ইসলামের ১৫০০ বছর: একটি ইতিহাসের বিবর্তন



প্রাচীনকালে, কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে আরব উপদ্বীপের মরুভূমি থেকে একটি বিশাল সভ্যতার উন্মেষ ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে, সেখানে একটি নতুন ধর্মের সৃষ্টি ঘটে—ইসলাম। সুদূরপ্রসারী বিজয়ের মাধ্যমে ইসলামের খলিফা ও সুলতানরা এক বিশাল ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন, যা অন্যান্য সাম্রাজ্যের শাসন থেকে আলাদা। মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইসলামী জীবনধারা গড়ে ওঠে।

ষষ্ঠ শতাব্দীতে, আরব উপদ্বীপের দুই পাশে ছিল দুটি বিশাল সাম্রাজ্য: পূর্বে পারস্যের সাসানীয় সাম্রাজ্য এবং পশ্চিমে খ্রিস্টানদের বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য। এই দুই সাম্রাজ্যই আরবদের দখলে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না, কারণ তাদের কাছে উল্লেখযোগ্য ধন-সম্পদ ছিল না।

আরবের অধিবাসীরা প্রধানত যাযাবর, তবে কিছু মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মুশরিক ছিল, যারা দেবদেবীর পূজা করত। এই যাযাবর মূর্তিপূজারী সমাজে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ইসলামের প্রধান ব্যক্তি হযরত মুহাম্মদ (সা.)।

মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি আল্লাহ কর্তৃক মনোনীত নবী ছিলেন, যিনি ইব্রাহিম, মূসা এবং যীশুর মতো একেশ্বরবাদের বার্তা প্রচার করেন। মুহাম্মদ (সা.) নতুন একেশ্বরবাদি ধর্ম ইসলামের প্রচার শুরু করেন।

প্রায় ২৭ বছর ধরে মহানবীর কাছে আল্লাহর বানী নাজিল হতে থাকে, যা পরবর্তীতে একটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থে সংকলিত হয়—মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ ‘আল কুরআন’। প্রথমে মক্কায় নির্যাতিত হয়ে, পরে মদিনায় হিজরত করেন তিনি। এই হিজরতের ঘটনা ইসলামিক ক্যালেন্ডারের সূচনা করে। মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রিত করেন এবং মূর্তিপূজারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। এর ফলে আরব উপজাতিদের মধ্যে নতুন এক জাতিসত্তা—মুসলিম জাতির জন্ম হয়।

মুহাম্মদ (সা.) ৬৩২ সালে মৃত্যুবরণ করেন, যা ইসলামের জন্য একটি সংকটকাল। মুসলমানদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে, ইসলামের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব কে হবে? সঠিক নেতৃত্বের এই প্রশ্নটি যুগে যুগে ইসলামী বিশ্বের সংকটের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। 

এই সংকটের প্রেক্ষাপটে মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্য, আদর্শ ও ভবিষ্যৎ গঠনে নতুন ধরণের নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হয়, যা ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

খুলাফায়ে রাশিদুন: (৬৩২-৬৬১ খ্রি.)

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর ইসলামের সর্বোচ্চ নেতারা ‘খলিফা’ উপাধি গ্রহণ করেন, যার অর্থ ‘উত্তরাধিকারী’। প্রথম চার খলিফা ‘রাশিদুন’ নামে পরিচিতি পান, যা নির্দেশ করে ‘সঠিকভাবে পরিচালিত’ খলিফাদের প্রতি। এই খলিফাদের নির্বাচন হয়েছিল মহানবীর সাথে তাদের সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত গুণাবলীর ভিত্তিতে।

৬৩২ থেকে ৬৬১ সালের মধ্যে ২৯ বছর ধরে খুলাফায়ে রাশিদুনের চারজন খলিফা নেতৃত্ব দেন। এই সময়কালেই প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম মুসলিম রাষ্ট্র, যেখানে প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান, কর ব্যবস্থা এবং আমলাতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। খলিফারা এই সময় অনেক সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন, ফলে ইসলামের খিলাফত দ্রুত ইরান থেকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

