রামায়ণ: আদিপুরুষের হাজার বছরের গল্প


পারভেজ সেলিম

পারভেজ সেলিম ।।


কয়েক হাজার বছর ধরে আমাদের গল্প শোনাচ্ছে ‘রামায়ণ’। ারো কাছে এসব ধর্মের কথা, কারো কাছে ইতিহাস, কারো কাছে এটি মিথ বা পুরাণের গল্প। 

‘রামায়ণ’ প্রথমে লিখিত আকারে ছিল না। কয়েকশ বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে এই গল্প প্রচলিত ছিল। যখন লেখা আবিস্কার হয়েছে তখন তাকে প্রথমে সংস্কৃত ভাষায়, পরে অন্য অনেক ভাষায় লিখা হয়। তাই এর সঠিক জন্মকাল বের করা আপাতত অসম্ভব। খ্রি.পূর্ব চতুর্থ শতকে এটি রচিত হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। 

তবে হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুয়াযী এটি ত্রেতাযুগের বা ১৩ লক্ষ বছর আগের পৌরাণিক গল্প। হাজার হাজার বছর ধরে এই গল্প মানুষের মুখে মুখে চলে এসেছে। তাই এই গল্পের কয়েকটি আলাদা আলাদা ভার্সন বা রুপান্তর পাওয়া যায়। অনেক পরে এটিকে লিখিত আকার দেয়া হয়।

রামায়ণের সবচেয়ে পুরাতন যে লিখিত রুপটি পাওয়া যায় সেটি এগারোশ শতাব্দীর লেখা। মাত্র এক হাজার বছর আগের। 

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং প্রচলিত সেটি বাল্মিকীর ‘রামায়ন’। চতুর্দশ শতকের দিকে কৃত্তিবাস ওঝা সংস্কৃত থেকে প্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন “রামায়ণ। এরপরই বাংলায় তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রামায়ণ। রামায়ণে আছে ৫০ হাজার পঙক্তি, বোঝা যায় বেশ বড়সড় একটা বই।

কে এই রাম ?

ধারণা করা হয় ঋষি বাল্মিকী খ্রি.পুর্ব চারশ থেকে দুইশ শতকের কোন এক সময় ‘রামায়ণ’ রচনা করেন। ধারণা করা হয় এর প্রধান চরিত্র রাম ছিলেন ৭০০-৮০০ খ্রি.পূর্বে জন্ম নেয়া একজন রাজা। এই রাজার জীবনের গল্পই বলা হয়েছে পুরো রামায়ণ জুড়ে। 

তবে বাল্মিকীর ‘রামায়ণে’র কয়েকশ বছর আগে লেখা বৈদিক সাহিত্য ‘ব্রাহ্মনীতে’ও পাওয়া যায় রামায়ণের নানা চরিত্রের নাম। তাই কেউ কেউ মনে করেন ‘রামায়ণ’ লেখার অনেক আগে থেকে এই গল্পগুলো প্রচলিত ছিল।

রাম হিন্দুদের দেবতা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত তবে অন্য ধর্মের গুরুত্বপুর্ন পুরুষও য়েছেন রাম যেমন বৌদ্ধ ধর্মের মধ্যে রামের অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়। জৈন ধর্মেও রাম গুরুত্বপূর্ণ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ‘রামায়ণে’র ভিতরের গল্পটা কি ?

