পলাশীর পাঁচ ষড়যন্ত্রকারীর পরিনতি


পারভেজ সেলিম


বাঙালীর এক দু:স্বপ্নের নাম পলাশীর যুদ্ধ। প্রায় দুইশত বছরের জন্য স্বাধীনতার শিকল টেনে ধরেছিল ইংরেজরা, এই হয়েছিল পলাশীর প্রান্তরে। 

মাত্র ৩ ঘন্টার যুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষে নিহত হয়েছিল মাত্র ২২ জন সৈন্য। যার মধ্যে খাটি ইংরেজ ছিল মাত্র ৭ জন বাকি ১৪ জন ইংরেজদের পক্ষে চাকরি করা এদেশেরই মানুষ । আর নবাবের পক্ষে জীবন উৎসর্গ করেছিল ৫০০ জন যোদ্ধা। কারো কারো মতে এই সংখ্যাটি ১৫০০ । যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলা ।

এই যুদ্ধে শুধু শক্তির পরীক্ষায় পরাজিত হয়নি বাংলার শেষ নবাব, পরাজিত হয়েছিল ঘরের মানুষদের ষড়যন্ত্রের কারণে।

শেষ নবাবের নিজের খালা ঘসেটি বেগম, প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ও তার ছেলে মীরন, বাংলার সেসময়ের শ্রেষ্ঠ ধনী জগৎশেট, রায়দুর্লভ এবং পলাশীর প্রধান খলনায়ক  ইংরেজ সেনাপতি  লর্ড ক্লাইভের ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়েছিল ভারতবর্ষ তথা বাংলার স্বাধীনতা।

দুইশত বছরের জন্য ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সূর্য ডুবিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশরা।

কিন্তু যুদ্ধে জয়ী হলেও ষড়যন্ত্রের কুশীলবদের জীবনের শেষ পরিনতি হয়েছিল করুণ। হয়ত কাকতালীয় নয়ত প্রকৃতির বিচারে সকল ষড়যন্ত্রকারীই মৃত্যু হয়েছিল অস্বাভাবিকভাবে। কি হয়েছিল তাদের শেষ পরিনতি? 

৫.

পলাশী যুদ্ধের সবচেয়ে নৃশংস ব্যক্তিটির নাম মীর মীরন। পুরো নাম মীর সাদিক আলী খান বাহাদুর।

বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের প্রথম পুত্র। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে তার হুমুকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয় সিরাজের লাশকে হাতির পিঠে রাস্তায় ঘুরিয়ে মুর্শিদাবাদকে এক আতংকের জনপদে পরিনত করেছিলেন ২৩ বছরের এই যুবক। পরবর্তীতে তালিকা তৈরি করে সিরাজের পরিবারের সদস্যদের সমুলে হত্যা করেছিলেন। হত্যার শিকার হয় সিরাজের পরিবারের অভাগা ৩০০ জন সদস্য।

সিরাজকে হত্যার ঠিক তিন পর ১৭৬১  সালে একই দিনে ৩ জুলাই এক বজ্রপাতে নিহত হন এই নৃশংস ব্যক্তি। রাজমহলের কাছে আজিমাবাদের এক যুদ্ধের ময়দানে তাবুতে ঘুমিয়ে ছিলেন মীরণ।

কারো কারো মতে তাবুতে আগুন লাগিয়ে ইংরেজরাই হত্যা করেছিলেন মীরনকে। পরে বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর রটিয়ে দিয়েছিল। ক্ষমতাহীন পুতুল নবাব মীরজাফর পুত্রের মৃত্যুর জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সাহস করতে পারেননি।

৪.

ঘসেটি বেগম ছিলেন সিরাজের বড় খালা। নিজের ঘরের ষড়যন্ত্রকারী। পলাশীর যুদ্ধে মুল ষড়যন্ত্রকারীর প্রথম তিনজনের একজন তিনি। যুদ্ধ শেষে মীরণ তাদের বন্দি করে ঢাকার জেলে পাঠিয়ে দেন।

পরবর্তীতে মুক্তি দেবার কথা বলে সিরাজের মা আমেনা বেগম ও খালা ঘসেটি বেগমকে নৌকায় করে মুর্শিদাবাদ আনার সময় বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে হত্যা করেন। সময়টা ১৭৬০ সাল।

৩. 

