পলাশী: বীর বেঈমান ও ষড়যন্ত্রের যুদ্ধ


পারভেজ সেলিম


১০.

শওকত জং: সিরাজের প্রথম প্রতিদ্বন্দী 

পলাশীর যুদ্ধ শুরুর আগে যে পারিবারিক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সেখানে বাঙলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান প্রতিদ্বন্দী ছিলেন শওকত জং।

আলীবর্দি খানের তিন মেয়ে। প্রথম কন্যা ঘসেটি বেগম। যার কোন সন্তান ছিল না। দ্বিতীয় কন্যা মায়মুনা বেগমের সন্তান ছিল শওকত জং। আর নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন তৃতীয় কন্যা আমেনা বেগমের পুত্র।

ঘসেটি বেগম কোনভাবে চাননি সিরাজ নবাব হোক। তিনি ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছাড়তে শুরু করেন প্রথম থেকেই।

সিরাজ ক্ষমতা গ্রহণের পরেই ঘসেটি বেগমকে বন্দি করেন। ঘসেটি বেগম অধ্যায় শেষ করে তরুণ নবাব মনোযোগ দেন পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জংয়ের দিকে। শওকত জং সিরাজউদ্দৌলাকে নবাব হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। তিনি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। 

বাপের মৃত্যুের পর শওকত জং পূর্নিয়ার নায়েব নাজিম হয়েছিলেন, ১৭৫৬ সালের মার্চে। মাত্র ৭ মাসে ক্ষমতায় থাকার পরই সিরাজের সাথে শুরু হয় তার যুদ্ধ।

রাজমহলের কাছে শওকতের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন সিরাজউদ্দৌলা। ১৭৫৬ সালের অক্টোবরের সেই যুদ্ধে শওকত জং পরাজিত ও নিহত হন। 

বাঙলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হতে চেয়েছিলেন শওকত জং। কিন্তু নানা আলীবর্দি খান বেছে নেন খালাতো ভাই সিরাজউদ্দৌলাকে। 

পলাশী যুদ্ধের আগে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল প্রতিদ্বন্দী শওকত জং এর সাথে, সেখানে ২৩ বছর বয়সী সিরাজউদ্দৌলা জয়ী হয়েছিলেন। পলাশী যুদ্ধের আগেই নিহত হলেও পলাশী যুদ্ধে এক বিশেষ চরিত্র হিসেবে টিকে আছেন শওকত জং।

নবাব সিরাজও মাত্র ১৪ মাস ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন। তার পরাজয়ে পৃথিবীর ইতিহাস বদলে যায় প্রায় দুশো বছরের জন্য।

৯. 

মীরন: পলাশীর সবচেয়ে নৃশংস ব্যক্তি

পলাশী যুদ্ধের সবচেয়ে নৃশংস ব্যক্তিটির নাম মীরন। মীরজাফরের বড় ছেলে। যুদ্ধে পরাজয়ের পর সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্য অনেকটা ঝুলে ছিল। মীরজাফর শেষ নবাবের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেননি। শেষ স্বাধীন নবাব সিরাউদ্দৌলাকে হত্যার সিদ্ধান্ত একাই নিয়েছিলেন মীরন। তার নির্দেশেই মোহাম্মাদি বেগ হত্যা করেছিল বাঙলার শেষ স্বাধীন নবাবকে। শুধু এই হত্যাকান্ড ঘটিয়ে থেমে থাকেনি তিনি, নবাবের লাশ গাধার পিঠে চড়িয়ে সারা শহর ঘুরিয়েছিলেন।

শুধু তাই নয়, তিনি সিরাজের পুরো বংশকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং একে একে তা কার্যকর করেন।

সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের যতজন সদস্যকে সে হত্যা করেছিল, তার একটা তালিকা সে নিজের কাছে রাখতেন। খুব কম সময়ের মধ্যেই সেই তালিকায় নামের সংখ্যা ৩০০-রও বেশি হয়ে গিয়েছিল।

