
পারভেজ সেলিম ।।
শ্রীলংকা বর্তমানে উৎকন্ঠা, আশংকা এবং আতংকের দেশ। অন্ততো বাংলাদেশের মানুষের কাছে, বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া দেশটির নাম শ্রীলংকা। অনেকে বাংলাদেশের সাথে দেশটির মিল খুজে পাচ্ছেন, অনেক বলছেন তার উল্টোটা।
আর দেশের সরকার সমর্থকরা ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলছে বাংলাদেশ আর শ্রীলংকা এক নয়!! তা তো নয়ই। বাংলাদেশের চেয়ে সবদিকে এগিয়ে থাকা দেশটি কেন এত দ্রুত পতনের দিকে গেল তা নিয়ে ভাবতেও রাজি নন কেউ কেউ। কিন্তু আসলে কি ভয় লাগার মতো কিছু হয়েছে শ্রীলংকায়?
কি হয়েছে শ্রীলংকায়?
এক সময়ের দোদন্ড প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী জনরোষ থেকে কোন রকমে পালিয়ে বেঁচেছেন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার বাসভবন। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছিলেন এই প্রধানমন্ত্রী, মাহেন্দ্র রাজাপাকসে। নায়ক খুব দ্রুতই খলনায়কে পরিনত হয়েছেন শ্রীলংকায়।
সরকারের সকল মন্ত্রী পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করেছেন তবুও বিভোক্ষ থামেনি। জরুরী অবস্থা জারির পরও নিয়ন্ত্রণে নেই পরিস্থিতি। শেষ পর্যন্ত কারভিউ জারি হয়েছে দেশটিতে।
রাজনীতিবিদদের গণপিটুনী দিয়ে বিবস্ত্র করেছে জনগন। একজন মন্ত্রী বিভোক্ষকারীকে গুলি করার পর সেই পিস্তল দিয়ে সেখানেই আত্নহত্যা করেছেন তিনি। কি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিকে যাচ্ছে দেশটি। তবু মন্দের ভালো এখন পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্য মাত্র ৭।

রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ ছাড়া সহিংসতা বন্ধ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বিরোধীরা কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এসেছেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির প্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে।
গত ১২ মে, ২০২২ তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছে ষষ্ঠবারের মতো। তবুও সংকট কাটেনি। রাষ্টপতি গোটাবায়ের পদত্যাগের আন্দোলন দিন দিন আরো বেগবান হচ্ছে।
সরকার পতন হলে নতুন সরকার হয়, কিন্তু একটা দেশের পতন হলে কি হবে তা কেউ জানেনা। শ্রীলংকায় একটা দেশের পতন দেখছে সবাই। এখন শুধু অপেক্ষার পালা কি হয়! কোন বিশেষ জাদুর কাঠিতে দেশটি আবার ঘুরে দাঁড়ায় নাকি সংকট আরো ভয়াবহ হয়! সময় ছাড়া কারো কাছে আসলে এর উত্তর নাই।
কেন এই পরিস্থিতি হলো!
এমন পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। জনগন একদিনে ফুঁসে ওঠেনি। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এমনটি হচ্ছিল দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে। শেষ তিন বছরে এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। করোনা মহামারি এবং সরকারের নেয়া কিছু অবিবেচক সিদ্ধান্ত শ্রীলংকাকে পথে বসিয়েছে।
বর্তমানে শ্রীলংকার নিজের টাকা এত কমে গেছে যে তারা বিদেশ থেকে কিছুই কিনতে পারছে না। অর্থনীতিতে যাকে বলে বৈদেশিক রিজার্ভ একেবারে শুণ্যের কোঠায়। দেশটির পাওনাদার বা ঋনের পরিমান এত বেড়ে গেছে যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে তারা। বলেছে কোনভাবেই ঋনের টাকা পরিশোধ করতে পারবে না দেশটি।
শ্রীলংকার ঋনের পরিমান হয়েছে তাদের জিডিপির ১১৯ শতাংশ। এর মানে হলো পুরো একবছরে শ্রীলংকা যে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে তার মোট মুল্যের চেয়ে ঋণের পরিমান বেশি।

টাকা না থাকায় কিছু কিনতে পারছেনা সরকার। ফলাফল তেল, বিদ্যুৎ, ঔষধ, খাদ্যপণ্য ঠিকঠাক কিছুই পাচ্ছেনা জনগন। দিনে ১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছাড়াই চলছে দেশটি। এছাড়া খাদ্যপণ্যসহ সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে ভয়াবহ। দাম উঠে গেছে অসহনীয় পর্যায়ে। ডলারের বিপরীতে শ্রীলংকান রুপি এখন ৩৭২, অথচ ফেব্রয়ারি মাসেও এর মুল্য ছিল ২০২ রুপি। আর ২০০৩ সালে ১ ডলার ছিল ৯৬ শ্রীলংকান রুপির সমান। কত দ্রুত সব কিছু ভেঙ্গে পড়ছে।
জনগনের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। রাস্তায় নেমে পড়েছে সবাই। বৌদ্ধ, মুসলিম, হিন্দু, তামিল কিংবা সিংহলিরা আজ এক কাতারে। তবু সমাধান খুব সহসায় হবে বলে মন হয় না।
কারণ শ্রীলংকার সংকট অনেক গভীরে। এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, এ সংকট রাজনৈতিক ও সামাজিক। খুব সহজে এর উত্তরণের সম্ভাবনা কেউ দেখছে না।
কেন এই অর্থনৈতিক সংকট?
