কিভাবে প্রথম চার খলিফা নির্ধারিত হলেন ?

পারভেজ সেলিম

পারভেজ সেলিম ।।


পারভেজ সেলিম ।।


ইসলামের শেষ নবী হয়রত মুহাম্মাদ (সা.) মারা যান ৬৩২ সালের ৮ জুন। এর ফলে বিশাল এক ইসলামী উম্মাহ নেতৃত্বশুন্য হয়ে পড়ে। যেহেতু মহানবীর কোন পুত্র সন্তান জীবিত ছিলেন না এবং উত্তরসুরি নির্ধারণের বিষয়ে শেষনবীর কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিলনা, তাই তাঁর মৃত্যুতে জটিল প্রশ্ন দেখা দেয় কে হবে এই বিশাল ইসলামি উম্মাহর প্রধান? 

অনেক জটিলতা শেষে একে একে  ইসলামের প্রথম চার খলিফা নির্ধারিত হন  হয়রত আবু বকর,‌ হয়রত উমর, হয়রত উসমান ও হয়রত আলী। এই চারজনকে বলা হয় খুলাফায়ে রাশেদিন। মানে খলিফাদের মধ্যে তাঁরাই শ্রেষ্ঠ। 

মহানবীর মৃত্যুর পর ২৯ বছর ইসলামি রাষ্ট্রের নেতৃত্বে ছিলেন এই চার মহান সাহাবী। কিন্তু কিভাবে ইসলামের এই খলিফা নির্ধারণ হলো ? কারা কেন এই চারজনকে ইসলামের খলিফাদের নির্ধারণ করলেন ?

হয়রত আবু বকর : (৬৩২-৬৩৪ খ্রি.)

চারজন খলিফার  মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ ছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। সম্পর্কে মুহাম্মাদ (সা.) এর শ্বশুর ছিলেন তিনি । তার  মেয়ে আয়শা ছিলেন নবীর প্রিয়তম স্ত্রী। মহানবীর মৃত্যুর সাথে সাথে মদিনায় একটি শোরগোল তৈরি হয়, কে হবেন ইসলামের প্রথম খলিফা ? 

মদিনায় আনসার ও মুজাহির দুই পক্ষ জোরালোভাবে তাদের নেতাকেই প্রথম খলিফা বানাতে চাইলেন।আনসার মানে মদীনার স্থানীয়রা দাবি করলো তারা যেহেতু মুহাম্মাদকে ইসলামের শুরুর দিকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করেছেন এবং ইসলামের সুরক্ষা দিয়েছেন তাই তাদের গ্রোত্র থেকেই প্রথম খলিফা নির্ধারণ হোক। তাদের প্রস্তাব আনসার গোত্রের সাদ ইবনে উবাদাহ হোক প্রথম খলিফা।

অন্যদিকে মুহাজিররা দাবি করছে তারা যেহেতু ইসলামের জন্য দেশ ত্যাগী হয়েছে, অনেক কষ্ট স্বীকার করেছে ইসলামের জন্য তাদের ত্যাগই সবচেয়ে বেশি, তাই তাদের মধ্যে থেকেই প্রথম খলিফা হওয়াই যুক্তিযুক্ত। 


আরো পড়ুন :


এবার মুজাহিররা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়। এক আলীর বাড়িতে আলোচনায় বসেন যেখান তালহা ও যুবাইর উপস্থিত  ছিলেন। অন্য গ্রুপটি আবু বকর ও উমরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়।

খলিফা নির্ধারণ নিয়ে দ্বন্দ যখন চরমে তখন আনসাররা জড়ো হতে থাকে বনু সায়দা গোত্রের.চত্ত্বরে যার নেতৃত্ব দেন সাদ। মহানবীর পরিবার তখন দাফনের কাজে ব্যস্ত । 

আবু বকর আর উমর এই জমায়েত আনসারদের সাথে কথা বলতে বনু সায়দা চত্বরে গেলেন। উসমান এবং আলী সেখানে যেতে চাইলেন না। একঘন্টা ধরে তর্ক বাকযুদ্ধ চলার পর আবু বকর বললেন ‘উমর হবে প্রথম খলিফা, তোমরা তার কাছে বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ করো। কিন্তু এই প্রস্তাবে উমর রাজি হলেন না। উমর বললেন ‘আবু বকর আপনার মতো মানুষ থাকতে আমি প্রথম খলিফা হতে পারি না, যিনি ছিলেন শেষ নবীর সবচেয়ে প্রিয় তার অবর্তমানে আপনি ইমামতি করেছিলেন, আপনি সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি, আপনি ইসলামের প্রথম খলিফা’। 

