আলেকজান্ডার বনাম গঙ্গারিডাই: এক অনাহুত যুদ্ধ


ইতিহাসে অনেক যুদ্ধের কথা আমরা জানি। কিন্তু এমন কিছু যুদ্ধ আছে  যা ঘটেনি, তবু ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছে। আজকে বলব তেমনি এক যুদ্ধের কথা, যে যুদ্ধ আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট নিজেও করার সাহস করেননি! এবং সেই অদৃশ্য প্রতিপক্ষের নাম ‘গঙ্গারিডাই’ রাজ্যের সাথে যুদ্ধ, যা আজকের বাংলাদেশেরই একটি প্রাচীন অংশ।

আলেকজান্ডার ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বে পাঞ্জাব অঞ্চল দখল করেন। পোরাসের সাথে যুদ্ধ (Battle of Hydaspes) জয় করার পর তিনি আরও পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে চেয়েছিলেন। লক্ষ্য ছিল গঙ্গা নদী সেখানেই ছিল গঙ্গারিডাই রাজ্য তথা ভারত দখল করা ।

গ্রীক ঐতিহাসিক ডিওডোরাস, স্ট্র্যাবো, ও কুর্টিয়াস রুফাসের লেখায় গঙ্গারিডাই এর সেই সময়ের কথা উল্লেখ আছে। এদের হস্তীবাহিনী ছিল ভয়ংকর ছিল প্রায় ৩,০০০ যুদ্ধহস্তী। রাজধানী ছিল গঙ্গা বদ্বীপের মধ্যে, ধারণা করা হয় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের অংশে।

রাজধানীর নাম অস্পষ্ট, তবে কিছু সূত্রে বলা হয় হয়তো গঙ্গা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্রের মোহনায় কোনো গৃহনগরী ছিল। কেউ কেউ এটিকে তম্রলিপ্ত (Tamluk) বা সোনারগাঁ-এর প্রাচীন রূপ বলে থাকেন, যদিও তা অনুমানমাত্র।

আলেকজান্ডারের সেনারা তখন ক্লান্ত ছিল, অনিচ্ছুকও ছিল। গঙ্গারিডাই এবং প্রতিবেশী প্রেসিয়াই রাজ্যের সম্মিলিত শক্তির কথা শুনে সেনারা বিদ্রোহের হুমকি দেয়। আলেকজান্ডার Beas নদী থেকেই ফিরে আসেন, আর পূর্বভারতে পা রাখেননি।

বহু ইতিহাসবিদ বলেন গঙ্গারিডাই বর্তমানের বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল, যশোর অঞ্চল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশে বিস্তৃত ছিল।এটি ছিল প্রাচীন বঙ্গ জনপদের পূর্বসূরি।

প্রাচীন গ্রিক লেখক ডিওডোরাস সিকুলাস (Diodorus Siculus), মেগাস্থেনিস (Megasthenes) ও প্লিনি (Pliny the Elder) গঙ্গারিডাইদের উল্লেখ করেছেন। রাজা বা শাসকের নাম কোথাও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই, তবে বলা হয়:“They had a powerful monarch who ruled over a large population and commanded a vast elephant corps.”

কিছু গবেষক মনে করেন এই অঞ্চলে তখন বিভিন্ন স্থানীয় গণরাজ্য বা মহাজনপদ ধরনের শাসনব্যবস্থা ছিল।

গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোর বদ্বীপ অঞ্চলে বসবাস করত বলে ধারণা করা যায় তারা চাষাবাদ, বিশেষ করে ধান ও পাট চাষে দক্ষ ছিল। মাটি ছিল উর্বর, ফলে ফসল উৎপাদন প্রচুর হতো। নৌবাণিজ্য, জলে মাছ ধরা, নদীপথে পরিবহন— এসব ছিল সেসময়ের মানুষদের গুরুত্বপূর্ণ পেশা।

নদীপথ ধরে পূর্ব ভারত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাণিজ্য করত বলে ধারণা করা হয়।লবণ ও রেশমজাত দ্রব্য রপ্তানির প্রমাণ কিছু গ্রিক লেখায় পাওয়া গেছে।

 গ্রীক ঐতিহাসিক Diodorus Siculus বলেন:“The Ganges was the widest river in India, and near its banks lived the Gangaridai, whose army of elephants deterred Alexander.” Pliny the Elder ও Strabo-ও তাদের ভয়ংকর হস্তীবাহিনীর কথা উল্লেখ করেছেন।

গঙ্গারিডাই রাজ্যের পতনের কারণ জানা যায় না স্পষ্টভাবে। তবে পরবর্তীতে অঞ্চলটি মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যেতে পারে। নদীপথ পরিবর্তন, প্লাবন, বা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে ধীরে ধীরে রাজ্যটি বিলীন হতে পারে।

 আলেকজান্ডারের সাথে সেদিন যদি গঙ্গারিডাই রাজ্য বিশাল যুদ্ধ হত ? কি হতো তাহলে ? কী ঘটত ইতিহাসে? হয়তো ভারতবর্ষ আরও আগে গ্রীক শাসনের অধীনে আসত। আবার, গঙ্গারিডাইয়ের বিজয় ইতিহাসে একটি নতুন পরিচয় আনতে পারত।

‘গঙ্গারিডাই’ — একটি প্রাচীন নাম, কিন্তু এক গৌরবময় পরিচয়। এমন এক সময়, যখন পশ্চিমারা ভারতকে দুর্বল ভাবত, তখন গঙ্গারিডাই ছিল এক অজেয় প্রতিপক্ষ এবং এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়— ইতিহাসে সাহস শুধু যুদ্ধ করলেই নয়, কখনো কখনো যুদ্ধ না করেও লেখা হয়।


লিখাটি AI এর সহায়তায় লিখা হয়েছে। তবে কিছুটা পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে । ……..বিভাগীয় সম্পাদক


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x