করোনা : পর্যটনের সর্বনাশ
শ্রীলংকার মোট আয়ের একটা বড় অংশ (১২ শতাংশ) আসে পর্যটন খাত থেকে।
২০১৯ সালের ইস্টার সানডের সময় বড় ধরনের জঙ্গি হামলার শিকার হয় দেশটি। গির্জা ও তিনটি হোটেলে হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়। ব্যাপকভাবে বিদেশি পর্যটক কমতে শুরু করে দেশটিতে। তারপর হানা দেয় করোনা। দুবছরে ভয়াবহ ধ্বস নামে তাদের পর্যটন ব্যবসায়।
এরপর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে আবারও বিপর্যয় নেমে আসে। কারণ শ্রীলংকার বেশির ভাগ পর্যটকই রাশিয়ান। টানা কয়েক বছরে এমন পরিস্থিতিতে সর্বনাশের চুড়ান্তে চলে যায় দেশটি।
অর্গানিক ফুড: একরাতেই উল্টাপাল্টা
হঠাৎ করেই সকল প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার বন্ধ ঘোষণা করে শ্রীলংকান সরকার।
২০২১ সালের মে মাসে রাসায়নিক সার আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। দেশকে অর্গানিক ফুড উৎপাদনে নিয়ে যেতে চায় সরকার। সিদ্ধান্তটি খুবই ভালো। একটা দেশের উন্নতির লক্ষণ। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হয়েছে।
দেশের কৃষক এখনও প্রস্তুত হয়নি জৈব- উৎপাদন পদ্ধতিতে। কোন ধরণের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তে ব্যাপকহারে কমে যায় উৎপাদন। ধান উৎপাদন কমে যায় ২০ শতাংশ। আর এক বছরে চা রপ্তানী কমে যায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি।
করোনাকালীন সময় সেই দেশগুলো ভালো অবস্থানে ছিল, যাদের কৃষি উৎপাদন ভালো ছিল। শ্রীলংকা এসময় দেশীয় উৎপাদনের তলানীতে নেমে যায়।
ঋণ : জালে আটকে হাসফাঁস
সিঙ্গাপুর, মালেশিয়ার চাইতে আধুনিক উন্নত রাষ্ট্র বানানো জন্য বিশাল বিশাল প্রকল্প হাতে নেয় শ্রীলংকান সরকার। নিজেদের টাকা নয়, ঋনের টাকায় শুরু হয় এসব বড় প্রকল্প।
সেই বিশাল বিশাল প্রকল্পে শুরু হয় সীমাহীন দুর্নীতি। ফলাফল হয় ভয়াবহ। প্রকল্প গুলো মুখ থুবড়ে পড়ে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়।
হাম্বানটোটায় দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করে শ্রীলংকা। সেসময়ের রাষ্টপতি মাহেন্দ্র রাজাপাকসের নামে করা হয় নামকরণ। এর মোট বিনিয়োগের ৮৫ ভাগই করে চীন। প্রায় ৩১ কোটি ডলার ঋণ আসে চীন থেকে। বন্দরটি উদ্বোধন করা হয় ২০১০ সালে।
যেভাবে ভাবা হচ্ছিল সমুদ্রবন্দর থেকে সেরকম আশানুরুপ কোন আয় হচ্ছিল না। কিন্তু এটি চালু রাখতে ব্যয়ের পরিমান বাড়ছিল। পরিচালন ব্যয় মেটাতে আরো ৭০ কোটি ডলার ঋণ নেয় চীন থেকে।
সময় মতো সেই ঋণের টাকা শোধ করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে ১১০ কোটি ডলারের বিনিময়ে ৯৯ বছরের জন্য বন্দরটিকে চিনের কাছে লীজ দিতে বাধ্য হয় শ্রীলংকা।
সবচেয়ে সম্ভাবনাময সমুদ্র বন্দরটি এখন চীনের মালিকানায়। নিজের ভুখন্ড এখন অন্যের দখলে। চীন তাদের ঋণের জালে ভালোভাবে ফাঁসিয়ে দেয় দেশটিকে ।
শুধু তাই কলম্বোর সমুদ্রের ভিতর বিশাল শহর, মাত্তালা রাজাপাকসে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো বিশাল বিশাল প্রকল্পগুলো ঋণের টাকা করা এবং তা পুরোপুরি অলাভজনক প্রকল্পে পরিনত হয়।
তবে চীনই শ্রীলংকার প্রধাণ ঋণদাতা নয়। মোট ঋণের মাত্র ১০.৮ শতাংশ ঋণ চীন থেকে নেয়া। এছাড়া জাপান থেকে ১০.৯, এডিবি থেকে ১৪.৬ শতাংশ এবং আর্ন্তজাতিক সার্বভৌম বন্ড থেকে তারা নিয়েছে তাদের মোট ঋণের ৩৬.৪ শতাংশ।
এ বছর তাদের শোধ করতে হবে ৫০০ কোটি ডলার অথচ তাদের আছে মাত্র ২৩১ কোটি ডলার। একটি দেশের অর্থনীতির এক ভয়াবহ দুরব্স্থার প্রকাশ এর চাইতে আর কি হতে পারে।
কর ভ্যাট কমানো :