এই সময়ের ইতিহাসে ‘বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য’ অনেক অঞ্চল হারায় এবং ‘সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের’ পতন ঘটে। মুসলিম ঐতিহ্যে রাশিদুন যুগকে ইসলামের গৌরবময় দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যদিও এই সময়কালকে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষের সময় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। চার খলিফার মধ্যে তিনজনকে হত্যা করা হয়, যেখানে প্রথম খলিফা আবু বকর স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) এর হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক না ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে ঘটেছিল, এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.) এবং চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.) হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ফলাফল।

তৃতীয় খলিফার শাসনের সময় মুসলমানদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা এবং বিভক্তি দেখা দেয়, বিশেষ করে মহানবীর চাচাতো ভাই ও জামাতা আলী ইবনে আবি তালিবের সমর্থকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই গোষ্ঠী পরবর্তীতে ‘শিয়া’ হিসাবে পরিচিত হয়। তারা বিশ্বাস করে যে মহানবী হযরত আলীকে উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন, ফলে আলী ও তার বংশধরেরা ইসলামের একমাত্র বৈধ শাসক।

অন্যদিকে, যারা পরে ‘সুন্নি’ নামে পরিচিত হন, তারা এই উত্তরাধিকার নীতিকে স্বীকৃতি দেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই উত্তরাধিকার প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাস এবং রাজনৈতিক বিভাজন ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় বিভক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এভাবে খুলাফায়ে রাশিদুনের যুগ ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তনের চিহ্ন নয়, বরং ধর্মীয় বিশ্বাসের দিকেও গভীর প্রভাব ফেলে।

উমাইয়া খিলাফত: (৬৬১-৭৫০ খ্রি.)

৬৬১ সালে, সিরিয়ায় একটি আরব পরিবার ইসলামের ক্ষমতায় আসে এবং নতুন এক খেলাফতের সূচনা করে, যা ‘উমাইয়া খিলাফত’ নামে পরিচিত। এই খিলাফত ৯০ বছর ধরে শাসন করে এবং এ সময় ইসলামের রাজধানী আরব উপদ্বীপ থেকে দামেস্কে স্থানান্তরিত করা হয়। মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে উমাইয়া খিলাফতের যাত্রা শুরু হয়; মুয়াবিয়া ছিলেন আবু সুফিয়ানের পুত্র এবং তৃতীয় খলিফা উসমানের ভাতিজা।

মুয়াবিয়া ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নতুন আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত করেন, রাজবংশীয় খলিফাতের মাধ্যমে। তার শাসনে খলিফার পদ পিতা থেকে পুত্রের কাছে স্থানান্তরিত হয়। ২০ বছরের শাসনের পর, মুয়াবিয়া ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তার পুত্র ইয়াজিদকে, যা ইসলামের মধ্যে মতবিরোধের সৃষ্টি করে।

যুদ্ধের চরম পটভূমিতে, কারবালার যুদ্ধে (৬৮৩ খ্রি.) ইয়াজিদের বাহিনী হযরত আলীর পুত্র হোসাইন (রা.) এবং তার ৭২ জন সঙ্গীকে হত্যা করে। এই ঘটনা শিয়াসহ সকল মুসলমানের মনে গভীর বেদনার সঞ্চার করে এবং ইসলামের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়।

এ সময়, উমাইয়া খলিফারা ইসলামের বিজয়ের দ্বিতীয় ঢেউয়ের নেতৃত্ব দেয়, যাদের অধীনে সাম্রাজ্যটি মধ্য এশিয়া থেকে আইবেরিয়ান উপদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তবে ৭৩২ খ্রিস্টাব্দে ট্যুর যুদ্ধে ফ্রাঙ্কিশ বাহিনীর কাছে মুসলিম বাহিনীর পরাজয়ের ফলে পশ্চিম ইউরোপে ইসলামের বিস্তার থমকে যায়, যা ইউরোপে ইসলাম প্রসারের কার্যত সমাপ্তি ঘটায়।