তার প্রতিদ্বন্দ্বীদেরকে আর আগের প্রশাসনের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে মীরন রাজপ্রাসাদের প্রধান ফটকের কাছেই হয় ছুরি দিয়ে হত্যা করেছিল, বা বিষ খাইয়ে মেরেছিলেন।

জানা যায় মীরনের এই নির্মম হত্যার শিকার হয় সিরাজের পরিবারের ৩০০ জন অভাগা সদস্য। 

সিরাজের মা আমেনা ও খালা ঘসেটি বেগমকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ নেবার পথে বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে মেরেছিলেন। অবাক  করা ব্যাপার হলো পলাশী যুদ্ধে সময় এই নৃশংস ভয়ংকর যুবকের বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। 

পরবর্তীতে মাত্র ২৩ বছর বয়সে বজ্রপাতের আঘাতে অপমৃত্য হয় এই নৃশংস ভয়ংকর তরুণ যুবকটির। তবে অনেকে মনে করেন তাকে ইংরেজরা হত্যা করে তাবুতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।পিতা মীরজাফর ইংরেজদের বজ্রপাতে মৃত্যুর কথা বিশ্বাস কারা ছাড়া উপায় ছিলনা। পুত্র হত্যার প্রতিবাদ করার ক্ষমতাটুকুও ছিলনা মীরজাফরের।

৮.

লুৎফুনেচ্ছা: সিরাজের নির্ভীক স্ত্রী

নবাবের তৃতীয় ও প্রিয়তমা স্ত্রী ছিলেন লুৎফুন্নেছা।সিরাজউদ্দৌলার নানীর গৃহকর্মী ছিলেন তিনি। তার সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে সিরাজ প্রথমে তার কাছে নিয়ে আসেন। পরে তার প্রেম ও বিয়ে হয় নবাবের। 

বিয়ের পর হিন্দু থেকে মুসলমান হন তিনি।রাজকোয়ারি থেকে হন লুৎফুন্নেছা। সিরাজদের প্রথম দুই স্ত্রীর কোন সন্তান না থাকলেও লুৎফার ঘরে জন্ম নেয় একমাত্র সন্তান উম্মে জোহরা বেগম।

যুদ্ধের পর সিরাজের পরিবারে সবাইকে হত্যা করেছিল মীরজাফরের পুত্র মীরর। শুধু স্ত্রী লুৎফুন্নেছা ও সিরাজের একমাত্র মেয়ে জোহরা ছাড়া। 

লুৎফা দেখতে খুব সুন্দরী ছিলেন বলে নবাব হবার পর তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল পিতা মীর জাফর ও পুত্র মীরন দুজনেই।কিন্তু লৎফা রাজি হননি। 

এই রাজি না হওয়া নিয়ে তার করা একটি উক্তি বিখ্যাত হয়ে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘সিংহের সাথে থেকেছি গাধার সাথে কিভাবে থাকবো?”। কারো কারো মতে বাক্যটি ছিল ‘প্রথমে হাতির পিঠে চড়েছি, এখন গাধার পিঠে চাপা সম্ভব নয়।”

পলাশীর বিপর্যয়ের পর সিরাজ, লুৎফা ও মেয়ে জোহরা পালিয়ে গিয়েছিল। পরে তাদের বন্দি করা হয়। সিরাজকে হত্যা করার পর সাত বছর ঢাকার জেলে বন্দি ছিলেন লুৎফুন্নেছা।

মুক্ত হবার পর মুর্শিদাবাদে চলে যান তিনি। ব্রিটিশদের ৬০০ টাকার পেনশনে জীবন চলতো বাঙলা বিহার উড়িষ্যার  শেষ নবাবের প্রিয়তমা স্ত্রীর।

মেয়ে ও জামাতার মৃত্যুর পর চার নাতনীকে নিয়ে কোন রকমে বেঁচে থাকতে পেনশনের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আবেদন করছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিশের কাছে। সেটা নাকচ করে দেয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্ণধারেরা। 

পাটনায় শ্বশুর আলীবর্দি খানের কবর দেখাশোনা করেই শেষ জীবন কাটিয়েছেন নবাবের প্রিয়তমা স্ত্রী।

৫০ বছর বেঁচে ছিলেন বাংলার শেষ রানী। সিরাজের পরিবারের তারই একমাত্র তারই স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। ১৭৯০ সালে মৃত্যুর পর সিরাজউদ্দৌলার কবরের পাশে  সমাহিত করা হয় স্ত্রী লুৎফুন্নেছাকে।

৭. 