এরপর উমর আবু বকরের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। পরে সকলেই ঐক্যমতে পৌঁছে একে একে আবু বকরের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেন। হয়রত আবু বকর সিদ্দিক হন ইসলামের প্রথম খলিফা।

মাত্র দুই বছর তিন মাস ছিল আবু বকরের শাসন। মুহাম্মাদের মৃত্যু পর ইসলাম ত্যাগের যে হিড়িক পড়েছিল তাদের সামলাতে এবং নতুন নতুন নবী দাবি করাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেই তার দুই বছর কেটে যায় । ইতিহাসে এই যুদ্ধ ‘রিদ্দার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

হয়রত আবু বকর ৬৩৪ খ্রি. ২৩ আগস্ট মারা যান ৬০ বছর বয়সে। চার খলিফার মধ্যে তিনি একমাত্র খলিফা যার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।


আরো পড়ুন :


হয়রত উমর : (৬৩৪-৬৪৪ খ্রি.)

উমর ইবনে খাত্তাব হলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। তিনি একমাত্র খলিফা যার ক্ষমতা গ্রহণে কোন বিরোধিতা হয়নি এবং পূর্ব নির্ধারিত ছিলেন। আবু বকর মৃত্যুর আগেই তাকে খলিফার নির্ধারণ করে গেছেন। সম্পর্কে উমরও মহানবীর শ্বশুর ছিলেন।

তার আমলেই ইসলামি রাস্ট্র সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করে। আরবের সকল গোত্রকে সামলানো পর পারস্য এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যও উমরের দখলে চলে আসে। দ্বিতীয় খলিফার আমলে জেরুজালেম মুসলমানের দখলে আসে। 

 ইসলামের এই জয়ের পিছনে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা ছিল ‘ইসলামের সিংহ’ নামে পরিচিত খালিদ বিন ওয়ালিদের। তিনি তার বাহিনী নিয়ে যে দিকে গেছেন সেইদিকে ইসলামের পতাকা পতপত করে উড়েছে। উমর বলতেন ‘এই জয় উমর কিংবা খালিদ বিন ওয়ালিদের নয়, এই জয় ইসলামের’।

উমরের আমলেই জেরুজালেম মুসলমানদের অধিকারে আসে। তার সময় কালে দূর্ভিক্ষ ও প্লেগ মহামারি দেখা দিয়েছিল।

তিনি অসহায়, অক্ষম, বৃদ্ধ ও শিশুদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন।

দ্বিতীয় খলিফা  দশ বছর ৬ মাস ৮ দিন ক্ষমতায় থাকার পর তিনি নিহত হন। আবু লুলু নামের এক পার্সিয়ান দাস তাকে খুন করে। এই হত্যাকান্ড রাজনৈতিক নাকি ব্যক্তিগত আক্রোশ তা নিয়ে দ্বিমত আছে।

মুত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। পরবর্তী খলিফা নির্ধারনের জন্য তিনি ছয় সদস্যের একটি তালিকা করে দেন এবং সেখানে থেকে নির্বাচিত হয় তৃতীয় খলিফা  উসমান।

হয়রত উসমান (৬৪৪-৬৫৬ খ্রি.)

উমরের মৃত্যুর পর তৃতীয় খলিফা হন উসমান ইবনে আফফান। পরবর্তী খলিফা নির্বাচনের জন্য ছয় সদস্যের একটি ছোট দল নির্বাচন করে দিয়েছিলেন উমর। সেই ছয় সদস্য হচ্ছেন উসমান, আলী, যুবাইর,তালহা, আব্দুর রহমান ও সাদ। নিজেরা আলোচনা করে পরবর্তী খলিফা বেছে নিতে বলেছিলেন। 

তবে এই দল বাচাইয়ের সময় উসমান ও আলীকে সাম্ভাব্য খলিফা হিসেবে ধরেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। 

তবে সেই খলিফা উমরের মৃত্যুর পর খলিফা র্নিধারণ নিয়ে আবারো জটিলতা তৈরি হয়। কারণ ছয় সদস্যের কেউই নিজেকে ছাড়া অন্যকে ভোট বা সমর্থন প্রদাণ করেনা। সকলে একটি মাত্র ভোট পাওয়ায় খলিফা নির্ধারণ আবারো সংকটের মধ্যে পড়ে। 

দুই দিন পর সমাধানের জন্য এগিয়ে আসেন আব্দুর রহমান বিন আউফ। তিনি একটি নতুন প্রস্তাব দেন। বলেন যদি বাকি পাঁচজন তার বিচার মেনে নেন তাহলে তিনি আর খলিফা হবার দৌঁড় থেকে সরে আসবেন। তিনি খলিফা নির্বাচন করবেন।