মারওয়ানিদ বংশের দ্বিতীয় শাসক খলিফা আবদ আল-মালিক (৬৮৫-৭০৫) উমাইয়া খলিফতের সবচেয়ে শক্তিশালী শাসক হিসেবে পরিচিত হন। তিনি ইসলামের ক্ষমতাকে কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত করেন দামেস্কে এবং ইসলামি সাম্রাজ্যের আরব পরিচয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করেন। তার শাসনকালে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, বিশেষ করে জেরুজালেমের ‘ডোম অফ দ্য রক’ (৬৮৫-৬৯২)।

তবে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন, বিদ্রোহ এবং মুসলমানদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ উমাইয়া খলাফতকে ক্রমাগত দুর্বল করে তোলে। ৮ম শতাব্দীর মাঝামাঝি, উমাইয়া বিরোধীরা গোপনে একটি সামরিক বাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়। এই বাহিনী পরে উমাইয়া পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং ক্ষমতা দখল করে নেয়।

এভাবে, উমাইয়া খিলাফতের পতনের ফলে ‘আব্বাসীয় খিলাফতের’ সূচনা হয়, যা ইসলামের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। উমাইয়া খলাফত ইসলামের বিস্তার, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে, যদিও এর সাথে যুক্ত হয়েছে সংঘাত ও বিভক্তির কালো অধ্যায়।

আব্বাসীয় খিলাফত: (৭৫০-১২৫৮ খ্রি.)

৭৫০ সালে, বিশৃঙ্খলার মধ্যে আব্বাসীয় খিলাফতের সূচনা ঘটে। আব্বাসীয় খলিফারা ছিলেন এক সুন্নি আরব পরিবারের সদস্য, যারা মহানবীর চাচা আব্বাসের বংশধর হিসেবে পরিচিতি পেতেন। তাদের ক্ষমতা গ্রহণের পর মুসলমানদের মধ্যে অস্থিরতা কমে যায় এবং এক নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা হয়। আব্বাসীয় খলিফাদের নেতৃত্ব ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল, যা ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

আব্বাসীয় খলিফারা ক্ষমতায় আসার পর, মুসলিম বাহিনী চীনা সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘তালাসের যুদ্ধে’ (৭৫১ খ্রি.) জয়লাভ করে, যা ইসলামী সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে। এরপর তারা ইসলামী সাম্রাজ্যের বৃদ্ধি বন্ধ করে দিয়ে খিলাফতের প্রতিষ্ঠার দিকে মনোনিবেশ করে। রাজধানী ‘দামেস্ক’ থেকে নতুন নির্মিত শহর ‘বাগদাদে’ স্থানান্তরিত করা হয়, যা শীঘ্রই বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে সমৃদ্ধ শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বাগদাদ সেই সময়ের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, যেখানে কবি, লেখক, চিকিৎসক, দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য উর্বর ভূমি সৃষ্টি হয়। গ্রীক এবং অন্যান্য ভাষার বৈজ্ঞানিক লেখাগুলি আরবিতে অনুবাদ করা হয়, যা মুসলমানদের বিশাল বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ভিত্তি তৈরি করে। এই কারণে আব্বাসীয় যুগকে ‘ইসলামী সভ্যতার স্বর্ণযুগ’ বলা হয়।

হারুন আল-রশিদ, একজন বিখ্যাত আব্বাসীয় খলিফা, যিনি ‘অ্যারাবিয়ান নাইটসে’র গল্প থেকে পরিচিত, পণ্ডিতদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করেন। তার শাসনামলে ইউরোপের প্রথম সম্রাট শার্লেমেনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখা হয়, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