মীর মদন ও মোহনলাল: পলাশীর বীর যোদ্ধারা

সিরাউদ্দৌলা বাংলার সিংহাসনে বসেই যে দুজন ব্যক্তির উপর পূর্ন বিশ্বাস রেখেছিলেন তারা হলেন  বকশী মীরমদন ও মোহনলাল।

পলাশীর প্রান্তরে আমৃত্যু লড়াই করে সেই বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছিলেন অকুতোভয়, দেশপ্রেমিক দুই সেনাপতি। 

মীরজাফর যতটা নিন্দিত তার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য মীর মদন ও মোহনলাল ততটাই নন্দিত তাদের বিশ্বস্ততার জন্য। নিজের জীবন দিয়ে তারা চেষ্টা করেছেন যাতে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত না যায়।

মীরমদন ছিলেন গোলোন্দাজ বাহিনীর প্রধান। যুদ্ধের দিন সকালে তার অতর্কিত হামলায় কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল ইংরেজরা।

আর মোহনলাল ছিলেন আরেক সেনাপতি।

প্রধান সেনাপতি মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে অনেক সৈন্য যুদ্ধে অংশ নেয়নি। এরপর দুপুরের হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গোলাবারুদ ভিজে যায়। অন্যদিকে ইংরেজদের পাশ থেকে উড়ে আসা গোলার আঘাতে আঘাত প্রাপ্ত হন মীরমদন।

তারপরও যুদ্ধে বিরতি না দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন তিনি।

যুদ্ধ চলাকালীন সেই গোলার আঘাতেই মৃত্যুবরণ করেন মীর মদন।

মীরমদনের মৃত্যুর পরও মোহনলাল যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিশ্বাস ঘাতক মীরজাফরের কথায় শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ করায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় মোহনলালের বাহিনী। যুদ্ধ ক্ষেত্রেই নিহত হন এই বীর যোদ্ধাও।

তবে কারো কারো মতে মোহনলাল যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন। যুদ্ধ শেষে আত্নগোপনে ছিলেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। পরে মারা যান।

৬. 

জগৎ শেট: ধনী ষড়যন্ত্রকারী

পলাশী যুদ্ধে পরাজয়ের পিছনে যে কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারী কাজ করেছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে অর্থশালী ছিলেন জগৎশেট। তার অর্থ ব্যবহৃত হয়েছিল নবাব পরাজয়কে নিশ্চিত করার পিছনে। শুধু সিরাজের পরাজয়ে ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। এরপর  মীর কাশেমের সময়ও তিনি একই ষড়যন্ত্র করেছিলেন ।

শেষ পর্যন্ত মীর কাশেমের হাতেই সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন জগৎশেট।

জগৎশেটের পরিবারের উত্থানের কাহিনী ছিল চমকপ্রদ।

১৭১৫ সালে মুঘল সম্রাট ফররুখসিয়ার মানিক চাঁদ নামের এক ব্যবসায়ীকে শেঠ উপাধিতে ভূষিত করেন। এরপর মানিক চাঁদ পরিবার জগৎ শেঠ নামে পরিচিত হয়। মানিক চাঁদের পর শেঠ পরিবারের ক্ষমতা পান ফতেহ চাঁদ। তার সময়েই শেঠ পরিবারের যশ-প্রতিপত্তি চূঁড়ায় পৌঁছেছিল। 

এমনও বলা হয়, ১৭২০ এর দশকে জগত শেঠদের সম্পদের চেয়েও কম ছিল ব্রিটিশ অর্থনীতির আকার। ভাবা যায়! 

