রাফিউল ইসলাম।।
ছোটবেলায় শচীন টেন্ডুলকাড়ের ভীষণ ভক্ত ছিলাম। আমার পড়ার ঘর, বারান্দায় শচীনের ছবি দিয়ে ভর্তি ছিল। গাঙ্গুলিও ভীষণ পছন্দের ছিল। বিশেষ করে সৌরভের ড্যান্সিং ডাউন দ্যা উইকেটে মারা ছক্কাগুলো…আর শচীনের চোখধাঁধানো কাভার ড্রাইভ, স্কয়ার কাট, লফটেড শট, গ্লান্স, ফ্লিক, সুইপ, পুল, হুক… ভীষণ ভীষণ ভালো লাগতো। তার চেয়েও বেশি ভালো লাগতো দারুণ জেন্টেলম্যান ছিল শচীন। সে সময়ের লারা, গিলক্রিস্ট পরে সাঙ্গাকারা কতদিন দেখেছি নিজে আউট হয়েছেন বুঝে আম্পায়ার আঙুল তোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা দিতেন। ক্রিকেট জেন্টেলম্যান গেম, এটাই জানতাম আমরা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অাইসিসি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমরা বন্ধুরা ধীরে ধীরে ভারত পাকিস্তান সাপোর্ট বাদ দিয়ে নিজেদের দেশকে সাপোর্ট দেয়া শুরু করলাম। আমাদের দেশের খেলা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করলো। এটাই তখনকার বাস্তবতা। কম বেশি সব বাংলাদেশিদের।
এখন প্রযুক্তি’র যুগ ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, অনেক অাধুনিক প্রযুক্তি, সিস্টেমে রিভিউও এসেছে। দলগুলোর ম্যানেজমেন্ট থেকেও হয়তো অধিনায়ক, প্লেয়ারদের বলে দেয়া হয় আউট হয়েছো বুঝলেও ক্রিজ থেকে বের হবে না। তাই ব্রায়ান লারার মতো আউট হওয়ার পর নিজেই ক্রিজ ছেড়ে চলে আসা, গত ১০ বছরে বোধহয় এমন দৃশ্য আমরা দেখিনা।
সেসময় শচীনকে স্লেজিং করতো শেন ওয়ার্ন, ম্যাকগ্রা। দেখতাম ভীষণ ধৈর্য নিয়ে টেস্ট ম্যাচে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতো শচীন। এরপর ভারত ধীরে ধীরে উল্টো বিরাট মোড়ল হতে লাগলো। ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়াকে হটিয়ে আইসিসি, ভারতের নিজেদের বাপ দাদার সম্পত্তি হয়ে গেল। আরেক দুর্দান্ত মেধাবী ধোনি যুগ পেরিয়ে এলো বিরাট কোহলি যুগ। অত্যন্ত ট্যালেন্টেড বাট বিরাট বেয়াদব। কিছুই ধরা দেয়না তার ঝুলিতে না চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি না বিশ্বকাপ। খেলার মাঠে স্লেজিং খেলার অংশ। কিন্তু বিরাট সাহেব, জাদেজা, অশ্বিন, হরভজন, ধাওয়ান, পান্ডিয়া ওনাদের অ্যাটিচিউড সব দলের সাথেই এমন তাঁদের সাথে বাকি বিশ্বের সব প্লেয়ার জাস্ট রাস্তা থেকে এসেছে খেলতে। মেরে ধরে হলেও জিততে হবে ইন্ডিয়াকে। তুচ্ছ তাচ্ছিল্য চলে প্রায় প্রতি বলেই। কিন্তু বিরাট সাহেবদের দৌড় ঐ সেমিফাইনাল বা ফাইনাল পর্যন্ত, ট্রফির দেখা পাওয়া যায়না। স্মিথ, বাবর আজম, মরগ্যান, উইলিয়মসন, এরা কোন প্লেয়ারই না, এরা শুধু জেন্টেলম্যান। আর কোহলিরা বিরাট প্লেয়ার। আর বাংলাদেশ তো ফকিরের দেশ। ফকির দেশের প্লেয়াররা তাঁদের সাথে একমাঠে খেলছে এটাই তো অনেক। কোহলি রুবেলের দ্বন্দ্ব তাঁদের ঐ আন্ডার নাইনটিন থেকেই।
এবারের আন্ডার নাইনটিন ফাইনালে ৯ ওভারে বাংলাদেশ ৫০ তোলার পর শুরু হয়ে গেল আকাশ সিং এর অনবরত স্লেজিং আমাদের ইমনকে। বাংলাদেশের শরিফুল রকিবুলরাও ভারতীয় ব্যাটসম্যান কে উত্তেজিত করেছে। আউট করার পর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে বলেছে, এবং এই চুপ থাকতে বলাটাও একদিনে আসেনি। বাট আকাশ সিং আর বিশ্নয় রা যা করছিল ইমনদের সাথে প্রতিটা বলে। চাইছিল উত্তেজিত হোক, আউট হোক। আকবর যেখানে ছিল আইসকুল। ইমন খুড়িয়ে খুড়িয়ে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আকাশ সিংয়ের পর বিশ্নয়ের শুরু হলো প্রতি বলে বলে ইমনকে গালিগালাজ করা। আর আউট হচ্ছে না তাই প্রতি বলেই আাবেদন। আম্পায়ার বিশ্নয়কে শাসালেনও কিন্তু তিনিও তো আইসিসির চাকুরী করেন। আমাদের মুশফিক মাহমুদউল্লাহ রা বিরাটদের এই গালিগালাজে যখন উত্তেজিত হয়ে যান, মাঠের খেলায় জিতে যাওয়ার সিচুয়েশনেও জাদেজা দের এই ফাঁদে পা ফেলেন। তখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে খেলা ইমন আর আইসকুল আকবর দেখিয়ে দিলেন কিভাবে ভারতীয় মোড়লদের ফাঁদে পা না ফেলে ম্যাচ জিতে আসতে হয়।
আশেপাশে কারো মন খারাপ হতে পারে লেখায়। যারা নিজেদের খুব ইন্টেলেকচুয়াল ভাবেন। নিজেকে আলাদা ভাবেন। ফকির মিস্কিন সবাই বাংলাদেশের জয়ে খুশি কেন? আমিতো আলাদা। বাংলাদেশ কতটুকু বেয়াদবি করলো। সেটার হিসেব করেন। কতদিনের লাঞ্চনা, বঞ্চনার জবাব দিল সেটার হিসাব আপনাদের করার দরকার নেই। দিন সামনে আসবে বাংলাদেশের এই আনস্মার্ট আকবরদের। আগেও মোড়লদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য আপনাদের চোখে পরেনি। পতাকা টেনে কেড়ে নেয়ার এই স্পর্ধাও আপনাদের চোখে পড়বেনা। আর কিছু হোক না হোক এই ফকির মিস্কিন আমজনতা, “পতাকা টেনে কেড়ে ছিড়ে নিয়ে যাবে কেউ” তা সহ্য করবেনা। আপনি অনেক ইন্টেলেকচুয়াল, আপনি ব্যতিক্রম, আপনি নিজেকে কি ভাবেন? যাই ভাবুন, আমরা আমজনতা আপনাকে কি ভাবি জানেন, আপনি একটা আবাল।
রাফিউল ইসলাম
ফেসবুক থেকে