তবে ৯ম শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে আব্বাসীয় খলিফারা সমগ্র সাম্রাজ্যের উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করেন। স্থানীয় মুসলিম রাজবংশগুলি শক্তিশালী হতে শুরু করে এবং বিভিন্ন অঞ্চলে দখল করে। ধীরে ধীরে, খলিফারা রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হারান এবং কেবলমাত্র একটি ন্যায্য পণ্ডিত হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

আরবের একচ্ছত্র ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ সৈন্যদের মধ্যে পারস্য ও তুর্কি শক্তির উত্থান ঘটতে থাকে। এ সময় ইসলামের পরিচয় পরিবর্তিত হতে থাকে এবং এটি বহুসংস্কৃতির ইসলামে পরিণত হয়। পশ্চিমে, আইবেরিয়া কখনও আব্বাসীয়দের দ্বারা শাসিত হয়নি; বরং উমাইয়া রাজবংশের একটি অবশিষ্টাংশ দ্বারা শাসিত হয়।

স্পেনে ইসলামী উপস্থিতি শতকের পর শতক স্থায়ী ছিল, যদিও এটি ধীরে ধীরে খ্রিস্টান রিকনকুইস্টার দ্বারা হুমকির মুখে পড়ে। পূর্বে, বিভিন্ন পারস্য রাজবংশ আব্বাসীয়দের খরচে শাসন করতে থাকে, যার মধ্যে কিছু পারস্য সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পারস্য ভাষার পুনর্জন্ম ঘটে, যা আরবি লিপি গ্রহণ করে। ৯৪৫ সালে, পারস্যের বুইদ রাজবংশ বাগদাদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। যদিও বুইদরা শিয়া ছিল, তারা ইরাক এবং পশ্চিম ইরানে বিস্তৃত একটি কনফেডারেশন নিয়ন্ত্রণ করার সময় সুন্নি আব্বাসীয় খলিফাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়নি, বরং তাদের ক্ষমতা সীমিত করতে চেয়েছিল। তাদের শাসন একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল।

আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের পটভূমিতে রাজনৈতিক বিভাজন, গৃহযুদ্ধ এবং সামাজিক অস্থিরতা ছিল, যা ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় শুরু করে। ১২৫৮ সালে, মঙ্গোলদের আক্রমণে বাগদাদের পতনের ফলে আব্বাসীয় খিলাফতের অবসান ঘটে, যা ইসলামী সভ্যতার জন্য এক বৃহৎ সংকটের সূচনা করে।

ফাতেমীয় খিলাফত: (৯০৯-১১৭১ খ্রি.)

ফাতেমীয় খিলাফতের উন্মেষ ঘটে ৯০৯ সালে, যখন একটি উচ্চাভিলাষী আরব শিয়া রাজবংশ ক্ষমতায় আসে। এই রাজবংশ নিজেদের মুহাম্মদের কন্যা এবং আলী স্ত্রী ফাতিমার বংশধর হিসেবে পরিচয় দিত, যদিও এই দাবির সত্যতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ফাতেমীয় রাজবংশ উত্তর আফ্রিকার মধ্য দিয়ে মিশরে বিস্তৃত হয় এবং ‘কায়রো’কে তাদের নতুন রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। 

আজকের মরক্কো,আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া,সুদান, সিসিলি, জর্ডানসহ অনেক অঞ্চল ছিল  এই খেলাফতের অধীনে।

ফাতেমীয়রা আব্বাসীয় খিলাফতকে উৎখাতের উদ্দেশ্যে ধর্মপ্রচারকদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যা সুন্নি খলিফাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তারা ২০০ বছর ধরে শাসন করে, কিন্তু বাগদাদের সাথে যুদ্ধে তারা পরাজিত হয় এবং আব্বাসীয় খিলাফতকে সম্পূর্ণরূপে উৎখাত করতে ব্যর্থ হয়।

১১৭১ সালে সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী ফাতেমী খেলাফতের পতন ঘটান এবং  আইয়ুবী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে আইয়ুবী তার রাজ্যকে আব্বাসীয় খিলাফতের সাথে যুক্ত করেন।

সেলজুক সাম্রাজ্য: (১০৩৭-১১৯৪ খ্রি.)