পলাশীর যুদ্ধের পর নতুন নবাব হয় মীর জাফর। ১৭৬৩ সালে জগৎ শেঠ, মেহতাব চাঁদ ও স্বরূপ চাঁদসহ এই পরিবারের বেশ কিছু সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে মীর জাফর ও তার জামাতা মীর কাশেম।

১৭৬৪-এ বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত মিরকাশিম জগৎশেঠ, মহাতাব চাঁদ ও স্বরূপচাঁদকে বন্দি করে মুঙ্গেরে নিয়ে যান এবং পরবর্তী সময়ে তাঁদের হত্যা করেন।

৫. 

মীর কাশেম: পলাশীর পরের যোদ্ধা

পলাশীর যুদ্ধের পর ক্ষমতায় বসানো হয় মীর জাফরকে। দুইবছরের মাথায় মীর জাফরকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করে ইংরেজরা। এবার ক্ষমতায় বসানো হয় ইংরেজদের পছন্দে মীর জাফরের জামাতা মীর কাশেমকে।

কিন্তু কাশেম ছিলেন স্বাধীনচেতা। ইংরেজরা প্রথমে হয়ত বুঝতে পারেনি। ক্ষমতায় বসার পর থেকেই ইংরেজদের সাথে বিরোধ শুরু করেন মীর কাশেম। ১৭৬০-১৭৬৩ তিন বছর ইংরেজদের সাথে বৈরিতা করেই ক্ষমতায় টিকে ছিলেন তিনি।

ইংরেজদের সাথে বনিবনা না হওয়ায় শেষপর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন মীর কাশেম। ইতিহাসে যা ‘বক্সারের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। অনেকের মতে বাংলার স্বাধীনতার সুর্য ডুবেছিল ‘বক্সারের যুদ্ধে’ মীর কাশেমের পরাজয়ের পর। 

যুদ্ধে পরাজয়ের পর নিরুদ্দেশ হন তিনি। অভাব অনাটন আর রোগ শোকে মৃত্যুবরণ করেন ১৭৭৭ সালের মে মাসে। দিল্লীতে যখন এই নবাব মারা যান তখন তার সম্বল বলতে ছিল মাত্র দুটি কম্বল। যা বিক্রি করে তাকে দাফন করা হয়েছিল বলে জনশ্রুত আছে।

৪. 

ঘসেটি বেগম: ঘরের শক্র বিভীষণ

পলাশী যুদ্ধের ষড়যন্ত্রের অপর নাম ঘসেটি বেগম। সিরাজউদ্দৌলার বড় খালা।

আলীবর্দি খানের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম ছিলেন নি:সন্তান। একজন ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনিও মারা যান। এরপর তিনি চেয়েছিলেন মেজোবোনের ছেলে শওকত জং বাঙ্গলা বিহার উড়িষ্যার নবাব হোক। কিন্তু সিরাজউদ্দৌলাকে নবাব বানানোয় তিনি ভীষন নাখোশ হয়েছিলেন পিতার উপর। শেষে সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে যুক্ত হন তিনি। মীরজাফর, জগৎশেট, রায়দূর্লভদের সাথে হাত মেলান নবাবের পরাজয় দেখার জন্য।

কিন্তু নির্মম পরিহাস, সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হলে, তার ভাগ্যেও নেমে আসে অন্ধকার। প্রথমে ঢাকার জিনজিরার প্রসাদে বন্দি করে রাখা হয় তাকে। পরে মীরনের হুকুমে হত্যা করা হয়।

তার মৃত্যু নিয়ে দুই ধরনের তথ্য আছে। 

কেউ বলে তাকে মুর্শিদাবাদে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, কেউ বলে মীরনের হুকুমে তাকে ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে নেবার পথে বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সময়টা ১৭৬০ সাল।

৩. 

