বাংলার প্রাচীন রাজবংশের ইতিহাস

parvez salim alordeshe
পারভেজ সেলিম ।।

আমাদের বাংলার জানা ইতিহাস কত বছরের? প্রত্নতত্ত্ব হিসেব অনুযায়ী আমাদের এই অঞ্চলে বিশ হাজার বছর আগে মানে প্রস্তর যুগে মানুষ বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। চার হাজার বছর পূর্বের তাম্রযুগে ব্যবসা বাণিজ্যের বেশ কিছু নিদর্শণ ও আছে এই বাংলায়।

প্রাচীন গ্রন্থ ‘মহাভারতে’ অঙ্গ, বঙ্গ ও মগধ নামের তিনটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের উল্লেখ আছে। মুলত প্রাচীন কালের এই তিন রাষ্ট্রের অংশ নিয়েই আজকের বাংলাদেশ।

বৈদিক যুগে মানে ১৫০০-৫০০ খ্রি.পুর্বে ‘বঙ্গ’ একটি স্বাধীন স্বাতন্ত্র রাজ্য হিসেবে টিকে ছিল বলেই ধরা হয়। এরপর দীর্ঘ সময় ‘বঙ্গ’ মুলত ‘অঙ্গ’দের অধীনেই ছিল।

পরবর্তী ইতিহাস থেকে জানা যায়, ৬শ খ্রি.পুর্বাব্দ থেকে এই অঞ্চলটি ‘মগধ’ রাজ্যের অধীনে চলে যায়।’মগধ’ তখন বিশাল এক সম্রাজ্যে পরিনত হয়েছিল। এরপর কয়েকশত বছর ‘বঙ্গে’র ইতিহাস মানেই ‘মগধ’ রাজ্যের ইতিহাস। 

প্রাচীন ভারতে ১৬ টি মহাজনপদের এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী জনপদ ছিল এই মগধ। বর্তমানে ভারতের বিহার-উড়িষ্যা প্রাচীনকালে ‘মগধ’ নামে পরিচিত ছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে প্রাচীনকালে কারা শাসন করতো এই মগধ রাজ্য? মগধের সবচেয়ে প্রাচীন যে রাজবংশের তথ্য পাওয়া যা তা হলো ‘বৃহদ্রথ রাজবংশ’। ১৭০০ খ্রি.পুর্বাব্দ থেকে ৬৮২ খ্রি.পু পর্যন্ত , এক হাজারের বেশি সময় মগধ শাসন করেছিল এই রাজবংশ। এরপর ‘প্রদোগ রাজবংশ’ শাসন করে আরো ১৩৮ বছর। এই দুই রাজবংশের ইতিহাস খুব বেশি কিছু জানা যায় না। ‘মগধে’র সাফল্য দেখা দেয় আসলে এর পরের রাজাদের হাতে। মগধ বা প্রাচীন বাংলার পাঁচ সফল রাজবংশের দিকে এবার একটু নজর দেয়া যাক।

১. হর্ষঙ্ক রাজবংশ : (৫৪২- ৪১৩ খ্রি. পুর্ব) : ১২৯ বছর

মগধ শাসকদের তৃতীয় শাসক বংশ হচ্ছে হর্ষঙ্ক রাজ বংশ। ৫৪২ থেকে ৪১৩ খ্রি.পু পর্যন্ত মোট ১২৯ বছর শাসন করে এই রাজবংশ।

এই রাজবংশের রাজা ছিলেন ছয়জন।সবচেয়ে প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ন রাজা হলেন বিম্বিসার। তিনি ছিলেন এই হর্ষঙ্ক রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। ৫৪২ থেকে ৪৯২ খ্রি.পু পর্যন্ত পঞ্চাশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন তিনি।

বিম্বিসারের রাজত্বকালে গৌতম বুদ্ধ তার ধর্ম প্রচার করছিলেন এই অঞ্চলে। বুদ্ধের চাইতে মাত্র পাঁচ বছরের ছোট ছিলেন বিম্বিসার। গৌতমের ধর্মে দীক্ষিত হয়ে তার প্রচার ও প্রসারের কাজও করেছিলেন এই রাজা। এসময় মগধের রাজধানী ছিল ‘রাজগৃহে’। আজকের ভারতের বিহারের নালন্দা জেলায় এর অবস্থান। বিম্বিসার আমন্ত্রণে রাজগৃহে গিয়ে দেখা করেছিলেন গৌতম বুদ্ধ।

