প্রাচীন প্রভাবশালী রাজা: সভ্যতার নির্মাতা



প্রাচীন বিশ্বের ইতিহাসে এমন কিছু মহান রাজা ছিলেন, যাদের নেতৃত্ব, কৌশল, ও নৈতিকতার আদর্শ এখনও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে। গিলগামেশ থেকে আলেকজান্ডার, হাম্মুরাবি থেকে সাইরাস প্রাচীন বিশ্বের এমন ১২ জন রাজার দিকে নজর দিতে চাই । যারা শুধু তাদের সাম্রাজ্যেই নয়, নিজেদের  অন্যন্য কীর্তির জন্য ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন।

১. এনমেবারাগেসি (কিশ), (খ্রি.পূ ২৬০০-)

২. গিলগামেশ (উরুক), (খ্রি.পূ  ২৮০০-২৫০০)

৩. সারগন (আক্কাদ), খ্রি.পূ ২৩৩৪-২২৭৯)

৪. হাম্মুরাবি (ব্যাবিলন), (খ্রি.পূ ১৭৯২-১৭৫০)

৫. থুতমোসিস III (মিশর), (খ্রি.পূ  ১৪৭৯-১৪২৫)

৬. রামেসিস II (মিশর), (খ্রিস্টপূর্ব ১২৭৯–১২১৩)   

৭. ডাভিড (ইসরাইল), (খ্রি.পূ ১০১০-৯৭০)

৮. অশুরবানিপাল (নিনেভ), (খ্রি.পূ  ৬৬৮-৬২৭)

৯.  সাইরাস দ্য গ্রেট (পারস্য) (খ্রি.পূ ৫৮০-৫২৯)

১০. দারিয়ুস I পারস্য) ,( খ্রি.পূ ৫২২–৪৮৬) 

১১.জেরক্সিস I (পারস্য), (খ্রি.পূ  ৪৮৬-৪৬৫)

১২. অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট (মেসিডোনিয়া), (খ্রি.পূ ৩৩৬-৩২৩)

১. এনমেবারাগেসি (কিশ), (খ্রি.পূ ২৬০০-)

তালিকার প্রথমে আছেন কিশের রাজা এনমেবারাগেসি। মানব ইতিহাসের প্রথম সভ্যতা গড়ে  উঠেছিল ইউফ্রেতিস ও টাইগ্রীস নদীর মধ্যবর্তী জায়গায়। ইতিহাসে যা মেসোপটেমিয়া সভ্যতা নামে পরিচিত।

পাঁচটি সভ্যতা মিলে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তার প্রথম সভ্যতাটির নাম ছিল সুমেরীয় সভ্যতা। সেসসময় নদীর পাশে উর্বর জায়গায় ছোট বড় অনেক শহর গড়ে উঠেছিল। এমনটি একটি শহর ছিল কিশ। এই নগর-রাষ্ট্রের রাজা  ছিলেন এনমেবারাগেসি। তার শাসনকাল ধরা হয় খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ সালের দিকে। বিভিন্ন সামরিক অভিযান পরিচালনা করে তিনি শক্তিশালী  রাস্ট্র গড়ে তুলেছিলেন।

প্রাপ্তখন্ডের মধ্যে লিখা: মেবারাগেসি:কিশের রাজা 

এনমেবারাগেসি সম্পর্কে ইতিহাসে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়। তার তথ্য প্রথম পাওয়া যায় ‘গিলগামেশে মহাকাব্যে’। সেখানে রাজা গিলগামেশের পুর্বসুরি হিসেবে উল্লেখ আছে তার নাম। সে হিসেব এ যাবতকালে পাওয়া তথ্যের বিচারে এনমেবারাগেসিকে ইতিহাসের প্রথম প্রভাবশালী রাজা হিসেবে ধরা যায় ।

কিংবদন্তী বা পৌরাণিক চরিত্র হতে পারে এনমেবারাগেসি

তবে কারো কারো মতে গিলগামেশের মতো  এনমেবারাগেসিও একটি কিংবদন্তী বা পৌরাণিক চরিত্র হয়ে থাকতে পারে।