লর্ড ক্লাইভ : পলাশীর মুল ভিলেন

ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ ইতিহাসের এক মহাগুরুত্বপূর্ন চরিত্র। ৩২ বছরের এই যুবক কেরানী থেকে ভারত মহাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাস বদলে দিয়েছিল দুইশ বছরের জন্য।

ব্যবসা করতে এসে ব্রিটিশদের পুরো ভারতবর্ষ দখল করার শুরুটা এই ক্লাইভকে দিয়েই।

পলাশী যুদ্ধ জয়ের পর সিরাজউদ্দৌলার রাজকোষ থেকে পাঁচ কোটি টাকা নিয়েছিলেন ক্লাইভ। তার আশা ছিল তিনি আরও বেশি অর্থ পাবেন।

পলাশী যুদ্ধ জয়ের ফলে ৩০ লক্ষ টাকা ও চন্দননগরে জায়গীর পেয়েছিলেন তিনি।

ক্লাইভ ১৭৪৪ সালে প্রথমবার ভারতে এসেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সামান্য একজন কেরানী হিসেবে। পরে দূরদর্শী ক্লাইভ সেখান থেকে বের হয়ে ১৭৪৮ সালে যুক্ত হন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মাদ্রাজ ইউনিটে।

মাত্র আট বছরের মাথায় ১৭৫৬ সালে তিনি লেফটেল্যান্ট কর্নেল হিসাবে আবার ফিরে আসেন।

১৭৫৬-১৭৬১ পাঁচ বছর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পলাশী যুদ্ধ জয়ের পর তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়েছিলেন।

এরপর ভারতে ইংরেজদের অবস্থা খারাপ হতে থাকে, এই করুণ অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য আবারো ডাক পড়ে ক্লাইভের।

১৭৬৫ সালে এসে ১৭৬৭ আবার ফিরে যান ইংল্যান্ডে। এসময় প্রচুর ধনসম্পদ সাথে করে ফিরে যান ক্লাইভ। বলা পাঁচটি জাহাজে করে অর্থসম্পদ নিয়ে গেছেন ক্লাইভ। তখন তিনি পুরো ব্রিটিশদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিতে পরিনত হয়।

পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি আর অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে। 

১৭৭৪ সালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে আত্নহত্যা করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন কেরানী থেকে ভারতবর্ষের মালিক বনে যাওয়া লর্ড ক্লাইভ।

২. 

মীরজাফর: পলাশীর প্রধান বিশ্বাসঘাতক

বিশ্বাসঘাতকতার অপর নাম মীর জাফর। যিনি ছিলে সিরাজের প্রধান সেনাপতি। যুদ্ধের আগের ষড়যন্ত্রে প্রধান ভুমিকা পালণ করেছিলেন তিনি। যুদ্ধের দিন তিনি তার বাহিনীকে যুদ্ধে অংশ নিতে দেননি। নবাবকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করেছিলেন।

ফলাফল পলাশীর প্রান্তরে ইংরেজদের কাছে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় দুইশত বছরের জন্য।

যুদ্ধের আগেই ব্রিটিশদের সাথে চুক্তি করেছিলেন মীরজাফর। যুদ্ধে সিরাজ পরাজিত হলে বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব হবেন ৬৬ বছরের এই বিশ্বাসঘাতক।

মীরজাফর ছিলেন বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। ভাগ্য অন্বেষণে তিনি ইরান থেকে বাংলায় এসেছিলেন। তখন বিহারের নায়েবে আমির ছিলেন সিরাজউদ্দৌলার নানা আলিবর্দী খান। সেখানে চাকরি নেন তিনি।

মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মীরজাফরের বিশেষ কৃতিত্ব ছিল। সাহসিকতা ও নৈপুন্যের জন্য তিনি খ্যাতি পেয়েছিল। ফলাফল পরবর্তীতে প্রধান সেনাপতি হয়েছিলেন। যদিও আলীবর্দী খান নতুন নবাব হিসেবে সিরাজউদ্দৌলাকে বেছে নেয়ায় তিনি ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন।