রামায়ণের গল্প :

কোসালা রাজ্যের এক রাজা ছিলেন, যার নাম দশরথ। অযোধ্যা ছিল সেই রাজ্যের রাজধানী। রাজা দশরথ দীর্ঘদিন ছিলেন সন্তানহীন। তার ছিল তিন স্ত্রী। পুত্রের আশায় এক মহা যজ্ঞের আয়োজন করলে তার কামনা পুরুন হয়। 

প্রথম স্ত্রী কোসাইল্লার গর্ভে জন্ম নেয় প্রথম পুত্র সন্তান রাম। অন্য স্ত্রী কাইকাই এর গর্ভে জন্ম নেয় আরেক পুত্র ভরত আর স্ত্রী সুমাত্রার গর্ভে জন্ম নেয় জমজ দুই ভাই লক্ষণ ও শত্রুঘ্ন। তার মানে রাম-লক্ষণেরা তিন মায়ের চার সন্তান।

বিশ্বমিত্র নামের এক ঋষি একবার তার আশ্রমে রাক্ষসদের উৎপাত ঠেকাতে সাহায্য চাইতে আসে রাজা দশরথের কাছে। রাম ছিলেন তীর-ধনুক চালানোয় পারদর্শী এক রাজপুত্র। ঋষি বিশ্বমিত্রকে সাহায্যের জন্য রাজা দশরথ নিজ পুত্র রামকে পাঠিয়ে দেন রাক্ষসদের বধ করতে। 

ষোল বছরের রামকে  সহায়তা করার জন্য সাথে যুক্ত হয় ছোট ভাই লক্ষণ। রাম লক্ষণ দুই ভাই মিলে বিশ্বমিত্রের আশ্রমের সকল রাক্ষসকে হত্যা করেন। আর ঠিক সেখানেই রামের সাথে সাক্ষাৎ হয় গল্পে অন্যতম প্রধান চরিত্র সীতার সাথে।

রাম-সীতার বিয়ে : 

সে সময় মিথিলার রাজা ছিলেন জনক। তিনি ছিলেন নি:সন্তান। একদন জি চাষ করে গিয়ে এক শিশুকন্যাকে দেখতে পান মাঠের ভিতর। তিনি সেই কুড়িয়ে পাওয়া কণ্যাটিকে ঈশ্বরের উপহার হিসেবে লালন পালন করতে থাকেন। নাম রাখেন সীতা। সীতা বড় হলে তার বিবাহের জন্য স্বয়ম্ভরের ব্যবস্থা করেন রাজা।

সেই স্বয়ম্ভর অনুষ্ঠানে রাম ও লক্ষণকে নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন ঋষি বিশ্বামিত্র। রাজা জনক সেই সভায় সীতাকে বিয়ের একটি শর্ত দিয়েছিলেন। দেবতা শিবের দেয়া একটি ধনুকে যে গুন বা তান সংযোজন করতে পারবে তার হাতেই মেয়েকে তুলে দেবেন তিনি।

উপস্থিত সকলের মধ্যে শুধুমাত্র রাম ধনুকে গুন লাগাতে সক্ষম হন এবং পরে তীর ছোঁড়ার সময় এমনভাবে টান দেন যে সেটি ভেঙ্গে যায়। রাজা খুশি হন এবং সীতার সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ের পর রাম-সীতা অযোধ্যায় চলে আসেন।

খুব সহজ সাদামাটা গল্প। খুব সহজেই রাম-সীতার বিয়ে হয়ে যায়। এই পর্যন্ত গল্পে কোন ক্লাইমেক্স নাই। নাই কোন ট্রাজেডি। কোন জটিলতা ছাড়াই হয়ে যায় গল্পের নায়ক নায়িকার মিলন বা বিয়ে। বিপত্তি শুরু হয় বিয়ের বারো বছর পর থেকে। গল্পেরও আসল সূচনা এখান থেকেই।

রাম -সীতার বনবাস :

বারো বছর পর পিতা দশরথ পুত্র রামের হাতে তুলে দিতে চাইলেন তার কোসালা রাজ্য। গল্পের টুইস্ট শুরু এখান থেকেই। পারিবারিক রাজনীতি ও কলহের সূত্রপাত। 

রানী কাইকাইকে ভৃত্য মন্ত্রা বোঝাতে স্ষম হেন যে, তার পুত্র ভরত, রামের চাইতে ভালো রাজা হবার যোগ্য তাই রাম নয় ক্ষমতা পাওয়া উচিত ভরতের। 