নির্বাচনে জেতার জন্য কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গোটাবায়া রাজাপাকসে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনে ৮ শতাংশে। ‘আর যত আয় তত কর’ এই নীতির বিলুপ্তি ঘোষণা করেন সরকার ।
ফলাফল এক বছরে সরকারের আয় কমে যায় ৫০ শতাংশ কিন্তু ব্যয় বেড়ে গেছে কয়েকগুন বেশি। সংকট সমাধানের কোন উপায়ই বের করতে পারেনি শ্রীলংকা।
তৈরি পোষাক, চা, রাবার, পর্যটন, রেমিটেন্স এই কয়েকটি খাত থেকেই আয় করতো দেশটি। তার সব কয়টিতে একসাথে ধ্বস নামায় অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে যায় দ্বীপ রাষ্ট্রটির।
দুর্নীতি ও লুটতরাজ: প্রধানতম সমস্যা
রাজাপাকসেরর পরিবার ও অন্যান্য সরকারগুলো ব্যাপক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল। বড় বড় প্রকল্প গুলো তারা যতটা দেশের উন্নয়নের আশায় নিয়েছিল, তা চেয়ে বেশি নিয়েছিল নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য। হাম্বারটোটায় সমুদ্র বন্দর ও জঙ্গলের মধ্যে যে বিমানবন্দর বানানো হয়, দুটোই বানানো হয় রাজাপাকসের পরিবারের নামে। এর সবগুলোই ‘সাদা হাতির প্রকল্পে’ পরিনত হয়েছে। বিমানবন্দর দিয়ে বিমান উঠানামা করে হাতে গোনা আর সমুদ্রবন্দরে তেমন কোন জাহাজই ভিড়েনা।
কোন দেশের বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ হলেই যেখানে বিপদসংকেত হিসেবে ধরা হয়, সেখানে শ্রীলংকার বাজেট ঘাটতি ১০ শতাংশ। সীমাহীন দুর্নীতি, সরকারের স্বজনপ্রীতি আর পরিবারতন্ত্রই এই সংকটকে আরো জটিল করে দিয়েছে।
বর্তমান অর্থমন্ত্রী চামাল রাজাপাকসে প্রেসিডেন্টের ভাই। সবাই তাকে চেনে ‘মিস্টার ১০ পার্সেন্ট’ নামে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা।
রাজনীতির সংকট: গৃহযুদ্ধ আর হিংসার উল্লাস
প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবসা বাণিজ্যে সমৃদ্ধি ছিল দ্বীপ রাষ্ট্রটি। ১৫০৫ সালে পর্তুগীজ এবং ১৭৯২ সালে ইংরেজদের দখলে চলে যায় শ্রীলংকা। ১৮১৫ সালে পুরোপুরি ব্রিটিশ শাসন চালু হয় দেশটিতে।
ব্রিটিশদের কাছ থেকে ১৯৪৮ সালে যখন স্বাধীনতা লাভ করে তখন দেশটির নাম ছিল সিলন।
১৯৭২ সালে সিলন থেকে শ্রীলংকা নাম ধারণ করে। সংবিধান পরিবর্তন হয়। প্রজাতন্ত্রে রুপ নেয় দেশটি। কিন্তু জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটি অমীমাংসিত থেকে যায়।

শ্রীলংকা মুলত দুটি জাতিসত্ত্বায় বিভক্ত। সিংহলী ও তামিল। দুপক্ষই মনে করে তারাই শ্রীলংকার আদিবাসী এবং প্রকৃত অধিবাসী। বর্তমানে ২ কোটির ২০ লাখ মানুষের মধ্যে সিংহলী ৭০ শতাংশ এবং তামিল ১১ শতাংশ। ১৯৪৮ সালে তামিল জনগোষ্ঠি মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ।
তামিলরা সবসময় নিজেদের বঞ্চিত ভেবে এসেছে। নিজেদের স্বাধীন একটি ভুখন্ডের আশায় সশস্ত্র বাহিনী গঠন ১৯৭৩ সালে। লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিলএলাম বা এলটিটিই নামের সংগঠনটি ধীরে ধীরে দেশের উত্তরাঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ২২ বছর বয়সী তরুণ ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণ আমৃত্যু নেতৃত্ব দেন এই সশস্ত্র সংগঠনটি।
আত্নঘাতি হামলার জন্য দ্রুতই ভয়ংকর হয়ে ওঠে এলটিটিই। দেশে বিদেশে ভীষণ বাধার মুখে পড়ে তাদের নৃশংস হত্যাকান্ডের জন্য।
১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা গৃহযুদ্ধের বলি হন। এলটিটিইদের আত্নঘাতি হামলায় নিহত হন শ্রীলংকান প্রেসিডেন্ট। একই ভাবে ১৯৯১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকেও হত্যা করে তারা। সারা বিশ্বে নেতিবাচক ইমেজ তৈরি হইলেও তামিলদের মাঝে প্রভাকরণ ছিলো তামিলদের অবিসংবাদিত নেতা। তারা ভিলুপ্লিলাইকে ‘সুর্যদেবতা’ হিসেবে সম্মান করতো ।