পলাশীর প্রান্তরে এক প্রহসনের যুদ্ধ শেষে মীরজাফরকে ক্ষমতায় বসানো হলেও ইংরেজদের ইচ্ছেমাফিক অর্থ দিতে না পারায় ক্ষমতাচূত্য করা হয় তিন বছরের মধ্য। আলস্য, অক্ষমতা আর আফিমের নেশা মীর জাফরকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল।

পরে জামাতা মীরকাশেমকে নবাব বানানো হয়। কিন্তু মীরকাশেম  ছিলেন বেশ স্বাধীনচেতা। নবাব হবার পর ইংরেজদের পাত্তা দিতো না। ফলে ইংরেজরা আবার তাকে বাদ দিয়ে মীরজাফরকে নবাব বানায়। দ্বিতীয় বারের মতো নবাব হয় মীরজাফর।

মীরকাশেম তা মেনে নেননি। যুদ্ধ শুরু করেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে। শুরু হয় ‘বক্সারের যুদ্ধ’। সময়কাল ২২ অক্টোবর,১৭৬৪। কারো কারো মতে পলাশী নয় স্বাধীনতার শেষ সূর্য্য অস্তমিত হয়েছিল ‘বক্সারের যুদ্ধে’র পর।

দ্বিতীয়বার মাত্র চার মাস ক্ষমতায় থাকার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কারো কারো মতে তিনি কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পচনশীল ঘা ছড়িয়ে পড়েছিল শরীরে বিভিন্ন অংশে।

শেষ পর্যন্ত ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৭৬৫ সালে ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন বাংলা ভাষায় বিশ্বাসঘাতকের অপর নাম হয়ে ওঠা মীরজাফর আলী খান।

তবে অনেকের মত, মীরজাফর নয় পলাশী যুদ্ধের মুল বিশ্বাসঘাতক ছিলেন তিনজন। জগৎশেট, উমিচাদ ও রায়বল্লভ। মীরজাফর ও ঘসেটি বেগম তাদের খেলার পুতুলে পরিনত হয়েছিলেন।

১.

 সিরাজউদ্দৌলা: বাংলার শেষ  হতভাগ্য নবাব 

বাংলার শেষ নবাব। প্রাসাদ ষড়যন্ত্র আর ইংরেজদের কুটচালের সাথে পরাজিত হত্যভাগ্য এক নবাব। সিরাজউদ্দৌলা যখন ক্ষমতায় বসেন তখন তার বয়স মাত্র ২৩ বছর।

যুদ্ধে হাবার পর, পলাশী থেকে  পঞ্চাশ মাইল দুরের রাজধানী মুর্শিদাবাদে পৌঁছান সারারাত উটের পিঠে চড়ে।

রবার্ট ক্লাইভ ও মীরজাফর তখনও পলাশীর প্রান্তরে ছিল। তারা দুজনে রাজধানীতে পৌঁছায় কয়েকদিন পর। 

২৭ জুন রাজধানীতে পৌঁছায় মীরজাফর আর লর্ড ক্লাইভ পৌঁছান ২৯ জুন। কারণ তাদেরকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল বলে ধারণা করা হয় ।

এরই মধ্যে রাতের বেলা ছদ্দবেশে সিরাজ তার স্ত্রী সন্তান আর কয়েকজন দাসদাসী নিয়ে রাজধানী ছেড়ে চলে যায়।

প্রথমে ভগবানগোলা গিয়েছিলেন তারা, পরে রাজমহলের কাছে পৌঁছান। ওই এলাকাতে থাকতেন শাহ দানা নামের এক ফকির। তার দেয়া তথ্য মতে, মীরজাফরের জামাতা মীর কাশেম তাকে গ্রেফতার করেন ২রা জুলাই, ১৭৫৭।

এরপর প্রাসাদে আনার পর সিরাজ প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন মীরজাফরের কাছে, এমনি অনেকের মত। যদিও পরবর্তীতে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজের বিষয়ে কোন মতামত দেননি মীরজাফর, তার পুত্র মীরন সিরাজের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ প্রদর্শণ করেন। তাকে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়ার পর মীরনের হুকুমে মোহাম্মাদী বেগ তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। সময়টা ৩/৪ জুলাই, ১৭৫৭ সাল।