এই কথা যখন কাইকাই এর মাথায় ঢুকলো তখন তিনি গেলেন রাজা দশরথের কাছে। গিয়ে রাজাকে মনে করেই দিলেন কয়েক বছর আগে করা প্রতিজ্ঞার কথা। 

প্রথমে দশরত বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু রাজার দেয়া প্রতিজ্ঞাতো আর ভঙ্গ করা যায় না। তাই অনেক আগের প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী পুত্র ভরতকে তার রাজ্যের রাজা বানিয়ে দিলেন এবং রামকে বনবাসে পাঠালেন ১৪ বছরের জন্য। 

রাম-সীতা সাথে প্রিয় ছোট ভাই লক্ষণ রাজ্য ছেড়ে  চলেন গেলেন গভীর জঙ্গলে যার নাম দন্ডকারণ্য।

সীতার অপহরণ :

দন্ডকারণ্যের জংগলের পঞ্চবটি বনে প্রথম দশ বছর সুখেই কাটছিল রাম সীতার জীবন। সেখানে বিরাদাকে হারিয়ে দিয়ে রাম জয় করেন এক জাদুকরি ধনুক যার তীর কখনো ফুরায় না। 

আর এই জঙ্গলেই তার বন্ধুত্ব হয় এক শকুন জাতীয় পাখির সাথে যার নাম জটায়ু। জটায়ু তাদের কথা দেয় যে যখন রাম-লক্ষণ শিকার করতে বের হবে সেসময় সর্বক্ষণ সে সীতাকে দেখে রাখবে। বনে জঙ্গলে সুখেই কাটছিল তাদের দিন কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন টিকলো না।

একদিন রাক্ষস রাজা রাবণের বোন শুর্পনখা বনে গিয়ে রাম-লক্ষণকে দেখতে পেলেন এবং রামের প্রেমে পড়ে গেলেন। 

সুন্দরী রমনী সেজে তাদের ভুলাতে চালেন কন্তু ব্যর্থ হলেন। রেগে গিয়ে সীতাকে খেয়ে ফেলতে চাইলে লক্ষণের আঘাতে সেই আহত হয়। 

এই খবর চলে যায় ভাই রাবণের কাছে। বোনের অপমান সহ্য করতে না পেরে, রাবণ ১৪ হাজার জনের বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে আক্রমণ করে রামের এলাকা।

কিন্তু রামের সেই জাদুকরি এক তীরের কাছেই পরাজিত হয় রাবণের বাহিনী। কিন্তু রাবণ তো হেরে যাবার পাত্র নয়। সে রামের সবচেয়ে দূর্বল জায়গায় আঘাত করতে চাইলেন। করলেন এক মহাপরিকল্পনা।

রামের প্রিয়তমা স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে নিজের রাজ্যে বন্দি করে রাখবেন। কিন্তু কিভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন এ নিয়ে দু:চিন্তায় পড়ে যান রাবণ। 

শেষে সীতাকে অপহরণ করতে ছলনার আশ্রয় নেয় রাক্ষস রাজা। তাকে সাহায্য করে মারীচ নামের আরেক মায়াবী রাক্ষস।

পরিকল্পনা অনুযাযী মারীচ একদিন স্বর্ণরঙা হরিণের রুপ ধারণ করে সীতার সামনে যায়। সীতা হরিণকে দেখে খুব পছন্দ করে ফেলে কিন্তু ধরতে চেষ্টা করেও ধরতে পারেনা। শেষ পর্যন্ত রামের কাছে আবদার করে সুন্দর হরিণটিকে তাকে ধরে এনে দিতে।

রাম একদিন সেই স্বর্নরঙা হরিণ শিকারে বের হয়। পরে রামের চিৎকার শুনে লক্ষণও গৃহ থেকে বের হয়ে যায়। এসময় বাসায় সীতা একা হয়ে পড়ে। 