এনমেবারাগেসি মূলত সুমেরীয় কিংবদন্তী হলেও তাঁর নামটি পরবর্তীতে আক্কাদীয় সভ্যতার কিংবদন্তিতেও স্থান পায়। আক্কাদীয় এবং সুমেরীয় সংস্কৃতির মধ্যে অনেকটাই মিশ্রণ ঘটেছিল, তাই সুমেরীয় রাজার কাহিনি আক্কাদীয় কিংবদন্তীতেও সংরক্ষিত হয়েছে।

২. গিলগামেশ (উরুক), (খ্রি.পূ  ২৮০০-২৫০০)

আমাদের পরবর্তী প্রভাবশালী ও বিখ্যাত রাজা গিলগামেশ। এই রাজার নাম খোদাই করা আছে মানব ইতিহাসের প্রথম লিখিত গ্রন্হ ‘গিলগামেশের মহাকাব্যে’।

তিনি সুমেরীয় সভ্যতার  প্রাচীন শহর উরুকের রাজা ছিলেন। তিনি ‘গিলগামেশের মহাকা্ব্যে’র কেন্দ্রীয় চরিত্র ।

গিলগামেশের রাজত্বকাল ধরা হয়  ২৮০০-২৬০০ খ্রি.পুর্বের মধ্যে মানে আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছরে আগে ।

উরুক শহরের রাজা গিলগামেশ

রাজা গিলগামেশ বিভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন এবং সভ্যতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। গিলগামেশের জীবন ও কাহিনী নিয়ে লেখা ‘গিলগামেশের মহাকাব্য’ (Epic of Gilgamesh) এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীনতম  লিখিত সাহিত্যকর্ম। ‘কিউনিফর্মে’ লিখা ১২টি মাটির শ্লেটে এই মহাকাব্যটি পাওয়া যায় আসেরীয়দের বিখ্যাত লাইব্রেরীতে।

গিলগামেশ একটি কিংবদন্তী চরিত্র হওয়ার সম্ভাবনা বেশী তবে কিছু ঐতিহাসিক সূত্র ইঙ্গিত করে যে গিলগামেশ একটি বাস্তবিক চরিত্র ছিলেন। তবে তাঁর জীবনের অনেক কিছুই রূপকথা এবং পৌরাণিক কাহিনীর দ্বারা প্রভাবিত।

৩. সারগন (আক্কাদ), খ্রি.পূ ২৩৩৪-২২৭৯)

মেসোপটেমিয়া দ্বিতীয় সভ্যতাটি ছিল আক্কাদীয় সভ্যতা । এই সভ্যতার প্রথম ছোট ছোট শহর রাস্ট্র গুলোকে একত্রিত করে এক বিশাল সম্রাজ্য গড়ে তোলে একজন যার নাম সারগন। ইতিহাসের প্রথম সম্রাট।আক্কাদীয় সম্রাজের প্রতিষ্ঠাতা।

বিশ্বের প্রথম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকারী রাজা হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৩৩৪-২২৭৯ অব্দ পর্যন্ত তিনি শাসন করেন বলে ধারণা করা হয়।

Sargon
প্রস্তরফলকে সার্গনের প্রতিকৃতি; Image Source: Wikimedia Commons.