বিম্বিসার, অজাতশক্র, উদয়ভদ্র, অনুরুদ্ধক, মুন্ড ও নাগদাসক এই ছয় প্রজন্ম মিলে ১২৯ বছরে মগধকে এক শক্তিশালী রাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিম্বিসারকে হত্যা করে ছেলে অজাতশক্র ক্ষমতায় বসতে চেয়েছিলেন। বৌদ্ধ ধর্ম বিরোধী অজাতশত্রু পরে গৌতম বুদ্ধকেও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বৌদ্ধের অনুসারি বিম্বিসার ছেলের এমন অপরাধকে ক্ষমা করে দেন। পরে আবারও ছেলে অজাতশত্রুর হাতে বন্দি হন বিম্বিসার।পঞ্চাশ বছরের ক্ষমতা শেষে বন্দি অবস্থায় ৪৯২ খ্রি.পুর্বাব্দে মারা যান প্রাচীনকালের প্রভাবশালী এই রাজা।

পরে একইভাবে ৩২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ছেলে উদয়ভদ্রের হাতে নিহত হন অজাতশক্রু ।  বারবার হত্যার মধ্যে দিয়ে  ক্ষমতার বদল হয়েছে এই রাজবংশে। এই বংশের রাজারা সবাই তার পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতায় বসেছিল।এজন্য ইতিহাসে এ্‌ই রাজবংশ ‘পিতৃহন্তা রাজবংশ’ নামে পরিচিত।

শেষ রাজা নাগদাসক তার মন্ত্রী শিশুনাগের হাতে ক্ষমতা হারিয়ে পুরো সম্রাজ্যের পরিসমাপ্তি ঘটান।‘শিশুনাগ রাজবংশ’ নামে এক নতুন রাজবংশ মগধের ক্ষমতায় বসে।

২. শিশুনাগ রাজবংশ : (৪১৩-৩৪৫ খ্রি.পূ):  ৬৮ বছর

৪১৩ খ্রি.পূর্বাব্দ থেকে ৬৮ বছর  এই রাজবংশ শাসন করে মগধ রাজ্য। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শিশুনাগ। যিনি হর্ষঙ্ক রাজবংশের শেষ রাজা নাগদাসকের মন্ত্রীপরিষদের সদস্য ছিলেন। এই সময় মগধের রাজধানী রাজগৃহ থেকে পাটালীপুত্রে স্থান্তরিত করা হয়।পরবর্তীতে কয়েকশ বছর পাটালীপুত্র  মগধ রাজ্যের রাজধানী হিসেবে টিকে থাকে। পাটালীপুত্র বর্তমানে ভারতে বিহারে মধ্যে পড়েছে। তবে পাটালীপুত্র শহরটির গোড়াপত্তন করেছিলেন অজাতশত্রু ৪৯০ খ্রি.পুর্বে। কারো কারো মতে অজাতশক্রর ছেলে উদয়ভদ্রের রাজত্বকালে রাজধানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে পাটালীপুত্র।

শিশুনাগ বংশের শেষ রাজা ছিলেন মহানন্দিন। ক্ষত্রিয় এই রাজার এক ছেলের জন্ম হয়েছিল নিম্ন জাতের এক শুদ্র রমনীর গর্ভে।নিচু জাতের ঘরে জন্ম হয়েছে বলে সবাই তাকে রাজার অবৈধ সন্তান মনে করতো। তার নাম মহাপদ্ম নন্দ। একসময় সেই অবৈধ সন্তান মহাপদ্ম নন্দের কাছেই ক্ষমতা হারায় এই শিশু রাজবংশ। মগধে শুরু হয় নতুন নন্দ রাজবংশের শাসন।

৩. নন্দ রাজবংশ : (৩৪৫-৩২১খ্রি. পূ) : ২৪ বছর

নন্দ রাজবংশ মাত্র ২৪ বছর শাসন করে মগধ । নিচু জাতের মহাপদ্ম নন্দের হাতে ৩৪৫ খ্রি.পূর্বে এই রাজবংশের সুচনা হয়। এই নন্দ রাজবংশ যখন মগধের ক্ষমতায় তখন গ্রীক বীর আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেন। ভারতের কিছু অংশ দখল করলেও বড় অংশ দখল না করেই ফিরে যেতে হয়েছিল আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটকে। কারো কারো মতে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ফিরে গিয়েছিল গ্রিক বাহিনী, কারো মতে দীর্ঘদিন যুদ্ধে ক্লান্ত সেনাবাহিনী আর সামনে এগুতে চায়নি, তাই আলেকজান্ডার বাধ্য হয়েছিল পুরো পৃথিবী দখলের স্বপ্ন পুরুন না করেই ফিরে যেতে।

গ্রিকদের ইতিহাস থেকে জানা যায়, সেসময় ‘গঙ্গারিডাই’ নামে এক শক্তিশালী রাষ্ট্রে কথা যার বিশাল হাতিবাহিনীর খবর  আলেকজান্ডার বাহিনীর মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল। ‘গঙ্গারিডাই’ মানে যে আমাদের প্রাচীন বাংলার এই বৃহৎ অঞ্চলক ।