১০৩৭ সালে সুন্নি তুর্কি পরিবারের সন্তান সেলজুক একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময়ে শিয়া রাজবংশগুলো রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করছিল, যার মধ্যে ফাতেমীয় এবং বুইদ রাজবংশ উল্লেখযোগ্য। ১০ম ও ১১তম শতাব্দীতে, মধ্য এশিয়ায় রাজনৈতিক ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবনে বিপর্যয় ঘটে, যা তুর্কি উপজাতিদের সঙ্গবদ্ধ করেছিল। 

সেলজুকরা ১০৫৫ সালে বাগদাদের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে এবং শিয়া বুইদদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। তারা সুলতান উপাধি গ্রহণ করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে কেন্দ্রীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে। যদিও তারা আব্বাসীয় খলিফাদের পুরোপুরি ক্ষমতাচ্যুত করেনি, তারা শিয়া ফাতিমীদের হুমকি থেকে আব্বাসীয়দের রক্ষা করেছিল।

বর্তমান সময়ের ইরাক, ইরান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন সহ মধ্যেপ্রাচ্যের অনেক অঞ্চল ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।

১০৭১ সালে ‘মানজিকার্টের যুদ্ধে’, সেলজুক সুলতান বাইজেন্টাইন সম্রাটকে পরাজিত করেন, যা আনাতোলিয়া তুর্কি উপজাতিদের জন্য উন্মুক্ত করে। এই অঞ্চলে ‘রুম অফ সালতানাত’ নামক সেলজুক শাখার প্রতিষ্ঠা ঘটে, যা আধুনিক তুরস্কের ভিত্তি তৈরি করে। সেলজুকদের উত্তরসূরী ভারতবর্ষে ‘মোঘল সাম্রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করে।

ক্রুসেডারদের দখল: (১০৯৫-১২৯১ খ্রি.)

১০৯৫ সালে, যখন ইসলামী মধ্যপ্রাচ্য রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত ছিল, তখন ক্যাথলিক চার্চের নির্দেশে ‘ক্রুসেড’ শুরু হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের হাত থেকে খ্রিস্টানের পবিত্র স্থানগুলো মুক্ত করা। ইউরোপীয় বাহিনী জেরুজালেম দখল করে এবং ভূমধ্যসাগরের তীরে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। মুসলমানরা তাদের নতুন প্রতিবেশীকে নিকৃষ্ট সংস্কৃতির প্রতিনিধি হিসেবে দেখা শুরু করে।

১২শতকে, সালাদিন আইয়ুবি (১১৩৮-১১৯৩) ক্ষমতাবান হন। তিনি একজন সুন্নি কুর্দি পরিবারের সদস্য এবং শিয়া ফাতিমীদের শাসন উচ্ছেদ করে ‘আইয়ুবিদ রাজবংশ’ প্রতিষ্ঠা করেন। সালাদিন ক্রুসেডারদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন এবং ১১৮৭ সালে ‘হাত্তিনের যুদ্ধে’ জয়ের মাধ্যমে জেরুজালেমকে মুক্ত করেন। যদিও ক্রুসেডারদের আক্রমণ গুরুতর ছিল, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা কার্যকর প্রমাণিত হয়নি।

এ সময়, সেলজুক রাজ্যের পতন ঘটে এবং নতুন একটি আঞ্চলিক শক্তি, তুর্কি ‘খোয়ারেজমিয়ান সাম্রাজ্য’, প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা ইরান ও মধ্য এশিয়ার কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। 

