পারভেজ সেলিম
ইসলাম শান্তির ধর্ম নামে পরিচিত। শান্তির বানী প্রচারিত হয়ে আসছে ইসলাম শুরুর সময় থেকেই।
মহনবীর নবুয়্যূত লাভের পরের দশ বছর ছিল মুসলমানদের ত্যাগ আর অত্যাচারিত হবার ইতিহাস।
তবে জীবনের শেষ দশ বছর কাফের, মুনাফেক আর বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধ আর দ্বন্দ ফ্যাসাদের মধ্য দিয়েই কেটেছে মহানবীর জীবন।
তবু শেষ নবীর জীবনদশায় মুসলমানেরা ছিলেন ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। সকল ভুলবোঝাবুঝি নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচলার মাধ্যমে সমাধানই করতে পেরেছিলেন তিনি।
কিন্তু তার মৃত্যুর পর দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েন মুসলমানেরা। নিজেদের মধ্যই শুরু হয় বিতর্ক, দ্বন্দ আর ফ্যাসাদ। সেই দ্বন্দ শেষ পর্যন্ত চরমতম রুপ নেয় যুদ্ধে।
এক মুসলমান ভাই অস্ত্র ধরেন আরেক মুসলমান ভাই এর বিরুদ্ধে। ইতিহাসে যা ফিতনা বা মুসলমানদের গৃহযুদ্ধ নামে পরিচিত। প্রথম ফিতনায় ৯০ হাজার মুসলমান শহীদ হয়েছিলেন শুধু নিজেদের মধ্য যুদ্ধ করে।
অথচ কুরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে ‘ফিতনা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ’ (সুরা আল বাকারা-১৯১)।
তাহলে কেন নিজেদের মধ্য এক রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ ফ্যাসাদ?
প্রথম ফিতনা: (৬৫৬-৬৬১ খ্রি.): ৫ বছর
ইসলামের প্রথম ফিতনা শুরু হয় মহানবী মৃত্যুর পরপরই। কে হবেন প্রথম খলিফা তা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ। সেখান থেকেই মুসলমানদের মধ্যে দেখা দেয় বিভক্তি আর ফাটল।
শেষ পর্যন্ত অনেক আলাপ আলোচনা শেষে প্রথম খলিফা হন হয়রত আবু বকর সিদ্দিক, তাকে জোরালো সমর্থন করেন হয়রত উমর (রা.)। মুসলমানদের বিভক্তি কিছুটা কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছিলেন এই দুই খলিফা।
দুই খলিফা প্রায় ৮ বছর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ইসলামের। ততদিনে ইসলাম আরব ভুখন্ড ছাড়িয়ে বিশ্বের অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।
অনুসারির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর এক আততায়ির ছুরির আঘাতে নিহত হন ৬৪৪ সালের ৩ নভেম্বর। যদিও তা কোন রাজনৈতিক বা ক্ষমতা দ্বন্দের কারণে নয় বলে ইতিহাসবিদদের মতামত। ব্যক্তি আক্রোশের শিকার হয়েছিলেন তিনি।
আরো পড়ুন :
প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফার আমলে বড় কোন সংকট তৈরি না হলেও মুসলমানদের বিভক্তি চূড়ান্ত রুপ নেয় শেষ নবীর মৃত্যু ২৪ বছর পর। তৃতীয় খলিফা হয়রত ওসমানের সময়।
৬৫৬ সালে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তৃতীয় খলিফা উসমান ইবনে আফফানকে। শুরু হয় ইসলামের প্রথম ফিতনার চূড়ান্ত রুপ। মুসলমান মুসলমান শুরু হয় রক্তাত্ব যুদ্ধ। পাঁচ বছর ব্যাপি চলা এই ফিতনায় শহীদ হন ৯০ হাজার মুসলমান।
কিন্তু কেন এই দ্বন্দ?
তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান ক্ষমতায় ছিলেন সবচেয়ে বেশি সময় প্রায় সাড়ে বারো বছর। এসময় মুসলমানদের মধ্য দ্বিধা বিভক্তি চরমতম রুপ নেয়।
হযরত উসমান ছিলেন নরম প্রকৃতির মানুষ। কঠোর কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করতেন তিনি। প্রশাসনের নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি। এসকল অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে তার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল গভীর ষড়যন্ত্র। সেই যড়যন্ত্রে যুক্ত হন বিশিষ্ট সাহাবী ও তাদের বংশধর মুসলমানেরাই ।
শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের এক বিদ্রোহী গ্রুপের হাতে শহীদ হন তৃতীয় খলিফা হয়রত উসমান। সময়টা ১৭ জুন ৬৫৬।
এরপর চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত হন হয়রত আলি ইবনে আবু মুত্তালিব। যদিও প্রথমে তিনি খলিফা হতে রাজি হননি কারণ তাতে তৃতীয় খলিফা হত্যার দায় তার কাঁধে আসার সম্ভাবনা ছিল। তবে মুসলমানদের জোরালো সমর্থণের কারণে তিনি খলিফা হতে সম্মতি প্রদাণ করেন।
আরো পড়ুন :
চতুর্থ খলিফা নির্বাচিত হবার পর নতুন সংকট দেখা দেয়। তৃতীয় খলিফা হত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হতে থাকে সেসময়ের প্রভাবশালী সাহাবারা। মুয়াবিযা, যুবাযের এমনকি মহানবীর প্রিয়তম স্ত্রী হয়রত আয়শা (রা.) খলিফা উসমান হত্যার বিচারের জন্য চাপ দিতে থাকে খলিফা আলীকে।
নানা বাস্তবসম্মত কারণে বিচার প্রক্রিয়া বিলস্বিত হতে থাকে, এরফলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে। একাধিক গ্রুপে বিভক্ত মুসলমানেরা একে অপরকে শত্রু গণ্য করতে শুরু করে।
শেষে শত্রুতা রুপ নেয় যুদ্ধে। একে একে তিনটি বড় যুদ্ধ হয় মুসলমানদের মধ্যে।উটের যুদ্ধ ,বসরার যুদ্ধ, সিফফিনের যুদ্ধ, ও নাহরাওয়ানরে যুদ্ধ।
তৃতীয় খলিফা উসমান হত্যার বিচারে দাবিতে মুসলমানেরা বিভক্ত হয়ে যায় ।
মহানবী স্ত্রী হযরত আয়শা (রা.) ও যুবায়ের এবং তালহার মতো বিশিষ্ট সাহাবীদের সাথে হয়রত আলীর মত পার্থক্য এমন পাথর্ক্য পর্যায়ে পৌছায় যে শেষ পর্যন্ত তা যুদ্ধে গড়ায়।
ইতিহাসে ‘জঙ্গে জামাল’ বা উটের যুদ্ধ বা বসরার যুদ্ধ নামে পরিচিত। মুসলমান মুসলমান এটাই প্রথম যুদ্ধ । ইসলামের প্রথম ফিতনার শুরু হয়।
যুদ্ধ হয়রত আলী জয় লাভ করে । তালহা ও যুবায়ের সহ দশ হাজার মুসলমান শহীদ হয়েছিল এই যুদ্ধে। সময়টা তৃতীয় খলিফা হত্যার মাত্র পাচ মাসের মাথায় ৬৫৬ সালের নভেম্বরে ।
পরের বছরই ৬৫৭ সালের জুলাই এ হয়রত আলীর সাথে মুয়াবিয়ার দ্বন্দ শেষ পর্যন্ত যে যুদ্ধে জড়ায় সেটি ফিতনার সবচেয়ে বড় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ইতিহাসে যা ‘সিফফিনের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।তিন দিনের যুদ্ধে ৭০ হাজার মুসলমান শহীদ হয়েছিল এই যুদ্ধে। মুসলমানদের আর কোন যুদ্ধে এক সাথে এত মুসলমান নিহত হননি।
এই যুদ্ধে জয়ের দারপ্রান্তে গিয়েও বিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হন খলিফা আলী। এবার মুসলামদের আরেক গ্রুপ বিদ্রোহ করে বসে খলিফার আলীর রিরুদ্ধে। তারা প্রচার করতে শুরু করে কাফের মুয়াবিয়ার সাথে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা দিয়ে হয়রত আলী (রা.) ও কাফের হয়ে গেছেন। হয়রত আলী তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হন কেন তিনি যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহী গ্রুপের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ শুরু করেন খলিফা হয়রত আলী। ইতিহাসে যা ‘নাহরাওয়ানের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
সে এক টালমাটাল অবস্থা মুসলমানদের মধ্যে। নিজেদের মধ্যেই মারামারির চূড়ান্ত এক নৃশংসরুপ দেখতে পায় পুরোবিশ্ব।
মারামারি আর হানাহানির এমন কঠিন পরিস্থিতি শুরু হয় মহানবীর মৃত্যুর মাত্র দুই যুগের মধ্যেই।
শেষ পর্যন্ত হযরত আলী খাওয়ারিজ গোত্রের এক মুসলমানের ছুরির আঘাতে শহীদ হন। সময়টা তখন ৬৬১ সাল।
এবার খলিফা হন ইমাম হাসান (রা.)। এবার বিদ্রোহ করে বসে মুয়াবিয়া। দ্বন্দ ফ্যাসাদ এড়াতে তিনি মাত্র ছয় মাসের মাথায় চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতায় হস্তান্তর করেন মুয়াবিয়ার কাছে। খলিফা হন মুয়াবিয়া। প্রায় ২০ বছরের জন্য শান্ত হয় ইসলাম।
কিন্তু এরই মধ্য যা ক্ষতি হবার তা হয়ে গেছে। পাঁচ বছরের যুদ্ধে ৯০ হাজার মুসলমান শহীদ হয়েছিল বলে ধরা হয়।
৬৫৬ সালে তৃতীয় খলিফার হত্যা দিয়ে শুরু হওয়া ফিতনা শেষ হয় ৬৬১ সালে মুয়বিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে। ইসলামে শুরু হয় উমাইয়া খিলাফতের যুগ।
মাত্র ১৯ বছর শান্ত থাকার পর এই উমাইয়া খিলাফতের আমলেই মুসলমানদের মধ্যে আরেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয় যা ‘দ্বিতীয় ফিতনা’ নামে পরিচিত।
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
ভিডিও সৌজন্যে : Banglabox
আরো দেখুন :
jazz piano music
tender jazz music
relax
smooth jazz
I like this blog it’s a master piece! Glad I detected
this ohttps://69v.topn google.Money from blog
I found this very helpful and will be sharing it with my friends.
Thanks for sharing your knowledge on this topic. It’s much appreciated.