পারভেজ সেলিম
ইরান- ইসরাইল যুদ্ধ হয়ত শেষ। ইরানের শক্তি কম থাকার পরও সাহসের জোরে এবার জিতল ইরানই। আপাতত ইসরাইল-আমেরিকা হেরে গেল। বাকিটা ভবিষ্যৎ বলবে।
স্রস্টার প্রতিশ্রুত ভূখন্ড যা তিনি ইব্রাহিম নবীকে দিয়েছিল, তা কি তবে বহাল আছে? তার আগে গল্পের শেষটুকু জানা দরকার। পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের ইহদীরা ফেরার আগেই মারা যান মুসা নবী।
এরপর ইহুদীদের নেতৃত্ব দেয় ইউশা নবী। এরপর তালুত হন ইহদীদের প্রথম রাজা হন।
তালুত যখন রাজা, তখন ফিলিস্তিনের জালুত রাজা বা গলিয়াদ ছিলেন বিশাল দেহী এক যোদ্ধা। এক মেষপালক তার গুলতির আঘাতে হত্যা করেন শক্তিশালী গলিয়াদকে।
গলিয়াদকে হত্যার পর মেষপালক বালক জনগণের চোখে নায়ক হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে দরিদ্র মেষপালকই হয়ে ওঠেন ইহুদীদের আরেক পরিত্রাতা। তার নাম ডেভিড বা দাউদ। দাউদ নবীর নেতৃত্বে ফিলিস্তিনের বিশাল যোদ্ধা গলিয়াদকে হত্যা করে জেরুজালেমে প্রবেশ করে ইহুদীরা।
তালুতের পর ডেভিড হন ইসলাইলের দ্বিতীয় রাজা। ইসরাইলে শুরু হয় ইহুদী জাতির স্বর্নযুগ। জেরুজালেম হয় ইসরাইলের রাজধানী। দাউদের রাজত্বকাল ছিল ১০১০-৯৭০ খ্রি.পূর্ব।
পরবর্তীতে দাউদের ছেলে সুলায়মান ইহুদীদের আরো উচ্চতা নিয়ে যায়। ইসরাইলি সাম্রাজ্য বিস্তার ঘটান। তিনি ইহুদীদে প্রথম টেম্পল মাউন্ট বা ফাস্ট টেম্পল নির্মাণ করেন জেরুজালেমে। সময়টা ৯৭০-৯৩০ খ্রি.পূর্বাব্দ হবে।
এরপর দফায় দফায় মিশরীয়, বেবিলনীয়, পারসীয়ন, গ্রিক, রোমান, মুসলমান শেষে ইংরেজ দখল করেছিল জেরুজালেম। দুইবার জেরুজালেম পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছিল। একবার ৫৮৬ খ্রি.পূর্বে ব্যাবিলনের রাজা নেবুচাদনেজার। আরেকবার রোমানরা ধ্বংস করে ৭০ খ্রিস্টাব্দে।
ইহুদীরা ততদিন নিচিহ্ন হয়ে গেছে জেরুজালেম থেকে। এরপর প্রায় ১৯০০ বছর ধরে ইহুদিদের আর কোনো স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল না।সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। পৃথিবীর একমাত্র ‘ডায়াসপোরা’ জাতি বলা হয় ইহুদীদের।
এরপর তারা ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া, এমনকি ভারতে (কোচিন ইহুদি), চীনে (কাইফেং ইহুদি) ছড়িয়ে পড়েছিল ইহুদীরা। ইউরোপে যেমন ছড়িয়েছে ছিল ইহুদীরা তেমনি মক্কা মদিনাতেও তারা ছড়িছে পড়েছিল।
মহানবী যখন মদীনায় হিজরত করে তখন তিনটি বড় ইহুদী গোত্র ছিল মদিনায়। বনু নাদির, বনু কাইনুকা ও বনু কুরাইজা। পরবর্তীতে মহানবী তিনটি গোত্রকেই মদিনা থেকে বিতাড়িত করেছিলেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্রষ্টা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইব্রাহিম নবীকে তাদের একটি ভূখণ্ড হবে সেই প্রতিশ্রুতি কি এখনও বহাল আছে?
আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম (আ.)-কে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা ছিল: “আমি এই ভূখণ্ড তোমার বংশধরদের দেব।” (সূরা বাকারাহ ২:১২৪–১৩৬, সূরা ইব্রাহিম ১৪:৩৭)
এই প্রতিশ্রুতি শর্তযুক্ত ছিল এবং মূলত ইব্রাহিম (আ.)-এর সৎ ও ঈমানদার বংশধরদের জন্য ছিল।
মুসা (আ.)-এর সময় বনী ইসরাঈল বারবার অবাধ্যতা ও অবিশ্বাস দেখিয়েছিল। যেমন: গরুর উপাসনা করা (বাকারাহ ২:৫১) যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি ( মায়িদা ৫:২২–২৬)।
তখন আল্লাহ বলেন: “অতএব এখন থেকে চল্লিশ বছর ধরে তারা দেশে ঘুরে বেড়াবে (ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারবে না)।”(মায়িদা ৫:২৬)
এ থেকেই বোঝা যায়, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি চিরস্থায়ী ছিল না, শর্তসাপেক্ষ ছিল। সৎ থাকলে তাদের পুরস্কৃত করা হতো, আর বিপথগামী হলে সে প্রতিশ্রুতি স্থগিত বা বাতিল করা হতো। বরং কুরআনে বারবার তাদের অবাধ্যতা, নবী হত্যা এবং চুক্তিভঙ্গের কারণে আল্লাহর লানত ও শাস্তির কথা এসেছে (বাকারা ২:৬১,নিসা ৪:১৫৫)।
আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ছিল শর্তযুক্ত সৎ ও ঈমানদারদের জন্য। বনী ইসরাঈলের অবাধ্যতায় সেই প্রতিশ্রুতি স্থগিত হয়। তাই ইসলাম মতে এই মুহূর্তে ইহুদি জাতির জন্য কোনো অবশিষ্ট বৈধ প্রতিশ্রুত ভূমি নেই।
এরপরও ধর্মের দোহাই দিয়ে কিভাবে ইসরাইল রাস্ট্র গড়ে উঠল? এর রাজনীতিটুকু কি?
(চলবে…)
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
ইহুদী নিয়ে পুরো পর্ব পড়ুন :
পর্ব: ০১ ইহুদী: প্রতিশ্রুত ভুখন্ড ও রক্তাক্ত বর্তমান
পর্ব: ০২ : ইহুদী: ইউসুফ থেকে মুসা, মাঝে অন্ধকার