এসময় বাড়ি ফাঁকা পেয়ে ঋষির ছদ্দবেশে সীতার কাছে আসে ভিক্ষা চাইতে আসে রাবণ। 

 বাড়ির সীমানার বাইরে এসে সীতা ভিক্ষা দিতে চাইলে রাবণ তার সল রুপে ফিরে আসে এবং সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। 

পাখি জটায়ু একাই যুদ্ধ করে সীতাকে রক্ষা করতে চায় কিস্তু পারেনা।   আহত হয়েও শেষ পর্যন্ত রাম লক্ষণের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

অপহরণের সময় সীতা আর কোন উপায় না দেখে রাস্তায় তার গহনা ফেলতে ফেলতে যেতে থাকে। এদিকে রাম-লক্ষণ হরিণ শিকার করে ফিরে এসে দেখে জটায়ু আহত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। পরে সবিস্তারে জানতে পারে সীতা অপহরণের কাহিনী।

রামের লঙ্কা আক্রমণ :

রাম লক্ষণ দুই ভাই শপথ নেয় রাবণের রাজ্য থেকে সীতাকে উদ্ধার করবে। সহযোগিতা নেয় বানরদের রাজা সুগ্রীবের। প্রথমে সুগ্রীব একটু দ্বিধায় ছিল যে তারা মানুষদের বিশ্বাস করবে কিনা কিন্তু তার সেনাপতি হনুমানের কথায় আশ্বস্ত হয়ে রাজি হয় সীতা উদ্ধারে রামকে সহায়তা করতে।

বানররা তাদের সাথে যুদ্ধে যাবে কিন্তু সমস্যা হলো সেসময় ছিল বর্ষাকাল। কোথায় খুঁজবে তারা সীতাকে। পরে তারা জটায়ুর সাহায্যে জানতে পারে যে সীতাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে লংকায়। 

সত্যতা যাচাই এর দায়িত্ব নেয় হনুমান। হনুমান শুধু এক বৃদ্ধ বানরই নন তিনি হচ্ছে বায়ুদেবতার সন্তান। তাই হনুমান সীতার অবস্থান জানতে উড়ে উড়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যায লংকায়।

হনুমান গিয়ে দেখতে পায় লংকার অশোকা বাগানে একটি গাছের নিচে সীতাকে আটকে রাখা হয়েছে। এসময় সে আরো দেখতে পায় যে, রাবণ বাগানে ঢুকছে এবং সীতার সাথে বাকবিতন্ডা হ্ছে। 

রাবণ তাকে বিয়ে করার জন্য দুইমাস সময় দেয় সীতাকে। যদি সে রাজি না হয় তাহলে তাকে টুকরো টুকরো করে রান্না করে খেয়ে ফেলবে বলে হুমকি দেয় রাবণ।

রাবণের এই হুংকার শুনে সীতা বিমর্ষ হয়ে পড়ে এবং আত্নহত্যার চিন্তা করেন। এমন সময় হনুমান গাছের আড়াল থেকে বের হয় সীতার সামনে আসে এবং জানায় রাম তাকে পাঠিয়েছে সাহায্যের জন্য। 

কিন্তু সীতা হনুমানের কথা বিশ্বাস করে না, মনে করে এটা রাবণেরই আরেক রুপ। চেহারা বদল করে আবার তাকে ধোকা দিতে চাচ্ছে। 

এবার হনুমান তাকে প্রমাণ স্বরুপ রামের ব্রেসলেট দেখায় এবং তার সাথে পালিয়ে যেত বলে। সীতা তাতে রাজি হন না। বলেন তাকে একমাত্র রামই উদ্ধার করতে পারে অন্য কেউ নয়। হনুমান এই খবর নিয়ে ফিরে যায় রামের কাছে। রাম খুশি হয় একথা জেনে যে তার স্ত্রী এখনও বেঁচে আছে। রাম যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতি  শুরু করেন।

রাম -রাবণের যুদ্ধ :