তামিলদের সাথে সরকারের অনেক কয়েকবার শান্তি আলোচনা শুরু হলেও তা ভেস্তে যায়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি এক গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দেশটি।
২০০৫ সালে ক্ষমতায় আসে মাহেন্দ্র রাজাপাকসে। সেনাবাহিনীর সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরু হয় এক রক্তাত্ব অপারেশন। ২০০৯ সালে ভিলুপ্লিল্লাই প্রভাকরণকে হত্যা করতে সমর্থ হয় শ্রীলংকান সেনাবাহিনী। সাথে ৪০ হাজার তালিম বিদ্রোহী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। সিংহলীদের বিজয় অর্জিত হয়, আর তামিলরা পরাজয় বরণ করে।
এসময়ে নৃশংস গণহত্যাকে অস্বীকার করে রাজাপাসের সরকার। ২৬ বছরের স্বাধীন ভুখন্ডের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে। ডুবে যায় তামিলদের স্বাধীন দেশের স্বপ্ন। সিংহলীরা বিজয় অর্জন করে। শ্রীলংকার নিজেদের একক সিংহলী জাতীয়তাবাদের অধিকারী ভাবতে শুরু করে। মাহেন্দ্র রাজাপাকসেকে জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যা দেয় সিংহলীরা। সিংহলী রাজার মতো সম্মান প্রদর্শণ শুরু করে প্রেসিডেন্টকে।
পরাজয়ের পর বাধ্য হয়ে তামিলরা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকের মতো জীবন যাপন করতেন থাকেন নিজ দেশে। সকল ক্ষেত্রে তাদের অধিকার হারিয়ে যায়। দীর্ঘদিনের বঞ্চণা আর দীর্ঘতর হয়।
তবে সিংহলীদের এই বিজয় উল্লাস বেশি দিন স্থায়ী হয়না। রক্তের দাগ শুকানোর আগেই মাত্র ৬ বছরের মাথায় নির্বাচনে পরাজিত হন মাহেন্দ্র রাজাপাকসে। দুর্নীতি আর কুশাসনের কারণে ২০১৫ সালের নির্বাচনে ভয়াবহ পরাজয় ঘটে তামিল নিধণের প্রধান কারিগরের।
তবে ২০১৯ সালে আবার ক্ষমতায় আসে রাজাপাকসের পরিবার। এবার ছোটভাই গোটাবায়া রাজাপাকসে হয় প্রেসিডেন্ট। মাহেন্দ্রকে আবার বানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। পুরো পরিবার মিলে শুরু করে সরকার চালানো।
প্রকৃতির কি অমোঘ নিয়ম, সেই নায়ক মাহেন্দ্রর শাসনকালেই শ্রীলংকা নগ্ন হয়ে পথে বসে গেল। একসময়ের নায়ক চোরের মতো পালিয়ে বাঁচলো কোনরকমে।
এখন সিংহলি আর তামিল একসাথে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে তার বিরুদ্ধে। বলছে শ্রীলংকা একক জাতিসত্তার নয়, বহু জাতিসত্ত্বার। এদেশে তামিল সিংহলী ভাই ভাই। যা কিছুদিন আগে কল্পনাও করা যেত না।
বন্দরনায়েক: যে পরিবারের হাতে তৈরি শ্রীলংকা
শ্রীলংকার প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ডানপন্থি ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি আর বামপন্থি শ্রালংকান ফ্রিডম পার্টি। এই দুটি দলই ১৯৪৮ সালের স্বাধীনতার পর ঘুরে ফিরে দেশটির ক্ষমতায় এসেছে।
১৯৫১ সালে সলোমন বন্দরনায়েক গঠন করেন শ্রীলংকা ফ্রিডম পার্টি। ১৯৫৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই নির্বাচনের পরেই দেশ নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করে।
কিন্তু এক বৌদ্ধর ভিক্ষুর গুলিতে ১৯৫৯ সালে নিহত হন বন্দরনায়েক। নেতৃত্ব শুন্য হয়ে পড়ে দেশটি। এই সংকটকালে শক্তভাবে দেশের হাল ধরেন তার স্ত্রী শ্রীমভো বন্দরনায়েক।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শ্রীমভো বন্দরনায়েক। পৃথিবীর প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ইউরোপ আমেরিকা কিংবা এশিয়ার অন্য কোন দেশ নয় শ্রীলংকার মানুষই প্রথম দেশের ক্ষমতা একজন নারীর হাতে তুলে দেবার সাহস করে। তিনি নেতৃত্বে ও দেশ পরিচলনায় তার স্বামীকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। শ্রীলংকাকে দক্ষিন এশিয়ার এক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলেন। মানবউন্নয়ন সুচকে শ্রীলংকা ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করে।