সারগন প্রথমবারের মতো এক কেন্দ্রীভূত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা  করতে পেরেছিলেন যা সুমের, আক্কাদ এবং আশেপাশের অঞ্চলগুলোকে একত্রিত করে শক্তশালী বৃহৎ সম্রাজ্য গঠিত হয়েছিল। মাত্র ৫৫ বছর বেঁচে ছিলেন এই সম্রাট।

সারগনের যুদ্ধের কৌশল এবং নেতৃত্ব তাকে ইতিহাসে স্থায়ী করে রেখেছে।

৪. হাম্মুরাবি (ব্যাবিলন), (খ্রি.পূ ১৭৯২-১৭৫০)

আমাদের পরবর্তী প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ন রাজা হাম্মুরাবি। এর মধ্যে কয়েকশ বছর চলে গেছে। সুমেরীয় ও আক্কাদীয়র পর ব্যবলনীয় সভ্যতা তখন চরম শিখরে।

প্রাচীন ব্যাবিলনীয় সেই সভ্যতার বিখ্যাত রাজা ছিলেন হাম্বুরাবি। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৭৯২-১৭৫০ অব্দের দিকে তিনি ব্যাবিলন সাম্রাজ্যে শাসন করতেন।  

ইতিহাসের পাতায় তিনি চিরস্থায়ী হয়ে আছের তার বিখ্যাত “হাম্মুরাবির কোড” (Code of Hammurabi) এর জন্য। ‘হাম্মুরাবির কোড’, বিশ্বের প্রথম লিখিত আইন হিসেবে পরিচিত। তার আইন সবার জন্য ন্যায়বিচারের উদাহরণ স্থাপন করেছিল। যেখানে প্রায় ২৮২ টি  আইন লিখা ছিল।

হাম্মুরাবি
ব্যাবিলনীর রাজা হাম্মুরাবি

তার শাসনামলে ব্যাবিলন প্রথমবারের মতো একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয় এবং সমগ্র মেসোপটেমিয়ার বড় একটি অংশে তিনি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

হাম্মুরাবির খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ সালে মৃত্যুবরণ করেন, মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৪২ বছর। 

৫. থুতমোসিস III (মিশর), (খ্রি.পূ  ১৪৭৯-১৪২৫)

এরপরের রাজা থুতমোসিস III। যিনি ছিলেন মিশরের রাজা।

মেসোপটেমিয়া সভ্যতা যখন শেষ হয় তখন তার পাশেই নীল নদের তীরে আরেকটি সভ্যতা গড়ে ওঠে আর সেটি হলো মিশরীয় সভ্যতা। বিশাল বিশাল পিরামিডের জন্য যে সভ্যতা এখনও সবার কাছে পরিচিত।

থুতমোসিস ছিলেন নতুন মিশরের রাজা । পিরামিড গুলো নির্মিত হয়েছিল পুরাতন রাজাদের আমলে। ২৬০০-২১০০ খ্রি.পূর্বে খুফু, খাফ্রে ও মেনকাওর নামের তিন ফারাও তিনটি পিরামিড বানিয়েছিলেন তাদের কবর হিসেবে।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা অনেক ফারাও বা রাজার দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও গুরুত্পূর্ণ ফারাও ছিলেন থুতমোসিস III । তিনি মিশরের ১৮তম রাজবংশের একজন শাসক ছিলেন। এবং আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৪৭৯-১৪২৫ অব্দ পর্যন্ত শাসন করেন। 

মিশরীয় ফারাও থুতমোসিস III

নতুন রাজবংশের মিশরীরে  ফারাওরা পিরামিড নয় মন্দির ও স্থাপনা নির্মানে মনোযোগ দিয়েছিলেন। যেমন থুতমোসিস III এর সময়ে কার্নাক ও লুক্সের মন্দির নির্মিত হয়েছিল।

সামরিক দক্ষতা এবং বিজয় অভিযানের জন্য থুতমোসিসকে প্রাচীন ‘মিশরের নেপোলিয়ন’ বলা হয়। তার শাসনামলে মিশরীয় সাম্রাজ্য পূর্ব ভূমধ্যসাগর থেকে নীল নদের দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। তার নেতৃত্বে অনেক যুদ্ধ জিতেছিল মিশরীয়রা যার মধ্যে ‘মেগিদ্দোর যুদ্ধ’ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

থুতমোসিস III-এর জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৪২৫ সালে এবং মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।

৬. রামেসিস II (মিশর), (খ্রিস্টপূর্ব ১২৭৯–১২১৩)   