হনুমান বিশাল সৈন্যদল তৈরি করে লংকা আক্রমণের জন্য। রাম -লক্ষণ- হনুমান ও তাদের সৈন্যদল নিয়ে বিশাল এক যুদ্ধে লিপ্ত হয় রারণের বিরুদ্ধে । সে এক বিশাল যুদ্ধ। ই যদ্ধের কাহিনীও বিশাল। রাবণের ভাই বিভিষণ বিশ্বাসঘাতকতা করে রামের সাথে যুক্ত হয়। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত রামের জাদুকরী তীরের আঘাতে রাবণ মারা যায়। সীতাকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করে আনেন রাম। বিজয় হয় রামের। শেষে রাম-সীতার আবারো মিলন হয়।

গল্প এখানেই শেষ হবার কথা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বড় ধরনের টুইস্ট শুরু এর পর থেকে। রাম-সীতার ভালোবাসার গল্প মোড় নেয় নতুন এক অধ্যায়ে।

সীতার অগ্নিপরীক্ষা :

দীর্ঘদিন রাক্ষসের ঘরে থাকা সীতার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয় রাম রাজ্যে। রাম সীতাকে বলে ‘আমি আমার শক্রকে পরাজিত করেছি যে আমার সামর্থ্যকে তিরস্কার করেছিল, শুধু তোমার জন্য এত বড় যুদ্ধ আমি করিনি, এই যুদ্ধ ছিল আমার পরিবারের সম্মানকে মহিমান্বিত করার জন্য’।

শুধু তাই নয় রাম আর বলেন, ‘তোমাকে দেখাও এখন আমার পাপ। যে নারী দীর্ঘ একবছর পরপুরুষের কাছে থাকে তাকে কোন সম্মানিত পুরুষের পক্ষেই ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়’।

কিন্তু সীতা এই মিথ্যা অপবাদের প্রতিবাদ করেন। নিজের সতীত্ব প্রমাণ দেবার জন্য প্রস্তুত হন। তিনি যে এক বছর যে কোন ধরনের অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি তার প্রমাণ দিতে কোন আপত্তি নাই। শুরু হয় সীতার অগ্নি পরীক্ষা। 

লক্ষণের দেয়া আগুনে শুরু হয় সীতার সতীত্ব পরীক্ষা। সীতা যে সতী, সে যে রাবণকে তার শরীর স্র্শ রতে দেয়নি তা প্রমানিত হয় যায় যখন সীতা অগ্নি পরীক্ষায় পাশ করেন।

রাম খুশি হয়  পুরো রাজ্য জুড়ে আনন্দ শুরু হয়। রাম লাফাতে লাফাতে বলেন, ‘আমি জানতাম সীতা সতী, তার গর্ভের সন্তান আমরাই সন্তান, অন্যকারো অবৈধ সন্তান নয়’।

স্বর্গ থেকে দেবী সারতা সীতাকে বলে  তিন যেন রামকে ক্ষমা করে দেন। কারণ  রাম যা করছে তা তাকে করতে হতো। প্রত্যেকটি মানুষের কিছু দায়িত্ব আছে সবার প্রতি যেমনটি রামের আছে তার প্রজাদের প্রতি।

এছাড়া রাম দেবী সারতাকে বলে কাইকাইকে ক্ষমা করে দিতে সে রাজি হয়। দেবতা ইন্দ্রকে রাম অনুরোধ করেন লংকার যুদ্ধে যে সকল বানর মারা গেছে তাদের যেন প্রাণ ফিরিয়ে দেয়া হয়। ইন্দ্র রাজি হয় এবং সকল নিহত বানরা জীবিত হয়ে ওঠে। 

এরপর রাম অযোদ্ধায় ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত অযোদ্ধার রাজা হন তিনি এবং পরবর্তী দশ হাজার বছর অযোদ্ধা শাসন করে রাজা রাম। মোটা দাগে এই হচ্ছে রামায়ণের কাহিনী। 

রামায়ণের পরের গল্প : 