বন্দরনায়েক পরিবারটি ছিল থেববাদি বৌদ্ধ। জাতিতে সিংহলী। রাষ্টভাষা হিসেবে সিংহলীকে চালু করতে চেয়েছিলেন তারাই। পরে প্রতিবাদের মুখে তালিম ভাষাকেও সরকারি ভাষা হিসেবে চালু করতে বাধ্য হয় সিলন সরকার। তামিল এবং সিংহলীর বিভেদ স্পষ্ট হতে থাকে তখন থেকে। দেশটিতে দাঙ্গাও হয় কয়েকবার।
১৯৭২ সালে শ্রীমোভো বন্দরনায়েক সিলন থেকে শ্রীলংকা নামে পরিবর্তিত হয়। লেখা হয় নতুন সংবিধান হয়। প্রজাতন্ত্র হিসেবে শুরু হয় শ্রীলংকার নতুন যাত্রা। দেশের ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী থেকে চলে যায় রাষ্ট্রপতির কাছে।

সলোমন ও শ্রীমভোর বড় মেয়ে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা ক্ষমতায় আসে ১৯৯৪ সালে। নিজে হন রাষ্ট্রপতি আর মাকে বানান প্রধানমন্ত্রী।
২০০০ সালে ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নেন শ্রীমভো। এর মাত্র দুমাস পরে মারা যান বন্দরনায়েক পরিবারের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষটি।
পৃথিবীর প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী শ্রীমভোবন্দর নায়েক ছিলেন বিনয়ী এবং দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক একজন মানুষ। রাজনীতিতে এমন মানুষ খুব একটা দেখা যায়না। স্বামী সলেমোন বন্দরনায়েক ছিলেন একজন বামপন্থী ঝানু রাজনীতিবিদ। তাদের বড় মেয়ে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গাও টানা ১১ বছর নেতৃত্ব দেন দেশটির।

বাবা মা এবং সন্তান মিলে শ্রীলংকা শাসন করেন দুই যুগের বেশি সময়। পিতামাতা ও সন্তান তিনজনই দেশের প্রধানকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন এমন ঘটনা পৃথিবীতে আর একটিও নেই। শ্রীলংকার মুল কাঠামোই গঠিত হয়েছে এই পরিবারের হাতে।
রাজাপাকসে: প্রতাপশালী এক পরিবারের হাতেই ধ্বংস দেশ
শ্রীলংকান রাজনীতি আরেকটি গুরুত্বপুর্ন পরিবার হচ্ছে রাজাপাকসে পরিবার।
২০০৯ সালে তামিল টাইগারদের নির্মুল করার পর তারা ভেবেছিল দেশটির বাপ মা তারাই হয়ে গিয়েছে। পরিবারের নামে যাদুঘর বানিয়েছিলেন তারা সরকারি খরচে। সেটা এখন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এই প্রতাপশালী পরিবারের প্রধানতম ব্যক্তিটি হলেন মাহেন্দ্র রাজাপাকসে।
টানা ১০ বছর দেশটির রাষ্টপতি ছিলেন ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত। এর আগে ২০০৪ সালে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
মাত্র ২৪ বছর বয়সে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। হয়েছিলেন মন্ত্রীও।
২০০৯ সালে তামিল টাইগারদের নির্মুল করার পর তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন সিংহলী মানুষদের কাছে। তবে ভয়াবহ নৃশংসতা চালানোয় উত্তরাঞ্চলের তামিল ও অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্টির কাছে তিনি খুবই নিষ্ঠুর ও নিন্দনীয় ব্যক্তি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা হারান মাহেন্দ্র।

২০১৯ সালের নভেম্বরে আবারো ক্ষমতায় আসে রাজাপাকসের পরিবার। এবার ছোটভাই গোটাবায়া রাজাপাকসে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। গোটাবায়া ছিলেন সেনাবাহিনীর লোক। ২০০৯ সালে তামিলদের হত্যার মাস্টারমাইন্ড ধরা হয় তাকে। তেলবাজরা তাকে ‘টার্মিনেটর’ নাম উপাধি দিয়েছিল। নির্বাচনে জয়ের পর আবারও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে পরিবারটি।
গোটাবায়া আবারো প্রধানমন্ত্রী বানান বড়ভাই মাহেন্দ্রকে। দ্বিতীয় মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। শ্রীলংকার রাজনীতি একমাত্র ব্যক্তি যিনি দুইবার প্রধানমন্ত্রী ও দুইবার রাষ্টপতি নির্বাচিত হন।