চব্বিশ বছরে নয়জন রাজা শাসন করেছিল মগধ। এরপর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের নিকট সম্রাজ্যের ক্ষমতা হারান নন্দরা। 

এই নিয়ে একটি কিংবদন্তি চালু আছে, আলেকজান্ডার যখন ভারত আক্রমণ করেন তখন কোটিল্য বা চাণক্য ছিলেন  তক্ষশীলা মহাবিদ্যালয়ের আচার্য। রাজনীতি , অর্থনীতি ও যুদ্ধবিদ্যার এক মহাপন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ভারতকে আলেকজান্ডারের হাত থেকে রক্ষা করতে তিনি সাহয্যের জন্য গিয়েছিলেন সেসময়ের রাজা ধনানন্দের কাছে। সাহায্যের বদলে চাণ্যকে অপমান করে রাজ্য থেকে বের করে দেন ধনানন্দ। 

এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে চাণক্য প্রতিজ্ঞা করেন পুরো ভারতে তিনি একচ্ছত্র সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই প্রতিজ্ঞা অনুয়াযী চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে তিনি শিক্ষা দীক্ষায় ধনানন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেন । চাণ্যকের পরিকল্পনা অনুযায়ী চন্দ্রগুপ্তের কাছে যুদ্ধে হেরে পতন হয় নন্দ রাজবংশের। মগধে শুরু হয় প্রাচীন ভারতের স্বর্ণযুগ নামে খ্যাত মৌর্য যুগের ।

৪. মৌর্য সম্রাজ্য : (৩২১-১৮৫খ্রি. পূ) : ১৩৬ বছর

প্রাচীন কালের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজবংশ হল মৌর্য রাজবংশ । ৩২১ থেকে ১৮৫  খ্রি.পূর্ব পর্যন্ত ১৩৬ বছর মগধ শাসন করে মৌর্যরা। এসসময় মগধ রাজ্য সবচেয়ে বেশি বিস্তৃতি লাভ করেছিল। 

চন্দ্রগুপ্ত, বিন্দুসার আর অশোক, দশরথ ছিল মৌর্য সম্রাটদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্রাট। আলেকজান্ডার ভারতে যে এলাকাগুলো দখল করেছিল তা পুনরায় নিজেদের দখলে নেয় চন্দ্রগুপ্ত। প্রাচীনকালে ভারতের সবচেয়ে বড় সম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন মৌর্য সম্রাটরা। 

আজকের সাতটি দেশ মিলে ছিল মৌর্য সম্রাজ্যের বিস্তৃতি। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল ভুটান, আফগানিস্তান, ইরান ছিল এই সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। 

অশোক ছিলেন মৌর্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্রাট। বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি। তার চল্লিশ বছরের শাসনকালে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার পুরো ভারত ছাড়িয়ে । অশোক যখন ক্ষমতায় তখন আমাদের পুন্ড্র বা বর্তমানের উত্তরাঞ্চাল মৌর্য সম্রাজ্রের অধীনে আসে। চীনা পরিব্রাজ হিউয়ান সাং এ মতে অশোক বাংলারও রাজা ছিলেন। কারন তখন সমতট ও বরেন্দ্রসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি অশোক স্তম্ভের নিদর্শণ দেখেছিলেন।

মৌর্য সাম্রাজ্যের নবম ও শেষ রাজা ছিলেণ বৃহদ্রথ মৌর্য। বাণভট্ট বচিত হর্ষচরিত্র গ্রন্থ থেকে জানা যায় ১৮৫ খ্রি.পৃর্বে তারই সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গের হাতে নিহত হন তিনি। সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের সময় তাকে হত্যা করা হয়। পুষ্যমিত্র ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠা করেন শুঙ্গ রাজবংশ। মগধে শেষ হয় ১৩৬ বছরের মৌর্য শাসন।

৫. শুঙ্গ রাজবংশ: (১৮৫-৭৫ খ্রী.পূ) : ১১০ বছর

মৌর্য রাজ বংশের শেষ রাজা বৃহদ্রথ মৌর্যে প্রধান সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গের হাতে এই রাজ রংশের গোড়া পত্তন । ১৮৫ খ্রি.পূর্ব থেকে ৩৬ বছর মগধ শাসন করেছেন পুষ্যমিত্র। পরে আরো দশ জন শুঙ্গ বংশের রাজা শাসন করেছিল মগধ। 

শুঙ্গরা ছিলেন ব্রাক্ষ্ণণ সম্রাট। ব্রাষ্মণ্যবাদ ও পশুবলির (যজ্ঞ) পুন: প্রতিষ্ঠা করেছিলেন পুষ্যমিত্র। সম্রাট অশোক যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। পুষ্যমিত্র বৌদ্ধ ধর্ম বিরোধী রাজা ছিলেন। তিনি অনেক বিহার পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। বুদ্ধ সন্নাসীদের মাথার জন্য তিনি পুরুস্কার ঘোষণা করেছিলেন। তবে কিছু কিছু ভারতীয় পন্ডিত মনে করেন শুঙ্গ রাজারা বৌদ্ধ ধর্মের বিরোধী ছিলেন না, তাদের সময়েও বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ লাভ করেছিল ।