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার  আরেক বিখ্যাত ফারাও ছিলেন রামেসিস II। তিনি মিশরের ১৯তম রাজবংশের তৃতীয় শাসক ছিলেন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১২৭৯-১২১৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন। রামেসিস II তার দীর্ঘ ৬৬ বছরের শাসনামলে মিশরের সামরিক শক্তি, স্থাপত্য এবং সংস্কৃতিতে অসাধারণ অবদান রাখেন। 

রামেসিস II বিশাল নির্মাণ প্রকল্প এবং বহু যুদ্ধ জয় করেন , বিশেষ করে হিত্তিতদের বিরুদ্ধে বিখ্যাত কাদেশের যুদ্ধ জয়ের জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।

এছাড়াও, রামেসিস II তার স্থাপত্য কীর্তির জন্য বিশেষভাবে খ্যাত, যেমন আবু সিম্বেলের মন্দির, রামেসিয়াম এবং কারনাক মন্দিরের সম্প্রসারণ তার আমলে হয়েছিল। 

প্রাচীন মিশরীয় সফল এবং শক্তিশালী শাসক রামেসিস II

তিনি মিশরীয় ইতিহাসে “রামেসিস মহান” নামে পরিচিত এবং তাকে মিশরের সবচেয়ে সফল এবং শক্তিশালী শাসকদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়।

রামেসিস II-এর জন্ম আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৩০৩ সালে হয়েছিল বলে ধরা হয়। তিনি ছিলেন সেতি I-এর পুত্র এবং মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৯০ বছরেরও বেশি। 

৭. ডাভিড (ইসরাইল), (খ্রি.পূ ১০১০-৯৭০)

এবার চলুন রাজা ডেভিডের কথা বলি । ইসলামে যিনি দাউদ নবী হিসেবে পরিচিত । ইসলাম মতে তার কাছে সৃষ্টিকর্তার কিতাব নাজিল হয়েছিল।

 ইতিহাসে ডেভিড ছিলেন প্রাচীন  জেরুজালেম ভিক্তিক ইসরায়েলীয় সভ্যতার বিখ্যাত ও প্রভাবশালী রাজা। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ১০১০-৯৭০ সালে ইসরায়েল এবং যিহূদার রাজা ছিলেন। ডাভিড ইসরায়েলের দ্বিতীয় রাজা এবং তাকে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলামী ঐতিহ্যে সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

ইসরায়েলীয় সভ্যতার বিখ্যাত ও প্রভাবশালী রাজা ডেভিড

রাজা ডাভিডের শাসনামলে ইসরায়েল একটি একীভূত এবং শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কীর্তিগুলোর মধ্যে একটি ছিল জেরুজালেম শহর দখল করা এবং এটিকে তিনি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

ডেভিড খ্রিস্টপূর্ব ৯৭০ সালে মৃত্যুবরণ করেন,তখন বয়স ছিল ৭০ বছর। ডেভিড তার বীরত্বের জন্য বিখ্যাত, বিশেষ করে গলিয়াতের বিরুদ্ধে তার বিজয়ের জন্য।

৮. অশুরবানিপাল (আসিরিয়া), (খ্রি.পূ  ৬৬৮-৬২৭)

মেসোপটেমিয়া সভ্যতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ও প্রাচীন সভ্যতা হলো অ্যাসরীয় সভ্যতা। এই সভ্যতার বিখ্যাত এবং শক্তিশালী রাজা ছিলেন অশুরবানিপল। তিনি নবীণ আসিরীয় সাম্রাজ্যের শেষ মহান শাসক ছিলেন। তার শাসনকাল ধরা হয় খ্রিস্টপূর্ব আনুমানিক ৬৬৮-৬২৭ অব্দ পর্যন্ত । অশুরবানিপাল তার সামরিক দক্ষতা, প্রশাসনিক শক্তি এবং সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

তার শাসনামলে আসিরীয় সাম্রাজ্য তার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায়, যা মিসর থেকে ইরান এবং আনাতোলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