এছাড়া অনাকোরা আরেক ভাই বাসিলকে অর্থমন্ত্রী বানান, যাকে মিস্টার ১০ পার্সেন্ট নামে মানুষ বেশি চেনে। আরেক ভাই চামিলকে বানানো হয় মন্ত্রী। তার ছেলে শশীন্দ্রও মন্ত্রী হন।

মাহেন্দ্রের দুই ছেলে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে অল্প বয়সেই। বড় ছেলেকে বানান মন্ত্রী আর ছোটটাকে প্রধানমন্ত্রীর চিফ স্টাফ। গোটা পরিবার মিলেই চালাতে থাকেন সরকার।
তাদের পিতা ডন অলবিন রাজাপাকসে ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। ছিলেন কৃষি ও ভুমি মন্ত্রী। শ্রীলংকান ফ্রিডম পার্টির একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি।
জাতীয়তাবাদের ঘৃণার রাজনীতি শুরু করে তারা। তারা মনে করে সিংহলীরাই শ্রীলংকার আসল মালিক। যারা মুলত বৌদ্ধ। শ্রীলংকার রাষ্ট্রীয় ধর্ম এখন বৌদ্ধ। তামিলদের তারা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক মনে করেন। সাথে মুসলমান, হিন্দুদের দেখা হয় ভিন্ন চোখে। ঘৃণা আর বিভক্তির রাজনীতিই এই পরিবারটির মুল চালিকাশক্তি।
সামাজিক সংকট: ২৬ বছরে নৃশংস যুদ্ধের সমাপ্তি
শ্রীলংকা মুলত দুটো জাতিসত্তায় বিভক্ত দেশ। সিংহলী ও তামিল। অনেকটা দেশভাগের আগে আমাদের হিন্দু-মুসলমানের মতো। সিংহলীরা বৌদ্ধ আর তামিলরা হিন্দু। কিন্তু তাদের জাতীসত্ত্বায় ধর্ম আমাদের মতো জেঁকে বসেনি। তারা নিজেদের সিংহলি কিংবা তামিল বলতে বেশি ভালোবাসে ধর্মীয় পরিচয়ের চাইতে।
তামিলরা তাদের নিজেদের একটি স্বাধীন ভুখন্ডের স্বপ্ন দেখেছে বহুদিন। ১৯৪৮ ব্রিটিশরা চলে যাবার সময় দুটি আলাদা রাষ্ট্র না করায় তামিলরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করতে থাকে। পরবর্তীতে রাষ্ট্রের ভাষার প্রশ্নে, শিক্ষা, উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে তামিলরা নিজের বঞ্চিত মনে করতে থাকে এবং নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের চিন্তা সবার মাঝে সংক্রামিত হতে থাকে।
প্রথম কয়েক দশক আলোচনায় কোন ফল লাভ না হওয়া ১৯৭৬ সালে ভিলুপিল্লাই প্রভারকণ নামের এক তরুণ মাত্র ২২ বছর বয়সে এক সশস্ত্র গ্রুপ গড়ে তোলে। এক দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের দিকে ঝুকে পড়ে শ্রীলংকা। ‘লিবারেশন অব তামিল টাইগার ইলাম’ সংক্ষেপে এলটিটিই নামের সংগঠনটি খুব দ্রুত মানুষের নজরে চলে আসে।

আত্নঘাতি হামলায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধিকে হত্যা করে এলটিটিই। ভারতের শান্তি রক্ষার নামে শ্রীলংকাকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে বাধ্য করে এই হামলার মধ্য দিয়ে। হয়েছেও তাই। এই হত্যাকান্ডের পর ভারত নিরপেক্ষ ভুমিকা গ্রহণ করে। শ্রীলংকা থেকে তাদের সকল সেনা ফিরিয়ে আনে।
তামিল নিধণে নিজের দেশের মানুষকে যেভাবে হত্যা করেছে রাজাপাকসের সরকার, তারতো একটা প্রাকৃতিক বিচার আছে! অনেকে মনে করেন এক যুগ পর মাহেন্দ্রের এমন অপমানজনক বিদায় আসলে তামিলদের অভিশাপের ফল।
এক লাখ তামিল হত্যার রক্ত লেগে আছে শ্রীলংকার সরকারের হাতে। তাদের মধ্য রাজাপাকসে সরকারই ছিল সবচেয়ে নৃশংস। মাহেন্দ্রের নির্দেশে সে সসয় দানব হয়ে উঠেছিলে শ্রীলংকার সেনাবাহিনী।

১৯৪৮ সালে মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ ছিল তামিল, আর এখন তা নেমে এসেছে ১১ শতাংশে। অনেকটা বাংলাদেশে হিন্দুদের আর ভারতে মুসলমানদের অবস্থার মতো। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত করা হচ্ছে সংখালঘুদের।
অন্যদিকে তামিল যোদ্ধারাও যেভাবে আত্নঘাতি হামলা চালিয়ে রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে সেটিও কাম্য ছিলনা।
স্বাধীন একটি ভুখন্ডের আশায় যত রক্তপাত হয়েছে তার সবটাই বৃথা গেছে তামিলদের। আপাতত। ভবিষ্যতের কথা বলা যায় না।
বাংলাদেশও কি শ্রীলংকার মতো হবে ?