১৩শ শতাব্দীর ইসলামিক ইতিহাস বিশেষভাবে সমাদৃত হয়, যেখানে রাজনৈতিক ও সামরিক বিভাজন সত্ত্বেও ইসলামি সভ্যতা নানা নতুন ধারায় বিকশিত হতে থাকে। 

ফাতেমীয় খিলাফত, সেলজুক সাম্রাজ্য ও ক্রুসেডারদের দখল, এসব ঘটনার ফলে ইসলামী সভ্যতা রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে একটি নতুন দিগন্তে প্রবেশ করে। এই সময়কার ঘটনাবলি ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও বিবর্তনের সূচনা করে, যা পরবর্তী শতাব্দীজুড়ে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

মঙ্গোলদের জয় ও নৃশংসতা: (১২৫৮-১২৬০)

চেঙ্গিস খান, যিনি মঙ্গোলদের শাসক হিসেবে খ্যাত, তার নেতৃত্বে মঙ্গোলরা সারা বিশ্বে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। তারা মূলত শামানিক ধর্মাবলম্বী যাযাবর উপজাতিদের সমন্বয়ে গঠিত। চেঙ্গিস খানের অধীনে মঙ্গোল সাম্রাজ্য মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়।

১৩শতকের শুরুতে, খওয়ারেজমিয়ান সাম্রাজ্যের মুসলিম শাসকরা অপ্রস্তুত অবস্থায় মঙ্গোল বণিকদের হত্যা করে, যা মঙ্গোলদের প্রতিশোধের পথ সুগম করে। এই ঘটনার পর মঙ্গোলরা ইরান, ককেশাস, এবং আনাতোলিয়া দখল করে ফেলে। 

১২৫৮ সালে, হালাকু খান, চেঙ্গিস খানের নাতি, বাগদাদ অবরোধ করেন। শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়, যেখানে প্রায় দশ লাখ বাসিন্দা নিহত হয়। বাগদাদের বিখ্যাত লাইব্রেরি, ‘হাউস অফ উইজডম’, ইসলামের স্বর্ণযুগের সমাপ্তি নির্দেশ করে। আব্বাসীয় খলিফাকে হত্যা করা হয় অত্যন্ত নৃশংসভাবে—তাকে একটি কার্পেটে মুড়ে ঘোড়ার দ্বারা পদদলিত করা হয়। এই ঘটনাটি আব্বাসীয় খিলাফতের পাঁচশ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়।

মুসলমান ক্রীতদাস মামলুকেরা ক্ষমতায়: (১২৫০-১৫১৭ খ্রি.)

বাগদাদ দখল করার পর হালাকু খান মিশরের দিকে অগ্রসর হন, সেখানে তিনি সালাদিনের আইয়ুবী রাজবংশকে উৎখাত করেন। কিন্তু পরে, মঙ্গোলরা নতুন শক্তি ‘মামলুক সালতানাত’-এর কাছে পরাজিত হয়। মামলুকরা ছিলেন তুর্কি ক্রীতদাস সৈনিক, যারা ইসলাম গ্রহণ করে শাসকদের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক যোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হন। 

১২৬০ সালের ‘আইন জালুতের যুদ্ধ’-এ মামলুকরা মঙ্গোলদের পরাজিত করে তাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়। মামলুক সুলতান ‘বাইবার্স’ এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন, যিনি মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে প্রথম বড় জয় অর্জন করেন। বাইবার্স মিশরে আব্বাসীয় খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন, যদিও শুধুমাত্র একটি অংশে তাদের ক্ষমতা বজায় রাখতে সক্ষম হন। মামলুকরা ২৫০ বছর ধরে শাসন করে।

মঙ্গোলদের বংশধরদের ইসলাম গ্রহণ: (১৩৭০-১৫০৭০ খ্রি.)