পুষ্যমিত্রের মৃত্যুর পর অগ্নিমিত্র ক্ষমতায় বসেন। ভারতের বিখ্যাত নাট্যকার কালিদাসের নাটকের নায়ক ছিলেন এই অগ্নিমিত্র । 

৭৩ খ্রি.পুর্বাব্দে এই বংশের পতনের পর মগধে কান্ব বংশের পত্তন হয়। মাত্র ৪৫ বছর শাসনের পর  ৩০ খ্রি.পুর্বে এই বংশের পতন হয়। কান্ব রাজবংশ পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস কিছুটা পাওয়া যায়। তারপর শুরু হয় অন্ধকার যুগ।

এসময় ভারতের দক্ষিনে ৪৫০ বছর জন্য শাসন শুরু করে সাতবাহন সম্রাজ্য। আর উত্তরে শুরু হয় ৩৪৫ বছরের কুশান সম্রাজ্রের শাসন। ভারতের উত্তর ও দক্ষিনের দুই রাজবংশের শাসনকালে বাংলা তাদের অধীনে ছিল কিনা তার কোন সুস্পষ্ঠ তথ্য জানা যায় না । 

 সে হিসেবে মৌর্য সম্রাজেই ছিল প্রাচীনকালে বাংলার স্বর্নযুগ। মৌর্য যুগের পরের পাঁচশ বছরের বাংলার ইতিহাস এখনও অন্ধকারে।এই সময়টা বাংলার অন্ধকার যুগও বলা যায়। এই দীর্ঘ অন্ধকার যুগের পরে ৩২০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় গুপ্তযুগের সুচনা হয়। গুপ্ত বংশের রাজা চন্দ্রগুপ্তের অধীনে বাংলা সহ ভারতবর্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিনত হয়।

পারভেজ সেলিম

লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী


আরো পড়ুন : প্রাচীন বঙ্গ থেকে যেভাবে আজকের বাংলাদেশ

ক্রীতদাস ব্যবসা বাংলা থেকে আমেরিকা

১৩৫ thoughts on “বাংলার প্রাচীন রাজবংশের ইতিহাস

  1. I and my pals ended up taking note of the nice ideas from your web blog then the sudden I got an awful feeling I never expressed respect to the site owner for those techniques. All of the young boys came consequently very interested to learn all of them and now have definitely been loving these things. We appreciate you getting so kind and also for choosing this form of notable themes most people are really eager to learn about. My very own sincere apologies for not expressing gratitude to you earlier.

  2. My programmer is trying to convince me to move to .net from PHP.
    I have always disliked the idea because of the costs.
    But he’s tryiong none the less. I’ve been using WordPress on a number of websites for about a year and am concerned
    about switching to another platform. I have
    heard good things about blogengine.net. Is there a way I can transfer all my wordpress posts into it?

    Any help would be really appreciated!

  3. I have been exploring for a little for any high-quality articles or blog posts on this kind of house .
    Exploring in Yahoo I ultimately stumbled upon this web site.
    Reading this info So i’m happy to express that I’ve an incredibly
    excellent uncanny feeling I found out just what I needed.
    I such a lot surely will make certain to don?t omit this website and provides it a glance
    on a continuing basis.

  4. Howdy would you mind sharing which blog platform you’re working with?
    I’m going to start my own blog soon but I’m having a difficult time deciding between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal.
    The reason I ask is because your layout seems different then most
    blogs and I’m looking for something unique.
    P.S Apologies for getting off-topic but I had to ask!

  5. Hello! I realize this is kind of off-topic but
    I needed to ask. Does managing a well-established website such as yours take a large amount of work?
    I’m brand new to blogging but I do write in my journal every day.

    I’d like to start a blog so I can easily share my
    experience and thoughts online. Please let me know if you have any
    kind of ideas or tips for brand new aspiring blog owners.
    Thankyou!

  6. Unquestionably imagine that that you stated.
    Your favorite justification seemed to be at the web the easiest
    factor to remember of. I say to you, I certainly get irked whilst people consider worries
    that they plainly do not understand about. You managed to hit the nail upon the top and defined out the entire thing without having side-effects , folks can take a
    signal. Will likely be again to get more. Thanks

  7. Hey there would you mind stating which blog platform you’re using?

    I’m looking to start my own blog soon but I’m having a tough time deciding
    between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal.
    The reason I ask is because your layout seems different then most blogs and I’m looking for
    something completely unique. P.S Sorry for
    being off-topic but I had to ask!

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x