এরপরে আরো একটি অংশে যুক্ত হয় ‘রামায়ণে’। সেটি বাল্মীকীর রচনা কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। সেখানে সীতাকে আবারো বনবাসে পাঠানো হয়। 

কারণ অগ্নিপরীক্ষা দেবার পরও অযোধ্যা রাজ্য জুড়ে সীতার সতীত্ব নিয়ে নানা গুঞ্জন চলে। এসব শুনে রাম বিচলি হয়ে সীতাকে আবারো ববাসে পাঠায়।

বনবাসেই জন্ম নেয় রামের দুই জমজ পুত্র কুশ ও লব। আর এই বনবাসেই সীতার দেখা হয় ঋষী বাল্মিকীর সাথে। ঋষী সীতার জীবনের পুরো গল্প শোনেন। তার দু:খে দু:খী হন। রাম সীতার মিলিয়ে দেবার পণ করেন।

রামের এক বিশাল যজ্ঞে ঋষী বাল্মিকী কুশ ও লব কে নিয়ে যান। সেখানে লব ও কুশ গান গেয়ে শোনায়। গান শুনেই রাম তার সন্তানদের চিনতে পারলে ঋষি সীতাকে রামের সামনে নিয়ে যায। 

কিন্তু রাম আবারো সকলের সামনে সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বললে সীতা অপমানিত বোধ করেন। অপমান সইতে না পেরে  তিনি ধরীত্রিকে বলেন ভাগ হয়ে যেতে। তার কথায় মাটি বিদীর্ন হয়ে যায়। অপমানে, শোকে, রাগে সীতা মাটি ভেদ করে পাতালে চলে যান।

এরপর রাম তার ভূল বুঝতে পারে। কুশ ও লব তারই বৈধ সন্তান হিসেবে রাজ্যের ভার সন্তানদের হাতে দিয়ে রাখলাম ড়সরযু নদীতে আত্নবিসর্জণ দেন। এভাবেই শেষ হয় রামায়ণের গল্প।

রামায়ণের নায়ক কে ?

কিন্তু এই গল্পের নায়ক কে? সহজ উত্তর হচ্ছে রাম। কারণ রামায়ণে দেখা যায় রাম একজন অনুগত বিশ্বস্ত, দায়িত্ববান সন্তান।একজন প্রেমিক। স্বামী, যত্নশীল ভাই এবং একজন শক্তিশালী যোদ্ধা। রাম তাই একজন বিজয়ী নায়ক। অনেকেই হয়ত এর সাথেই একমত হবেন ।

তবে আমার মনে হয় সীতাই এই গল্পের প্রধান চরিত্র। কারণ সীতাই রামের ধর্ম পালনে সহায়তা করেছে। নিজেকে কন বিলিয়ে দেয় নাই এমনকি রাবণ যখন তাকে কেটে টুকুরো করে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল তখনও নয়। এমনকি হনুমাণ যখন তাকে লংকা থেকে নিয়ে আসতে চেয়েছিল তখনও তার সাথে আসেনি বলেছিলেন, রামের ধর্ম পূরণ করতে হবে তাই রামকেই এসে উদ্ধার করতে হবে তাকে।

রামের ধর্মকে পরিপূর্ণ করেছে সীতা। তিনি এতটাই পূর্নবতী ছিলেন যে সতীত্বের প্রমাণের জন্য আগুনে ঝাঁপ দিতে পিছপা হননি তিনি। আগুনের দেবতা তাকে রক্ষা করেছে। দেবতারা  নায়কদের বাঁচিয়ে দিয়ে তাকে মহিমান্নিত করে। 

এছাড়া হনুমাণ এবং লক্ষণকেও দেখা যায় তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করে কাজ করে যেতে। তারাও এই রামায়ণের নায়ক হতে পারে। আর বারণও এই গল্পের একটি বড় চরিত্র, তাই হয়ত মাইকেল মধুসূদনের কাছে রাবণই নায়ক। মেঘনাধবদ কাব্য তাই রাবণ এক দেশপ্রেমিক, সন্তানবস্যল্য রাজা।