১৩শতকের শেষের দিকে, মঙ্গোল সাম্রাজ্য স্থানীয় রাজবংশগুলিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। চেঙ্গিস খানের বংশধররা, বিশেষত ইলখানিদ রাজবংশ, ইসলামে ধর্মান্তরিত হয় এবং তুর্কি উপভাষা গ্রহণ করে। ইলখানিদরা আনাতোলিয়া থেকে ইরান পর্যন্ত শাসন করে, এবং তারা শুধু বর্বর নয়, বরং অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সমৃদ্ধির প্রতিনিধিও হিসেবে পরিচিত।

১৪শতকে ইলখানিদের পতন ঘটে, এরপর তৈমুর লং একটি বিশাল সাম্রাজ্য গঠন করেন। তৈমুরের অধীনে মঙ্গোলরা আবারও সাংস্কৃতিক ও সভ্যতার উন্নতির সূচনা করে। তার সাম্রাজ্য ১৫শতকের শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল।

একই সময়ে, পশ্চিমে নতুন শক্তি ‘অটোম্যান সম্রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যা ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

মঙ্গোলদের জয় এবং তাদের বর্বরতা, পাশাপাশি মামলুকদের প্রতিরোধ ও মঙ্গোলদের বংশধরদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ইসলামী ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করে। এই সময়কালটি কেবল যুদ্ধ ও বিজয়ের ইতিহাস নয়, বরং সভ্যতার উত্থান ও পতনের দৃষ্টান্তও।

অটোম্যান সম্রাজ্য: (১২৯৯-১৯২২ খ্রি.)

১৩০০ সালের দিকে, ওসমান নামক এক ব্যক্তি আনাতোলিয়ায় (বর্তমান তুরস্ক) একটি ছোট তুর্কি মুসলিম রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তার পিতা আতুগ্রুল গাজীর (১১৯৭-১২৮৭ খ্রি.) নেতৃত্ব ও বীরত্বের কাহিনী অটোম্যান সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছিল। তিনি সেলসুজ সম্রাজ্য থেকে উত্তর-পশ্চিম আনাতোলিয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

ওসমান গাজী (১২৫৪-১৩২৪ খ্রি.) বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আনাতোলিয়া ও বলকান অঞ্চলে ভূমি অধিকার করতে সক্ষম হন। এর ফলে তিনি এবং তার বংশধররা অটোমান সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন।

১৪৫৩ সালে সুলতান মেহমেদ দ্বিতীয় নেতৃত্বে অটোমানরা কনস্টান্টিনোপল দখল করে, যা বাইজেন্টাইন শাসনের এক হাজার বছরের অবসান ঘটায়। এই বিজয়কে মধ্যযুগের সমাপ্তি হিসেবে ধরা হয়। কনস্টান্টিনোপল পরে ইস্তাম্বুল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং তুর্কিদের নতুন রাজধানীতে পরিণত হয়।

সুলতান সেলিম দ্য গ্রিমের (১৪৭০-১৫২০) খ্রি. নেতৃত্বে অটোমান সাম্রাজ্য দ্রুত বিস্তৃত হয়। তিনি নতুন উদ্ভাবিত গানপাউডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাম্রাজ্যের আকার তিনগুণ বাড়ান এবং ১৫১৭ সালে কায়রো দখল করেন, শেষ মামলুক সুলতানকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এই ঘটনায় কায়রোর আব্বাসীয় খিলাফতের অবসান ঘটে, এবং সেলিম নিজেকে সুন্নি ইসলামের নতুন খলিফা ঘোষণা করেন।

সুলেইমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট (১৪৯৫-১৫৬৬ খ্রি.) ছিলেন অটোম্যান সম্রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রসিদ্ধ সুলতান।

