শামসুর রাহমানের কবিতা

এ আমার ধরনের অহংকার

-শামসুর রহমান

এখনও দাঁড়িয়ে আছি, এ আমার এক ধরনের অহংকার।

বেজায় টলছে মাথা, পায়ের তলায়

মাটি সারাদিনমান

পলায়নপর,

হাঁ-হাঁ গোরস্থান ছাড়া অন্য কিছু

দেখতে পাচ্ছি না আপাতত,

তবু ঠিক রয়েছি দাঁড়িয়ে

প্রখর হাওয়ায় মুখ রেখে।

অত্যন্ত জরুরি কোনো আবহাওয়া ঘোষণার মতো দশদিক

রটাচ্ছে কেবলি হাড়ে ঘাস

গজাতে গজাতে

বুকে হিম নিয়ে তুমি বড়

নির্বান্ধব, বড় একা হয়ে যাচ্ছ।

আমার ভূভাগ থেকে আমাকে উৎখাত করবার জন্যে কতো

পাই পেয়াদা আসছে চৌদিক থেকে, ওরা তড়িঘড়ি

আমার স্বপ্নের

বেবাক স্থাবর-অস্থাবর

সম্পত্তি করবে ক্রোক, কেউ কেউ

ডাকছে নিলাম তারস্বরে,

কিন্তু আমি উপদ্রুত

কৃষকের মতো

এখনও দাঁড়িয়ে আছি চালে,

ছাড়ছি নে জলমগ্ন ভিটে।

আমার বিরুদ্ধে সুখ সারাক্ষণ

লাগায় পোস্টার

দেয়ালে দেয়ালে,

আমার বিরুদ্ধে আশা ইস্তাহার

বিলি করে অলিতে-গলিতে,

আমার বিরুদ্ধে শান্তি করে সত্যাগ্রহ,

আমার ভেতর ক্ষয়

দিয়েছে উড়িয়ে হাড় আর

করোটি-চিহ্নিত তার অসিত

পতাকা।

আমার জনক এত ব্যর্থতার শব

আজীবন বয়েছেন

কাঁধে, বঞ্চনার মায়াবী হরিণ

তাঁকে এত বেশি

ঘুরিয়েছে পথে ও বিপথে,

আত্মহত্যা করবার

কথা ছিল তাঁর, কিন্তু তিনি যেন

সেই অশ্বারোহী

জিনচ্যুত হয়েও যে ঘোড়ার কেশর

ধরে ঝুলে থাকে জেদী,

দাঁতে দাঁতে ঘষে।

আমার জননী এত বেশি দুঃখ

সয়েছেন, এত বেশি

ছেঁড়াখোঁড়া স্বপ্নের প্রাচীন

কাঁথা করেছেন সেলাই নিভৃতে,

দেখেছেন এত বেশি লাল

ঘোড়া পাড়ায় পাড়ায়,

এতবার স্বপ্নে জাগরণে

ভূমিকম্পে উঠেছেন কেঁপে, তার

ভয়ানক কোনো মাথার অসুখ

হওয়া ছিল স্বাভাবিক; কিন্তু

ঘোর উন্মত্ততা তাঁর

পাশাপাশি থেকেও

কখনো তাঁকে স্বাভাবিকতার

ভাস্বর রেহেল

থেকে পারেনি সরাতে একচুলও।

বুঝি তাই দুঃসময়ে আমার আপন

শিরা-উপশিরা জেদী

অশ্বক্ষুরে প্রতিধ্বনিময়।

সেদিকেই বাড়াই না পদযুগ,

কোনো দিন কোনো

গন্তব্যে পৌঁছুতে পারব না।

আমি সেই অভিযান-

প্রিয় লোক, যার পদচ্ছাপ

মরুভূমি ধরে রাখে

ক্ষণকাল যার আর্ত উদাস কংকাল

থাকে প’ড়ে

বালির ওপর অসহায়, অথচ কাছেই হৃদ্য মরূদ্যান।

কী-যে হয়, একবার

রক্তস্রোতে অন্যবার পূর্ণাঙ্গ

জ্যোৎস্নায়

ভেবে যায় হৃদয় আমার।

যেদিকে বাড়াই হাত

সেদিকেই নামে ধস, প্রসারিত

হাতগুলো তলহীন গহ্বরে হারায়

আর আমি নিজে যেন পৌরাণিক

জন্তুর বিশাল

পিঠের ওপর

একা রয়েছি দাঁড়িয়ে; চতুষ্পার্শে

অবিরাল

যাচ্ছে বয়ে লাভাস্রোতে,

কম্পমান ভূমি,

প্রলয়ে হইনি পলাতক,

নিজস্ব ভূভাগে একরোখা

এখনও দাঁড়িয়ে আছি, এ আমার এক ধরনের অহংকার।

শামসুর রাহমান বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান কবি। আজ ১৭ ই আগস্ট এই কবির মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৬ সালের এই দিনে ৭৬ বছর বয়সের মৃত্যুবরণ করেন দেশের এই শ্রেষ্ঠ কবি।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে । মোট ৬৬ টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে দেশের এই প্রধানতম কবির ।

সম্পাদক, শিল্পবিভাগ

১০০ thoughts on “শামসুর রাহমানের কবিতা

  1. Hey would you mind stating which blog platform you’re working with?
    I’m planning to start my own blog soon but I’m having a difficult time choosing between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and Drupal.
    The reason I ask is because your design and style
    seems different then most blogs and I’m looking for something completely unique.
    P.S My apologies for being off-topic but I had to ask!
    scoliosis surgery https://coub.com/stories/962966-scoliosis-surgery scoliosis
    surgery

  2. Indihome Jakarta Timur saat ini ada dengan service pasang jaringan Indihome
    lewat cara online, anda tidak perlu tiba ke kantor indihome buat kerjakan register penempatan indihome.
    Ini adalah wujud service digital paling depan dari Indihome Jakarta Timur buat mempermudah penduduk Jakarta Timur
    yang mau nikmati jaringan internet cepat indihome. Dengan memanfaatkan Technologi Fiber Optik, kami tawarkan beberapa service paket internet
    seperti Singgel Play, Dual Play dan Triple Play. Tidak hanya
    itu kami menjajakan sejumlah Add On Favorit buat anda cicipi dengan keluarga.

  3. 122786 517380Considerably, the story is in reality the greatest on this noteworthy subject. I agree with your conclusions and will eagerly watch forward to your next updates. Saying nice one will not just be sufficient, for the fantastic clarity inside your writing. I will immediately grab your rss feed to stay privy of any updates! 419400

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x