আসিরীয় সভ্যতার শক্তিশালী রাজা অশুরবানিপাল

তবে অশুরবানিপালের বিখ্যাত হয়ে আছেন নিনেভে তার বিশাল গ্রন্থাগার’ স্থাপন করার করানে। তিনি  জ্ঞানপিপাসু মনোভাবের প্রতীক হয়ে আছে ।  এবং এতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম সংরক্ষিত ছিল, ‘গিলগামেশ মহাকাব্য’ এই লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত ছিল ।

ধারণা করা হয় ৬০ বছর বেচে ছিলেন এই সম্রাট। তিনি তার শাসনকালে বিভিন্ন সৃষ্টিশীল প্রকল্প এবং সংস্কৃতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৯.  সাইরাস দ্য গ্রেট (পারস্য) (খ্রি.পূ ৫৮০-৫২৯)

 মেসোপেটেমিয়া সভ্যতা শুরুর দুইহাজার বছর পর পারস্যে এক নতুন সম্রাটের  জন্ম হয় যিনি ইতিহাসে ’সাইরাস দ্য গ্রেট’ নামে পরিচিত। সাইরাস ছিলেন প্রাচীন পারস্যের মহান রাজা এবং পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৭৯-৫৩০ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। সাইরাস তার সামরিক বিজয় এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। 

তিনি পারস্যের আকারকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেন এবং মেসোপটেমিয়া, লিডিয়া এবং  বেবিলনের মতো বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয় অর্জন করেন। সাইরাস তার সহিষ্ণুতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন, বিশেষ করে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতি তার সম্মানের জন্য। তার শাসনামলে তিনি ‘ বেবিলনীয়ার বন্দিদের মুক্তি’ দেন এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেন। 

 

পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা : সাইরাস দ্য গ্রেট

সাইরাসের সাম্রাজ্য পরবর্তীতে একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং তাকে ইতিহাসে বিশ্বের প্রথম ‘মানবাধিকারের সমর্থক” সম্রাট হিসেবে মনে করা হয়।

সাইরাসের জন্ম হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫৮০ সালে এবং তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫২৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন,

তখন তার বয়স ছিল প্রায় ৫১ বছর। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার অবদান অপরিসীম।

১০. দারিয়ুস I (পারস্য) ,( খ্রি.পূ ৫২২–৪৮৬

প্রাচীন পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের আরেক একজন গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী রাজা ছিলেন দারিয়ুস I (Darius I)। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫২২-৪৮৬ অব্দ পর্যন্ত শাসন করেন এবং পারস্যের ৩য় রাজবংশ, আহুরামজদ রাজবংশের একজন সদস্য ছিলেন। 

তার শাসনামলে পারস্যে সাম্রাজ্য আরো ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ হয় এবং এটি এক সময়ের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। তিনি ইন্দো-ইরানীয় অঞ্চল পর্যন্ত তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত করেন এবং মেসোপটেমিয়া, লিডিয়া, মিশর এবং গ্রীস অংশবিশেষ অন্তর্ভুক্ত করেন।

দারিয়ুস I অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক এবং আইনগত সংস্কারের জন্য বিখ্যাত। তিনি ‘দারিয়াসের আইন’ প্রবর্তন করেন এবং ‘রাস্তার ব্যবস্থা’ উন্নত করেন, যা সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর করে। তার সময়কালে ‘পার্সিয়ান রাজপথ’ (Royal Road) নির্মাণ করা হয়, যা বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। 

দারিয়ুসের শাসনকালে সাংস্কৃতিক ও স্থাপত্য উন্নয়নও ঘটেছিল, যেমন ‘পার্সেপোলিস’ শহরের নির্মাণ।

পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের প্রভাবশালী রাজা দারিয়ুস I

