ইহুদী: ইউসুফ থেকে মুসা, মাঝে অন্ধকার


পারভেজ সেলিম


(পর্ব : ০২)

কুরআনে একজন নবীর জীবনের গল্প প্রায় পুরোটাই বর্ণনা করা আছে। আর সেই সৌভাগ্যবান নবী হলে ইউসুফ (আ.)। সূরা ইউসুফের ১১১ টি আয়াতে এই গল্প বিস্তারিত পাওয়া যায়।

ইহুদী ও মুসলমান জাতির ইতিহাসে এই বর্ণনা খুবই  গুরুত্বপুর্ণ। কুরআনের এই সূরায় আল্লাহ বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, চাইলে তিনি তার বান্দাদের জন্য কি করতে পারেন তার শিক্ষা এই গল্প থেকে নেয়া যেতে পারে।

ইউসুফকে কুয়ার ফেলা, মিশরে বিক্রি হওয়া, মুনিব আজিজের স্ত্রীর সম্মানহানীর  মিথ্যে অভিযোগে জেলে যাওয়া, স্বপ্নের সঠিক ব্যাখার দেবার ক্ষমতা, জেল থেকে বের হয়ে মিশরের খাদ্যমন্ত্রী হওয়া পুরো কাহিনী সুচারুরুপে বর্ণনা করা আছে কুরআনে।

যদিও ‘জুলেখা’ নামে কোন নারীর কথা কুরআনে নাই। কুরআনের সেই নারীর পরিচয়ে ‘আজিজের স্ত্রী’ বলা আছে। জনপ্রিয় ইউসুফ-জুলেখার কাহিনীর ‘জুলেখা’ নামটি পরবর্তীতে তাফসীর ও ফার্সি সাহিত্য থেকে যুক্ত হয়েছে।

গল্পে আরো জানা যায়, ফিলিস্তিনে দূর্ভিক্ষ দেখা দিলে ইউসুফের ভাইয়েরা খাবারের সন্ধানে মিশরে যান।  ঘটণাচক্রে ভাইদের সাথে দেখা হয়ে যায় ইউসুফের। এরপর ইউসুফ তার পিতা ইয়াকুবকে মিশরে নিয়ে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

অন্য উৎসের গল্প থেকে আরো জানা যায়, পিতা ও ভাইসহ ইহুদী পরিবারের ৭০/৭৫ জন কেনান থেকে মিশর চলে আসেন ইউসুফের আমন্ত্রনে।

এরপর থেকে কেনান ছেড়ে মিশরে বসবাস শুরু করে ইহুদীদের প্রথম প্রজন্ম। পিতা ইয়াকুব মিশরেই মারা যান।

মৃত্যুর পর তার ইচ্ছা অনুয়ায়ী কেনানের হেব্রনে পিতা ইসহাক ও পিতামহ ইব্রাহিমের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাহিত করা হয়।

ইউসুফ যাকে ইহুদী ও খ্রিষ্টানরা ‘জোসেফ’ নামে ডাকে, তিনি মিশরে ১২০ বছর বেঁচে ছিলেন।

ইহুদী জাতির মানুষেরা তার সময় মিশরের বেশ ভালোভাবে জীবন যাপন করতে থাকেন। মৃত্যুর পর  মিশরেরই দাফন করা হয় ইউসুফকে। সময়কাল ১৮০০ খ্রি.পূর্বাব্দের আশেপাশে।

মৃত্যুর পরও ইউসুফ (আঃ)-এর মর্যাদার কারণে তার ভাই ও বংশধররা মিশরের রাজপ্রাসাদ এবং গসেন অঞ্চলে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলেন।

ইউসুফ (আঃ)-এর মৃত্যুর কয়েক প্রজন্ম পর নতুন রাজারা ক্ষমতায় আসে। সম্ভবত নতুন রাজবংশ বা Hyksos-এর পতন ঘটে ও স্থানীয় মিশরীয়রা ক্ষমতায় ফিরে আসে। তারা ইসরাইলীয়দের সংখ্যা ও শক্তি দেখে ভীত হয়ে তাদের জোর করে দাসে পরিণত করে।

মৃত্যুর আগে ইউসুফ তার ভাই ও বংশধরদের বলেছিলেন, একদিন তারা মিশর ছাড়বে এবং “প্রমিজড ল্যান্ড” (কেনান) ফিরে যাবে। জীবনদশায় তার সে আশা পুরুন হয়নি।

মৃত্যুর কয়েকশ বছর পর তার ইচ্ছা অনুযায়ী, তার দেহ মিশর থেকে বের করে কেনানে নিয়ে কবর দেওয়া হয়। আর এই কাজটি সম্পন্ন করে ইহুদী জাতির আরেক মুক্তিদাতা মুসা (আঃ)।

মুসা (আঃ), যখন বনী ইসরাইলকে মিশর থেকে উদ্ধার করে নীল নদ পার করে আনেন, তখন ইউসুফ (আঃ)-এর হাড্ডি/অবশেষ সঙ্গে করে নিয়ে যান। বাইবেলে বলা আছে,”And Moses took the bones of Joseph with him: for he had straitly sworn the children of Israel…”— Exodus 13:19

আর এভাবেই মিশরেই শেষ হয় ইহুদীদের সাথে ইব্রাহিম, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ নবীদের গল্প।

ইউসুফ নবীর মৃত্যুর সাড়ে পাঁচশ বছর পর, ১২৭০ খ্রি.পূর্বাব্দে মিশরের বনী ইসরাইলের এক দরিদ্র দাস পরিবারেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন নবী মুসা। 

শুরু হয় ইহুদীদের নতুন পরিত্রাতা মুসা নবীর গল্প।

 (চলবে…)


পারভেজ সেলিম

লেখক,সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী


 ইহুদী নিয়ে পুরো পর্ব পড়ুন :

পর্ব: ০১ ইহুদী: প্রতিশ্রুত ভুখন্ড ও রক্তাক্ত বর্তমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x