সবাই তার কথা মেনে নিলেন এবং অনেকেই ধারণা করেছিল  হযরত আলীকে হয়ত তিনি মনোনিত করবেন কিন্তু ভোর বেলা তিনি সবাইকে জানিয়ে দিলেন  হয়রত আলী  নয়, তৃতীয় খলিফা হবেন উসমান ইবনে আফফান। 

এ শুনে আলী সভাস্থল ছেড়ে কোন কিছু না বলে বের হয়ে গিয়েছিলেন। পরে ফিরে এসে উসমানের কাছে বাইয়াত বা শপথ নেন। এরপর উসমানের তৃতীয় খলিফা হিসেবে মেনে নিতে আর কারো বাধা থাকলো না।

হয়রত উসমান ছিল শান্ত, শিষ্ট, নরম প্রকৃতির মানুষ। তাঁর খলিফা হবার ছয় বছর পর চারিদিকে বিদ্রোহ দেখা দেয়। ১২ বছর তিনি ইসলামের ক্ষমতায় ছিলেন। ৮০ বছর বয়সে তাকে নির্মমভাবে হত্যা  করে বিদ্রোহীরা। হযরত উসমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর যে গৃহযুদ্ধ বাধে তাতে ৯০ হাজার মুসলমান মারা যান। 

হয়রত আলী ( ৬৫৬-৬৬১ খ্রি.)

হয়রত উসমানের মৃত্যুর পর  আবারো এক সংকটে পড়ে ইসলাম। কেউই খলিফা হতে রাজি হচ্ছিলেন না। কারণ তাতে উসমান হত্যার দায়। তবু শেষ পর্যন্ত ইসলামের এক চরম সংকট কালে কালে মুসলিম উম্মাহর প্রধান হন আলী ইবনে আবু তালিব।

খলিফা উসমান নিহত হবার পর  পরবর্তী খলিফা কে হবেন তাতে তিনজন প্রতিদ্বন্দী ছিলেন। একজন আলী ইবনে তালিব অন্য দুজন হলো তালহা ও যুবায়ের। 

আলী যেহেতু মুহানবীর চাচাতো ভাই এবং একই গোত্রের তাই অনেকে মনে করেন আলীরই প্রথম খলিফা হবার কথা ছিল কিন্তু তাকে বাদ দিয়ে ইতিমধ্যে তিনজনকে খলিফা করা হয়েছে যা অনেক মুসলমান মেনে নিতে পারেনি। আর এই মনোভাব থেকেই ইসলামে শিয়া আর সুন্নির নামে দুটি শক্তিশালী ধারার সৃষ্টি হয়।

তৃতীয় খলিফাকে হত্যার পর প্রথম সাত দিন অস্থায়ী সরকার পরিচালনা করেন বিদ্রোহীরা। গাফিকী ইবনে হারব মাক্কী ছিলেন এর প্রধান। তারা জানতো একটি কার্যকর খেলাফত সরকার গঠিত না হলে এই বিদ্রোহ একটি অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। তাই তার ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল সরকার গঠন করতে।

কিন্তু আলী, তালহা, যুবাইর কেউ আগিয়ে আসছিল না ক্ষমতা গ্রহণ করতে। তার আশংকা করছিলেন যে. যিনি খলিফা হবেন তাকেই মুসলমানেরা উসমান হত্যার পরিকল্পনাকরী হিসেবে ধারণা করতে পারে। তাই মদিনার সাধারন মুসলমানের জোরালো সমর্থন ছাড়া কেউ খলিফা হতে রাজি হচ্ছিলেন না।

বিদ্রোহী গ্রুপ এবং মদিনা বাসির  কাছে আলীর সমর্থক বেশি ছিল সবেচেয়ে বেশি ছিল বাকি দুজনের চাইতে। কুফার শক্তিশালী নেতা মালিক আশতার আলীর পক্ষ নেয়ায়  খলিফা হবার পথ সুগম হয় আলীর। প্রথম একটু দেরী করলেও দ্বিতীয়বার প্রস্তাব পাবার সাথে সাথেই গ্রহণ করেন আলী। ইসলামে চতুর্থ খলিফা হন আলী ইবনে আবু তালিব।

খলিফা হবার পর :

শিয়াদের মতে আলীই প্রথম খলিফা। তাদের মতে এর আগের তিন খলিফা নির্বাচিত হয়েছিল  মুহাম্মাদের অসিয়তকে অমান্য করে। তাই আগের তিন খলিফাকে শিয়ারা মানেন না।