দারিয়ুস I, মিশরের সাথে একটি সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন (খ্রিস্টপূর্ব ৫১৯)। তিনি মিশরের প্যারো নামক ফারাও রাজাকে পরাজিত করেন এবং মিশরকে পারস্য সাম্রাজ্যের একটি অংশে পরিণত করেন। খ্রিস্টপূর্ব ৫২০ সালে দারিয়ুস I ব্যাবিলন দখল করেন। 

৪৯৯ খ্রিস্টপূর্বে, যখন গ্রিক শহরগুলো পারস্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল, দারিয়ুস I এই বিদ্রোহ দমনে সফল হয়েছিলেন ।

তিনি গ্রিকদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হন বিশেষ করে মারাথন যুদ্ধে (খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০) পরাজিত হলেও গ্রিকদের ব্যাপারে তার আগ্রহ বাড়ে।

তার জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০ সালে এবংতিনি প্রায় ৬৪ বছর বেঁচে ছিলেন। দারিয়ুসের শাসনামলে পার্সিয়ান সাম্রাজ্য একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।

১১.জেরক্সিস I (পারস্য), (খ্রি.পূ  ৪৮৬-৪৬৫)

জেরক্সিস I, ছিলেন দারিয়াসের পুত্র । জেরক্সিস I প্রাচীন পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের এক প্রভাবশালী রাজা হয়ে উঠেছিলেন। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৬-৪৬৫ সাল পর্যন্ত শাসন করেন । জেরক্সিস I তার শাসনকালে পার্সিয়ান সাম্রাজ্য তার সর্বোচ্চ বিস্তারের শিখরে পৌঁছেছিল।

জেরক্সিস I সবচেয়ে পরিচিত তার গ্রীক আক্রমণের জন্য, বিশেষ করে ‘থারমোপলির যুদ্ধ’ (Battle of Thermopylae) এবং ‘সালামিসের যুদ্ধ’ (Battle of Salamis) এর জন্য। তার শাসনামলে, তিনি গ্রীসের বিরুদ্ধে বৃহৎ সামরিক অভিযানগুলোর নেতৃত্ব দেন, যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তিনি সফল হয়নি। তবে পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের জন্য এই অভিযান ছিল গুরুত্বপূর্ন ।

দারিয়াসের পুত্র জেরক্সিস I

তিনি ‘পার্সেপোলিস’ শহরের নির্মাণে পিতার অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন এবং প্রাচীন পার্সিয়ান স্থাপত্যের চিহ্ন হিসেবে পরিচিত এই শহরটি আজও গুরুত্বপূর্ণ। তার শাসনামল সম্পর্কে বিভিন্ন ইতিহাসগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, যার মধ্যে হেরোডোটাসের কাজ উল্লেখযোগ্য।

পিতা দারিয়াস I-এর নেতৃত্বে বিখ্যাত মারাথনের যুদ্ধে (৫২০ খ্রিস্টপূর্ব) এথেন্সের বিরুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল

জেরক্সিস থার্মোপাইলের যুদ্ধে (৪৮০ খ্রিস্টপূর্ব) জয়ী হলেও স্পার্টানদের সাহসী প্রতিরোধ এই যুদ্ধকে ইতিহাসে চিরস্থায়ী করে রেখেছে।।

স্যালামিসের যুদ্ধে (৪৮০ খ্রিস্টপূর্ব) পরাজয় তার সাম্রাজ্যের জন্য একটি বড় বিপর্যয় ছিল।

যদিও জেরক্সিস I যুদ্ধের ক্ষেত্রে কিছু পরাজয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন, তারপর রাজনৈতিক, সামরিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব তাকে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারণে তাকে হত্যা করা হয় তখন তার বয়স মাত্র ৫৪ বছর ।

১২. অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট (মেসিডোনিয়া), (খ্রি.পূ ৩৩৬-৩২৩)

তালিকার সবশেষ রাজা হলেন অ্যালেকজান্ডার , যিনি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট (Alexander the Great) নামে পরিচিত। প্রাচীন মেসিডোনিয়ার বিখ্যাত রাজা এবং ইতিহাসের অন্যতম মহান  একজন সামরিক কমান্ডার ছিলেন তিনি। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৬-৩২৩ অব্দ পর্যন্ত শাসন করেন তিনি । 