শেষ কথা :

সাতটি কান্ডে বিভক্ত রামায়ণের গল্প। সেই কান্ডের নামগুলোও বেশ সুন্দর আদিকান্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকান্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকান্ড, সুন্দরকান্ড, লঙ্কাকান্ড ও উত্তরকান্ড। নাম থেকে কোন অধ্যায়ের কোন গল্প আছে তার আন্দাজ করা যায়।

রামায়ণ শুধুই একটি গল্প বা কাহিনী নয়। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ি রামায়ণ পাঠে এবং শ্রবণে পাঠক ও শ্রোতা দুজনেই পাপমুক্ত হয়। 

মানুষের সম্পর্কের মধ্যে যে দায়িত্ব আছে, কর্তব্য আছে তা কিভাবে পান করতে য় তারই শিক্ষা আছে এই ‘রামায়ণে’। 

হাজার হাজার বছর ধরে ধর্মে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী অনেকের কাছে এই কাহিনী একটি বিশাল শিক্ষার ভান্ডার। শুধু কাহিনী হিসেবেও এক মজবুত গাঁথুনী দিয়ে তৈরি এই গল্প। তাই হয়ত কয়েক হাজার বছর ধরে একই গল্প শোনার পরও মানুষের কাছে তা পুরনো হয় না। প্রকৃতির মতো বয়ে চলছে আদিপুরুষের এই গল্প, কাল থেকে কালান্তরে।


পারভেজ সেলিম

পারভেজ সেলিম

লেখক,সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকমীর


আরো পড়ুন :

২৯৩ thoughts on “রামায়ণ: আদিপুরুষের হাজার বছরের গল্প

  1. Hey there would you mind stating which blog platform you’re working with? I’m planning to start my own blog in the near future but I’m having a difficult time choosing between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal. The reason I ask is because your design and style seems different then most blogs and I’m looking for something completely unique. P.S My apologies for getting off-topic but I had to ask!

  2. Today, I went to the beachfront with my children. I found
    a sea shell and gave it to my 4 year old daughter and
    said “You can hear the ocean if you put this to your ear.” She placed the shell to her ear
    and screamed. There was a hermit crab inside and it pinched her ear.
    She never wants to go back! LoL I know this is completely off topic but I
    had to tell someone!

  3. Undeniably imagine that which you stated. Your favourite
    reason appeared to be on the web the simplest thing to bear in mind of.
    I say to you, I certainly get irked at the same time as people think about worries that
    they just don’t understand about. You controlled to hit the nail upon the highest and outlined out the entire thing
    without having side-effects , folks can take a signal.
    Will probably be back to get more. Thanks

  4. Undeniably imagine that which you said. Your favorite reason seemed
    to be at the web the simplest factor to be mindful of. I
    say to you, I definitely get annoyed whilst other people think about worries that they just don’t realize about.
    You managed to hit the nail upon the top and also outlined out the whole thing without having side effect , other people can take a signal.
    Will likely be back to get more. Thanks

  5. Howdy I am so glad I found your site, I really found you by error, while I was researching on Askjeeve for something else, Regardless I am here now and would just like to say thank you for a marvelous post and a all round interesting blog (I also love the theme/design), I don’t have time to go through it all at the minute but I have book-marked it and also added in your RSS feeds, so when I have time I will be back to read a lot more, Please do keep up the superb job.

  6. I don’t know if it’s just me or if everyone else experiencing problems with your website. It looks like some of the text on your posts are running off the screen. Can someone else please comment and let me know if this is happening to them too? This might be a problem with my web browser because I’ve had this happen before. Appreciate it

  7. Не знаете, какой подрядчик выбрать для устройства стяжки пола? Обратитесь к нам на сайт styazhka-pola24.ru! Мы предоставляем услуги по залитию стяжки пола любой площади и сложности, а также гарантируем высокое качество работ и доступные цены.

