শ্রীলংকায় কি এবং কেন হয়েছে?

পারভেজ সেলিম

পারভেজ সেলিম ।।

শ্রীলংকা বর্তমানে উৎকন্ঠা, আশংকা এবং আতংকের দেশ। অন্ততো বাংলাদেশের মানুষের কাছে, বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া দেশটির নাম শ্রীলংকা। অনেকে বাংলাদেশের সাথে দেশটির মিল খুজে পাচ্ছেন, অনেক বলছেন তার উল্টোটা।

আর দেশের সরকার সমর্থকরা ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলছে বাংলাদেশ আর শ্রীলংকা এক নয়!! তা তো নয়ই। বাংলাদেশের চেয়ে সবদিকে এগিয়ে থাকা দেশটি কেন এত দ্রুত পতনের দিকে গেল তা নিয়ে ভাবতেও রাজি নন কেউ কেউ। কিন্তু আসলে কি ভয় লাগার মতো কিছু হয়েছে শ্রীলংকায় ?

কি হয়েছে শ্রীলংকায়?

এক সময়ের দোদন্ড প্রতাপশালী প্রধানমন্ত্রী জনরোষ থেকে কোন রকমে পালিয়ে বেঁচেছেন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে তার বাসভবন। অথচ মাত্র কয়েক বছর আগে দেশের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছিলেন এই প্রধানমন্ত্রী, মাহেন্দ্র রাজাপাকসে। নায়ক খুব দ্রুতই খলনায়কে পরিনত হয়েছেন শ্রীলংকায়।

সরকারের সকল মন্ত্রী পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করেছেন তবুও বিভোক্ষ থামেনি। জরুরী অবস্থা জারির পরও নিয়ন্ত্রণে নেই পরিস্থিতি। শেষ পর্যন্ত কারভিউ জারি হয়েছে দেশটিতে।

রাজনীতিবিদদের গণপিটুনী দিয়ে বিবস্ত্র করেছে জনগন। একজন মন্ত্রী বিভোক্ষকারীকে গুলি করার পর সেই পিস্তল দিয়ে সেখানেই আত্নহত্যা করেছেন তিনি। কি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিকে যাচ্ছে দেশটি। তবু মন্দের ভালো এখন পর্যন্ত মৃত্যু সংখ্য মাত্র ৭।

রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ ছাড়া সহিংসতা বন্ধ হবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বিরোধীরা কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে রাজি না হলেও শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এসেছেন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির প্রধান রনিল বিক্রমাসিংহে।

গত ১২ মে, ২০২২ তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছে ষষ্ঠবারের মতো। তবুও সংকট কাটেনি। রাষ্টপতি গোটাবায়ের পদত্যাগের আন্দোলন দিন দিন আরো বেগবান হচ্ছে।

সরকার পতন হলে নতুন সরকার হয়, কিন্তু একটা দেশের পতন হলে কি হবে তা কেউ জানেনা। শ্রীলংকায় একটা দেশের পতন দেখছে সবাই। এখন শুধু অপেক্ষার পালা কি হয়! কোন বিশেষ জাদুর কাঠিতে দেশটি আবার ঘুরে দাঁড়ায় নাকি সংকট আরো ভয়াবহ হয়! সময় ছাড়া কারো কাছে আসলে এর উত্তর নাই।

কেন এই পরিস্থিতি হলো!

এমন পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। জনগন একদিনে ফুঁসে ওঠেনি। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এমনটি হচ্ছিল দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে। শেষ তিন বছরে এই সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। করোনা মহামারি এবং সরকারের নেয়া কিছু অবিবেচক সিদ্ধান্ত শ্রীলংকাকে পথে বসিয়েছে।

বর্তমানে শ্রীলংকার নিজের টাকা এত কমে গেছে যে তারা বিদেশ থেকে কিছুই কিনতে পারছে না। অর্থনীতিতে যাকে বলে বৈদেশিক রিজার্ভ একেবারে শুণ্যের কোঠায়। দেশটির পাওনাদার বা ঋনের পরিমান এত বেড়ে গেছে যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে তারা। বলেছে কোনভাবেই ঋনের টাকা পরিশোধ করতে পারবে না দেশটি।

শ্রীলংকার ঋনের পরিমান হয়েছে তাদের জিডিপির ১১৯ শতাংশ। এর মানে হলো পুরো একবছরে শ্রীলংকা যে পণ্য ও সেবা উৎপাদন করে তার মোট মুল্যের চেয়ে ঋণের পরিমান বেশি।

টাকা না থাকায় কিছু কিনতে পারছেনা সরকার। ফলাফল তেল, বিদ্যুৎ, ঔষধ, খাদ্যপণ্য ঠিকঠাক কিছুই পাচ্ছেনা জনগন। দিনে ১৩ ঘন্টা বিদ্যুৎ ছাড়াই চলছে দেশটি। এছাড়া খাদ্যপণ্যসহ সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সংকট দেখা দিয়েছে ভয়াবহ। দাম উঠে গেছে অসহনীয় পর্যায়ে। ডলারের বিপরীতে শ্রীলংকান রুপি এখন ৩৭২, অথচ ফেব্রয়ারি মাসেও এর মুল্য ছিল ২০২ রুপি। আর ২০০৩ সালে ১ ডলার ছিল ৯৬ শ্রীলংকান রুপির সমান। কত দ্রুত সব কিছু ভেঙ্গে পড়ছে।

জনগনের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। রাস্তায় নেমে পড়েছে সবাই। বৌদ্ধ, মুসলিম, হিন্দু, তামিল কিংবা সিংহলিরা আজ এক কাতারে। তবু সমাধান খুব সহসায় হবে বলে মন হয় না।

কারণ শ্রীলংকার সংকট অনেক গভীরে। এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, এ সংকট রাজনৈতিক ও সামাজিক। খুব সহজে এর উত্তরণের সম্ভাবনা কেউ দেখছে না।

(চলবে ….)

পারভেজ সেলিম
লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী

৫০ thoughts on “শ্রীলংকায় কি এবং কেন হয়েছে?

  1. Pingback: 토렌트
  2. Pingback: Dragon Tiger
  3. Pingback: data singapura
  4. Pingback: mejaqq
  5. Pingback: สล็อต
  6. Pingback: sahabatqq
  7. Pingback: click here
  8. Pingback: massage Bangkok
  9. Pingback: GAMING WORLD
  10. Pingback: Hunter898
  11. Pingback: bonanza178

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x