১৬শতকে, অটোমান সাম্রাজ্যের পাশাপাশি ‘সাফাভিদ সাম্রাজ্য’ (১৫০১-১৭৩৬ খ্রি.) এবং ‘মুঘল সাম্রাজ্য’ (১৫২৬-১৮৫৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তিনটি শক্তি একসাথে ‘গানপাউডার সাম্রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত হয়, যা আধুনিক যুগের প্রথম দিকে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল ছিল। অটোমান সাম্রাজ্য ছিল ইসলামের ইতিহাসের শেষ খিলাফত, যা ৬০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টিকে ছিল। 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, ১৯২২ সালের ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উসমানীয় খিলাফতের অবসান ঘটে, যা ইসলামী ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

বাংলায় ইসলামের আগমন: (৭১১-১২ শতক)

৭১১ থেকে ১২ শতকের দিকে উমাইয়া খিলাফতের সময় ইরাক অঞ্চলের শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ছিলেন। তার ভাগনে মোহাম্মদ বিন কাশেম সিন্ধু উপত্যকা জয় করেন, যদিও সেটি বেশিদিন টেকে না। 

এরপর, গজনবী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সুবক্তগীন ৯৮৬-৮৭ সালের দিকে কয়েকবার ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন, তবে সফল হননি। তার পুত্র সুলতান মাহমুদ ১০০০ থেকে ১০২৭ সালের মধ্যে ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন এবং লুণ্ঠন করেন, কিন্তু স্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।

দুইশত বছর পরে, গজনীর আরেক সুলতান মুহাম্মদ ঘুরি ১১৯২ সালে তরাই যুদ্ধে দিল্লীর রাজা পীথৃরাজ চৌহানকে পরাজিত করেন। এটি ভারতে মুসলমানদের প্রথম স্থায়ী বিজয় হিসেবে ধরা হয়। ঘুরির তুর্কী সেনাপতি বখতিয়ার খিলজি ১২০৪ সালে লক্ষন সেনকে পরাজিত করে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করেন।

মুহাম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর, তার দাস কুতুবউদ্দিন আইবেক ১২০৬ সালে দিল্লির প্রথম সুলতান হন। এরপর ভারতবর্ষে একে একে বিভিন্ন মুসলিম সম্রাজ্যের উত্থান ঘটে।

সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘস্থায়ী সম্রাজ্যটি ছিল ‘মুঘল সম্রাজ্য’, যা ১৫২৬ সালে বাবরের হাত ধরে শুরু হয়। বাবরের নাতি সম্রাট আকবর (১৫৪২-১৬০৫) এই সম্রাজ্যকে বিশালতা দান করেন। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ পুরোপুরি দখল করে নেয়, ফলে মুঘল সম্রাজ্যের অবসান ঘটে।

ইসলামের আধুনিক যাত্রা:

ব্রিটিশরা ক্ষমতা গ্রহনের পর ভারতবর্ষের মুসলমানেরা কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। হিন্দুরা ব্রিটিশদের কাছাকাছি পৌঁছায়। সরকারি সুযোগসুবিধা ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি তারা সহজে গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। পববর্তীতে অবশ্য হিন্দুরাই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অগ্রগ্রামী ভুমিকা পালন করে।

১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হয়ে দুটি দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয় ভারত ও পাকিস্তান। ভারত ও পাকিস্তানে যদিও হিন্দু মুসলমান দুই ধর্মের মানুষই  এখনও বসবাস  করে।

পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে এক রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে নতুন দেশ প্রতিষ্ঠা হয়, যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

খিলাফতের ধারার শেষে ইসলাম রাষ্ট্রীয় ভিত্তিক ইসলামী শাসন ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়। বর্তমানে ইসলাম বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম, এবং ৫৬টি মুসলিম প্রধান দেশে প্রায় ১৯০ কোটি মুসলমান রয়েছে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ। 

এইসব ঘটনার মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাস এবং মুসলিম সভ্যতার বিবর্তন প্রকাশ পায়, যা বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


 এই লেখাটির তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনায় AI এর সহায়তা নেয়া হয়েছে

 বিভাগীয় সম্পাদক


৩৯ thoughts on “ইসলামের ১৫০০ বছর: একটি ইতিহাসের বিবর্তন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x