অনেকেই আশংকা করছে বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলংকার মতো হবে। কেউ কেউ আবার আত্নবিশ্বাসী, না তেমন কিছুই হবে না।
আয়তনে বাংলাদেশের অর্ধেকের চেয়ে ছোট শ্রীলংকা। জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। বাংলাদেশে জনসংখ্যা তাদের চেয়ে নয় গুন বেশি। জিডিপির আকারেও বিশাল ব্যবধান দুই দেশের মধ্যে। শ্রীলংকার চেয়ে চারগুনের বেশি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন। শ্রীলংকার জিডিপি নিম্নমুখি হলেও বাংলাদেশের উর্ধমুখি।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের পরিমান প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। আর সরকারের মোট ঋণ ১২ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির তা ৪২.০৫ শতাংশ। সেখানে শ্রীলংকার ঋণ জিডিপির ১১৯ শতাংশ।
রপ্তানীর চেয়ে আমদানী বাড়ছে বেশি তাই রিজার্ভের উপর চাপ বাড়ছে এদেশের। সর্বশেষ বছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫৪ শতাংশ হারে। এভাবে চলতে থাকলে এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের রিজার্ভ শুণ্য হয় যাবে।
বাংলাদেশের দশটি মেগা প্রকল্পের ভাগ্যে কি হচ্ছে তা খুবই গুরুত্বপুর্ন। মেগা প্রকল্প গুলো সঠিক সময় একটিও শেষ করতে পারেনি সরকার। শেষ হবার পর প্রকল্পগুলো কতটা কার্যকরি হবে সেটাই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। শ্রীলংকার মেগাপ্রকল্প গুলোর নির্মাণ শেষ হবার এক দশক পর সেগুলোর অপ্রয়োজনীয়তা ভয়াবহ রুপ নেয়। বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলো শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
সব হিসেব নিকেশ করলে, মধ্য মেয়াদে মানে আগামী ৪/৫ বছরে বাংলাদেশের সংকট খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে ‘দীর্ঘ মেয়াদে কি হবে সেটা আমরা কেউ জানিনা’। যে অর্থনীতিবিদরা এমন মত দিচ্ছেন আমার মতও তাদের পক্ষে।
কি ছিল না শ্রীলংকায়?
শ্রীলংকার এক পাহাড়ে সাড়ে সাত হাজার ফিট উপরে ৩০০ খ্রি.পুর্বে মানুষ দেখলো বিশাল এক গর্ত। আকৃতি অনেকটা মানুষের পায়ের মতো। কিন্তু এত বিশাল মানুষ এখানে কোথা থেকে এল?
মুসলমান ও খ্রিষ্টানরা মনে করে এটা পৃথিবীর প্রথম মানব আদমের পায়ের ছাপ। বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হবার পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে একহাজার বছর এক পায়ে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। এটা সেই দাঁড়িয়ে থাকা পায়ের দাগ। ‘অ্যাডামস পিক’ বা ‘আদমের চুড়া’ নামে পরিচিত হয়ে উঠল পাহাড়টি।
হিন্দুরা মনে করে এটা তাদের দেবতা শিবের পায়ের ছাপ। আর বৌদ্ধদের বিশ্বাস এটা বুদ্ধের পায়ের চিহ্ন। গৌতম বুদ্ধ যখন শ্রীলংকায় এসেছিলেন এটা সে সময়কার।
এমন করে রাম সেতু নিয়েও নানা কিংবদন্তি চালু আছে। হিন্দুমতে রামায়ণে রামের নির্দেশে হনুমান যে সেতু বানিয়েছিল, রাবণকে বধ করতে গিয়েছিল যে পথে এটা সেই সেতু।

মুসলমানদের দাবি এটা আদম সেতু। আল্লার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা শেষে এই পথে আদম ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।
এ দ্বীপে ৩৫ হাজার বছর আগের মানবদেহের ফসিল পাওয়া গেছে। বোঝা যায় কত প্রাচীনকাল থেকে এখানে সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল।
এসব কিছুই শ্রীলংকাকে এক অন্য উচ্চতা দান করেছে। মানব ইতিহাসের ধর্ম ও বিজ্ঞান এখানে একসাথে হাত ধরাধরি করে হাঁটছে।
সারা বছর হাজার হাজার মানুষ অনেক আগ্রহ নিয়ে ভীড় জমায় দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে।
সৌন্দর্য্য মন্ডিত শ্রীলংকাকে বলা হয় ভারত মহাসাগরের একটা মুক্তো দানা। সেই মুক্তোর মতো দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এখন কালো মেঘের ঘনঘটা।

শেষের কথা :
হিন্দুমতে শ্রীলংকা রাবণের দেশ। যাকে সহস্র বছর ধরে একটা নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে এই অঞ্চলে। সাধারণ মানুষের মনে রাম ভালো আর রাবণ হচ্ছে মন্দের প্রতীক।
কিন্তু অনেক বছর পরে মাইকেল মধুসদন দত্ত একটা মহাকাব্য লিখলেন ‘মেঘনাদবদ কাব্য’ নামে। যেখানে রাম হয়ে উঠলেন দখলদার, আক্রমণকারী এক দস্যু আর রাবণ হয়ে উঠলেন দেশপ্রেমিক, আদর্শিক এক হত্যভাগ্য পিতা। এত বছরের খলনায়ক হয়ে গেলেন নায়ক।
কি অদ্ভুত! শ্রীলংকায় এমন চরিত্র একাধিক পাওয়া যায়। সিংহলীদের কাছে এক সময় মাহেন্দ্র রাজাপাকসে নায়ক ছিলেন, আর এখন তিনি খলনায়ক।
অন্যদিকে ভিলুপিল্লাই প্রভাকরণকে সিংহলীরা রাবণ ভাবলেও, তামিলদের কাছে তিনি রাম বা রক্ষাকর্তা। তাদের সুর্যদেবতা।

অন্যদিকে ইসলাম মতে প্রথম মানব হচ্ছেন আদম, যিনি বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। এক হাজার বছর স্রষ্টার কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করেছিলেন এই শ্রীলংকায় দাঁড়িয়ে। ক্ষমা পেয়েছেন কিনা জানি না তবে নিষিদ্ধ ফল খাবার শাস্তি এখনও ভোগ করছে মানুষ।
‘জীব হত্যা মহাপাপ’ বলা বুদ্ধ অনুসারীরা এখনও মানুষ হত্যা করছে নিজ দেশেই।
আদম, রাম-রাবণ ও বুদ্ধের মিলন যে দেশে সেই দ্বীপ দেশ শ্রীলংকা নিশ্চয়ই আপন শক্তিতে আবারো জ্বলে উঠবে। অপেক্ষা শুধু সময়ের!
পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী
에볼루션게임 먹튀검증 안전노리터 go
Hi! I’ve been following your weblog for some time now and finally got the bravery to go ahead and give you a shout out from Kingwood Texas! Just wanted to tell you keep up the excellent work!
Happy everyday!
정품 비아그라,비아그라구매,비아그라구입,처방전없이 초간편주문.합리적인가격.비아그라 퀵배송,비아그라온라인약국,시알리스.각종 발기부전치료제 판매 전문 온라인스토어 13년동안 단 1건도 가품판매에 관한 스캔들이 없는 믿을수 있는 스토어 입니다.
Dear alordeshe.com Webmaster, same here: Link Text
Hi alordeshe.com owner, Keep the good content coming!
To the alordeshe.com admin, Your posts are always well organized and easy to understand.
Hi alordeshe.com owner, Your posts are always well written and informative.
Hi alordeshe.com administrator, Thanks for the informative post!
Hi alordeshe.com owner, Your posts are always well-cited and reliable.
Hello alordeshe.com webmaster, Thanks for the well-researched post!
To the alordeshe.com owner, Your posts are always well-referenced and credible.
Hi alordeshe.com admin, Your posts are always informative and well-explained.
Dear alordeshe.com owner, You always provide useful links and resources.
Dear alordeshe.com administrator, You always provide valuable feedback and suggestions.
Hello alordeshe.com administrator, You always provide in-depth analysis and understanding.
Hello alordeshe.com webmaster, You always provide great information and insights.
Dear alordeshe.com owner, Your posts are always well presented.
Dear alordeshe.com webmaster, Your posts are always well-written and engaging.
Dear alordeshe.com admin, Thanks for the well-structured and well-presented post!
To the alordeshe.com webmaster, Thanks for the valuable information!
Hi alordeshe.com webmaster, You always provide great examples and real-world applications.
Thank you for all your efforts on this web page. Gloria likes to investigate and can easily understand why. My partner and I have noticed everything about attractive modes in which you create informative tips and hints on websites and encourage others to contribute to areas of interest, and my child has always learned a lot. Enjoy the rest of the year. You’re doing a great job. 토토사이트
That’s really great and helpful information. I’m glad you shared some helpful information. Please keep us informed like this. Thank you for sharing. 메이저놀이터
I was looking for high quality articles or blog posts in this kind of space. While exploring on Yahoo, I finally came across the website. Reading this information so I am happy to show that I have a very strange feeling that I have found what I need. No doubt I will not forget to look at this website regularly. 메이저토토사이트
Nice blog! I love it! I’ll come back to read some more later. I’m also bookmarking your feed. You really make your presentation look so easy but I don’t think this problem is actually something I’ll ever understand. It seems too complicated and very wide for me. I’m looking forward to the next post, I’ll get the hang of it! I cannot thank you enough for the post.I’m looking forward to reading more books. Cool. 메이저사이트
Dear alordeshe.com administrator, Your posts are always well-supported by facts and figures.
Link exchange is nothing else however it is simply placing the other person’s website link on your
page at proper place and other person will also do same in favor of
you.
Hi alordeshe.com webmaster, Thanks for the well-organized and comprehensive post!
To the alordeshe.com administrator, You always provide great insights.
Dear alordeshe.com administrator, Thanks for sharing your thoughts!
Dear alordeshe.com administrator, Thanks for the detailed post!
To the alordeshe.com administrator, Thanks for the well-researched and well-written post!
Dear alordeshe.com administrator, Your posts are always well written.
Hi alordeshe.com admin, Your posts are always well-balanced and objective.
Hi alordeshe.com owner, Good work!
Dear alordeshe.com admin, Keep up the great work!
Hi alordeshe.com owner, You always provide great examples and case studies.
To the alordeshe.com webmaster, You always provide great information and insights.
Dear alordeshe.com admin, Your posts are always a great source of knowledge.
Dear alordeshe.com webmaster, You always provide great insights.
Dear alordeshe.com webmaster, Your posts are always well written and informative.
Dear alordeshe.com webmaster, Your posts are always well-referenced and credible.
Hi alordeshe.com webmaster, Your posts are always well-supported and evidence-based.
Dear alordeshe.com administrator, You always provide key takeaways and summaries.