  8. Хотите получить идеально ровные стены в своем доме или офисе? Обратитесь к профессионалам на сайте mehanizirovannaya-shtukaturka-moscow.ru! Мы предлагаем услуги по механизированной штукатурке стен любой сложности и площади, а также гарантируем качество работ и доступные цены.

  9. Greetings I am so happy I found your site, I really found you by error,
    while I was searching on Google for something else, Anyhow
    I am here now and would just like to say thanks for a fantastic post and
    a all round interesting blog (I also love the theme/design), I don’t have time to
    read it all at the moment but I have bookmarked it and also
    added your RSS feeds, so when I have time I will be back to read more, Please do keep
    up the fantastic job.

  10. Pingback: valorant wallhack
  11. I’ve been exploring for a little for any high-quality articles or blog posts in this kind of space . Exploring in Yahoo I eventually stumbled upon this web site. Reading this info So i’m glad to show that I have a very just right uncanny feeling I found out exactly what I needed. I such a lot certainly will make certain to don?t overlook this site and give it a look on a continuing basis.

  12. THE ONE CARGO นำเข้าสินค้าจากจีน สั่งของจากจีน ด้วยการแชร์ตู้ ทางลูกค้าจะได้อัตราค่านำเข้าที่ต่ำสุดเหมือนเป็นรายใหญ่ ลูกค้าสั่งซื้อสินค้าเองและส่งสินค้าเข้าโกดังของเราที่จีน ทางเราจะจัดการนำเข้าและจัดการเรื่องภาษีนำเข้า ส่งถึงมือลูกค้าถึงที่อยู่ปลายทางในประเทศไทย

  13. I have been exploring for a bit for any high-quality articles
    or blog posts on this sort of house . Exploring in Yahoo I ultimately
    stumbled upon this web site. Studying this information So i’m glad to show that I’ve a very excellent uncanny feeling
    I discovered exactly what I needed. I most unquestionably will make sure to do not overlook this web site and give it
    a glance on a constant basis.

  14. снится парень и его друг сниться
    кладбище и дата смерти своей тату паук значение для девушек,
    тату паук с крестом значение
    когда старый новый год 2024, старый новый год с 13 на 14
    ангелит кому подходит по знаку зодиака

  15. There are definitely a variety of details like that to take into consideration. That may be a nice point to bring up. I supply the thoughts above as normal inspiration however clearly there are questions like the one you deliver up where the most important factor will likely be working in sincere good faith. I don?t know if best practices have emerged round issues like that, however I am sure that your job is clearly identified as a good game. Each girls and boys really feel the affect of only a moment抯 pleasure, for the rest of their lives.

  16. миллион лет до нашей эры 2004 2014 жылдан бастап бала туу, қазақстан қандай
    демографиялық саясатты ұстанады россия украина новости, евроньюс война на украине мальцева гинеколог
    кызылорда, узи мягких тканей кызылорда

  17. биік деген не, рухын сынбасын эссе
    15 сәуір ғашықтар күні сценарий, 15 сәуір қандай күн аллахумма барик
    перевод, аузу би-калимати лляхи таммати мин шарри на арабском как попасть в женский монастырь в алматы, монастырь в горах алматы

  18. Я хотел бы поблагодарить автора этой статьи за его основательное исследование и глубокий анализ. Он представил информацию с обширной перспективой и помог мне увидеть рассматриваемую тему с новой стороны. Очень впечатляюще!

  19. Needed to put you this little observation to be able to give many thanks yet again for these beautiful solutions you’ve featured on this website. It is certainly tremendously open-handed of you to provide without restraint just what a lot of folks would have supplied as an electronic book to get some money on their own, precisely given that you might well have done it if you considered necessary. The good ideas also worked as a easy way to be sure that most people have the identical zeal really like mine to see great deal more with respect to this problem. I’m sure there are numerous more pleasant sessions up front for many who read carefully your blog.

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x