ইউরোপের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাজা ধরা হয় অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেটকে । যিনি একটি বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্য গ্রিস থেকে শুরু করে মেসোপটেমিয়া, পারস্য, এবং ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে বিস্তৃত ছিল।

ইউরোপের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাজা অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট

প্রথম বৃহৎ যুদ্ধ গ্রানিকাসের যুদ্ধে (৩৩৪ খ্রিস্টপূর্ব) তিনি পারস্যের বিরুদ্ধে জয় লাভ করেছিলেন। ইসুসের যুদ্ধ (৩৩৩ খ্রিস্টপূর্ব) ছিল পারস্যের রাজা দারিয়াস III-এর বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।

গাজা যুদ্ধে (৩৩২ খ্রিস্টপূর্ব) তিনি নগরীর শক্তিশালী প্রতিরোধ ভেঙে দিয়েছিলেন। অর্কিডের যুদ্ধে (৩৩০ খ্রিস্টপূর্ব) তিনি পারস্যের রাজধানী সূসার দখল করেন। গগামেলা যুদ্ধে (৩৩১ খ্রিস্টপূর্ব) দারিয়াস III-এর বিরুদ্ধে বিশাল জয় পেয়েছিলেন যা পারস্য সাম্রাজ্যকে কার্যত ধ্বংস করে দেয়।

হাইডেস্পেস যুদ্ধে (৩২৬ খ্রিস্টপূর্ব) ভারতের রাজা পোরাসের বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছিল। তবে কারো কারো মতে জয়ী হয়েও ভারত থেকে ফিরে এসেছিলেন ।

তিনি মিসরের অ্যালেকজান্ড্রিয়া শহর প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

আলেকজান্ডারের জন্ম হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ সালে এবং তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন, তখন বয়স ছিল মাত্র ৩২ বছর। 

অ্যালেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য বিভক্ত হয়, কিন্তু তার কৃতিত্ব এবং প্রভাব ইতিহাসে আজও অমর।  তিনি অনেক ইতিহাসবিদ এবং ঐতিহাসিকদের দ্বারা “বিশ্বের অন্যতম মহান নেতা” হিসেবে বিবেচিত হন।

এই প্রাচীন রাজার জীবন ও কীর্তি আমাদের ইতিহাসের ভিত্তি এবং অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁদের দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সংস্কারমূলক কাজ আজও আমাদের সভ্যতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।


লিখাটি AI এর সহায়তায় লিখা হয়েছে। তবে কিছুটা পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হয়েছে । ……..বিভাগীয় সম্পাদক


 আরো পড়ুন :

২৮ thoughts on “প্রাচীন প্রভাবশালী রাজা: সভ্যতার নির্মাতা

  1. Ata Tohumculuk 25 Adet Tohum Badem Salatalık Köy Salatalığı Tohumu Yerli Tohum Bol Verimli. Kendi sebze ve meyvesini yetiştirmek isteyenler için kullanılan tohum son derece önemlidir. Tohum, koruyucu bir dış kaplama içine alınmış bir embriyonik bitkidir. Tohum oluşumu, açık tohumlular ve kapalı tohumlular bitkileri dahil olmak üzereTürkiye’ nin tercihi ödüllü marka Tohumevi. Sertifikalı, tohum, çiçek soğanı, fide, fidan ve saksılı çiçek çeşitlerinde online alışveriş https://www.tohumdunyasi.com.tr/

  2. Setting up an Android SMS Gateway for my small business has been transformative! I use it to send order confirmations and status updates to customers, which has increased engagement and trust. The setup was surprisingly easy, thanks to this guide. For those experienced in this area, any recommendations for handling message queues to avoid delays during peak times? I’m looking to optimize performance as my customer base grows.

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x