শুধু হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হননি, নবারের মৃতদেহকে হাতির পিঠে করে গোটা শহর ঘুরিয়ে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলেন।

মুর্শিদাবাদের খোশবাগে নানা আলীবর্দি খানের কবরের পাশে কবর দেয়া হয় ২৪ বছর বয়সী বাংলা বিহার উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব  সিরাজউদ্দৌলাকে।

এরপর বাংলার ইতিহাস পুরো পাল্টে যায়, সাথে পৃথিবীর ইতিহাসে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের। ভারতবর্ষে শুরু হয় ব্রিটিশ রাজত্বের যুগ।


পারভেজ সেলিম

লেখক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকর্মী


আরো দেখুন:

৯৫ thoughts on “পলাশী: বীর বেঈমান ও ষড়যন্ত্রের যুদ্ধ

  1. Облепиховое масло обладает уникальными лечебными свойствами и часто используется в народной медицине для лечения кожных заболеваний, таких как стрептодермия. Благодаря высокому содержанию витаминов и антиоксидантов, оно способствует быстрому заживлению ран, снимает воспаление и защищает кожу от дальнейших повреждений. Применение облепихового масла помогает восстановить естественный баланс кожи и улучшить её внешний вид.

  2. Янтарная настойка известна своими мощными антиоксидантными свойствами, которые помогают поддерживать здоровье на клеточном уровне. Считается, что она способствует улучшению обмена веществ и укреплению иммунной системы, что делает её полезной при хронической усталости и стрессах. Регулярное употребление янтарной настойки может способствовать улучшению общего состояния организма и поддержанию энергии на высоком уровне.

  3. Лечение стрептодермии с использованием облепихового масла позволяет добиться значительного улучшения состояния кожи за короткое время. Этот натуральный продукт обладает мощным регенерирующим эффектом, ускоряя заживление и снимая воспаление. Облепиховое масло глубоко питает кожу, восстанавливая её структуру и помогая в борьбе с различными дерматологическими проблемами.

  4. Куркума является одной из самых полезных специй благодаря содержанию куркумина, который оказывает положительное воздействие на здоровье. Этот природный антиоксидант помогает бороться с воспалительными процессами в организме, укрепляет иммунную систему и способствует улучшению пищеварения. Куркума активно используется в медицине и кулинарии, помогая поддерживать здоровье и долголетие.

  5. Облепиховое масло славится своими целебными свойствами, особенно в лечении кожных заболеваний. Оно эффективно борется с бактериями и воспалениями, способствуя быстрому заживлению кожи при стрептодермии. Регулярное использование облепихового масла позволяет не только ускорить процесс восстановления кожи, но и предотвратить появление новых воспалений и высыпаний.

  6. Традиционно, свекольный квас использовался не только как освежающий напиток, но и как средство для улучшения пищеварения. Этот напиток содержит множество полезных микроэлементов и витаминов, таких как железо, магний и витамин C, которые помогают поддерживать здоровье организма. Регулярное употребление свекольного кваса способствует нормализации артериального давления и улучшает общее самочувствие.

  7. Зверобой широко используется в народной медицине благодаря своим противовоспалительным и антибактериальным свойствам. Отвары и настои на основе зверобоя помогают при лечении кожных заболеваний, желудочно-кишечных расстройств и нервных расстройств. Также зверобой известен как природный антидепрессант, который помогает справляться со стрессом и тревожностью.

  8. Куркума обладает целым рядом полезных свойств, которые активно используются в кулинарии и народной медицине. Куркумин, содержащийся в куркуме, помогает бороться с воспалениями и поддерживает здоровье суставов. Регулярное добавление куркумы в пищу способствует улучшению пищеварения, укреплению иммунной системы и общему оздоровлению организма.

  9. История свекольного кваса насчитывает века, и этот напиток до сих пор остаётся популярным благодаря своим полезным свойствам. Свекольный квас богат витаминами, антиоксидантами и минералами, такими как железо и магний, что делает его отличным средством для поддержания здоровья. Он помогает улучшить пищеварение, нормализовать кровяное давление и поддерживать здоровый уровень энергии.