উসমানের হত্যার বিচার দেরি হওয়ায় করায় হয়রত আয়শা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধ ইতিহাসে উটের যুদ্ধ বা জংগে জামাল বা বসরার যুদ্ধ নামে পরিচিত। 

অন্যদিকে আলীর সবচেয়ে বড় বিরোধী সিরিয়ার গর্ভনর মুয়াবিয়া অস্বীকার করে বসেন হয়রত আলীর খেলাফতকে। তখন শুরু হয় ‘সিফফিনের যুদ্ধ’। 

যুদ্ধের যখন বিরতি চলছিল ঠিক সেসময় বেঁচে যাওয়া খাওয়ারিজ নেতা আব্দুর রহমান ইবনে মুরাদি এক আত্নঘাতি হামলা চালায়। কুফায় জুম্মার নামায় পড়ার সময় বিষমাখা তরবারি দিয়ে আঘাত করেন চতুর্থ  খলিফা হয়রত আলীকে।

আহত হবার দুইদিন পর মারা যান খুলিফায়ে রাশিদীনের শেষ খলিফা হয়রত আলী। তখন তার বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। খলিফা আলী ক্ষমতায় ছিলেন মাত্র ৪ বছর ৯ মাস।

মৃত্যুর আগে বড় ছেলে হাসানকে পরবর্তী খলিফা নির্বাচিত করে যান হয়রত আলী। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসের মাথায় বাধ্য হয়ে চুক্তি করে খেলাফত হস্তান্তর করেন মুয়াবিয়ার কাছে। ইসলামের নুতন খলিফা হন মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান। ইসলাম মোড় নেয় নতুন এক সংকটের দিকে।

আর এভাবেই শেষ হয় ইসলামের স্বর্নযুগ নামে খ্যাত খুলাফায়ে রাশিদুনের ২৯ বছরের যুগ। 

পারভেজ সেলিম

লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী

আরো পড়ুন :

৯৫ thoughts on “কিভাবে প্রথম চার খলিফা নির্ধারিত হলেন ?

  1. I’ve been exploring for a little bit for any high-quality articles or blog posts in this kind of space . Exploring in Yahoo I at last stumbled upon this web site. Reading this info So i’m glad to show that I have a very good uncanny feeling I found out exactly what I needed. I so much definitely will make certain to don?t forget this site and give it a look on a continuing basis.

  2. Pingback: sudoku
  3. My coder is trying to persuade me to move to .net from PHP. I have always disliked the idea because of the expenses. But he’s tryiong none the less. I’ve been using Movable-type on several websites for about a year and am worried about switching to another platform. I have heard very good things about blogengine.net. Is there a way I can transfer all my wordpress content into it? Any kind of help would be really appreciated!

  4. Good day I am so thrilled I found your blog page, I really found you by mistake, while I was searching on Google for something else, Regardless I am here now and would just like to say kudos for a incredible post and a all round exciting blog (I also love the theme/design), I dont have time to read through it all at the minute but I have saved it and also included your RSS feeds, so when I have time I will be back to read much more, Please do keep up the excellent jo.

  5. First off I want to say fantastic blog! I had a quick question in which I’d like to ask if you don’t mind. I was curious to know how you center yourself and clear your mind before writing. I have had a tough time clearing my mind in getting my thoughts out. I do enjoy writing but it just seems like the first 10 to 15 minutes are wasted just trying to figure out how to begin. Any suggestions or tips? Thank you!

  6. Hey there! I realize this is kind of off-topic but I had to ask. Does running a well-established blog like yours take a lot of work? I’m completely new to operating a blog but I do write in my diary everyday. I’d like to start a blog so I can share my experience and thoughts online. Please let me know if you have any suggestions or tips for new aspiring bloggers. Appreciate it!

  7. Хотите получить идеально ровный пол в своей квартире или офисе? Обращайтесь к профессионалам на сайте styazhka-pola24.ru! Мы предоставляем услуги по устройству стяжки пола в Москве и области, а также гарантируем быстрое и качественное выполнение работ.

  8. Ищете профессионалов для устройства стяжки пола в Москве? Обратитесь к нам на сайт styazhka-pola24.ru! Мы предлагаем услуги по залитию стяжки пола любой сложности и площади, а также гарантируем быстрое и качественное выполнение работ.

  9. Хотите получить идеально ровный пол без лишних затрат? Обратитесь к профессионалам на сайте styazhka-pola24.ru! Мы предоставляем услуги по стяжке пола м2 по доступной стоимости, а также устройству стяжки пола под ключ в Москве и области.

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x