all, it’s in fact a fastidious for me to go to see this website,
it consists of precious Information.
my homepage :: izmir psikiyatrist
Excellent article. Keep posting such kind of information on your page.
Im really impressed by your site.
Hi there, You’ve done a fantastic job. I’ll definitely digg it and in my opinion recommend to
my friends. I’m confident they will be benefited from this web site.
Hello colleagues, how is everything, and what you wish for to say on the topic of this paragraph, in my view its genuinely remarkable
in favor of me.
Wow, incredible blog layout! How long have you been blogging for?
you made blogging look easy. The overall look of your website is magnificent,
let alone the content!
Attractive component of content. I simply stumbled upon your weblog
and in accession capital to claim that I get actually loved account your weblog posts.
Any way I’ll be subscribing in your augment and even I success
you get entry to consistently rapidly.
I really like what you guys are usually up too.
This kind of clever work and coverage! Keep up the ssuperb works guys I’ve added you guys too
our blogroll.
Visit mmy webpage :: web Tasarım
It’s actually very complex in this busy life to listen news on TV,
so I only use internet for that reason, and obtain the latest news.
Quality articles is the important to invite the people to pay a quick visit the web site,
that’s what this web page is providing.
Hey outstanding blog! Does running a blog such as this require a great
deal of work? I have no understanding of programming but
I had been hoping to start my own blog in the near future.
Anyways, if you have any recommendations or tips for new blog owners
please share. I know this is off topic but
I just wanted to ask. Thank you!
Great blog right here! Additionally your site so much up fast!
What host are you the use of? Can I am getting your
associate link in your host? I desire my website loaded up as fast as yours lol
I’m very pleased to uncover this great site. I wanted to thank
you for ones time due to this wonderful read!! I definitely savored
every little bit of it and i also have you book marked to check out new things in your web site.
Wonderful beat ! I would like to apprentice while you amend your site,
how can i subscribe for a blog website? The account helped me a acceptable deal.
I were tiny bit acquainted of this your broadcast offered shiny transparent concept
Nice blog here! Additionally your site loads up fast!
What host are you using? Can I get your affiliate link
on your host? I desire my website loaded up as quickly
as yours lol
Проклятое наследие
What a stuff of un-ambiguity and preserveness of valuable experience about unpredicted emotions.
Keep on working, great job!
Pretty section of content. I just stumbled upon your weblog andd
inn accession capital to assert that I acquire in fact enjoyed account your blog posts.
Anyway I will be subscribing to your feeds and
even I achievement you access consistently quickly.
Here is my blog :: arapçA çeviri
I enjoy what you guys are up too. This kind of clever work and coverage!
Keep up the great works guys I’ve included you guys to our blogroll.
my page; Araba tamircisi