  10. Барсучий жир является популярным средством в народной медицине благодаря своим множественным полезным свойствам. Он помогает при заболеваниях дыхательной системы, таких как бронхит и пневмония, а также используется для лечения кожных проблем. Однако важно помнить о противопоказаниях и консультироваться с врачом перед его использованием, особенно при наличии хронических заболеваний.

  11. Барсучий жир давно известен своими целебными свойствами и широко применяется в народной медицине для лечения различных заболеваний. Благодаря высокому содержанию витаминов A и E, а также ненасыщенных жирных кислот, барсучий жир эффективно помогает при заболеваниях дыхательной системы, таких как бронхит и пневмония. Также он используется для восстановления кожи после ожогов и других повреждений.

  12. Барсучий жир — это эффективное средство, которое используется для лечения различных заболеваний, включая простуду, кашель и кожные заболевания. Этот натуральный продукт обладает противовоспалительными и ранозаживляющими свойствами, что делает его незаменимым в домашней аптечке. Барсучий жир также применяется для улучшения общего состояния кожи и укрепления иммунитета.

  13. Янтарная настойка известна своими мощными антиоксидантными свойствами, которые помогают поддерживать здоровье на клеточном уровне. Считается, что она способствует улучшению обмена веществ и укреплению иммунной системы, что делает её полезной при хронической усталости и стрессах. Регулярное употребление янтарной настойки может способствовать улучшению общего состояния организма и поддержанию энергии на высоком уровне.

  14. Лечение стрептодермии с использованием облепихового масла позволяет добиться значительного улучшения состояния кожи за короткое время. Этот натуральный продукт обладает мощным регенерирующим эффектом, ускоряя заживление и снимая воспаление. Облепиховое масло глубоко питает кожу, восстанавливая её структуру и помогая в борьбе с различными дерматологическими проблемами.

  15. Куркума является одной из самых полезных специй благодаря содержанию куркумина, который оказывает положительное воздействие на здоровье. Этот природный антиоксидант помогает бороться с воспалительными процессами в организме, укрепляет иммунную систему и способствует улучшению пищеварения. Куркума активно используется в медицине и кулинарии, помогая поддерживать здоровье и долголетие.

  16. Облепиховое масло славится своими целебными свойствами, особенно в лечении кожных заболеваний. Оно эффективно борется с бактериями и воспалениями, способствуя быстрому заживлению кожи при стрептодермии. Регулярное использование облепихового масла позволяет не только ускорить процесс восстановления кожи, но и предотвратить появление новых воспалений и высыпаний.

  17. Традиционно, свекольный квас использовался не только как освежающий напиток, но и как средство для улучшения пищеварения. Этот напиток содержит множество полезных микроэлементов и витаминов, таких как железо, магний и витамин C, которые помогают поддерживать здоровье организма. Регулярное употребление свекольного кваса способствует нормализации артериального давления и улучшает общее самочувствие.

  18. Зверобой широко используется в народной медицине благодаря своим противовоспалительным и антибактериальным свойствам. Отвары и настои на основе зверобоя помогают при лечении кожных заболеваний, желудочно-кишечных расстройств и нервных расстройств. Также зверобой известен как природный антидепрессант, который помогает справляться со стрессом и тревожностью.

  19. Куркума обладает целым рядом полезных свойств, которые активно используются в кулинарии и народной медицине. Куркумин, содержащийся в куркуме, помогает бороться с воспалениями и поддерживает здоровье суставов. Регулярное добавление куркумы в пищу способствует улучшению пищеварения, укреплению иммунной системы и общему оздоровлению организма.

  20. What i do not realize is in fact how you are no longer actually much more wellfavored than you might be right now Youre very intelligent You recognize thus considerably in relation to this topic made me in my view believe it from numerous numerous angles Its like men and women are not fascinated until it is one thing to do with Lady gaga Your own stuffs excellent All the time handle it up

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x