জগৎশেট ছিলেন সে সসময়ের সবচেয়ে ধনবান প্রভাবশালী ব্যক্তি। পলাশী ষড়যন্ত্রকারি প্রধান পৃষ্ঠপোষক। বলা হয়ে থাকে ইংরেজদের তলোয়ার আর বুদ্ধি এবং জগৎ শেঠের টাকার কাছে বাংলার স্বাধীনতা লুন্ঠিত হয়েছিল।

১৭৬৩ সালে তাকে ও তার ভাইকে একসাথে হত্যা করেন মীর জাফরের জামাতা মীর কাশেম। 

২.

মীরজাফর মারা যায় বসন্ত রোগে। পলাশী যুদ্ধের ৭ বছর পর। ক্ষমতায় বসার লোভে যে দেশের সঙ্গে বেইমানী করেছিল সেই ক্ষমতায় বসেছিল ঠিকই কিন্তু মুল কলকাঠি নাড়ছিল ইংরেজরা। ব্রিটিশদের কথামত চলতে পারেনি বলে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। 

জামাতা মীরকাশেমকে বসানো হয়। স্বাধীনচেতা মীরকাশেমের সাথে দ্বন্দ শুরু হলে আবার মীরজাফরকে ক্ষমতায় বসায় ইংরেজরা । দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসার চারমাসের মাথা তার মৃত্যু হয়।

শরীরে পচন ধরেছিল তার। দূর্গন্ধে কেউ কাছে যেতে পারতো না। বসন্ত হয়েছিল বলে অনেকে ধারণা করেন। ১৭৬৫ সালের ৬ ফেব্রুযারি ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বাংলার বিশ্বাসঘাতক এই মীরজাফর।

১. 

আর লর্ড ক্লাইভ কেরানী হয়ে ভারতে এসেছিলেন,ভারত দখলকে ফিরে গেছিলেন।

ভারত লুট করে যত ধনসম্পদ তিনি নিয়ে যান তাতে  মুহর্তেই ব্রিটিশদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজনে পরিনত হয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে ফিরে প্রথমে এমপি পরে স্থানীয় শহরের মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

শেষ পর্যন্ত সেই সুখ তার কপালো সয়নি। তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও অনিয়মেয় অভিযোগ ওঠে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে নিজের গলায় নিজে ছুরি চালিয়ে  আত্নহত্যা করেছিলেন পৃথিবীর ইতিহাস বদলে দেয়া এই ব্রিটিশ।

পরিশেষ :

পলাশীর প্রধান পাঁচ ষড়যন্ত্রকারীর তিনজনেই হত্যার শিকার হয়েছিলেন। মীরন,ঘসেটি বেগম আর জগৎশেট। মীরজাফর কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর প্রধান কুশিলব লর্ড ক্লাইভ আত্নহত্যা করেই শেষ করেন নিজের জীবন। কেউ কেউ মনে করেন এই সকল অস্বাভাবিক মৃত্যু কাকতালীয়, আবার অনেকে এটাকে প্রকৃতির বিচার বলে ভাবতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন।


পারভেজ সেলিম

লেখক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রকর্মী

ভিডিও সৌজন্যে : BANGLABOX

১১৭ thoughts on “পলাশীর পাঁচ ষড়যন্ত্রকারীর পরিনতি

  1. IWIN CLUB – Is a pioneer game portal and one of the first 3 reward card game portals voted by Time game magazine as the greenest game portal in Asia.. With a beautiful interface, smooth experience, and diverse game system, IWIN CLUB attracts players because of its fairness, prestige and classy experience, large community, attractive gifts, Iwin is currently considered No. It’s too much to say that Iwin is aiming for number 1 in Asia and in the world! https://iwin2023.club/

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x